(আল্লামা ইকবাল এই খুৎবাটি ১৯৩২ সালে ঈদ-উল-ফিতরের সময় দিয়েছিলেন। যেটা পরে ‘আঞ্জুমানে ইসলামী পাঞ্জাব’ ছাপিয়েছিল।)
কুরআন মাজীদে আল্লাহ বলেছেনঃ “شَہْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْٓ اُنْزِلَ فِيْہِ الْقُرْاٰنُ ھُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْہُدٰى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَہِدَ مِنْكُمُ الشَّہْرَ فَلْيَصُمْہُ
“রমজান মাস, এই মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে যা সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সন্ধান পাবে, তার জন্য পুরো মাসটি রোজা রাখা অপরিহার্য।” (২:১৮৫)
এটাই আল্লাহর নির্দেশ এবং এজন্যই আমরা পুরো রমজান মাসে রোজা রাখি। আর এই নির্দেশ পালন করার তাওফিক পাওয়ার খুশিতে আজ আমরা সবাই মিল্লাত হিসেবে মহান রবের দরবারে শুকরানা সিজদা আদায় করা তথা ঈদের নামাজের জন্য জমা হয়েছি। মুসলমানদের ঈদের খুশি বলতে যদি কিছু হয়ে থাকে, তাহলে তা নিছক হক্বের অনুসরণের কারণেই। অর্থাৎ দাসত্বের ফরজিয়াত আদায় করার জন্য পুরোপুরি বের হওয়া। আজ সারা দুনিয়ায় মুসলিম উম্মাহ ঈদের আনন্দ উদযাপন করছে। মুসলমান উম্মাহ ছাড়া আর কোনো উম্মত কি আছে যারা আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ঈদ উদযাপন করে ?
ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে রোজা ফরজ হয়। একই বছর রাসুল (সঃ) সাদকায়ে ফিতরের হুকুম দেন। তিনি (সঃ) এক খুৎবায় সাদকায়ে ফিতরের ফজিলত বর্ণনা করেন অতঃপর তা আদায় করার নির্দেশ দেন। ঈদগাহে জামায়াতের সাথে ঈদ-উল-ফিতরের নামায পড়াও একই বছর শুরু হয়। দ্বিতীয় হিজরির আগে ঈদের নামায হতো না। যখন আল্লাহ রব্বুল আলামীন নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলামের রুকুনসমূহ তথা তাওহীদ, নামায, রোজা, যাকাত ও হজ্ব এর বিধান দেন তা আসলে বান্দার ইসলাহ, দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি এবং হিদায়াতের উদ্দেশ্য দেন যাতে করে বান্দা সতিকার্থে মানুষ হয় যা আল্লাহ কুরআন ‘আহসানে তাকবীম’ নামে উপস্থাপন করেছে। মুসলিম মিল্লাত যেন এমন মিল্লাত হয়ে যা কুরআন পাক বর্ণনা করেছে শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হিসেবে যারা সর্বদায় নিজেদের কার্যক্রম আদল এবং মধ্যম পন্থার মাধ্যমে করে। মূলত ইসলামের প্রতিটি রুকুনের মাঝে মানব জীবনের বাহ্যিক এবং অন্তর্গত উভয় দিকের বিকাশের জন্য হাজারও হিকমত লুকায়িত রয়েছে। আজ আমি সওম নামক এই রুকুনের হাকিকত সম্পর্কে দু-একটি কথা বলবো যা পাবন্দির সঙ্গে পালন করার ফলে শুকরিয়া আদায় করার জন্য আজ আপনারা ঈদ উদযাপন করছেন।
রোজার দর্শন
রোজা পূর্ববতী উম্মাতদের জন্যও ফরজ ছিলো। রোজার সংখ্যা তাদের যা ছিলো আমাদের তা না-ও হতে পারে। ফরজ এই জন্য করে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে মানুষ পরহেজগারি এখতিয়ার করে।
আল্লাহ বলেন,
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَـمَا كُتِبَ عَلَي الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ۱
