ইসলাম মানবজাতিকে ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি এবং ধর্মপরায়ণ পরিবারের পাশাপাশি ধর্মপরায়ণ সমাজের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। এ সমাজ ঈমান ও পুণ্যের সমাজ, এ সমাজ পরিপূর্ণ ঈমানদারদের সমাজ, যারা বস্তুবাদের বলয় থেকে মুক্ত থাকে, প্রভুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে, একে অপরের সাথে সদাচরণ করে এবং আদালত ও পারস্পরিক পরামর্শ ও আলোচনার ভিত্তিতে একে অপরকে উপদেশ দেয়, যেভাবে তাদের পালনকর্তা কোরআনে বর্ণনা করেছেন,
فَمَآ أُوتِيتُم مِّن شَىْءٍۢ فَمَتَـٰعُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَمَا عِندَ ٱللَّهِ خَيْرٌۭ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ. وَٱلَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَـٰٓئِرَ ٱلْإِثْمِ وَٱلْفَوَٰحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا۟ هُمْ يَغْفِرُونَ. وَٱلَّذِينَ ٱسْتَجَابُوا۟ لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ
“যা-ই তোমাদের দেয়া হয়েছে, তা কেবল দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপকরণ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা যেমন উত্তম, তেমনি চিরস্থায়ী। তা সেই সব লোকের জন্য, যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে, যারা বড় বড় গুনাহ এবং লজ্জাহীনতার কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ক্রোধ উৎপত্তি হলে ক্ষমা করে, যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, নামাজ কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।” (সূরা শুরা : ৩৬-৩৮)
ঈমান ও ইবাদতের পরে এ ইসলামী সমাজ যে স্তম্ভগুলোর উপর প্রতিষ্ঠিত, তা হলো,
১. ভ্রাতৃত্ব এবং ভালোবাসা :
ভ্রাতৃত্ব এবং ভালোবাসা মূলত ঈমান বা বিশ্বাসের স্বাভাবিক ফল, যা বিশ্বাসীদেরকে দৃঢ় বিশ্বাসবোধের সাথে পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ করে এবং ফলশ্রুতিতে সামাজিক বন্ধন মজবুত হয়। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌۭ
“মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজুরাত : ১০)
ইতিহাস ও বাস্তবতা উভয়ই প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীতে দ্বীনের ভিত্তিতে গড়ে উঠা ঐক্য বা বন্ধনের মতো সুদৃঢ় কোনো ঐক্যের অস্তিত্ব নেই এবং এক্ষেত্রে ইসলামের মতো কার্যকর কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই।
ভ্রাতৃত্বের সবচেয়ে নিচের স্তর হলো নিজের হৃদয়কে হিংসা ও ঘৃণা থেকে মুক্ত রাখা, যে হিংসা ও ঘৃণাকে ‘জাতির রোগ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অন্য কথায় হিংসা ও ঘৃণা হলো চাঁছার যন্ত্র, তবে তা চুলের নয়, বরং ধর্মের! বিশ্বাসের শিকড় যত গভীর হবে, সত্তা, জীবন ও ভ্রাতৃত্বের পাতা, ছায়া ও ফল তত বেশি হবে এবং হৃদয়ও তত বেশি অহংকার থেকে মুক্ত হবে, কারণ এর ফলে মানুষ নেওয়ার চেয়ে দেওয়া এবং অর্জন করার চেয়ে ত্যাগ করতে বেশি আগ্রহী হবে।
হাদীসে এসেছে,“তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার মুসলমান ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করবে, যা সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে।” (আল লুলু ওয়াল মারজান : ২৮১)
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত বিকশিত হয়, যতক্ষণ না এটি ব্যক্তিকে পরোপকারের স্তরে উন্নীত করে। সাহাবীদের সমাজ গঠনের অন্যতম ভিত্তি ছিলো ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা। আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন,
وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلْإِيمَـٰنَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِى صُدُورِهِمْ حَاجَةًۭ مِّمَّآ أُوتُوا۟ وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌۭ ۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِۦ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
“তারা (আনসারগণ) ভালোবাসে সেই সব লোকদের, যারা হিজরত করে তাদের কাছে এসেছে। যা কিছুই তাদের দেয়া হোক না কেন এরা নিজেদের মনে তার কোনো প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করে না এবং যত অভাবগ্রস্তই হোক না কেন নিজেদের চেয়ে অন্যদের অগ্রাধিকার দান করে। মূলত যেসব লোককে তার মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম।” (সূরা হাশর : ০৯)
২. সহানুভূতি এবং অনুগ্রহ :
প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের অন্যতম ফলাফল হলো সহানুভূতি এবং অনুগ্রহ। রাসূল (স.) বলেছেন,
“পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মু’মিনদের একটি দেহের মতো দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়।” (বুখারী : ৬০১১)
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে,
