ইসলামী সভ্যতার মৌলিক ভিত্তি হলো সমাজ। আমাদের সমাজ যত বেশি শক্তিশালী হবে, আমাদের ভিত এবং সভ্যতাও ততো বেশি শক্তিশালী হবে। শক্তিশালী হওয়া বলতে শুধুমাত্র বাহ্যিক বা বস্তুগত দিক থেকে শক্তিশালী হওয়া নয়; বরং আধ্যাত্মিক দিক থেকেও শক্তিশালী হওয়াকে বুঝায়।

আখলাকসম্পন্ন একটি সমাজ গঠন এবং আমাদের সামাজিক গঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় প্রয়োজন সেগুলো ৪টি পরিভাষার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশা-আল্লাহ।

 

এ আলোচনাকে ৩টি উপমার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। আর, সেগুলো হলো-

  • مثال (মেছাল)-কে উপাখ্যান (fable) এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা।
  • مثال (মেছাল)-কে উপমা বা উদাহরণ এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা।
  • مثال (মেছাল)-কে  রুপক (metaphor) এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা।

 

এখন এই ৩টি বিষয় ব্যাখ্যা করা যাক-

مثال (মেছাল)কে উপাখ্যান (fable) এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা-

হল্যান্ডের খ্যাতনামা লেখক Barnard Mandaville এর সুবিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে The Fable of Bees। তিনি Ethics এবং Economics এর থিওরিশিয়ান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। এই গ্রন্থের মূল দর্শন বা ফিলোসোফি হচ্ছে একজন ব্যক্তির খারাপ কাজ মূলত সমাজের কল্যাণ বয়ে আনে; আর এটার উপর ভিত্তি করেই তিনি এই গ্রন্থ রচনা করে। এক্ষেত্রে তিনি আরো একটি বিষয় এই গ্রন্থে উল্লেখ করেন তা হলো- প্রত্যেক মানুষই স্বার্থপর। এটা প্রাকৃতিক বিষয় এবং ফজিলতপূর্ণ বিষয়। তার মতে, সততা, পরার্থবাদিতা এগুলো একটা সমাজকে পিছনের দিকে নিয়ে যায়। আর এই গ্রন্থের মূল থিওরী এটাই।

এমনকি Adam Smith তাঁর উপর প্রভাবিত হয়ে Wealth of Nation গ্রন্থ রচনা করেন।

যাইহোক, বার্নার্ড তাঁর গ্রন্থে উপাখ্যান বর্ণনা করেন; সেটি এমন-

অনেকদিন আগে মৌমাছিদের একটা দেশ ছিল; মৌচাক নামক এই দেশে সবকিছুই খুব সুন্দর ছিল। এখানে পর্বত, চেষ্টা ও সফলতা সবকিছুই ছিল। মৌমাছিরা কাজ, চেষ্টা, পরিশ্রম এবং উৎপাদন করতো ফলশ্রতিতে, শুরুর দিককার সময়ে সবাই খুব সুখী এবং শান্তিতে বসবাস করছিল। এই মৌচাককে আমরা একটি রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করতে পারি; যেখানে মৌচাক নামক রাষ্ট্রের সবাই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতো; সবাই স্বার্থপর ও হিংসাত্মক মনোভাবী ছিল; একে অপরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতো; ফলশ্রুতিতে একে অপরের সাথে পূর্ণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মধু উৎপাদন করতো। আর এভাবেই সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা খুব দ্রুতই উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। এই রাষ্ট্রে বসবাসকারী অর্থাৎ মৌমাছিরা নিজেদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার দরুন খুব শক্তিশালী যোদ্ধা তৈরি হতো; ফলস্বরুপ, যোদ্ধারা সকল জায়গায় বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হতো। তবে এই মৌচাক নামক রাষ্ট্রে একটা সমস্যা ছিল সেটা হচ্ছে, আখলাকবিহীনতা। এহেন অবস্থা দেখে রাষ্ট্রের বৃদ্ধ মৌমাছি গুলো ছিল চিন্তায় পড়ে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় অন্বেষী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে তাঁরা সবাই সিদ্ধান্ত উপনীত হয় যে, তাঁরা সৃষ্টিকর্তা থেকে আখলাক প্রর্থনা করে বলে, ‘আমাদেরকে আখলাক দাও’ । পরবর্তীতে স্রষ্টা তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া পরবশ হয়ে তাদের আখলাক প্রদান করে।

