বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
[১]
আজ ২৯ শে জিলহজ্জের শেষ সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্তমিত হওয়ার পরই শুরু হয়েছে হিজরী নয়া সাল। পুরাতন বছরের বিদায়ের সাথে সাথে নতুন বছরের আগমন সব সময়ই আমাদের চিরাচরিত জীবন যাত্রায় নতুন উদ্যম যোগ করে থাকে, হোক সেটা ইংরেজী বছর, নববর্ষ কিংবা মুহাররমের নতুন চাঁদ। পরিবর্তনের নতুন স্বাদ বরাবরই আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক এবং এই পালাবদল আমাদের রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক অভিনব নেয়ামত। যা সদা সর্বদা আমাদের নতুনভাবে স্বপ্ন দেখিয়ে এসেছে, প্রবল আশায় বুক বাঁধিয়েছে, নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় জুগিয়েছে।
হিজরী সাল মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অসামান্য নিদর্শন, আমরা অনেকেই কম বেশি জানি যে- প্রচলিত গ্রেগারিয়ান ক্যালেন্ডার সহ অন্যান্য ক্যালেন্ডার জন্ম- মৃত্যু ইত্যাদীকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে। যেখানে হিজরী সাল সাইয়্যেদেনা হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর হিজরত কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। কেন এরকম ব্যাতিক্রম একটি ধারা এখানে শুরু হল, তা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে ইসলামী বর্ষপঞ্জিকার উৎপত্তির ইতিহাস।
[২]
তখন অর্ধজাহানের খলিফা হযরত উমর রাঃ এর খেলাফত চলছে, ইসলামের দ্রুততর প্রসারে ইসলাম জাজীরাতুল আরব ছাড়িয়ে তৎকালীন শাম হয়ে মিশর পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, পূর্বে মেসোপটেমিয়া হয়ে গোটা পারস্য অধিকার করে একেবারে সিন্ধু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই বিশাল ইসলামী এলাকার প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য উম্মাহর নিজস্ব একটি সুগঠিত ক্যালেন্ডার প্রচলনের আবশ্যকতা দেখা দেয়। তখন এই সংক্রান্ত বোর্ড গঠন হলে হযরত ওমর রাঃ বর্ষ সাল শুরু হওয়ার সময়ের ব্যাপারে মতামত চান। অত:পর রাসূলের জন্ম, ওফাত, নবুওয়াত, মি’রাজ সহ অন্যান্য সকল প্রস্তাবনা বাদ দিয়ে তিনি ঠিক হিজরত সংঘটিত হওয়ার সময় থেকে হিজরী সাল গননার নির্দেশ দেন। সুবহানাল্লাহ….
হযরত ওমর রাঃ এর এমন সিদ্ধান্ত বরাবরের মতই অভিনব। তিনি প্রচন্ড উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন একজন ব্যাক্তিত্ব ছিলেন, যার সম্পর্কে নাবী কারীম সাঃ বলেছেন- “যদি আমার পরে কাউকে নবী করা হতো তবে সে হতো উমর!” হযরত উমর রাঃ সদা সর্বদা উম্মাহর স্বকীয়তার কথা চিন্তা করতেন, তার কিছু কিছু প্রমাণ আমরা ইতিহাসে এখনও দেখতে পাই । যেমনঃ প্রখ্যাত মুনাফিক আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের জানাযায় হযরত উমর রাঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বাধা দেন, কিন্তু উম্মতের প্রতিটি সদস্যের জন্য পাগলপারা রাসূল তার অধিক মহানুভবতার কারণে জানাযা পড়ে ফেলেন! সেখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মনোবাঞ্ছার বিপরীতে হযরত উমরের মতের পক্ষে কুর’আনের আয়াত নাযিল হয়।
আবার আযানের পদ্ধতি সম্পর্কে মুশরিকদের বিভিন্ন পদ্ধতির আলোকে যখন আগুন প্রজ্বলিত করা, ঘন্টা বাজানো, ঢোল বাজানোর মত প্রস্তাবনা আসতে থাকে, তখন উম্মাহর স্বকীয়তার চিন্তায় ব্যাকুল হযরত উমরের মতানৈক্যের কারনে সিদ্ধান্ত গ্রহনে এক রাত বিলম্ব করা হয় এবং সেই রাত্রেই ওমর রাঃ সহ আরো কিছু সাহাবী রাঃ কে স্বপ্নযোগে আযানের পদ্ধতি ও পন্থা বলে দেয়া হয়।
এভাবেই যখন হুদায়বিয়ার সন্ধিতে মুসলিমদের জন্য আপাতদৃষ্ট অপমানজনক শর্তসমূহ আসতে থাকে, তখন হযরত উমর রাঃ ই সন্ধির বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি বেঁকে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে অবশ্য রাসূল সাঃ কাছে ডেকে বুঝিয়ে বলায় তিনি শান্ত হোন।
তৎকালীন সময়ে আরব সৈন্যরাই ইসলামের দিগ্বিজয়কে তরান্বিত করেছিল, মরু আরবের বেদুঈন হিসেবে তাদের সাহস, ধৈর্য ও কষ্টসহিষ্ণুতা ছিল অতুলনীয়! তাদের এই জযবা ও বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুন্ন ও রক্তের ধারাকে বিশুদ্ধ রাখতে তিনি আরব সৈন্যদের আরবের বাইরে জমি কেনা ও বিয়ে করা নিষিদ্ধ করে দেন!
যাইহোক, এভাবেই এ মহান সাহাবী ও মহোত্তম খলিফাগণের অন্যতম হযরত ওমর রাঃ ইসলাম গ্রহন পরবর্তী আজীবন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ়তার জন্য কাজ করে গিয়েছেন। হযরত উমরের মত একজন দৃঢ়চেতা ও দুরদর্শী ব্যাক্তিত্ব ইসলামী সাল গননার শুরু কেন হিজরত এর সাথে জুড়ে দিলেন, তা খতিয়ে দেখার দাবী রাখে। যখন আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাই, তখন দেখি যে- বিস্তারকারী শক্তিতে পরিণত হওয়া বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য সীরাতে রাসূল তথা সুন্নাতে রাসূলের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কুর’আনের পরেই উম্মাহর কাছে সবচেয়ে বড় যে পাথেয় টি রাসূলুল্লাহ রেখে গিয়েছেন তা হলো এই সুন্নাহ।
[৩]
আমরা যদি হিজরতের ব্যাপারে একাডেমিক পর্যালোচনা না করে বর্তমান সময়ের সাথে মিলিয়ে একটি তুলনামূলক পর্যালোচনায় আসতে পারি, তবে সেখানে মানবতার মুক্তির তরে অনেক দিকনির্দেশনা পাবো। হিজরতের পূর্বে রাসূল সাঃ ও তাঁর সাহাবীদের জীবনে এমন কোন কষ্ট নেই যা তারা স্বজাতির কাছ থেকে পান নি! বিদ্রুপ, অপমান, অত্যাচার, অবরোধ, জেল, যুলুম, নির্যাতন, হত্যা, রাহাজানী, লুটপাট, প্রাণ নাশের হুমকি…কোন জিনিস টি বাদ পড়েছিল?
