সভ্যতার পুনর্জাগরণে ব্যক্তিগত উদ্যোগের ভূমিকা

বর্তমান এই জুলুমপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করতে হলে কয়েকটি প্রশ্নের জবাব সুস্পষ্টভাবে জানা থাকতে হবে–

১. আজকের বিশ্বব্যবস্থা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে?
২. যে চিন্তা দ্বারা আজকের বিশ্বব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে, সে চিন্তা কাদের মাধ্যমে গঠিত?
৩. আজকের দুনিয়ার দার্শনিক ভিত্তি কী?
৪. মুসলমানদের দ্বারা শত শত বছরের আবাদকৃত দুনিয়ায় বর্তমানের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থান কোথায়?

আজ আফ্রিকার দিকে তাকালেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে হাড্ডিসার, অভুক্ত ও রুক্ষ মানুষদের চেহারা। অথচ এই আফ্রিকাতেই ইতিহাসের অনেক বৃহৎ সভ্যতাও গড়ে উঠেছিলো, যার অন্যতম উদাহরণ ‘মালি সভ্যতা’। মালির তীরবর্তী নাইজেরিয়া বা উত্তর আফ্রিকায় যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো, সে সভ্যতা শুধুমাত্র আফ্রিকাকে নয়, সমগ্র ইউরোপকেও আলোকিত করেছিলো। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের থাবায় আজ আফ্রিকা এমন একটি অবস্থানে নিপতিত, যেখানে সামান্য চিকিৎসার অভাবেই প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করছে।

বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা সবার ‘স্বপ্নের দেশ’ হিসেবে খ্যাত! কিন্তু আমেরিকার স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাতসহ প্রতিটি খাতই অনেক বেশি ব্যয়বহুল। কেবল শিক্ষাখাতের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই ভয়ংকর এক চিত্র দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি পরিশোধ করতে না পারার কারণে অনেক নারী পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পীড়াদায়ক এই মর্মস্পর্শী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে কেবলমাত্র সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দরুণ যা এক চরম বাস্তব সত্য।

ভারতের মুম্বাই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত শহরগুলোর একটি, অথচ সেই ভারতেরই অন্ধ্রপ্রদেশে খাবারের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।

ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলোতেও অনেক মানুষ গৃহহীন! ল্যাটিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেও একই অবস্থা বিরাজমান।

 

প্রশ্ন হলো বর্তমানে মানবতার এই ক্রান্তিকাল অতিক্রান্ত করার কারণ কী? এ রকম কেন হচ্ছে? কেনই-বা এত বেশি অসামঞ্জস্য?

 

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে দেখা যায়- মুসলমানদের আজ যে أمة وسطا বা কেন্দ্রীয় উম্মাহ হওয়ার কথা ছিলো, তারা সেই অবস্থান থেকে ছিটকে পড়েছে। ফলে তাদের জ্ঞানও অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং সামগ্রিকভাবে তাদের আখলাকী অধঃপতনও ঘটেছে। যেই জ্ঞান ও আখলাকের বলেই মুসলমানরা একসময় বিশ্বসভ্যতার নিয়ন্তা ছিলো, শাসকের আসনে আসীন ছিলো – সেই জ্ঞান ও আখলাক যখন ত্যাগ করে, তখন মুসলমানরাও তাদের অবস্থান হারায়।

তথাপি জ্ঞানের মৃত্যুবরণ এবং আখলাকী অধঃপতন শুধু মুসলমানদেরকেই নয়, বরং সমগ্র মানবতাকে এক ভয়াবহ অবস্থায় নিপতিত করে। যার প্রমাণ বর্তমান জুলুমপূর্ণ দুনিয়া। অথচ মুসলমান হিসেবে, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সম্মানিত উম্মত হিসেবে সমগ্র মানবতার মুক্তির দায়িত্ব ছিলো আমাদের উপর অর্পিত। কোরআনের একটি আয়াতের মাধ্যমে সে দায়িত্বের ভার আল্লাহ আমাদের উপর অর্পণ করেছেন। আয়াতটি হলো-

اِنَّا عَرَضۡنَا الۡاَمَانَۃَ عَلَی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ الۡجِبَالِ فَاَبَیۡنَ اَنۡ یَّحۡمِلۡنَهَا وَ اَشۡفَقۡنَ مِنۡهَا وَ حَمَلَهَا الۡاِنۡسَانُ ؕ اِنَّهٗ كَانَ ظَلُوۡمًا جَهُوۡلًا

“নিশ্চয় আমি আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত পেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকার করে এবং এতে ভীত-শংকিত হয়। অতঃপর মানুষ সে আমানত বহন করে নেয়। নিশ্চয় সে ছিল অতিশয় যালিম, একান্তই অজ্ঞ”। (সূরা আল-আহযাব-৩৩)

অর্থাৎ, কেবলমাত্র এবং একমাত্র ইসলামই গোটা সৃষ্টিজগৎকে ইলাহী আমানত হিসেবে ঘোষণা করে থাকে। ফলে ইসলামী সভ্যতার পিছিয়ে পড়ার অর্থ হলো গোটা মানবতাকে পিছিয়ে দেয়া। আমরা যেহেতু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, তাঁর দেয়া আমানতকে গ্রহণ করেছি এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি, এজন্য শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে নয়, বরং সমগ্র মানবতাকে জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব ছিলো আমাদের উপরই অর্পিত।

এখন আমাদের জানা থাকা উচিত, ইসলামী সভ্যতার পতনের পর এই যে সারাবিশ্বে এক ভয়াবহ অবস্থা, সর্বস্থ ভারসাম্যহীনতা, অসামঞ্জ্যস্তা – বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এর জন্য দায়ী মূলত বর্তমান দুনিয়াকে পরিচালনাকারী ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ। গোটা মানবতাও আজ যে ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতনের শিকার, তার জন্যও দায়ী এই ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ।