এই আয়াতে বলা হচ্ছে রোজা মানুষকে পরহেজগারির পথে পরিচালিত করে। অর্থ্যাৎ রোজার মাধ্যমে জিসিম এবং রূহ উভয়ই পরিশুদ্ধ হয়। ‘রোজা একটি ব্যক্তিগত ইবাদাত’ এই চিন্তা সঠিক নয়। উপরন্তু এই ব্যবস্থপনার মাধ্যমে (মানুষের) অন্তর্গত এবং বহির্গত উভয়ের পরিশুদ্ধী করা, বরদাশত করা, পশুসুলভ আচরণকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাপনা এবং মুসলিম মিল্লাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইসলাহের হিকমতও রমজানের মাঝে লুকিয়ে আছে। ব্যক্তিগতভাবে রোজা রাখার ফলে যে সমস্ত ফায়দা হয় তা লাগাতার এক মাস রোজা রাখার পরিবর্তে বছরের অন্য কোনো মাসে রাখা যেত। যদি শুধুমাত্র ব্যক্তির ইসলাহ এবং রুহানিয়াতের উন্নতির বিষয়টিই মুখ্য হত, তাহলে তো এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু শরিয়ত প্রণেতার সামনে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়বরং মিল্লাতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইসলাহর বিষয়টিও ছিলো।
ঈদের হিকমত
আজকের এই ঈদকে ঈদ-উল-ফিতর বলা হয়। আল্লাহর পয়গম্বর যখন আল্লাহর নির্দেশে ঈদের নামাযের জন্য ঈদগাহে জমায়েত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তখন একই সাথে সাদকায়ে ফিতরা আদায় করারও নির্দেশ দেন। ঈদের দিন নির্দিষ্ট করার পিছনে শরীয়ত প্রণেতার উদ্দেশ্য ছিলো সাদকায়ে ঈদ-উল-ফিতর জারি করা (যদি এমনটা হয়ে থাকে) এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। যাকাত এবং উত্তরাধিকার বন্টনের পর তৃতীয় যে বিষয়টি ইসলাম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পেশ করেছে তা হল সাদকা। আর সাদকার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঈদ-উল-ফিতরের সাদকা যা সবাইকে নির্দিষ্ট একটি দিনে আদায় করতে হয়।
রোজার জাতীয় ফায়দা
রমজান মাস আপনারা এমনভাবে কাটিয়েছেন যাতে করে আপনারা খাওয়া এবং পান করার বিষয়ে সময়ানুবর্তীতা শিখে নিয়েছেন, নিজের শরীর মজবুত করে নিয়েছেন, আগামী এগারো মাসের জন্য বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষা করার মত রসদ সংগ্রহ করে নিয়েছেন। রোজার কদর ও মূল্য শিখেছেন। এগুলো সব ব্যক্তিগত ফায়দা। কিন্তু উম্মত হিসেবে রোজার ফায়দা হচ্ছে প্রত্যেকে সাহেবে তাওফিক মুসলমান নিজের মিল্লাতে দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের জন্য সহানুভূতিশীল হয় এবং সাদকায়ে ফিতরা আদায় করার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধান করে। এইক্ষেত্রে শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করার পূর্বেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান যেন সাদকায়ে ফিতরা আদায় করে ঈদগাহে যায়। এর মানে এই নয় যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা শুধুমাত্র এক বা অর্ধেক দিনের জন্য বরং এর গুঢ় উদ্দেশ্য হচ্ছে লাগাতার এক মাস নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে যে তাকওয়া আমরা অর্জন করেছি তার বদৌলতে যেন মুসলমানরা সারা বছর এভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন।
নুযুলে কুরআন উৎসব
এখন প্রশ্ন হলো যে, রমজান মাসের সাথেই কেন রোজা কে ফরজ করা হল? এই বিষয়ে জেনে থাকা প্রয়োজন যে, ইসলামে মানুষের ব্যক্তিগত ও জাতীয় (ইজতেমায়ী) জীবনের গুঢ় উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রোজার সময়টি একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী হওয়া প্রয়োজন ছিল এবং এজন্য একটি মাসকে নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। অন্যদিকে ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আল্লাহ্র অনুগত বান্দা হিসেবে গড়ে তোলা, এইজন্য রোজাকে ঐ মাসেই রাখা হয়েছে যে মাসে আল্লাহ্র হুকুম-আহকাম তথা কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিলো। অন্যকথায়, প্রতিবছর