শুধুমাত্র একটি ঘটনার স্বরুপ বিশ্লেষন করলে আজ আমাদের সামনে চলমান গোটা বিশ্ব রাজনীতির ধরন উন্মোচিত হয়ে যায়। সেটা কেমন?
যখন মক্কার মুশরিকরা দেখতে পেল যে, রাসূলের অধিকাংশ সহচর মদিনার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে, এবং বর্তমানে তিনি একাকী বা নাজুক পরিস্থিতিতে আছেন, তখন তারা ইসলাম উত্থানরোধে রাসূলুল্লাহ সাঃ কে দুনিয়া থেকেই চিরতরে সরিয়ে দিতে চাইল। তৎকালীন আরব সমাজ চরম জাহালতিতে নিমজ্জিত থাকা সত্ত্বেও আশ্চর্য্যজনকভাবে তাদের মাঝে ‘দিয়ত’ বা রক্তপন (হত্যার আদালত) এর ক্ষেত্রে খুবই কাঠিন্য ছিল, যেখানে হত্যার বদলে হত্যা একরকম অবধারিত ছিল। অসংখ্য জাহালতি ও বর্বরতার ভিড়ে এই দিয়ত এর কারনেই মুশরিকগন রাসূল সাঃ কে হত্যা করতে ভয় পাচ্ছিল। এই সমস্যার সমাধানকল্পে তারা দারুন নদওয়ায় জমায়েত হলে অনেকেই অনেক মতামত পেশ করে কিন্তু এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে কারুর মতই গ্রহণযোগ্য হয়না! শেষ পর্যন্ত আবু জাহেল এই মত ব্যক্ত করে যে- ”মক্কার সকল গোত্র হতে একজন করে কাতিল নিয়োগ করা হোক! সকলেই এক যোগে মুহাম্মদের ওপর হামলা চালাবে, তখন যদি বনী হাশেম দিয়ত দাবী করেই বসে, সকলেই সমানভাবে এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী থাকবে। উপরন্তু ন্যায়বিচারের মুখাপেক্ষী বনী হাশেম তখন এই সম্মিলিত যুলুমের মোকাবেলায় একা, অসহায় হয়ে পড়বে!!” সেই সভায় প্রাজ্ঞ নজদী বৃদ্ধের বেশে থাকা শয়তানের অকুন্ঠ সমর্থনে এই ধুর্তামিপূর্ণ প্রস্তাব পাশ হয়। (এভাবেই বর্তমান পাশ্চাত্য তার অবৈধ ঔরসজাত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে, মিডিয়া ধুম্রজাল তৈরী করে একে একে তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা পক্ষগুলোকে ধরাশায়ী করে থাকে! আজ তারা মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আদালত এর মত কিছু ফাকা বুলি তৈরী করেছে, এই বুলির হুজুগ তুলেই শিকারের প্রতি হই হই রি রই করে তেড়ে যায়!! আন্তর্জাতিক আইন নিজেদের আগ্রাসনের পক্ষে তৈরী করে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সহ বিশ্বের প্রতিটি কোণায় কোণায় শান্তির নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। এরপর ও কি তাদের কাছ থেকে আমাদের হিউম্যানিটি শিখতে হবে? তাদের যুলুমের স্বার্থে তৈরী ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক আইন কে সমীহ করতে হবে?)
আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল সাঃ সেই সকল সম্মিলিত দন্ডায়মান কাতিলের চোখে ধুলো দিয়ে মদিনার পথে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। কুর’আনে আল্লাহ পাক ঘটনাটি বর্ণনা করেন এভাবে-
“হে রাসুল! আপনি যখন নিক্ষেপ করছিলেন (কাতিলদের চোখে কঙ্কর), তখন তা আপনি নিক্ষেপ করেন নি! বস্তুত আল্লাহই তা নিক্ষেপ করেছিলেন। (তাদের চোখ পর্যন্ত পৌছে দিয়েছেন)”
মদিনায় পৌছার ক্ষেত্রে ও রাসূল সাঃ কৌশলের আশ্রয় নেন, যেখানে অভিষ্ট লক্ষ্য ঠিক থাকলেও যাত্রাপথ হয়ে যায় সম্পুর্ণ বিপরীত। আরবের মত মরু বিয়াবানে প্রচলিত রাস্তা বাদ দিয়ে মাত্র একজন সাথী, একজন রাহবার ও যত সামান্য খাদ্য পানীয় নিয়ে তিনি সম্পুর্ণ অচীন এক পথে যাত্রা করেন। (কেউ যদি প্রচলিত রাস্তার সাথে হিজরতের রাস্তাটির তুলনামূলক চিত্রায়ন দেখে থাকেন তবে অবশ্যই তিনি আশ্চার্যান্বিত হতে বাধ্য হবেন।)
এমন সময় কুরাইশদের হাত থেকে রাসূলের ফসকে বেরিয়ে যাওয়াটা তাদের আত্মসম্মানে চরম আঘাত হানে। তারা গারে সাওর পর্যন্ত রাসূল কে অনুসরণ করে। সেখানে আল্লাহ স্রেফ তার অনুগ্রহের মাধ্যমে তার হাবীব কে রক্ষা করেন। এই অভিযানেও মক্কার কুরাইশরা সফল হতে না পেরে ক্ষোভে দিশেহারা হয়ে যায় এবং সেই সময়কার সবচেয়ে লোভনীয় পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বসে!! মদিনায় পৌছার পথে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পশ্চাদ্ধাবন করা সুরাকা ইবনে মালিকে সাথে ঘটে যাওয়া আশ্চর্যজনক ঘটনা তো আমরা সকলেই অবগত!!