কিন্তু, আজকের এই ইউরোপ কীভাবে সৃষ্টি হলো

আমরা যদি ব্রিটিশদের ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো যে, তাদের সেইরকম কোনো স্বর্ণালী ইতিহাস নেই। নেই কোনো গৌরবময় অতীত। ১৫-১৬ শতাব্দী অবধি তাদের দেশে সেই অর্থে রাস্তাঘাট বলতে কিছুই ছিলো না। ছিলো না উন্নত কোনো আবাসন। গবাদি পশু ও মানুষ একই ঘরে বসবাস করতো। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসেও তাদের তেমন কোনো অবদান ছিলো না। তাদের অস্তিত্ব কোনো তাৎপর্যপূর্ণও ছিল না দুনিয়ার কাছে। নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ভারতে আসার পরেই মূলত ব্রিটিশরা পৃথিবীর ইতিহাসে নিজেদের অস্তিত্বের কথা জানান দেয়।

১৬৫০ সালের দিকে স্কটল্যান্ডে একটি গ্রুপ মুসলমানদের সাহিত্য ও ইসলামী সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি আন্দোলন শুরু করে। এ গ্রুপটিকে আমরা আত্মবিশ্বাসী দল হিসেবে অভিহিত করতে পারি। তারা ভাবতো, “আমরাও তো মানুষ। মুসলমানরা যদি এত কিছু করতে সক্ষম হয়, তবে আমরা কেন পারবো না!” এ আত্মবিশ্বাসী দলটিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ জাহাজ নিয়ে বিভিন্ন মহাদেশে যাত্রা শুরু করে, আবার কেউ কেউ নতুনভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা শুরু করে। ফলশ্রুতিতে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ বছরের ব্যবধানে ব্রিটেন এমন একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, যার সূর্য কোথাও অস্তমিত হতো না – বলে দেখা যায় ইতিহাসে।

একইভাবে যদি ফ্রান্সের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদেরও কোনো সুনির্দিষ্ট অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য নেই। পরবর্তীতে ফ্রান্সেও এমন একটি দল গড়ে উঠে, যারা নিজেদেরকে মূল্যবান এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করতো। এ দলটি ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে আমরা যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা বলি, তার বড় একটি অংশে অবদান রাখতে সক্ষম হয় সেই দলটি।

জার্মানির চিত্রও ছিলো একইরকম। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত তারাও সে রকম কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতি ছিল না। ভঙ্গুর একটি দেশ ছিলো জার্মানি। কিন্তু জার্মান রোমান্টিসিজম আন্দোলনের পর থেকে ইতিহাসে জার্মানদের অবস্থান পাকাপোক্ত হতে শুরু করে। তাদের এ রোমান্টসিজম আন্দোলনের মূল কথা ছিলো, “আমরা যদি জার্মান জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারি, তাহলেই কেবল পৃথিবীর মানুষ বেঁচে থাকবে। কেননা, আমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি।”

একইভাবে সোভিয়েতরাও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করার পর নিজেদেরকে ‘বিশ্ব বিবেক’ বলে দাবী করতো। তারা মনে করতো পুঁজিবাদ থেকে পৃথিবীবাসীকে একমাত্র তারাই রক্ষা করতে সক্ষম। তারা জাতি হিসেবে নিজেদেরকে খুব মূল্যবান গণ্য করতো। তাদের আত্মবিশ্বাস ছিলো, “রাশিয়ান জাতি হিসেবে আমরা মূল্যবান। সুতরাং পুঁজিবাদের এ মহাজুলুম থেকে আমরাই দুনিয়ার মানুষকে মুক্ত করতে পারবো।”

তাদের সবারই এ আত্মবিশ্বাসের মূল অনুঘটক বা শক্তি ছিলো ইসলাম। কেননা, তখন তারা ইসলামকে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করতো। তৎকালীন পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হতো ইসলামের আলোকে। তৎকালীন সময়ে পৃথিবীতে দার্শনিক বলতে বোঝাতো ইবনে সিনা, আল কিন্দি, আল-ফারাবী, ইবনে রুশদদেরকে। আলেম বলতে বোঝাতো ইমাম গাজ্জালীকে। সুফী বলতে বোঝাতো মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবীকে। তারা ইসলামের ইতিহাসের এ সকল মহান ব্যক্তিদের অধ্যয়ন করতো। এর অন্যতম প্রমাণ হিসেবে জার্মান কবি গ্যোতের “কাসিদায়ে মুহাম্মাদিয়া” কবিতার কথা উল্লেখ করা যায়, যা অধ্যয়ন করলে খুব সহজেই বোঝা যায় জার্মানরা তৎকালীন সময়ের মুসলমানদের দ্বারা কত বেশি প্রভাবিত ছিলো। তারা আমাদের আলোতে আলোকিত হয়েই বর্তমান বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। অতএব এসব থেকে নিশ্চিতভাবেই অনুধাবন করা যায় মূলত কাদের চিন্তা দ্বারা আজকের সমগ্র দুনিয়া প্রভাবিত, আজকের দুনিয়ার দার্শনিক ভিত্তিমূল কোন মাটিতে গ্রোথিত!

প্রশ্ন হলো ইউরোপীয়রা আমাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই যদি এত কিছু করতে পারে, গোটা দুনিয়ার ভক্ষক হয়েও রক্ষক শ্রেণী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে আমরা কেন সৃষ্টিজগতের কল্যাণে নিজেদেরকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে পারবো না, যেখানে আমরা পূর্বে ছিলাম?

যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা সরাসরি কোরআনে বলেছেন,

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের জন্য। যাতে তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজের ব্যাপারে নিষেধ করো, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।” (সূরা আল ইমরান: ১১০)

 

অন্যত্র বলা হচ্ছে,
هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
“তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি।” (সূরা হজ্ব: ৭৮)

বিদায় হজ্জের দিন সরাসরি দ্বীনের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করে নাজিল হয়,

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।” (সূরা মায়েদা: ০৩)

অর্থাৎ, আমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। আমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থেই। আমাদের হাত ধরেই গোটা দুনিয়া আধুনিক যুগে প্রবেশ করেছে। আমাদের হাত ধরেই গোটা দুনিয়া মানবাধিকারের সাথে পরিচিত হয়েছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে চিনেছে। আমরাই পরিপূর্ণ নেয়ামতের অধিকারী।

তাই আজ আবারো সময় এসেছে একজন মুসলিম যুবক/যুবতী হিসেবে সমগ্র মানবতাকে বর্তমান ভয়াবহ জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও নিগ্রহের হাত থেকে রক্ষা করার।

কিন্তু, সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি নেয়ামতে পরিপূর্ণ হওয়ার পরও, গোটা মানবতাকে রক্ষার দায়ভার আমাদের উপর অর্পিত হলেও কেন তাহলে আজ আমাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব? কেন আমরা এত বেশি হীনমন্যতায় আক্রান্ত?

উম্মাহর একজন সদস্য হিসেবে উম্মাহর এ আত্মবিশ্বাসের অভাব পূরণ করার দায়িত্ব আজ আমাদেরই। আজ যদি আমরা পুনরায় জাগতে না পারি, সঠিক জ্ঞান এবং হাকীকতের জ্ঞানকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হই, তাহলে মানবতার মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে আমরা ব্যক্তি হিসেবে অর্থাৎ এককভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সমগ্র উম্মাহ হিসেবেও ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমরা যদি একটি শক্তিশালী উম্মাহ গঠন করতে চাই, তবে আমাদেরকে ব্যক্তি হিসেবে শক্তিশালী হতে হবে। আর শক্তিশালী ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত একটি উম্মাহই পারে একটি শক্তিশালী বসবাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণ করতে; যে যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন আমাদের সম্মানিত সাহাবীগণ, তাবেয়ী এবং তাবে-তাবেয়ীগণ।

আমাদের গৌরবজ্জল ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ১২শ বছরের ন্যায়ভিত্তিক শাসন– এসব মাত্র তিনটি প্রজন্মের তৈরি। সমগ্র মানবতার মুক্তির এই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নেতৃত্বে। পরবর্তীতে সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে-তাবেয়ীগণ এ আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের জীবনচরিত আমাদের সামনে সুস্পষ্ট। তারা কীভাবে সমগ্র পৃথিবীকে জয় করেছেন তাও আমরা জানি। আমরা জানি, তাদের সেই রেখে যাওয়া সভ্যতার মিরাস টিকে থাকবে দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত। সুতরাং বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই মহান দায়িত্ব আমাদের উপরই ন্যস্ত।

 

এখন প্রশ্ন আসে, আমরা দায়িত্ব পালন শুরু করবো কীভাবে?

 

আজ যদি আমরা বিশ্ব প্রেক্ষাপটকে ব্যাখ্যা করি এবং বর্তমান ঘটনা প্রবাহকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাই, সমগ্র মানবতাকে এই ভয়াবহ অবস্থা অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে দুটি বিষয়ের প্রয়োজন-

১) জ্ঞান
২) আখলাক

আল্লামা ইকবালের ভাষায়- “ইজতিহাদ বিহীন জিহাদ শুধুমাত্র বিশৃঙ্খলা, আর জিহাদ বিহীন ইজতিহাদ শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব ছাড়া আর কিছুই নয়।”

আমাদেরকে এ দুইয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হবে, জিহাদও করে যেতে হবে।

রাসূল (সা.) জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে বলেন,
“তোমরা জ্ঞান অর্জন করো। কেননা আল্লাহর জন্য জ্ঞান অর্জন করা হলো আন্তরিকতা। জ্ঞান অন্বেষণ করা হলো ইবাদত। জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা হলো তাসবীহ। আর জ্ঞান গবেষণা করা হলো জিহাদ। যে জানে না, তাকে জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হলো সদকা। জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সমান। কেননা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই আমরা হালাল-হারাম সম্পর্কে জানতে পারি। এই জ্ঞানই জান্নাতের পথে ব্যক্তির জন্য আলোকবর্তিকা। জ্ঞান একাকিত্বের সবচেয়ে উত্তম বন্ধু। আর যারা জ্ঞান অর্জন করে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদের মাধ্যমেই তাদের জাতিকে মর্যাদাবান করেন, কল্যাণের পথে তাদেরকে ইমাম ও অগ্রদূত বানিয়ে দেন এবং তাদের পথকে মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় করেন।”

এই জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও আখলাকের বিনির্মাণের কাজটি শুরু করতে হবে আমাদের ব্যক্তি পর্যায় থেকে। এরপর সামষ্টিকভাবে আমরা যদি জ্ঞানের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারি এবং নিজেদেরকে একটি জ্ঞান নির্ভর জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলেই আল্লাহ আমাদেরকে সে মর্যাদায় ভূষিত করবেন, যেভাবে করেছিলেন সাহাবা আজমাইনদেরকে।

 

বর্তমানেও আমরা দেখি সেসব জাতিই সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত, যারা জ্ঞান-গবেষণায় বেশি অগ্রসর। আমরা বসনিয়াকে চিনি আলিয়া ইজ্জেতবেগভিচের মাধ্যমে। আলিয়া ইজ্জেতবেগভিচ হলেন ইউরোপের ইসলামের প্রতীক। সময়ের পরিক্রমায় হয়তো মারওয়াউন নাহার টিকে নেই, কিন্তু সেই সভ্যতায় গড়ে উঠা মানুষদের কারণে আজকের পৃথিবী একটি সভ্য পৃথিবী হিসেবে অস্তিত্ব লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আমরাও যদি আমাদের বাংলাদেশকে, এমনকি সামগ্রিকভাবে মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করতে চাই, তাহলে আমাদেরকেও এমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে, যে জ্ঞান শুধুমাত্র নাকলী জ্ঞান হবে না, বরং নাকল ও আকলের মাঝে সমন্বয় করে যেই জ্ঞান তৈরি করবে ইবনে রুশদের ও ইবনে খালদুনদের মতো ব্যক্তিদের।