“দয়াশীল ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এ দয়া পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, বরং সকল ক্ষেত্রেই।” (বায়হাকী, জামি আস সাগীর : ৯৯৬১)
দুর্বল, এতিম, অভাবী ও মুসাফিরদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা একজন মুমিনের জন্য অত্যাবশ্যক। আল কোরআনে এ ধরনের মানুষদের প্রতি রূঢ় আচরণকে অবিশ্বাসী বা ঈমানহীন এবং ধর্মত্যাগীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ. فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ. وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ
“তুমি কি তাকে দেখেছো, যে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তিকে মিথ্যা বলছে? সে-ই তো এতিমকে ধাক্কা দেয়, এবং মিসকিনকে খাবার দিতে উদ্বুদ্ধ করে না।” (সূরা মাউন : ১-৩)
৩. সমর্থন এবং সহযোগিতা :
সমর্থন এবং সহযোগিতা হলো ভ্রাতৃত্ব এবং সহানুভূতি ও অনুগ্রহের বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। ইসলামী সহযোগিতার মানে হলো উদারতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা; অপুণ্য ও শত্রুতা নয়।
আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِ
“নেকী ও আল্লাহভীতির সমস্ত কাজে সবার সাথে সহযোগিতা করো এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না।” (সূরা মায়িদাহ : ০২)
এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম সুদ ও একাধিপত্যকে নিষিদ্ধ করেছে, কারণ এসবের মাধ্যমে শক্তিশালীরা দুর্বলদেরকে শোষণ করে।
অধিকন্তু নবী (স.) এ সহযোগিতার চিত্র তুলে ধরেছেন এই বলে যে,
একজন মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিনের জন্য একটি অট্টালিকা সদৃশ, যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। (আল লুলু ওয়াল মারজান : ১৬৭)
এছাড়াও সমাজের ব্যক্তিদের পারস্পরিক সহযোগিতা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মধ্যকার সহযোগিতা, শাসক ও প্রজাদের মধ্যকার সহযোগিতাও ইসলামী সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে যুলকারনাইন এবং ইয়াজুজ-মাজুজ কর্তৃক হুমকিগ্রস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
قَالُوا۟ يَـٰذَا ٱلْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِى ٱلْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَىٰٓ أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّۭا. قَالَ مَا مَكَّنِّى فِيهِ رَبِّى خَيْرٌۭ فَأَعِينُونِى بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا
“তারা বললো, ‘হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমরা কি তোমাকে এ কাজের জন্য কোনো কর দেবো, তুমি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবে?’ সে বললো, ‘আমার রব আমাকে যা কিছু দিয়ে রেখেছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করে দিচ্ছি’।” (সূরা কাহফ : ৯৪-৯৫)
৪. পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং সংহতি :
পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং পারস্পরিক সংহতি সে সমাজেই বিদ্যমান, যে সমাজে সামর্থ্যবানরা দুর্বলদেরকে, ধনীরা গরীবদেরকে সাহায্য করে, যে সমাজে অক্ষম ও অভাবীরা অসহায় বোধ করে না। এ সংহতির নূন্যতম মাত্রা হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাত। যাকাতের তত্ত্বাবধানে আছে বিশ্বাস, মুসলিম জনমত এবং আইন ও সার্বভৌমত্ব। বিশ্বাসের উৎপত্তি হয় একজন মুসলিম ব্যক্তির বিবেক থেকে, মুসলিম জনমতের উৎপত্তি হয় সমাজ থেকে, আইন এবং সার্বভৌমত্বের উৎপত্তি হয় রাষ্ট্র থেকে।
خُذْ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ صَدَقَةًۭ تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٌۭ لَّهُمْ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দাও এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো। তোমার দোয়া তাদের সান্ত্বনার কারণ হবে। আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।” (সূরা তাওবা : ১০৩)
যাকাত ছাড়াও একের সম্পত্তির উপর অন্যের আরও কিছু অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে প্রতিবেশীর অধিকার। কারণ সমাজের কোনো এক সদস্যের সুসময় ও দুঃসময় উভয় ক্ষেত্রেই গোটা সমাজকে পাশে থাকতে হয়। রাসূল (স.) বলেছেন,
“সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।” (আদাবুল মুফরাদ)
ইসলামী সংহতি জীবনের সকল দিককে অন্তর্ভুক্ত করে, হোক তা বস্তুগত বা নৈতিক। অন্য কথায়, এটি একটি জীবন্ত, বৈজ্ঞানিক, পুঁথিগত এবং সামরিক সংহতি। এটি অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে, যেগুলো সম্পর্কে ড. মুস্তফা আস সিবায়ী এর Socialism of Islam বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
৫. পারস্পরিক আলোচনা এবং পরামর্শ :