(এখানে ইসলামী আন্দোলন, তার কর্মপন্থা ও বাঁধার এবং তার উত্তরণের ব্যাপারে সুক্ষ্ণ দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।)
এভাবেই রাসূল সাঃ ও তাঁর একান্ত সহচর হযরত আবু বকর রাঃ এর ব্যাতিক্রমধর্মী হিজরত সুসম্পন্ন হয়। এবারে আসে হিজরত পরবর্তী ফলাফল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয় আশ্চর্যজনক ও সফল বিপ্লব!! পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাঃ মদিনায় বসবাসরত ইহুদীদের ইন্ধনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা আউস ও খাযরায গোত্রের গৃহযুদ্ধে শান্তি স্থাপনকারী ও মদিনার সর্বময় নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন। তাঁর মাধ্যমে মদিনায় একটি স্বতন্ত্র উম্মাহ বা জাতির উদ্ভব ঘটে, যার জ্বলন্ত সাক্ষী হিসেবে আজ ও টিকে আছে পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত চুক্তি ‘মদিনা সনদ’! অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, এই লিখিত মদিনার সনদ কে ব্যাখ্যা করবে, এমন ইতিহাসের শিক্ষক আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে তো নাই ই, দেশে উল্লেখযোগ্য কোন ইতিহাস বিজ্ঞানী ও নাই!! যাইহোক, সে আলাপ ভিন্ন। এভাবেই রাসূল সাঃ ইসলামের সর্ব প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।
[৪]
রাসূল সাঃ এর হাত ধরে মদিনা কে ভিত্তি করে ইসলামী রাষ্ট্র তথা ইসলামী সভ্যতার এই সূচনাকালের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন অনেক বিস্তর!
তবে, এই লেখার পরিসর অনুযায়ী এখানে তিনটি পয়েন্ট খুব ভালোভাবে অনুধাবনের দাবী রাখে।
মদিনা রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেই রাসূল সাঃ তিনটি গুরুত্বপূর্ন মৌলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন
১. মুসলিমদের মাঝে আভ্যন্তরিন সম্পর্ক স্থাপন (ঐক্যের ভিত্তি, ইত্তেহাদ)
২. মসজিদ প্রতিষ্ঠা (জনপ্রশাসন, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র)
৩. বাজার প্রতিষ্ঠা (অর্থনীতি)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ
১. মুসলিমদের মাঝে ভাই– ভাই সম্পর্ক স্থাপনঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঐক্যের নজীর- অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতে দ্বিতীয়টি নেই। যেখানে আনসারগন তাদের যাবতীয় সম্পদ, বাড়ি, ঘর, টাকা পয়সা, পশুর পাল-খেজুর বাগান সব কিছুই তাদের মুহাজির ভাইদের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দেন। এমনকি কোন কোন আনসার সাহাবীর একাধিক স্ত্রী থাকলে তার মুহাজির ভাইয়ের জন্য সে স্ত্রীকে তালাক দিতে প্রস্তত ছিলেন! সুবহানাল্লাহ!!
এখানে প্রথমত লক্ষনীয় বিষয় হলো, মুহাজির ও আনসার দুই পক্ষ দুই রকম গুনাবলীর অধিকারী ছিলেন, আনসারগন ছিলেন স্থাবর সম্পদের মালিক (ভুমি, বসতগৃহ, কৃষিক্ষেত্র) তারা অধিকাংশই ছিলেন কৃষক বা গৃহস্থলী আর মুহাজিরগন সুদূর মক্কায় তাদের যাবতীয় বিষয় সম্পত্তি রেখে এসেছিলেন! যদিও তারা অস্থাবর সম্পদ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শি ছিলেন। তারা ব্যবসা- বানিজ্যে দুনিয়া সেরা খেতাব প্রাপ্ত আরব বণিক শ্রেনীর অন্তর্গত ছিলেন।
মক্কার মুহাজীরগন তুলনামূলক মানসিকভাবে অধিক দৃঢ়চেতা ও সুকঠিন মনোভাবের অধিকারী ছিলেন বিপরীতে মদিনাবাসী তুলনামূলক ঠান্ডা মেজাজ ও ধীরস্থিরতার অধিকারী। মুসলমানদের দুই প্রকৃতির দুই গ্রুপের মাঝে এত শক্তিশালী একটি বন্ধন রচিত হওয়ায় জাতি হিসেবে মুসলিমগণ মদিনা ও আশেপাশের অঞ্চলে এক পর্যায়ে সমগ্র আরবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী উম্মাহ এ পরিণত হন।
দ্বিতীয়ত লক্ষনীয় বিষয় হলো, মদিনা সনদের মাধ্যমে মদিনায় বসবাসরত, ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের সমন্বয়ে একটি জাতি রাষ্ট্রের মত একটি লিখিত বন্ধন গড়ে উঠলেও ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্কের ও ভিত্তি কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমানদের মধ্যেই রচিত হয়েছে! যার ফলাফল ছিল চক্রান্তকারী ইহুদীদেরকে তাদের অপকর্মের ফলস্বরুপ ক্রমান্বয়ে মদিনা থেকে শান্তিপূর্নভাবে বহিষ্কার করার মত ঘটনা। আমরা একাডেমিক পর্যালোচনা গুলোতে এই সূক্ষ্ণ বিষয়গুলো আনিনা বা আনতে পারিনা, সুতরাং এখানে আমাদের বোঝাপড়ায় এক বিশাল অন্তরায় থেকে যায়। সুতরাং মদিনা সনদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানার অভাবের কারণে জাতি রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলতে গেলে সেটা নিতান্তই অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়!! (বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও তার কার্যকারীতা বুঝতে হলে এই পয়েন্টের কাছেই আসতে হবে। তাছাড়া গ্লোবাল ভিলেজ মার্কা শোষন মূলক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র মুসলিম জাতিসংঘ, ইসলামিক ইউনিয়ন কায়েমের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে এই পয়েন্ট টি গুরুত্বপূর্ণ।)
২. মসজিদ প্রতিষ্ঠাঃ (জনপ্রশাসন, আদালত, শিক্ষাকেন্দ্র)
রাসূল সাঃ এর সময় তার মরকাজ ছিল মসজিদ এ নববী। আজ পর্যন্ত যে কয়টি সভ্যতা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, মসজিদ ভিত্তিক এমন আদর্শ সমাজ ব্যবস্থার নজীর আর কোথাও নেই। যা একেবারেই অনন্য !!
