মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনকে নাযিল করেছেন সমগ্র মানবতাকে সংশোধন করার জন্য। শুধু তাই নয় এই কোরআন এসেছে রহমতের জন্য এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যকে তাঁদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভাষায়,
আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ। (নাহল-৮৯)
কোরআনের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল, ব্যক্তিগত, সামাজিক ও বিশ্বজনীন অবস্থার সংশোধন।
ব্যক্তিগত অবস্থার সংশোধন নফসের পরিশুদ্ধি এবং উত্তম আখলাকের মাধ্যমে সম্ভব। আর এর মূল হল, শক্তিশালী ভিত্তিসম্পন্ন আকাইদ। কেননা ই’তিকাদ বা আকাইদ হল, আখলাক ও চিন্তার উৎস। এর পর মানুষের অভ্যন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আর এটা করতে হবে নামাজের মত যাহিরি ইবাদত সমূহের মাধ্যমে এবং হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণাকে পরিত্যাগ করার মত বাতিনি আখলাকের মাধ্যমে।
আর সামাজিক সংশোধন (সালাহ) শুরু হয় ব্যক্তির সংশোধনের মাধ্যমে। কেননা ব্যক্তির সমন্বয়েই সমাজ গড়ে উঠে থাকে। আর কোন কিছুর অংশের পরিশুদ্ধি ছাড়া সেটা পূর্ণভাবে পরিশুদ্ধ হবে না। আর এটা তখন-ই সম্ভব যখন মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা যাবে এবং তাঁর নফসকে শাহওয়াত থেকে মুক্ত রাখা যাবে। আর এটা হল, ইলমূল মুয়ামালাত বা মুয়ামালাত সংক্রান্ত জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত।
আর আমাদের দার্শনিক (হুকামাগণ) এটাকে সিয়াসাতুল মাদানী বলে অভিহিত করে থাকেন।
উমরানী সালাহ বা বিশ্বজনীন সালাহ হল, এই দুইটির চেয়েও অনেক বেশী সামগ্রিক। আর এটা মুসলিম উম্মাহর নিজাম (ব্যবস্থাপনা) – কে রক্ষা করার মাধ্যমে সম্ভব। বিভিন্ন অঞ্চল ও সেই সকল অঞ্চলে গড়ে উঠা বিভিন্ন জামায়াত (দল ও প্রতিষ্ঠান) এর সাথে সম্পর্ককে মূলনীতির উপর ভিত্তি করে দাঁড় করাতে হবে এবং তাঁদের মধ্যকার ঐক্যকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মাসলাহাত (স্বার্থ) এর দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে যখন ছোট মাসলাহাতের সাথে বড় মাসলাহাতের দ্বন্দ তৈরি হবে তখন বড় বা সামগ্রিক মাসলাহাতকে বেঁছে নিতে হবে। আর এই সকল বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞানকে ইলমূল উমরান ও ইলমূল ইজতিমা’ (সমাজের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান) বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
এই ভূমিকা প্রদানের পর আল্লামা তাহির বিন আশুর তাঁর ইসতিকরা (আরোহী) পন্থার মাধ্যমে কোরআনের ৮ টি মাকসাদের কথা উলেখ করেন (অনুবাদক),
১। বিশুদ্ধ একটি ই’তিকাদ (আকাঈদ) এর শিক্ষা দেওয়া এবং সঠিক সামাজিক চুক্তিকে শিক্ষা দেওয়া।
২। তাহযিবুল আখলাক (উত্তম আখলাক)।
৩। শরিয়ত (আইন ও বিধান)। একই সাথে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিধানকে শিক্ষা দেওয়া।
৪। সিয়াসাতুল উম্মাহ (উম্মতের রাজনীতি)। আর এটা কোরআনে বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সমগ্র উম্মাতের সালাহ (সংশোধন) এবং এর নিজাম বা ব্যবস্থাপনা কে রক্ষা করা।
৫। উপমা নেওয়ার জন্য ও খারাপ বিষয় সমূহ থেকে বিরত রাখার জন্য পূর্বের জাতি সমূহের কাহিনী সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে।
৬। যুগজিজ্ঞাসার জবাব দানে সক্ষম একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। যে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে শরিয়তের বিধিবিধানকে শিক্ষা দেওয়া হবে।
৭। ওয়াজ, নসিহত, সতর্কবাণী ও সুসংবাদ।
৮। রাসূলের সিদক বা সত্যতাকে প্রমাণ করার জন্য প্রেরিত মু’জিযা সমূহ।
অনুবাদকঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