এমন হওয়ার দরুন পরবর্তীতে অপ্রত্যাশিত একটি ফলাফল আসে; আর সেটা হলো- সবাই আখলাকসম্পন্ন হওয়ার কারণে তাঁদের মধ্য থেকে হিংসাত্মক মনোভাব দূরীভূত হয়ে যায় এবং তাদের মধ্য থেকে লোভ-লালসা চলে যায়। রাষ্ট্র প্রধান কে হবে কিংবা রাষ্ট্র কি উৎপাদন করবে এটা নিয়ে তাঁদের কোন পরিকল্পনা ছিল না। যেহেতু সবাই আখলাক সম্পন্ন তাই যে যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই উৎপাদন করে। ফলশ্রুতিতে বেকারত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে তাদের ঐ রাষ্ট্র পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। যেহেতু একে অপরের সাথে যুদ্ধ, সংগ্রাম, প্রতিযোগিতা বিরত ছিল ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে উদ্যোগ নেওয়ার যে প্রেরণা তাও হারিয়ে যায়। একইভাবে তাঁরা আখলাক সম্পন্ন হওয়ার কারণে তাদের আর কোনো যোদ্ধারও প্রয়োজন ছিলো না; তাই তারা সেনাবাহিনী কে ও বিলীন করে দেয়। ফলশ্রুতিতে এক সময় তাদের রাষ্ট্রের-ই পতন হয়ে যায়।

এহেন অবস্থায় অন্য একটা মৌচাক নামক রাষ্ট্র তাদেরকে আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে। তাঁদের মধ্য থেকে গুটি কয়েকজন মাত্র আখলাক সম্পন্ন মৌমাছি পালিয়ে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে মৌচাক বানিয়ে কোনোমতে জীবন ধারণ করে বেঁচে থাকে।

আর এটি ঐ বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল।

ক্যাপিটালিজম (Capitalism) বা পুঁজিবাদ মূলত এই ধরনের একটা চিন্তার ফসল। ক্যাপিটালিজম এর অর্থ হচ্ছে অসীম উৎপাদন এবং অসীম ভোগ।

ক্যাপিটালিজম (Capitalism) এর মূল ভিত্তি হচ্ছে, তাঁরা তাঁদের একমাত্র প্রতিপাদ্য বিষয় অসীম উৎপাদন অসীম ভোগ কে বাস্তবে পরিণত করার লক্ষ্যে যত ধরনের বীজ আছে সকল কিছুর মূল জেনেটিক্স কে ধ্বংস করে দেয়।

 

مثال (মেছাল) কে উপমা বা উদাহরণ এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা-

বিখ্যাত জার্মান ফিলোসোফার নিৎসে-এর একটা কথা আছে, সুপার হিউম্যান বা সুপারম্যান এর মুল কথা হচ্ছে যে, সে মানুষের ফিতরাতগত যে সকল বিষয় এগুলোকে অতিক্রম করে উপরে উঠে। মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্তি পেলেই সে স্বাধীন। স্বাধীন হওয়ার জন্য ব্যক্তি নিজেই কাজ করতে হবে অর্থাৎ নিজের তাকদীর বা ভাগ্য নিজেকেই রচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক নয়, ব্যক্তিগত বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

আর এ পরিবর্তনের ধারাকে ৩টি পশুর উপমার মাধ্যমে তুলে ধরা যায়। পশু ৩টি হলো-

  • ১। উট
  • ২। সিংহ
  • ৩। মানুষ

 