যেই মসজিদে সাধারন লোকজন নামাজ আদায় করছে, সেখানেই ওহীর আলোকে যাবতীয় আইন জারী হচ্ছে, ঠিক একই যায়গায় আবার জ্ঞান বিতরণ ও চর্চা চলছে, যার সুযোগ হচ্ছে, সেই বসে পড়ছে, জ্ঞানার্জন করছে। যুদ্ধের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের আগে এখানে জনসভা হচ্ছে আবার গুরুত্বপূর্ন বিষয় প্রচারে উন্মুক্ত সেমিনার ও হচ্ছে। উন্মুক্ত জায়গায় বিচারকাজ চলছে, সব আদালতের ভিত্তিতে, কোন কারচুপি নাই! কোন সিন্ডিকেট নাই! কোন তথাকথিত অভিজাত, বুর্জোয়া, এলিট, পাদ্রী, রাব্বী, ব্রাহ্মন, মোড়ল শ্রেনী নাই….। সত্যিকার মসজিদ আবাদ তো একেই বলে!!
একটি সভ্যতার মূল মারকাজ যদি এতটা বহুমুখী হয়, সর্বোচ্চ পর্যায়ে জনসম্পৃক্ত হয়, সেখানে কিভাবে অন্যান্য সভ্যতার ইতিহাসের মত চার্চের সাথে দ্বন্দ্ব, পুরোহিত শ্রেণীর অত্যাচার এর মত ভয়াবহ বিষয়গুলো অনুপ্রবেশ করতে পারে!! এসব সিন্ডিকেটের কোন অস্তিত্ব কি আদৌ ইসলামী সমাজে থাকা সম্ভব?? কক্ষণো নয়!!
তাই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাকে বুঝতে হলে সর্বাগ্রে ফেরাউনী পাশ্চাত্য চিন্তার ছাঁচে গড়া চশমাটা খুলে ফেলতে হবে।
৩. বাজার প্রতিষ্ঠা (অর্থনীতি)
মদিনা রাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় যে বিপ্লব বা পরিবর্তনটি সাধিত হয়েছিল, তা ছিল এই বাজার প্রতিষ্ঠা। রাসূল পূর্ব মদিনার ইতিহাসে মদিনার সমগ্র অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত পুঁজিবাদী ইহুদীরা। তারা মদিনার উপর তাদের নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সব সময় আউস ও খাজরাজ গোত্রের মাঝে বিভেদ লাগিয়ে রাখত। কেন? কারণ তারা ওই সমাজের সকল পুজির নিয়ন্ত্রক ছিল এবং সুদী লেনদেন ছাড়া তারা কোন অর্থনৈতিক কারবারের অস্তিত্ব রাখেনি। কিভাবে? তারা ছিল পুঁজির অধিকারী অন্যদিকে সাধারণ মদিনাবাসী ছিল কৃষক শ্রেণীর, ইহুদীরা তাদেরকে সুদে ঋণ দিত এবং এই ঋণ পরিশোধে যাতে ঋণগ্রহীতারা অপারগ হয়, তাই বিভিন্ন কলা কৌশলে তারা একে অপরের মাঝে যুদ্ধে উষ্কানী দিত, যাতে তারা চক্রবৃদ্ধি হারে দীর্ঘমেয়াদী সুদী কারবার চালাতে পারে। যার ফলে মদিনাবাসী একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইহুদীদের কাছ থেকে কিংবা তাদের অই দেওয়া সুদের অর্থে সমরাস্ত্র কিনতে বাধ্য হতো। (পাশ্চাত্য যায়নবাদীদের চলমান মনোপলির সাথে হুবহু মিলে যায়!!!)
মদিনায় শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে রাসূল সাঃ শুধুমাত্র ক্ষমতা গ্রহণ করেই ক্ষান্ত থাকেননি বরং একটি সার্বজনীন অংশগ্রহণ মূলক বাজার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মদিনায় একটি কমন মার্কেট প্রতিষ্ঠা করে ইহুদী সুদী মহাজনদের একচেটিয়া পূঁজির পাহাড় ধ্বসিয়ে দেন। সেইসাথে খুব শীঘ্রই মক্কার মুহাজিরদের ব্যাবসায়ী দক্ষতাকে অত্যন্ত সুচারুরুপে ব্যবহার করে মাদিনাকে তৎকালীন মক্কার বিপরীতে একটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত করে ফেলেন। সুবহানাল্লাহ!!
বিদায় হজ্বের ভাষনে সুদ রহিত করণের বাণীকে আমরা শুধুমাত্র কুর’আনের আয়াতের প্রতিফলন মনে করি, অথচ অর্থনীতিতে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রায় গোটা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা আমাদের মগজের বাইরেই থেকে যায়!! তার ব্যাবসায়ীক জীবনের কথা! তার সুদের বিরুদ্ধে নেয়া বাস্তবিক পদক্ষেপের কথা!!!
(পাশ্চাত্য যায়নবাদীরা আজ সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে তামাম দুনিয়াকে লুট করে যাচ্ছে, এই যুলুমের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর প্রদর্শিত পদ্ধতিই কি আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়ে দিচ্ছে না!)
এভাবেই একে একে ছোট থেকে ছোট, বড় থেকে বড় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল হিজরত পরবর্তী মদিনায় মাত্র দশ বছরে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতিগুলোকে প্রায়োগিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করে যান। সাড়ে চৌদ্দশত বছর ধরে চলে আসা ইসলামী সভ্যতার গোড়াপত্তন করে যান। এই হল সেই হিজরতের মাহাত্ম! এই সেই মদিনাতুন্নাবীর হাকিকী ইতিহাস!! অথচ মদিনার শানে আজ আমাদের সামনে বয়ান আসে- ইমাম আবু হানিফা মদিনায় একাধারে দুই মাস অবস্থান করলেও রাসূলের শানে তিনি এই দুইমাসে কোন প্রকার বর্জ্যত্যাগ করতেন না!! কোন পর্যায়ের অবাস্তব কথাবার্তা, অপ্রয়োজনীয় বার্তা আমরা ১৪০০ বছর পরে এসে মদিনাতুন্নাবী সম্পর্কে পাচ্ছি!!! না এটা ইমাম আযমের সাথে যায়! না মদিনার সাথে মানায়!!
অথচ যে মদিনায় শুরু করা রাসূলের ইসলামী সভ্যতার ধারাবাহিকতা- খেলাফতে রাশেদা থেকে উমাইয়া, আব্বাসী হয়ে উসমানী খেলাফতের সমাপ্তির পর, ইতিহাসের পাতায় আমাদের আজকের এই অবস্থান!!