আমরা জানি, ইবনে রুশদ একই সাথে একজন চিকিৎসক এবং একজন প্রধান বিচারপতি ছিলেন। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দার্শনিকদের একজন তিনি। একইভাবে উদাহরণ দেওয়া যায় ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালামের, যিনি রোবটও তৈরি করেছেন, আবার “সাজারাতুল মা’রিফা”- এর মতো আখলাকের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থও রচনা করেছেন। এ সকল ব্যক্তিবর্গই আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুকরণীয়। তাদের জ্ঞান ছিলো হিকমতে ইলাহী এবং ইলমে ইলাহী এর সমন্বিত জ্ঞান।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করছি, সে জ্ঞানের মাঝে হিকমতে ইলাহী কিংবা ইলমে ইলাহী – এ দুটির কোনোটিই উপস্থিত নেই। ফলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান আমাদের যা শিক্ষা দিচ্ছে, তার সারাংশ হলো কীভাবে আরেকজনের উপর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা যায়। আমাদেরকে বলা হচ্ছে- Knowledge is power অর্থাৎ জ্ঞানই শক্তি। মূলত জ্ঞানের এ উদ্দেশ্যের দরুনই আজকের বিশ্ব অর্থনীতিতে শোষণ, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটম বোমা ও সর্বাধুনিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

 

অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, সেদিকে আমাদের কোনো দৃষ্টিপাত নেই। এজন্য আমাদেরকে হিকমতে ইলাহী এবং ইলমে ইলাহীর সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

 

এর পাশাপাশি সে জ্ঞান হতে হবে ব্রিটিশ একাডেমিয়া থেকে নিজেদের মন, মানস ও আকলকে মুক্ত করার জ্ঞান। কেননা, আজ আমরা হয়তো সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু প্রতিনিয়ত আমরা যে শক্তির দ্বারা শাসিত হচ্ছি, সে শক্তি কি আদৌ ব্রিটিশ প্রভাব থেকে মুক্ত? মোটেই নয়।[1]

আজ আমাদের বিচারব্যবস্থা অ্যাংলো স্যাক্সন বিশ্ব দর্শনের আলোকে পরিচালিত একটি বিচার ব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হলো ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা। এমনকি আমরা কোরআনের আয়াতকে পড়ার পরে তা অনুবাদের ক্ষেত্রে ইংরেজির মতো দুর্বল একটি ভাষা অবলম্বন করাকে গর্বের বিষয় বলে মনে করি! কোরআনকে কোরআনের ভাষায় বোঝা তো দূরে থাক, নিজের ভাষায় বুঝতেও বরাবরই অক্ষম আমরা। আমাদের অবশ্যই এ দৈন্যদশা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে।

আজকের ইউরোপ, লন্ডনের যে চোখ ধাঁধানো নগরব্যবস্থা আমাদের সামনে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, আমাদের জানা থাকা উচিত, তারা আমাদের অঞ্চলসমূহকে শোষণের মাধ্যমে এ নগরব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে নগরব্যবস্থা গড়ে উঠছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। প্রতিটা শহর হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অধিবাসীদের কর্মব্যস্ত দিনের বড় একটা সময় অপচয় হয় সড়কব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে। বাংলাদেশ সহ এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকারী এক ব্যক্তি বলেছিলেন, “পৃথিবীতে হয়তো বাংলাদেশেই একমাত্র দেশ, যে দেশের রাজধানীতে রাস্তার মাঝখানে ময়লার স্তুপ থাকে, অথচ সে দেশের ৯০% মানুষ মুসলমান। আবার এ মুসলমানরাই ফ্রান্সে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে, অথচ একবারও তারা নিজেদের দেশের রাস্তা পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অনুভব করে না।” এটি সুস্পষ্ট এক বৈপরীত্য।

আমরা অবশ্যই নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষদের পক্ষে কথা বলবো। কিন্তু আমরা যদি আমাদের দেশকে পরিষ্কার রাখতে না পারি, আমাদের নগরগুলোকে বসবাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হই, আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে শক্তিশালী হতে না পারি, তাহলে গোটা মানবতার সত্যিকার মুক্তির স্বার্থে কিছু করা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। যেখানে, আমরা আমাদের শহরব্যবস্থাকেই এখনো আধুনিকায়ন করতে পারিনি, তাহলে ব্রিটিশ একাডেমিয়া থেকে আমাদের মন, মানস বা চিন্তাকে কীভাবে মুক্ত করবো?

 

তবে, আমাদের এই মন-মানস ও চিন্তাকে ব্রিটিশ একাডেমিয়া থেকে মুক্ত করার এবং গোটা মানবতার মুক্তির দ্বারে উপনীত করার কাজ শুরু করতে হবে ব্যক্তি পর্যায় থেকে। আমরা যখন নিজেদের জায়গা থেকে শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হব, তখনই অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতা করা আমাদের জন্য সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠবে। এজন্য সর্বপ্রথম আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে, আঞ্চলিক পর্যায়ে শক্তিশালী হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে জেনে রাখা প্রয়োজন- আমাদের মনকে, আমাদের মানসকে, আমাদের চিন্তাকে ব্রিটিশ একাডেমিয়া থেকে মুক্ত করবে–