এটা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ উটের পর্যায়ে যতটুকু নেয়া সম্ভব, ততটুকু বোঝা নিবেই সে। সে কোনো ক্রমেই তার জীবন থেকে বা দায়িত্ববোধ থেকে দূরে সরে যাবে না। সকল ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ করবে। জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সে প্রচেষ্টা চালায়। এই প্রচেষ্টা তাকে শক্তি দান করে। সে দ্বিতীয় তথা সিংহের স্তরে পৌছাতে না পেরে পরবর্তীতে সিংহের স্তরে উপনীত হতে বোঝা নিয়ে সীমাহীন মরুভূমিতে যাবে। সে যখন সীমাহীন একটা মরুভূমিতে যাবে তখন সে চিন্তা করবে কেন এতগুলো বোঝা বহন করতেছি! কী প্রয়োজনে! এটা ভাবতে ভাবতে দেখবে তার বোঝাগুলো একটা অজগরে রুপান্তরিত হয়ে যায়।

এখন, অজগর ফেলে দিলে তাকে খেয়ে ফেলবে। না ফেললে বোঝার কারণে সে নুয়ে পড়বে। সে ফেলে দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। দৃঢ় সিদ্ধাতের মাধ্যমে শক্তি লাভ করে উট সিংহে পরিণত হয়। এখানে সিংহ হলো শক্তি ও বীরত্বের প্রতীক। সে আমাদের আখলাক, ঐতিহ্য এবং ফজিলত সবকিছু ফেলে দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠে নিজের মতো সবকিছু গঠন করে।

মানুষ কাজগুলোকে করার জন্য সবকিছুকে ভুলে যাবে অর্থাৎ সে একটা বাচ্চা ছেলে হয়ে উঠে নতুন করে। বাচ্চা হয়ে সকল অতীতকে ভুলে যেতে হবে। আর এখানে শিশুকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ সে এমন একটা প্রাণী তার নিজের নিয়ন্ত্রণ নাই কিংবা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা; সে যখন ইচ্ছা হাসবে যখন ইচ্ছা কাঁদবে।

বাচ্চা ছেলের উপমা: কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কাউকে মূল্যায়ন করে না। মূল্যবোধ থাকে না। নির্ভয়। নির্ভীক।

এমন হলেই কেবল আমরা নতুন করে যেকোনো কিছু তৈরি করতে পারি। তার যা ইচ্ছা সে তাই করে এটা একটা প্রতীকতা। এটা হলো নিৎসে-এর সুপার হিউম্যান ফিলোসফি।

[এক্ষেত্রে একটি উপমা হলো- একজন রাজা ছিলো। সবাই তাকে ভয় পেতো। সে খুব অহংকার করে বলতো আমাকে ভয় পায় না এমন কে আছে? কিন্তু বলা হলো একজন আপনাকে ভয় পায় না। রাজা বলছে কে সে! তাকে ধরে নিয়ে আসো। নিয়ে আসা হলো। যখন নিয়ে এসেছে তখন দেখে দুই বছরের বাচ্চা ছেলে কেবল আধো আধো কথা বলা শিখেছে। ডাক দেয়া হলো। তখন রাজা বলল সে আমাকে ভয় পায় না সে যা ইচ্ছা তা করতে পারে! তখন উজির বলল দেখেন আপনি আপনাকে কি করে! তখন রাজা শিশুটিকে ডাক দেওয়া হয় এবং বলে এদিকে আসো, সে না গিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। আচার চাইলো। তিনি জিজ্ঞেস করে কান্না করো কেন? তুমি আমার কাছে কি চাও? তখন শিশুটি বলে আমি আপনার কাছে আচার চাই। রাজা বলে বিষয়টা খুবই সহজ তো তোমরা আচার নিয়ে আসো; তাকে আচার দাও। তাকে আচার দেয়ার পরে সে আবার কান্না শুরু করে দিয়েছে। আবার জিজ্ঞেস করার পর সে বলল আমি দই চাই। পরবর্তীতে দই নিয়ে আসার পরেও সে কান্না শুরু করে। জিজ্ঞেস করাতে সে বলে তুমি আমাকে দই এবং আচার মিক্সড করে দাও।‌ তাকে সেটা মিক্স করে দেয়ার পরে দুই চামচ খাওয়ার পরে আবার কান্না শুরু করে। এবার জিজ্ঞেস করা সে বলে আমার মিক্স খেতে ভালো লাগছে না আমাকে দই এবং আচার আলাদা করে দাও। রাজা ভাবল, এটা তো সহজ। আবার নিয়ে এলেই হয়। কিন্তু শিশুটি জেদ ধরলো মিক্সড দই-আচারই আলাদা করে দিতে হবে। এটা দেখে রাজা তো আত্মসমর্পণ করে এবং বলে আমি তোমার সাথে পারবো না এবং সে মেনে নেয় যে তার চেয়ে শক্তিশালী কেউ আছে।]