[৫]
আজ ১৪৪৩ হিজরীর শুরু! এতক্ষণ হিজরতের হাকিকত বর্ণনার পরে এ পর্যায়ে লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে ঠিক আজ থেকে ১০১ হিজরী পূর্বে ১৩৪২ হিজরীর শেষার্ধে রাসূল সাঃ কর্তৃক রেখে যাওয়া আমানত, মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খেলাফতের আনুষ্ঠানিক পতন হয়ে যায়!! অথচ ১০১ বছর পরে এসেও আমরা কোন অদৃশ্য শক্তির বাধায় আজ পর্যন্ত নিশ্চুপ!! আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বশূন্য হয়ে গেছি তার শতবর্ষে পদার্পন করছি! আমরা সেই উম্মাহ, যাদের এককভাবে সকল সৃষ্টিজগতের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে, তারা আজ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্রচ্যুত হয়ে গিয়েছি!! এ নিয়ে আমাদের চিন্তা কি কখনো কেন্দ্রীভূত হওয়ার সময় পেয়েছে। না!!
উল্টো আমরা মাজহাব, আকীদা, জাত-পাত, ভৌগলিক অবস্থান, গোত্র- বর্ণের ভেদে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালে পরিণত হয়েছি। আমরা কি কখনো ভেবে দেখার চেষ্টা করেছি যে আল্লাহ কেন বললেন-
”আমি তোমাদের জাতি ও কবিলায় ভাগ করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো….!”
আল্লাহর বাণী অনুযায়ী আমরা কি পরিচিত হয়ে বিভেদ বিভাজন, মারামারি কাটাকাটি করে যাব? নাকি মদিনার ভ্রাতৃত্বের স্থাপিত সম্পর্কের মত পরস্পর পরস্পরকে চিনে নিয়ে- একে অপরের ভাই হয়ে উম্মাতান ওয়াহিদা হিসেবে, ভারসাম্যপূর্ন একটি সৃষ্টি জগতে- আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত খলিফা হিসেবে সদা তৎপর আমানতদারের ভুমিকা পালন করব!
আমরা যদি ইসলামের আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক পতনের এই ১০০ বছর বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাই- ইসলামের পতন ও ফেরাউনী ধারার পাশ্চাত্য যায়নবাদী সভ্যতার উত্থান মাত্রই দুনিয়া তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বসবাসের অযোগ্য একটি বিষ্ফোরক গ্রহে পরিণত হয়েছে। যা প্রতিনিয়ত টাইম বোমার মত ধ্বংসের দুয়ারে পৌছে যাচ্ছে!! যে মানুষকে আল্লাহ সকল সৃষ্টি জগতের সেরা বানিয়ে তার খেলাফতের দায়িত্ব দিলেন, সেই মানবকুল আজ পশুর মত আচরণ করে বেড়াচ্ছে। তামাম দুনিয়ার প্রতিটি কোণা আজ রক্তে- অশ্রুতে, আগুন আর ধোয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে, ঠিক যেমন ফেরেশতারা আদম সৃষ্টির প্রাক্কালে সন্দেহ করেছিলেন!!
আমরা যদি বর্তমান দুনিয়ার স্বরুপ চিন্তা করি, আমাদের মাথায় কি আসে?
জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, আগ্রাসন, চুরি, ডাকাতি, জালিয়াতি, ক্ষুধা, দারিদ্র, হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, রক্তপাত, নগ্নতা, অশ্লীলতা, মাদক, অস্ত্র, ধোঁয়া, আগুন, স্মরনার্থী, বোমা, বিকলাঙ্গতা আরো কত কি!! আমরা এসকল শব্দ হর হামেশাই লিখে থাকি, পড়ে থাকি, বলে থাকি, শুনে থাকি….
কিন্তু আশ্চর্য জনক এবং দুঃখ জনক ভাবে লক্ষ্যনীয় যে, আমরা অধিকাংশই এসকল শব্দের গভীরত্ব, মর্মবেদনা উপলব্ধী করতে পারিনা….
কারন এসকল শব্দ সার্বক্ষণিক আমাদের আশেপাশে ঘুরা ঘুরি করাতে এখন আমাদের মস্তিষ্ক খুব সহজেই এগুলা বরণ করে নেয়, একেবারে ডালভাতের মত স্বাভাবিক অনেক ক্ষেত্রে! প্রতিদিন খবরে আপনি হত্যার খবর দেখতেছেন, পত্রিকায় ধর্ষণের খবর পড়তেছেন, আপনি যখন প্রতিদিন এসকল শব্দ ও গল্পের মধ্য দিয়ে আগাবেন! তখন আপনার অনুভূতি আর এগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিবেনা! ঠিক যেমন আমাদের চোখ দিয়ে নিজেদের নাকের একাংশ সরাসরি দেখা যাওয়ার পর ও ইচ্ছাকৃতভাবে ফোকাস না করলে দেখতে পাইনা, আসলে মস্তিষ্কই ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। মানুষের মস্তিষ্কের প্রোগ্রামটাই এমন, অভ্যস্ত হয়ে যায়! মানিয়ে নেয়….
আমি প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম, যখন দেখতাম এক ফিলিস্তিনি শিশু বলছে, আমাদের কাছে নামাজ ছয় ওয়াক্ত! কি কি? ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং জানাযা!! ভাবা যায়, কি পরিমাণে সয়ে গেলে জানাযার নামাজ ওয়াক্তিয়া নামাযের মত মনে হয়!!
[৬]
আজকে দুনিয়ার কোথায় কোন মাত্রার যুলুম হচ্ছে, তার কোন বর্ণনা দেবনা! এ রকম রিপোর্ট আর্টিক্যাল আমাদের পাশে মজুদ আছে ভুরি ভুরি। আজ শুধু সে সকল শব্দের ভহাবহতা উপলব্ধি করাতে চাই, যা আমাদের চোখ-কানের সামনে প্রতিনিয়ত ভেসে বেড়াচ্ছে….
প্রথমেই ক্ষুধা– দারিদ্রঃ
ক্ষুধা কি শুধুমাত্র না খেয়ে থাকা! আমরা তো রোজার সময় পুরো একদিন না খেয়ে থাকি! কিন্ত ভাবনার বিষয় হলো- বড়জোর কয়দিন না খেয়ে বেঁচে থাকবেন, একদিন, তিনদিন, সাতদিন, এক বেলা আধাবেলা করে দশ দিন, বিশ দিন…. নাকি বছর কে বছর? দারিদ্র কি শুধু কুরবানী দিতে না পারা? বড়জোর গোশত কিনতে না পারা? এগুলা তো বহু দূরের হিসাব, চার পাচ জনের একটা পরিবার পাঁচ সাত দিন ধরে চুলায় রান্না করা কোন কিছুর নাগাল পায়না খোঁজ নিয়ে দেখেন!