•  ইমাম শাফেয়ীর “আর-রিসালাহ”।
• ইমাম মাতুরিদির “কিতাবুত তাওহীদ”।
• ইমাম গাজ্জালীর “আল মুসতাসফা”।
• শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর “হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা”।
• আলিয়া ইজ্জেতবেগভিচের “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে ইসলাম”।
• মাওলানা মওদূদীর “তাফহীমুল কোরআন”।
• ইসমাইল রাজী আল ফারুকীর “আত-তাওহীদ”।
• ত্বহা আবদুর রহমানের “তাজদিদুল মানহাজ বি তাকভিমুস তুরাস”।

আমাদেরকে আমাদের এই সকল ক্ল্যাসিক বইগুলো পড়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমাদেরকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। “ইলমুল ইলাহী” এবং “হিকমতে ইলাহী” – এর সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে একজন হাকীকত সন্ধানী ব্যক্তি হিসেবে আবিষ্কার করতে হবে।

 

বিসিএস ক্যাডার হওয়া কিংবা ৬ ডিজিটের বেতন পাওয়াই যেন আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্যে পরিণত না হয়। আমরা চিফ জাস্টিস হবো, কিন্তু এমন চিফ জাস্টিস হবো, যেমনটা ছিলেন ইবনে রুশদ, ইবনে খালদুন, ইমাম আবু ইউসুফ। আমরা রাজনীতি করবো, যেমনটা করেছিলে রুস্তমের সামনে নির্ভয়ে বুক উচিয়ে দাঁড়ানো মুসলিম সেনাপতি রিবঈ বিন আমর।

 

সেদিন রিব’ঈ বিন আমরের নির্ভীক আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা ছিল-
“আমরা এবার রাজনীতি করতে এসেছি, পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ নিতে এসেছি। তবে আমরা ক্ষমতার লোভ থেকে সিংহাসন দখল বা ভোগ করতে আসিনি। বরং মহান আল্লাহ আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। আমরা এসেছি সমগ্র মানবতাকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মহান আল্লাহর গোলাম বানানোর জন্য। সকল মতবাদ, বাতিল ধর্মের নাগপাশ থেকে মানুষকে মুক্ত করে ইসলামের আদালতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এবং আমরা মানুষকে দুনিয়ার সকল প্রকার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে আখিরাতের জীবনের প্রশস্ততার দিকে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যে রূহ দিয়েছেন, সেখানে আমরা আল্লাহর অস্তিত্বকে বহন করি।”
আমাদেরকেও এভাবেই আমাদের ভিশনকে চিন্তা করতে হবে এবং লালন করতে হবে।

আমাদের শরীর হয়তো অতি ছোট, কিন্তু এই ছোট্ট শরীরটি সমগ্র পৃথিবী পরিগ্রহ করতে সক্ষম। কেননা আমাদের রয়েছে ‘আ’লিমুল গায়ীব’ বা ‘মালাকুত’-এর সাথে নিবিড় সম্পৃক্ততা। আমরা শুধুমাত্র বাহ্যিক অর্থে বস্তুগত কোনো সৃষ্টি নই, বরং মহান আল্লাহ যে রূহ আমাদেরকে দিয়েছেন, সে রূহের মধ্যে আমরা আল্লাহর অস্তিত্বকে বহন করে চলি।

আমরা আমাদের ভিশনকে কীভাবে সাজাবো, দেশকে কীভাবে গড়ে তুলবো, আমাদের বিশ্বদর্শন কেমন হবে, তা যদি বুঝতে পারি, বিশ্বদর্শনের মূলে ইলমুল ইলাহী এবং হিকমতে ইলাহীকে রেখে, ইসলামী সভ্যতার মৌলিক গ্রন্থ ও মৌলিক চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে পড়ালেখাকে যদি সাজাতে পারি, তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠিত শহর হবে কর্ডোভা, বাগদাদ, দিল্লী, মদিনা; যেখানে শুধুমাত্র বিল্ডিংয়ের সংখ্যাকে উন্নয়নের মানদন্ড ধরা হবে না।

আমাদের সভ্যতার মূল ভিত্তি হচ্ছে- মদিনাকে ইয়াসরিব নামক গ্রাম থেকে মদিনায় রূপান্তরকারী সেই নববী আখলাক এবং মানবিক মূল্যবোধ। এজন্য আমাদের প্রয়োজন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, কারণ অসচেতন মানুষ দ্বারা কখনো আমূল পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।

আঙ্কারার উদাহরণ যদি দেয়া হয়; আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে যদি ময়লার স্তুপ জমে থাকে, তাহলে আঙ্কারার মেয়র আগামীকাল তার পদ ছাড়তে বাধ্য! আমরা কি আমাদের জাতিকে এভাবে সচেতন করতে পেরেছি? আজ আমাদের শাপলা চত্বরের মতো জায়গায় দিনের পর দিন ময়লার স্তুপ জমে থাকে, অথচ আমাদের যেন কিছুই করার নেই! এটি আমাদের কাছে খুবই সাধারণ মনে হয়। অথচ আমাদের সকল ফিকহের গ্রন্থ যে অধ্যায় দ্বারা শুরু হয়েছে, তা হলো ‘কিতাবুত তাহারাত’। আজ কোথায় সেই তাহারাত? কোথায় সেই পাক-পবিত্রতা?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক অবনতির ফলাফলস্বরূপ ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, অথচ তিনি ছিলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী! এ বিবেচনায় আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থান কী?