অর্থাৎ সে এভাবে তার জীবন দর্শনকে সুপার হিউম্যান চিন্তা ধারার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু এর সাথে ইসলামের জীবন দর্শনের বা চিন্তাধারা কোন সম্পর্ক নাই।

এর বিপরীতে আমাদের উপমা সম্পর্কে রাসূল (স.) এর হাদীস :

“وَالَّذِي نَفْسُ ‏ ‏مُحَمَّدٍ ‏ ‏بِيَدِهِ إِنَّ مَثَلَ الْمُؤْمِنِ ‏ ‏لَكَمَثَلِ النَّحْلَةِ أَكَلَتْ طَيِّبًا وَوَضَعَتْ طَيِّبًا وَوَقَعَتْ فَلَمْ تَكْسِر ولم تُفْسِدْ”.

হাদীসের অর্থ- একটি মুমিনের উদাহরণ হল একটি মৌমাছির মত। সে উত্তম জিনিস খায় এবং উত্তম জিনিস উৎপাদন করে। কিন্তু কোন কিছুকে ধ্বংস করে না। এটা হচ্ছে মুমিনের উপমা। উপরের উদাহরণ এবং এই উদাহরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

তিনি তাতে আমাদের চিন্তা দর্শনকে তুলে ধরেন।

 

مثال (মেছাল) কে রুপক (metaphor) এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা-

মৌমাছি ফুলের মূল থেকে মধু খায়।‌ কিন্তু সে ফুলের উপরে বসে মধু আহরণ করলেও ফুল কখনো নষ্ট হয় না। অর্থাৎ সে এমন ভাবে বসে বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না।‌ সে সকল কিছু থেকে উপকৃত হয় কিন্তু কোন কিছুর বিনাশ ঘটায় না। কোথাও কোন কিছুকে ধ্বংস করে না। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে বুঝাতে চেয়েছেন প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে এমন; যেমন সম্পর্ক ফুলের সাথে মৌমাছির।

আল্লাহর সকল নেয়ামত থেকে উপকৃত হবে কিন্তু কোন কিছুকে নষ্ট বা ধ্বংস করবে না। অর্থাৎ রাসূল সা এর সুন্নত অনুযায়ী আমরা সকল কিছু থেকে উপকৃত হব কিন্তু কোন কিছু বিন্দুমাত্র অপচয় করা যাবে না। এর অন্যতম উদাহরণ- ওযু করার সময় পানি নষ্ট না করার আদেশ থেকে পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসূল সা এই মেটাফোর এর মাধ্যমে আমাদের জীবন দর্শনকে তুলে ধরেছেন। তিনি একটা মাত্র হাদিসের মাধ্যমেই মুমিনের জীবন দর্শনকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরেছেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এই মৌমাছির খাদ্যের মধ্যেও চিনি মিশিয়ে দিয়েছি। ‌মৌমাছি সবচেয়ে সুন্দর ফুল থেকে আমাদের জন্য মধু তৈরি করত কিন্তু আমরা এর পরিবর্তে তাকে চিনি দেওয়ার মাধ্যমে তা থেকে রস বের করে মধু সংগ্রহ করে। অথচ আমরা জানি চিনি সবচেয়ে ক্ষতিকর একটা বিষয়। কিন্তু আমরা মৌমাছি কেও নষ্ট করছি আমাদের নিজেদেরকেও ধ্বংস করছি।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, তিনি আমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি চান আমরা যাতে এই পৃথিবীকে বিনির্মাণ করি।‌ অর্থাৎ আমাদের এ পৃথিবীতে আসার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে পৃথিবীকে বিনির্মাণ করা।