যেই আল্লাহ রাযযাক! যিনি সবার রিযিকের মালিক! তার বন্টননীতিতে কারা এমন ধরনের গরমিল করে দিল যে, দুনিয়াতে একটা মানুষ অন্তত না খেয়ে থাকে, আর শুধুমাত্র আমেরিকায় স্থুলতা কামাতে এক বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়!! অথচ বৈশ্বিক দারিদ্র্যতা দূরীকরণে প্রয়োজন মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলার।
ক্ষুধা/ দারিদ্র আমরা যা শুনি, শুধু কি এতটুকুই!! আমরা এর সঠিল মর্ম কবে উপলব্ধি করতে পারব?
হত্যা–খুনঃ
হত্যার মানে কি শুধু মাত্র দেহ দেখে রুহ বেরিয়ে যাওয়া? বুক বা মাথা ভেদ করে একটি বুলেট বেরিয়ে যাওয়া! একজন মানুষের জীবনের মূল্য কি ক্ষতিপূরণ বা টাকা দিয়ে শোধ করা সম্ভব? মানুষের জান কি এত সহজে বের হয়ে যায়?? যেখানে গো-হত্যা নিয়ে এই পরিমাণ সেন্টিমেন্ট কাজ করে মানুষের মাথায়! সেখানে এক একটা বম্বিং এ কত শত মানুষ মারা যায়। একটা গণহত্যায় মুহুর্তে একটি জনপদের লক্ষ লক্ষ লোক ছট ফট করতে করতে মারা যায়! কেউ থাকেনা সাহায্য করার!!
সিস্টেমেটিক মেডিক্যাল ক্রাইমের কারনে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ টাকা দিয়ে সেবার নামে মৃত্যুর দুয়ারে পৌছে যায়! তিলে তিলে মরে, শরীরের রক্তের শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত ঝড়ে যায়…
জীবন মাত্র একটিই, যে ব্যাক্তি একবার দুনিয়া থেকে চলে গেল সে কি আর কোন দিন ফিরে আসবে? সদ্য বিবাহি কনে, বাচ্চার খাদ্য প্রস্তত করতে থাকা মা, স্কুল থেকে বাসায় ফিরে ভালো রেজাল্ট নিয়ে উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখতে থাকা কিশোর টি! সকল কিছু পেছনে টেনে রেখে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় করে দেয়া এই লোক গুলো কি আর দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে ফিরে আসার সুযোগ পাবে?? কখনোই নয়। তবে কেন এই নিষ্ঠুর বিশ্ব দুনিয়ার বুকে স্বাধীন ভাবে মুক্ত বাতাসে বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে! এখন ভাবুন, প্রতিদিন মৃতু, হত্যা, খুনের যে খবর পত্রিকায় দেখেন, এক হামলায় এতজন লাশ ওই দুর্ঘটনায় অতজন পুড়ে ছাই!! এগুলা কি এতই সহজ!! এগুলো কে শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুম বলেই চালিয়ে দেব! অবশ্যই আমরা তাকদীরের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের অধিকারী! কিন্তু এই ধারাবাহিক যুলুম ও সীমালঙ্ঘনের কি হবে? আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে কাল কেয়ামতের ময়দানে মানবতাকে রক্ষা করতে না পারার গ্লানি নিয়ে কিভাবে দন্ডায়মান হবো? ভেবে দেখছি কি??
ধর্ষন– গণ ধর্ষনঃ
ধর্ষন কি শুধুমাত্র কোন মেয়ের অসম্মতিতে জোর করে যৌন ক্রিয়া সম্পাদন! যেখানে ভিক্টিম অনিচ্ছায় হলেও জৈবিক চাহিদা মেটায় আনন্দ লাভ করে! মরহুম সাকা চৌধুরীর ব্যাঙ্গোক্তির মতই কি জিনিস টা! ”ধর্ষন যখন অনিবার্য, তখন উপভোগই শ্রেয়!” এই ভয়াবহ জিনিস টা কখনোই এমন ফ্যান্টাসী হতে পারে!! একজন মহিলাকে যখন এভাবে জোর করে, বেধে, হাত পা ভেঙ্গে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে থেতলে দিয়ে যখন ঘন্টার পর ঘন্টা উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়, তখন কি আর উপভোগের মত অবস্থা কল্পনা করা যায়? যেখানে একটু কোষ্ঠকাঠিন্য বা আমাশয় এর মত প্রাকৃতিক জিনিসের মাধ্যমে স্বাভাবিক ব্যালেন্স ব্রেক হলেই নিজের পশ্চাদ্দেশের খবর হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়, সেখানে এমন বিভৎস মাত্রার ধর্ষণের ফলে সৃষ্ট ইন্টার্নাল ড্যমেজ, নাযুক অঙ্গগুলো ছিড়ে যাওয়া, বিনা চিকিৎসায় পচন ধরে যাওয়া। এগুলার খবর কি প্রতিদিন চোখে পড়ে স্বাভাবিক থাকার মত জিনিস?? ফিজিক্যাল ড্যামেজের কথা বাদই দিলাম! মেন্টাল ড্যামাজের তো কোন ঔষধই নাই!
প্রতিটি মানুষ, সে যত কঠিন হৃদয়েরই অধিকারী হোক না কেন! অবশ্যই সে তার সংক্ষিপ্ত জীবনে হাজারো রঙ্গীন স্বপ্ন সাজায়। যার জীবন থেকে এইরকম পৈশাচিকতার মাধ্যমে তামাম স্বপ্ন- সুখ ছিনিয়ে নেয়া হয়, তার কথা একবার ভেবে দেখেছি কি? সে তো সারাটা জীবন জুড়ে প্রতিদিন ভেতর থেকে কুকড়ে কুকড়ে যাবে। তার সতীত্ব ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, বাপ, ভাই, স্বামী, সন্তান কারো কাছেই সে আর স্বাভাবিক কেউ নয়! আবার এই গ্লানি নিয়ে আত্মহত্যা করলে ও রেহাই নাই!! আমরা আমাদের সবচেয়ে কাছের আপনজনকে সেই জায়গা গুলোতে রেখে কখনো ভেবেছি কি? আমরা হলে কি তা বরদাশত করতে পারতাম??
ঠিক একইভাবে, যুদ্ধের কারনে সৃষ্ট বিকলাঙ্গতা হাজারো স্বপ্নের ইতি টেনে দেয়! হাত নাই, পা নাই চোখ নাই! ধুকে ধুকে মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা…! সুদূর সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন বাদই দিলাম! আমাদের দেশে ঠাই নেয়া ২০ লক্ষ শরণার্থী হয়ত বছর খানেক আগে ও নিজ দালানের নিচে শান্তিতে ঘুমুত, কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই! তার ঠাই হয়েছে আজ কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে! একই ভূখন্ডে আজ আমি বসে বসে ভবিষ্যত পরিবার পরিকল্পনা করি, রোম্যান্সের পসরা সাজাই! একই মাটিতে থাকা আমার শরণার্থী ভাই বোনের কি কোন ভবিষ্যত আছে???