তাই আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি সচেতন করতে হবে আমাদের জনগণকে। আর এ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমই হলো ‘জ্ঞান ও চিন্তা’। রাসূল (সা.) জাহেলী যুগ থেকে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উপর ভিত্তি করেই। এখন হয়তো আমাদের সমাজে অনেকেই বলেন, “আমাদেরকে দুনিয়া ছেড়ে দিতে হবে, আখেরাতের দিকে যেতে হবে; আর তাই দুনিয়ামুখী হয়ে কাজ করা হচ্ছে নিছক এক দুনিয়াবী মোহ।”

এখানে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা এখনো বিদ্যমান। আমাদের ধারণা- উমর (রা.), আবু বকর (রা.) দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছিলেন। হ্যাঁ, তাঁরা দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা কোন দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছিলেন? তারা জাহেলী দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং তদস্থলে একটি নতুন দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে দুনিয়া ছিলো ইসলামের দুনিয়া। এমনকি সে দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করার সময় শুধু তারা দুনিয়াকেই গঠন করেননি, সাথে নিজেদেরকেও গঠন করেছিলেন।

আমরা জাহেলী দুনিয়াকে অবশ্যই পরিত্যাগ করবো। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যে ‘ইমারত’ এর দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন, আমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে একটি সভ্যতা গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্বও আমরা পালন করবো। কেননা, এ পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলার সেই দায়িত্ব তিনি আমাদের উপরেই অর্পন করেছেন।

প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের দ্বারা সভ্যতার বিনির্মাণ কি আদৌ সম্ভব?

জবাব হচ্ছে অবশ্যই সম্ভব। এ ব্যাপারে আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কখনোই হতাশ হওয়া যাবে না। কেননা এই ওয়াদা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন-

وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ ۪ وَ لَیُمَکِّنَنَّ لَهُمۡ دِیۡنَهُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَهُمۡ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ اَمۡنًا ؕ یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।”

এজন্য আমাদের হতাশ হওয়া কখনোই কাম্য নয়। আমরা অনেক হারামের কথা জানি। কিন্তু সবচেয়ে বড় হারাম কী, তা কি জানি? সবচেয়ে বড় হারামের একটি হলো হতাশ হওয়া, আশাহত হওয়া, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় একমাত্র কাফেররা। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, হতাশ হওয়া বা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া অন্যতম বড় গুনাহ, এবং তা স্পষ্ট হারাম।

আমরা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দিকে তাকালে দেখতে পাই, তিনি একটি নতুন দুনিয়া সৃষ্টি করেছিলেন এবং এখন পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ব মানবতার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন। ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলমান সবাই তাকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে মান্য করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন,

ان ابراهيم كان امة قانتا لله حنيفا
“প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিলো একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ”। (সূরা নাহল: ১২০)

তিনি সর্বপ্রথম বর্তমান তুরস্কের উরফাতে যান এবং সেখানে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি যত ধরণের পন্থা প্রয়োজন সবগুলো অবলম্বন করেন। মন্দিরে গিয়ে মূর্তি ভাঙেন, নমরুদের সাথে বিতর্ক করেন। কিন্তু নমরুদ তো তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করেইনি, নিজের পিতাকেও বোঝাতে ব্যর্থ হন তিনি। এমন একটি পরিস্থিতি যখন তার সামনে উপস্থিত হয়, তখন তিনি সকল নবীর সুন্নত অনুযায়ী ‘হিজরত’ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। হিজরতে তার সঙ্গী ছিলেন মাত্র দুইজন। একজন তার স্ত্রী সারা, আরেকজন তার ভাতিজা হযরত লুত (আ.)। এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র এই দুইজনই তার উপর ঈমান এনেছিলেন। হিজরত শুরু করার সময় তিনি দোয়া করেন,

وَقَالَ إِنِّی ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّی سَیَهۡدِینِ
“আমি আমার রবের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম, তিনিই আমাকে পথ দেখাবেন”।

অতঃপর তিনি উরফা থেকে হিজরত করে তুরস্কের তারসুস অঞ্চলে যান। পর্যায়ক্রমে সিরিয়ার লাসকিয়া এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে হিজরত করেন। মিশরে থাকা অবস্থায় হযরত হাজেরা (আ.)-কে বিয়ে করেন। অতঃপর তিনি মক্কায় যান এবং সব শেষে ফিলিস্তিনে এসে মৃত্যুবরণ করেন।

মক্কায় গিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ.) পবিত্র কাবাঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কাবাঘর প্রতিষ্ঠার আগে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন,
رَبِّ هَبۡ لِی مِنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ

আমাদের মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসীর করেন এভাবে, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করো।”

কিন্তু উক্ত আয়াতে নির্দিষ্টভাবে ছেলে বা মেয়ে বোঝানো হয়নি। এ দোয়ার মাধ্যমে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এমন একজন মানুষ চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি একটি নতুন দুনিয়া বিনির্মাণের কাজ শুরু করতে পারবেন। আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে দান করেন। অতঃপর ইসমাঈল (আ.)-কে নিয়ে তিনি কাবাঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। কাবাঘর নির্মাণ করার পর আল্লাহ তাকে নির্দেশ দেন;

وَأَذِّن فِی ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَجِّ
“হে ইব্রাহীম! কাবাঘর নির্মাণ করার পর এখন তোমার দায়িত্ব হলো মানুষেকে আহ্বান করা। আযান দাও, যেন মানুষ এখানে এসে হজ্জব্রত পালন করে।”

তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর এ কথার প্রেক্ষিতে বলেছিলেন,
“হে আমার রব! আমরা এখানে মাত্র দুইজন মানুষ অবস্থান করছি। এই ধূ-ধূ মরুভূমিতে আমি ডাকলে তা শুনবে কে? কে সাড়া দিবে আমার ডাকে? আমার আওয়াজ কীভাবে তাদেরকে প্রভাবিত করবে?”
তখন আল্লাহ বলেন,

ناد وعلينا البلاغ

অর্থাৎ, ডাকার দায়িত্ব তোমার, পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তুমি মানুষকে ডাকো। মানুষ এখানে এসে ঐক্যবদ্ধ হবে।