পুরো একমাস তাযকিয়া-এ-নাফস এর সাথে সাথে কুরআনে হাকিমের নাযিলের উৎসব পালন করার জন্য হুকুম দেওয়া হয়েছে, যাতে করে আল্লাহর বিধানের সম্মান ও পবিত্রতা সর্বদা মুসলমানদের সামনে থাকে এবং তারাবীহ-র নামায পালন করার মাধ্যমে কওমের প্রত্যেক ব্যক্তি ইজতেমায়ী জীবনের জন্য আইনীভাবে সত্যিকার্থে শক্ত পোক্ত হয়ে যায় আসল বিষয় ছিলো কওমের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইসলাহের সাথে সম্পৃক্ত। কুরআনের যেখানে সিয়ামের ব্যাপারে কথা এসেছে, ঠিক তারপরেই বলা হয়েছে تِلْكَ حُدُوْدُ اللہِ فَلَا تَقْرَبُوْھَاكَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللہُ اٰيٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمْ يَتَّقُوْنَ
অর্থাৎ “এটা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমা, এর কাছেও যেওনা। এভাবে আল্লাহ্ লোকেরদের জন্য তাঁর বিধান সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, আশা করা যায় এর ফলে তারা ভুল কর্মনীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।” (২:১৮৭)
এর সাথেই উপরোক্ত সব কথার ফলাফল হিসেবে যোগ করা হয়েছে وَلَا تَاْكُلُوْٓا اَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِہَآ اِلَى الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِيْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অবৈধ পদ্ধতিতে খেয়ো না এবং শাসকদের সামনেও এগুলোকে এমন কোনো উদ্দেশ্যে পেশ করো না যার ফলে ইচ্ছাকৃত ভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও।” (২:১৮৮)
রোজা রেখে শুধু অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতার অনুভূতি সৃষ্টি করাই যথেষ্ট ছিলো না, ঈদের দিন গরীবদের দু-চার দিনের খাবার দেওয়াও যথেষ্ট ছিল না, এমন একটি পন্থা অবলম্বন করা উদ্দেশ্য ছিল যাতে স্থায়ীভাবে দুনিয়ার সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। এইভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় যেখানে উত্তরাধিকার বন্টন ও যাকাতের মাধ্যমে মুসলিম মিল্লাতের ধন সম্পদে এক প্রকার সমতা সৃষ্টি হয়। এই উম্মতের মাঝে যেন একে অন্যের সম্পদে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করার কোনো বিষয় না থাকে। রোজার ব্যবস্থপনায় শুধু ব্যক্তিগত রুহানিয়াতেরই উন্নতি বা মানুষের সাথে কিছু দিনের জন্য সহমর্মিতিই উদ্দেশ্য নয়, উপরন্তু শরীয়ত প্রণেতার দৃষ্টি এই বিষয়টির উপর ছিল যেন মানুষ নিজেই নিজের অর্জিত হালাল কামাইয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং অন্যের অর্জিত সম্পদের উপর বাতিল পন্থায় খাওয়ার চেষ্টা না করে।
মুকাদ্দামা আদালতে নিয়ে যেয়ো না
উপরে আলোচনাকৃত আয়াতে (২:১৮৮) ‘গুনাহ’ (لْاِثْمِ)-র মানে কতক মুফাসসির ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ হিসেবে নিয়েছেন। উলামায়ে কুরআন হুক্কামের অর্থ মুসলমানের নিজেদের মুফতি, কাজি ও সুলতান অর্থে নিয়েছেন। যখন নিজেদের ফকিহ ও কাজিদের সামনে মিথ্যা মামলা তৈরি করে নিয়ে যাওয়া লোককে আল্লাহ্ খারাপ বলেছেন, তাহলে বুঝে নিন অনৈসলামিক শাসনের হাকিমের (আদালত) সামনে এইরকম মুকাদ্দামা নিয়ে যাওয়া কেমনভাবে কি জায়েজ হতে পারে ! মাস জুড়ে রোজা রাখার এই উদ্দেশ্য ছিলো যে, আগামী বছর পুরোটাই এইভাবে একে অন্যের সহমর্মী এবং ভাই হিসেবে থাকা। যদি নিজের সম্পদ একে অপরকে ভাগ করে না দিতে পারেন, তাহলে কম করে হলেও আদালতে এই ধরনের কোনো মুকাদ্দামা নিয়ে যাবেন না, যেখানে ঘুষ দিয়ে হক্ব ও ইনসাফের বিরুদ্ধে অন্যের সম্পদ জবর দখল করার উদ্দেশ্য থাকে। আজকের দিন থেকে আপনাদের এই শপথ নেওয়া চাই যে, উম্মতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইসলাহের যে উদ্দেশ্য কুরআনে হাকিম বর্ণনা করেছে সেগুলোকে আপনারা সর্বদা সামনে রাখবেন।