এভাবে উপরোল্লিখিত প্রতিটি যুলুম-আগ্রাসনের হাজারটি স্বরুপ বর্ননা করা যাবে, কিন্তু সেই জিনিসগুলো উপলব্ধি করার মত ক্ষমতা না থাকলে কোন লাভ নেই। কতজন মানুষ যুলুমের শিকার, হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে, ধর্ষনের শিকার হচ্ছে, দারিদ্র সীমার নিচে আছে, না খেয়ে আছে, অচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে এর ভুরি ভুরি পরিসংখ্যান গুগলে খোঁচা দিলেই বেরিয়ে যায়! কিন্তু আমাদের হৃদয়ে খোঁচা না লাগলে ওগুলো কিছু ০.১.২.৩.৪ আর ‘%’ ছাড়া আর কিছু নয়!!
[৭]
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম বিশ্বব্যাপী চলমান যুলুম আগ্রাসনের ব্যাপারে মোটেও আর বেখবর নয়! কেউ অল্প জানে, কেউ বেশি জানে, কিন্তু সকলেই কম বেশি জানে, পৃথিবী নামক আমাদের এই নীল গ্রহটা আর ভাল নেই, সে প্রতিনিয়ত তার বসবাসের উপযোগীতা হারাচ্ছে। শুধুমাত্র মানবকুলই নয়! উদ্ভীদকুল, প্রানীকুলের কেউই এই ধ্বংস যজ্ঞের আওতার বাইরে নয়!
ইসলামী সভ্যতার অনুপস্থিতিতে মাত্র একশত বছরেই পাশ্চাত্য দুনিয়ার যে হাল বানিয়ে ছেড়েছে, তাতে দুনিয়ার মানব সভ্যতার আর বিন্দুমাত্র অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তাদের খেয়াল খুশি মত মানব রচিত বিভিন্ন মতবাদের সাহায্যে তারা যে পর্যন্ত আসতে পেরেছে। অচিরেই তাদের এই নতুন নতুন মতবাদের ভান্ডার খালি হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে গ্রহণ করার মত, তাদের অনুসরণ করে চলার মত, তাদের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার মত আর কোন অবস্থানই নেই! এখন তারা নিজেরাই নেজদের অন্তর্দহনের ফলে সৃষ্ট কয়লার জ্বালানী দ্বারা পথ চলছে। এমনটা হওয়ারই ছিল, কেননা-
তারা দুনিয়ায় কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে ষড়যন্ত্র, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা আর দাঙ্গাবাজীর মাধ্যমে। তাদের থেকে কখনোই শান্তি আশা করা যায়না। তারা নিজেদের মত করে নিজেদের ইতিহাস সাজিয়ে নিয়েছে, এবং সেটাকেই চোখ ধাঁধানো মোড়কে বের করে বিশ্বমানবতাকে বোকা বানিয়েছে। তারা জ্ঞানের (জাস্ট ইনফরমেশন!) পাহাড় গড়েছে, সেই জ্ঞান দিয়ে তারা গোটা বিশ্বকে করায়ত্ব করতে চায়! অথচ সে জ্ঞানের ভিত্তিটা ও তাদের নয়! মুসলিমদের থেকে চুরি করা। সুতরাং এরকম ভিত্তিহীন ও বানোয়াট একটি কাল্পনিক সভ্যতার নামে ’আযাব’ আর কতদিন দুনিয়ার শাসকের আসনে অধিষ্ঠিত থাকতে পারে???
তারা নিজেদের শোষণ ও ফেরাউনী খোদায়ী টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের মত আইন বানিয়ে নিয়েছে। যে আইনের সুফল একমাত্র তারাই ভোগ করে এবং সেই একই আইনে সমগ্র দুনিয়াবাসী সাজা প্রাপ্ত হয়! সমগ্র মানবতাকে গোলাম বানানোর জন্য স্বাধীন শিক্ষাব্যবস্থায় গোলামী মনোভাবের জিঞ্জির প্রতিষ্ঠা করেছে। যেন সমগ্র মানবতাকে তারা একই সাথে সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ছে। নিজেদের সভ্যতার ডিলার বানিয়ে যাকে ইচ্ছে তাকে সভ্যতার হুমকি হিসেবে ডিক্লেয়ার দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে তার উপরে। এরকম একটি নির্ভরশীলতার অযোগ্য শক্তির হাতে কীভাবে দুনিয়ার নিয়ন্ত্রন ছেড়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারি?
[৮]
সুপ্রিয় পাঠক!
ইসলামী সভ্যতার রাজনৈতিক পতনের একশত বছরে পদার্পন করেও কি আমরা মুসলিম উম্মাহ সহ সমগ্র মানবতার মুক্তির কথা ভাববোনা? সকল যুলুম ও অশান্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবোনা? দুনিয়াকে তার পতন থেকে রক্ষা করে একটি বসবাসযোগ্য দুনিয়া প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখবোনা? একটি আদিল দুনিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য কি সংগ্রাম জারী রাখবো না? অবশ্যই রাখতে হবে, অবশ্যই…
কেননা এসকল প্রশ্ন আমাদের ইনসানিয়াত তথা মনুষ্যত্বের সাথে জড়িত…
আল্লাহ মানুষ কে অন্যান্য সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা করেছেন কয়েকটি গুনাবলীর মাধ্যমে
১.সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারা
২.সুন্দর ও অসুন্দরে পার্থক্য করতে পারা
৩. উপকার ও অপকারের মাঝে পার্থক্য করতে পারা
৪. যুলুম ও আদালতের মাঝে পার্থক্য করতে পারা
৫. স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি থাকা
৬. ভাল কে বেছে নেয়ার ক্ষমতা
৭. ভাবের সুস্পষ্ট আদান- প্রদানের জন্য সুনির্দিষ্ট বচন ও লিখন পদ্ধতি
আমরা যদি উপরোক্ত বিষয় গুলোর সঠিক ব্যবহার না করতে পারি, আমরা মানুষের কাতার থেকে পশুর কাতারে নেমে যাব! আমি যে মতাবলম্বীই হই না কেন? মানুষ হিসবে, মুসলিম হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো- হক কে হক, বাতিলকে বাতিল জানা, যুলুম কে যুলুম বলতে পারা এবং আদালত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। সকল যুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়া, ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করার হিম্মত আমাদের প্রত্যেকের বুকে সঞ্চার করতে হবে। তখনই একমাত্র মানুষ হিসেবে, সৃষ্টিজগতের সেরা সৃষ্টি হিসবে, সৃষ্টিজগতের প্রতি স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে একটি আদর্শ বসবাসযোগ্য আদিল দুনিয়া গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এই কাজগুলো করতে পারলেই কেবল প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব। তখন ই একমাত্র হাকীকতের অন্বেষন উপযোগী হওয়া সম্ভব। ঠিক তখনই অযোগ্যদেরকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে যমীনের সর্বত্র শান্তি কায়েম করা সম্ভব। অন্যথায় নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে ’মুক্তির সংগ্রাম’! আর অপরের মুক্তির সংগ্রাম কে বলে বসবেন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ’!! নিজেদের দেশে আন্দোলন করলে সেটা জাতীয় চেতনা! আর প্রতিবেশি দেশে প্রতিবাদ হলে সেটা বিশৃঙ্খলা! স্পষ্ট জুলুম দেখা সত্ত্বেও সেটা হয়ে যাবে প্রতিবেশির আভ্যন্তরিন ইস্যু! এরকম দ্বিমুখী আচরণ করে তথাকথিত সুশীল হওয়া গেলেও মানুষের কাতারে ওঠা যাবেনা।
[৯]
মুসলিম হিসেবে আমাদের তো কোন হীনমন্যতা থাকার কথা নয়! তবু আমরা কেন হীনমন্য থাকব?