এখানে হজ্জ শব্দটি শুধুমাত্র একটি ইবাদত হিসেবে আসেনি, বরং ‘তামসিলি’ অর্থে এসে ব্যাপক অর্থবোধক একটি ধারণা দেয় এটি। মূলত এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম (আ.)–কে একটি নতুন দুনিয়া, নতুন সভ্যতার সুসংবাদ দান করেছেন।

فقام على مقامه ، وقيل على الحجر ، وقيل على الصفا ، وقيل على أبي قبيس

অর্থাৎ, আল্লাহর এ কথা শুনে হযরত ইব্রাহীম (আ.) দাঁড়ালেন এবং পাথর, সাফা পাহাড় ও কুবাইস পাহাড়কে সামনে রেখে গোটা মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে আহ্বান করলেন।

قال : يا أيها الناس إن ربكم قد اتخذ بيتاً فحجوه

“হে মানব জাতি! তোমাদের রব এই ঘরকে তার নিজের হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তোমরা সকলে এসে এখানে হজ্জ করো।”

إن الجبال تواضعت حتى بلغ الصوت أرجاء الأرض ، وأسمع من في الأرحام والأصلاب ، وأجابه كل شيء سمعه من حجر ومدر وشجر ، ومن كتب الله أنه يحج إلى يوم القيامة : لبيك اللهم لبيك

অর্থাৎ, তার এ ডাকের সাথে সাথে দুনিয়ার সকল পাহাড়-পর্বত মাটির সাথে মিশে গেলো, যেন এই আহ্বান পৃথিবীর অপর প্রান্তে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যারা মাতৃগর্ভে ও আলমে আরওয়াহের মধ্যে ছিলো, তারাসহ সমগ্র মানবতা তাঁর এ আহ্বান শুনেছিলো। এমনকি পৃথিবীর সকল গাছপালা, পশু-পাখিসহ সমগ্র মানবজাতি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলো। সেই ধারাবাহিকতায় সমগ্র পৃথিবীর মানুষ আজও সে ডাকে সাড়া দিয়ে মক্কায় আসে, তাদের মুখে ধ্বনিত হয় নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়ার বাণী ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।

আমাদের সভ্যতায় এটি হযরত ইব্রাহীম (আ.) -এর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার একটি প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। এভাবেই তিনিসহ প্রত্যেক নবীই কেয়ামতের আগ পর্যন্ত আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপমা হিসেবে রয়ে যাবেন।

সেই ইব্রাহীম (আ.) এর সন্তান ইসমাইল (আ.)। আর ইসমাইল (আ.) এর বংশধর হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর মাধ্যমে আজ সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সভ্যতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বড় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সাহাবী আজমাঈনগণ থেকে শুরু করে যত মুসলিম এসেছেন, তারা সকলই এককভাবে ব্যক্তি এবং সামগ্রিকভাবে মুসলিম উম্মাহ। যেমন– ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীর একার যে ভূমিকা, তৎকালীন সময়ের সকল মানুষের সম্মিলিত ভূমিকাও ততটুকু নয়।

এজন্য আমাদের প্রতিটি ব্যক্তিকে ইলমুল ইলাহী এবং হিকমতে ইলাহী এর সমন্বয়ে হাকীকত সমৃদ্ধ জ্ঞানের সন্ধানী হতে হবে। শুধুমাত্র যিহিন (মানস) লেখা বা লফজের মধ্যেই এ জ্ঞান সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, বরং আমলের মাধ্যমে গোটা দুনিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা যদি এটি করতে সক্ষম হই, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তার রাসূল (সা.) আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে জ্ঞান অর্জনের জন্য যোগ্যতা দান করুন, কবুল করুন।

এক্ষেত্রে আশার বাণী হলো, আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জ্ঞানের পুনর্জাগরণের আন্দোলন শুরু করার মাধ্যমে এ বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। আরবিতে একটি প্রবাদ রয়েছে,

وإذا رأيت من الهلال نموه أيقنت أن سيصير بدرًا كاملًا بفضل الله عز وجل

অর্থাৎ, “যখন তোমরা দেখবে আকাশে বাঁকা চাঁদ উঠেছে, তবে নিশ্চিত থেকো, খুব বেশি সময় লাগবে না, আল্লাহর ফজলে অচিরেই আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখা দিবে।”

আমরা যদি প্রত্যেকে নিজেদেরকে সেভাবে গঠন করতে পারি, জ্ঞান অর্জনের পথের পথিক হতে পারি, তাহলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখতে পারি যে, আমাদের পূর্বপুরুষগণ যেভাবে মারওয়াউন নাহারসহ মুঘল সালতানাত, উসমানী খেলাফত, সেলজুকী সাম্রাজ্য, আন্দালুসিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আমাদের হাত ধরেই আবার বাংলাদেশ থেকে ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণ শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ!

আমরা যদি ইব্রাহীম (আ.) এর ন্যায় পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে আমরাও হয়তো বিশ্ববাসীর জন্যে “শাহাদাত আলান্নাস” হতে পারবো। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এ যাত্রায় সফল করুন। আমীন!

সর্বেশেষ, হাসান আল বান্নার একটি উক্তি স্মরণ করতে চাই। তিনি বলেছিলেন, “সমগ্র পৃথিবী আজ তোমাদের দাওয়াতের আহ্বানের অপেক্ষায়। আর সেই দাওয়াত হলো হেদায়েত, সফলতা এবং সালামের দাওয়াত। আজ সমগ্র পৃথিবী যে সংকট ও ভয়াবহতার মধ্যে রয়েছে, সে সংকট থেকে, সে ভয়াবহতা থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র ইসলাম। আর এটি সম্ভব মুসলিম যুবকদের মাধ্যমেই।”

[1] বিস্তারিত জানতে পড়ুন ‘শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদ অনতিবাহিত এক অতীত”।​