পারস্পরিক আলোচনা এবং পরামর্শ হলো আক্ষরিক অর্থে সংহতির বৈশিষ্ট্য। এটি প্রত্যেক মুসলমানকে দায়িত্বশীল করে তোলে। মুসলমানরা একে অপরের সাথে পরামর্শ করে, একে অন্যকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয় এবং নিজেরাও অন্যের উপদেশ গ্রহণ করে। আলোচনা বা পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ সম্পাদনকারী মুসলমানরা কখনোই অন্যায়ভাবে নিজের মতো প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। এটি ইসলামের অন্যতম নীতি, নাজাতের শর্ত।
কোরআনে বলা হয়েছে,
وَٱلْعَصْرِ. إِنَّ ٱلْإِنسَـٰنَ لَفِى خُسْرٍ. إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلْحَقِّ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلصَّبْرِ
“সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।” (সূরা আসর : ১-৩)
وَٱلْمُؤْمِنُونَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍۢ ۚ يَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা তাওবা : ৭১)
হাদিসে বলা হয়েছে,
“কল্যাণ কামনা করাই ধর্ম।” (মুসলিম)
অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে,
“মুমিনরা পরস্পরের আয়না স্বরূপ।” (জামিউস সগীর)
৬. ইসলাহ এবং উন্নয়ন :
মুসলিম সমাজ একটি মুসলিহ সমাজ যা তার ব্যক্তিদেরকে সংস্কার, শালীনতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা, পবিত্রতা সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং গোপন বা প্রকাশ্য সকল প্রকার জঘন্য কাজকে নিষিদ্ধ করে। এটি মদ এবং জুয়াকে শয়তানের কাজ এবং নিষিদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে। ইসলাম আরও নির্দেশ দেয় যে, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং গোপনাঙ্গের হেফাজত করে। ইসলাম কথা বলার ক্ষেত্রে, হাঁটা বা চলাফেরায় ক্ষেত্রে নগ্নতা পরিহার করার নির্দেশ দেয়।
যাই হোক, মুসলিম সমাজ ফেরেশতাদের সমাজ নয়, মানুষের সমাজ। আর মানুষের ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ইসলাম বলে, কেউ যদি পাপ করে, তবে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে, প্রদর্শন না করে বা তা নিয়ে অহংকার না করে। এটি করলে তার পাপের প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকবে এবং অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যাবে না। অতঃপর সে যেন তাওবা করে।
إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلتَّوَّٰبِينَ وَيُحِبُّ ٱلْمُتَطَهِّرِينَ
“আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন যারা অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকে ও পবিত্রতা অবলম্বন করে।” (সূরা বাকারা : ২২২)
৭. আদালত :
আদালত তথা ন্যায়বিচার মানুষের জীবনের সকল বিষয়ের সাথে জড়িত, তাই আদালত বাধ্যতামূলক এবং অন্যায় নিষিদ্ধ।
হাদীসে এসেছে,
“হে আমার বান্দাগণ, আমি নিজের উপর জুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের উপরেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করো না।” (মুসলিম)
আদালত এর মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারও অন্তর্ভুক্ত, যা সেসব প্রভাবশালীদের বিরোধিতা করে, যারা গরীবের রক্ত চুষে খায়। আদালত ধনীদের অন্যায় আধিপত্যের অবসান ঘটায় এবং যাকাতের মাধ্যমে তাদের সম্পত্তিতে দরিদ্রদের অধিকার প্রদান করে দরিদ্রদের মান বৃদ্ধি করে। এটি আইন ও বিচারকার্যের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে, এমনকি খলিফা বা তার সন্তানরা অন্যায় করলে তাদেরকেও সমানভাবে শাস্তি দেওয়া হয়।
রাসূল (স.) বলেছেন,
“আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করতো, আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম!” (মুসলিম)
৮. প্রগতিশীল সমাজ :
ইসলাম যে সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি প্রগতিশীল সমাজ এবং কোনো অনুন্নত সমাজ নয়। এ বিষয়টির কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন, কারণ ‘প্রগতি’ শব্দটি অনেক ব্যাখ্যার দাবিদার এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা নিজেদেরকে প্রগতিশীল হিসেবে দাবি করে। তারা আরও অভিযোগ করে যে, মুসলিম সমাজ, যেটিকে তারা ‘তৃতীয় বিশ্ব’ বলে অভিহিত করে, তা অনুন্নত। তদুপরি, চাটুকারিতার ছলে তারা মুসলিম দেশগুলোকে ‘অনুন্নত’ না বলে ‘উন্নয়নশীল’ হিসেবে অভিহিত করে। সত্যি বলতে, আমাদের প্রগতিশীলতার ব্যাপারে আমাদের মনোভাব, অন্য কথায়, এ ব্যাপারে ইসলামের মনোভাব স্পষ্ট করা উচিত। এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদেরকে প্রথমে প্রগতির ধারণাটি সংজ্ঞায়িত করতে হবে, কারণ কেউ কখনো কোনো বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দিতে পারে না, যদি না সে এটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখে। সহজ কথায়, প্রগতি বা অগ্রগতি মানে অন্যের আগে বা সামনে থাকা। এটির বিপরীত হলো অনগ্রসরতা বা অনুন্নয়ন, যার অর্থ অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকা। অগ্রগতি বা পশ্চাৎপদতা আপেক্ষিক, কারণ পিছিয়ে থাকা বা বিপরীতে থাকা ব্যক্তির প্রেক্ষিতেই আপনাকে এগিয়ে হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অনুবাদঃ কাজী সালমা বিনতে সলিম।