যেখানে আমাদের ওহীর দিকনির্দেশনা আছে, সামগ্রিক জীবনের রাহবার হিসেবে রাসূল আছেন। নিজেদের ভিত্তি হিসেবে ১৪০০ বছরের প্রতিষ্ঠিত সোনালী ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস আছে। তাহলে কীভাবে আমরা হীনমন্য থাকতে পারি?? কিভাবে আমরা পরাশক্তির চোখ রাঙ্গানীতে পিছপা হতে পারি? কিভাবে মানবতার কথা বলে আমাদের উপর ছড়ি ঘুরাতে দিতে পারি? যেখানে তাদের নিজেদের ই মানবতার কোন ধারণাই নাই! তারা আজ পর্যন্ত বহু ধোঁকাবাজী করেছে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ আজকের পরাশক্তি গুলো। এদের ইস্ট ব্লক, ওয়েস্ট ব্লক, আমেরিকা ব্লক, চায়না ব্লক, কিসের ইউনাইটেড ন্যাশনস কিসের ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন! সকলেই একে অপরের চেয়ে বড় যালেম। এদের মুখের বুলিতে ভুলে বসে থাকা চলবেনা- তারা আজকের সভ্যতার এই ধ্বজা উড়িয়েছে মুসলিম উম্মাহর-বিশ্বমানবতার রক্তের সাগরের উপরেই! সুতরাং তারা কখনোই শান্তি রক্ষা করার নাম করে বিশ্ব ক্ষমতায় অধিষ্টিত থাকার যোগ্য নয়।
ইতিহাস সাক্ষী, আমাদেরই পুর্বপুরুষগণ তামাম দুনিয়ায় ইসলামের আলোকে ভারসাম্য ও শান্তি বজায় রেখেছিল , আমরাই তাদের গর্বিত উত্তরসূরী। আমাদের দ্বারাই ইসলাম আবার দুনিয়ার কেন্দ্রে পুনঃস্থাপিত হবে। সমগ্র দুনিয়া আজ মুক্তির আশায় ইসলামের দিকে চেয়ে রয়েছে, ইসলাম ও তার পুনর্জাগরণের জন্য তৈরী হচ্ছে ইনশা আল্লাহ। আরো একবার সমগ্র দুনিয়ায় আদালত ও সালামতের তুলাদন্ড প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামে পুনর্জাগরণ হবেই হবে….
পরিশেষে, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ ইতিহাস বিজ্ঞানী, মহান আলেম, ইবনে খালদুন তার সুবিখ্যাত দায়েরুস সিয়াসাহ বা ইসলামের রাজনৈতিক চক্রের একটি পর্যায় নির্দেশ করেন ”আস সুন্নাতু হিয়া আস সিয়াসাহ” অর্থাৎ ‘সবচেয়ে বড় সুন্নত হলো রাজনীতি’। সুতরাং সে আলোকেই বলতে চাই- খেলাফত পতন এর শতবর্ষে পদার্পন করে আজ আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসের পরবর্তী বাঁকটি কেমন হবে? দুনিয়া কি চলমান যুলুমবাজ দের হাতে থেকেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে নাকি আবার ইসলামী সভ্যতার এক সোনালী সূর্যোদয় হবে? যদি আমরা ইসলামের পূনর্জাগরণ চাই, তবে অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। “আমরা মুসলিম সবে ভাই ভাই, ঐকের চেয়ে বড় কোন শক্তি নাই” আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে- সকল মুসলিমের জীবন ব্যবস্থা একটিই, আর তা হলো ইসলাম! ইসলামের কোন শাখা প্রশাখা নাই,
কোন রেডিক্যাল ইসলাম নাই!
কোন লিবারেল ইসলাম নাই!
কোন মডারেট ইসলাম নাই!
কোন পলিটিক্যাল ইসলাম নাই!
কোন সালাফি ইসলাম নাই!
কোন মাযহাবী ইসলাম নাই!
কোন লা মাযহাবী ইসলাম নাই!
ইসলাম শুধুমাত্র ইসলামই!
আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল, কুর’আন ও হাদীসের কোথাও ইসলামের কোন ভার্সনের কথা উল্লেখ করেন নাই, সুতরাং মুসলিম উম্মাহর মাঝেও এরকম কোন বাধা বিভক্তি থাকতে পারেনা, পারেনা, পারেইনা!!
কেননা আমরা এক আল্লাহ তে বিশ্বাস করি,এক রাসূলের আদর্শ মানি, এক কিতাবের হুকুম মানি, আমরা একই দ্বীনের অনুসারী, আমাদের মাঝে কি করে বিভেদ থাকতে পারে?
হিজরী নববর্ষ এর প্রত্যয় হোক “মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বর্ণালী সভ্যতাকে- সমগ্র সৃষ্টি জগতের কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করে একটি বসবাস যোগ্য আদিল দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করা”
আমাদের তরফ থেকে অনাগত প্রজন্মের কাছে এটিই হোক সবচেয়ে বড় সওগাত!!!
খোশ আমদেদ হিজরী নয়া সাল