৭৫৫ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of বুরহান উদ্দিন আজাদ

বুরহান উদ্দিন আজাদ

অনুবাদক এবং জ্ঞান ও সভ্যতা বিষয়ক গবেষক বুরহান উদ্দিন আজাদ জামালপুর জেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশসেরা মাদরাসা থেকে আলেম পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করেন এবং তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আঙ্কারা সোস্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। তুরস্কে অবস্থানকালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে বড় বড় আলেম, স্কলার, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদের সান্নিধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, উসূল ও মাকাসিদসহ আরও অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষালাভের পাশাপাশি Institute of Islamic Thought এবং Economic and Social Researches Center এর মত প্রসিদ্ধ দুইটি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে অবস্থান করছেন এবং European Youth Association এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য দুইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনূদিত গ্রন্থের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ও ব্লগসাইটে উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম, দার্শনিক ও মুতাফাক্কিরগণের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।তার অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো হলো; ১। ইসলাম ও জ্ঞান || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ২। দাওয়াম || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ৩। ইসলাম শিক্ষা || প্রফেসর ডঃ সাইফুদ্দিন ইয়াজিযি ৪। উসমানী খিলাফতের ইতিহাস || প্রফেসর ডঃ ইহসান সুরাইয়্যা সিরমা ৫। মুসলিম যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য || প্রফেসর ডঃ ইউসুফ আল কারদাভী ৬। Müslüman Lider Nasıl Olmalı || Prof. Gulam Azam (İlk Baskı, 2019) ৭। ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ (প্রথম প্রকাশ, ২০১৯) ৮। বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম উম্মাহ এবং সভ্যতা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ৯। ইসলামী ডেক্লারেশন || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ১০। বিশ্বব্যাপী আখলাকী সংকট || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১১। সুন্নত ও হাদীস বুঝার মেথডোলজি || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১২। ইসলামী সভ্যতায় নারী || ড: খাদিজা গরমেজ ১৩। ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ও নতুন দুনিয়া || প্রফেসর ড: নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য) ১৪। জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও মেথডোলজি ¬¬|| প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন (প্রকাশিতব্য) ১৫। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর শিক্ষাদান পদ্ধতি || ইবরাহীম হালিল আর ১৬। আমাদের আন্দোলনের মূলভিত্তি || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য)তাঁর অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধসসমূহ হলঃ১।ইবনে খালদুন ও ইলমুল উমরান || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ২।শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী ও উসূল || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৩।ইসলামী চিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ || প্রফেসর ড: উমর তুরকের ৪।আল্লামা ত্বহা আব্দুর রহমানের চিন্তাদর্শন || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৫।আল কোরআনের ১৪০০ বছর পূর্তিতে তাফাক্কুর || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ৬। ইমাম আল-মাওয়ার্দি ও তাঁর চিন্তাধারা || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ৭। ইবনে খালদুন ও ইলমূল উমরান || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন ৮। পাশ্চাত্য চিন্তার ভিত্তি || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন
Picture of বুরহান উদ্দিন আজাদ

বুরহান উদ্দিন আজাদ

অনুবাদক এবং জ্ঞান ও সভ্যতা বিষয়ক গবেষক বুরহান উদ্দিন আজাদ জামালপুর জেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশসেরা মাদরাসা থেকে আলেম পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করেন এবং তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আঙ্কারা সোস্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। তুরস্কে অবস্থানকালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে বড় বড় আলেম, স্কলার, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদের সান্নিধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, উসূল ও মাকাসিদসহ আরও অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষালাভের পাশাপাশি Institute of Islamic Thought এবং Economic and Social Researches Center এর মত প্রসিদ্ধ দুইটি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে অবস্থান করছেন এবং European Youth Association এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য দুইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনূদিত গ্রন্থের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ও ব্লগসাইটে উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম, দার্শনিক ও মুতাফাক্কিরগণের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।তার অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো হলো; ১। ইসলাম ও জ্ঞান || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ২। দাওয়াম || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ৩। ইসলাম শিক্ষা || প্রফেসর ডঃ সাইফুদ্দিন ইয়াজিযি ৪। উসমানী খিলাফতের ইতিহাস || প্রফেসর ডঃ ইহসান সুরাইয়্যা সিরমা ৫। মুসলিম যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য || প্রফেসর ডঃ ইউসুফ আল কারদাভী ৬। Müslüman Lider Nasıl Olmalı || Prof. Gulam Azam (İlk Baskı, 2019) ৭। ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ (প্রথম প্রকাশ, ২০১৯) ৮। বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম উম্মাহ এবং সভ্যতা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ৯। ইসলামী ডেক্লারেশন || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ১০। বিশ্বব্যাপী আখলাকী সংকট || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১১। সুন্নত ও হাদীস বুঝার মেথডোলজি || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১২। ইসলামী সভ্যতায় নারী || ড: খাদিজা গরমেজ ১৩। ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ও নতুন দুনিয়া || প্রফেসর ড: নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য) ১৪। জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও মেথডোলজি ¬¬|| প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন (প্রকাশিতব্য) ১৫। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর শিক্ষাদান পদ্ধতি || ইবরাহীম হালিল আর ১৬। আমাদের আন্দোলনের মূলভিত্তি || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য)তাঁর অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধসসমূহ হলঃ১।ইবনে খালদুন ও ইলমুল উমরান || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ২।শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী ও উসূল || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৩।ইসলামী চিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ || প্রফেসর ড: উমর তুরকের ৪।আল্লামা ত্বহা আব্দুর রহমানের চিন্তাদর্শন || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৫।আল কোরআনের ১৪০০ বছর পূর্তিতে তাফাক্কুর || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ৬। ইমাম আল-মাওয়ার্দি ও তাঁর চিন্তাধারা || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ৭। ইবনে খালদুন ও ইলমূল উমরান || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন ৮। পাশ্চাত্য চিন্তার ভিত্তি || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top