এই সময়ে পাঞ্জাবের মুসলমানগণ (অর্থাৎ ১৯৩২) প্রায় একশো পঁচিশ কোটি টাকার ঋণে জর্জরিত। আর এর উপর প্রায় বিশ কোটি টাকা সুদ আরোপিত ছিল। এই ঋণ এবং সুদ থেকে বাঁচতে আপনাদের আল্লাহ্র বিধানের দিকে ফিরে আসা ব্যতীত এবং সম্পদের গোলামী থেকে নিজেকে মুক্ত করা ব্যতীত দ্বিতীয় কোন পথ আছে কি ? আজ থেকে যদি আপনারা এই ফাহেশা খরচ করা ছেড়ে দেন এবং সম্পদের মিথ্যা আর অপ্রয়োজনীয় মুকাদাম্মা আদালতে নিয়ে যাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আপনাদের ঋণের অধিকাংশই কমে যাবে এবং আপনারা অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে ঋণের গোলামী থেকে নিজেদেরকে আজাদ করে নিতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, সম্পদের মুকাদ্দামা ছেড়ে দিলে তা আপনাদেরকে সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করে দিবে যে টাকা আপনারা মুকাদ্দামা, ঘুষ ও উকিলকে দিয়ে নষ্ট করেন, সেগুলো দিয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। সুতরাং হে উপস্থিতি এখনো কি আপনাদের কুরআনের দিকে ফিরে আসার প্রয়োজন মনে হয় না ! আপনাদের কি এখনো শপথ করার প্রয়োজন বোধ হয় না যে দুনিয়ার জীবনে কুরআনের বিধানের অনুগত হয়ে যাবেন?
রাসুলে পাক (সঃ) মুসলমানদের বারবার বলেছিলেন যে, اِیَّـاکُمْ وَالْدِّیْنَ فَاِنَّہٗ ھَمٌّ بِاللَّیْلِ وَمذَلَّۃٌ بِالنَّھَارِ “দেখো, তোমরা ঋণ থেকে বাঁচো। ঋণ হল রাতের দুঃখ এবং দিনের অপমান।”
(البیہقی فی شعب الایمان، فصل التشدید فی الدین، حدیث:۵۲۹۴)
এই খুৎবায় মুসলমানদের সামাজিক জীবনের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে। হয়তো ঈদ-উল-আযহার সময় অনুরূপভাবে ইসলামী জীবনের অন্য কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হবে। যাইহোক, আমি এখন সারওয়ারে কায়নাত হুজুর পাক (সঃ)-এর একটি হাদীস বলে খুৎবা শেষ করবো যেটি অল্প কথায় অসাধারণভাবে সঠিক পথ (রুসদ) তথা হেদায়াতের সমস্ত দরজা (সাহারা) মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়।
أَمَرَنِیْ رَبِّیْ بِتِسْعٍ الْاِخْلَاصِ فِی السِّرِّ وَالْعَلَانِیَۃُ ، وَالْعَدْلِ فِی الْغَضَّبِ وَالرِّضَا وَالْقَصْدِ فِی الْفَقْرِ وَالْغِنٰی ، وَ أَنْ اُعْفُوَ عَنْ مَنْ ظَلَمَتَی ، ووأَصِلُ منْ قَطَعَنِی ، وَأُعْطِیَ مَنْ حَرَمَنِیْ ، وَأَنْ یَکُوْنَ نُطْقِیِ ذِکْرًا وَصَمَتِی فِکْرًا وَنَظَرِیْ عِبْرَۃِ
আমার রব আমাকে নয়টি বিষয়ের আদেশ দিয়েছেনঃ প্রকাশ্যে এবং গোপনে ইখলাসের উপর থাকা, রাগ ও সন্তুষ্টি উভয়াবস্থায় ইনসাফ করা, গরীব ও সঞ্চল উভয়াবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা, যে আমার উপর অন্যায় করে তাকে মাফ করে দেওয়া, যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই তার সাথে সম্পর্ক ধরে রাখা, যে আমাকে না দেয় যেন আমি তাকে দিই, আমার কথা যেন আল্লাহ্র যিকর হয় এবং চুপ থাকা যেন চিন্তা-ভাবনায় অতিবাহিত হয়, এবং আমার দেখা যেন শিক্ষা অর্জনের জন্য হয়।
(الجامع لاحکام القرآن للقرطبی، جلد۷، ص۳۴۶، دارعالم الکتب،الریاض، ۲۰۰۳ء)
অনুবাদ– মুরসি আল–ইমাম