 

আল্লাহর রাসূল (সা.) মুমিনদের কেমন হওয়া উচিত তাঁর একটি স্বরুপ তুলে ধরেছেন এই হাদিসের মাধ্যমে এবং এই মহাবিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে এই বিষয় তুলে ধরেছেন। আমরা উৎকৃষ্ট জিনিসটি খাবো এবং পান করবো এবং সর্বোৎকৃষ্ট জিনিস উৎপাদন করবো। তবে এ কাজে আল্লাহ আমাদের যে প্রকৃতি দিয়েছেন তার থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করবো। একই সাথে আল্লাহর সৃষ্টির কোনো কিছুকেই ধ্বংস না করি এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টি না করি। কখনোই যেন অপচয় না করি।

এ বিষয়ের স্বরুপ তুলে ধরার জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয় তা হলো تدبير (তাদবীর) । তাদবীর হলো, মানুষ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আকলের মাধ্যমে পরিচালিত করবে এবং ব্যবস্থা তৈরি করবে; এবং একই শব্দমূল থেকে আরো একটা শব্দ আসে তা হলো, تدبر (তাদাব্বুর)। তাদাব্বুর হচ্ছে, সামগ্রিক ভাবে চিন্তা করা। সামগ্রিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন চিন্তাদর্শনকে একত্রিত করে সুন্দরভাবে কোনো একটি দেশ, সমাজ বা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করার নাম তাদাব্বুর।

 

 

 

আখলাকসম্পন্ন ও শক্তিশালী সমাজগঠনের ক্ষেত্রে চারটি তাদবীর আছে। যথা:

  • تدبير نفس (তাদবীরে নাফস)
  • تدبير منزل (তাদবীরে মানজিল)
  • تدبير مدن (তাদবীরে মুদুন)
  • تدبير عالم (তাদবীরে আলাম)

তাদবীরে নফস-

সকল কিছু নফস তথা নিজ থেকে শুরু করা। মানুষ নিজেকে নিজেই পরিচালনা করবে। ব্যক্তি নিজেকে আগে আখলাকসম্পন্ন করবে এবং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে। কেননা ব্যক্তি নিজেকে পরিচালনা করতে অপারগ হলে কিংবা আত্মা পরিশুদ্ধ না হলে সে সমাজ, পরিবার কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হবে না শুধু বরং একইসাথে সেই পরিচালনা আমানতের খেয়ানতে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে ৩টি পরিভাষার মাধ্যমে নফসকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে-

তাদবীরে নাফসকে আমরা তিনটা পরিভাষার মাধ্যমে তুলে ধরতে পারি।

১। تحلية (তাহলিয়্যাহ)-

তাহলিয়্যাহ হলো- অপ্রাসঙ্গিকতা, কদর্যতা, অর্থহীনতা, হিংসা- বিদ্বেষ, রাগ-ক্রোধ, গীবত, ইত্যাদি খারাপ সকল বিষয় থেকে মুক্ত কিংবা পরিচ্ছন্ন করা। মানুষের অর্থহীনতা এবং খারাপের দিকে ধাবিতকারী সকল কিছুকে দূরীভূত করা অর্থাৎ কলবকে পরিষ্কার করা।

২। تخلية (তাখলিয়্যাহ)-

তাখলিয়্যাহ হচ্ছে, বিনয়, ভালোবাসা, মহাবিশ্বের প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদির মাধ্যমে কলবকে পরিপুর্ণ করা। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের পরিবারকে প্রাধান্য দিবো এবং মহৎ গুনাবলী দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করা, ফলে পরিশুদ্ধ একটি নফস তথা আত্মার অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে একটি উত্তম আখলাকের সৃষ্টি হবে।

৩। تزكية (তাযকিয়্যাহ)-

তাযকিয়্যাহ হচ্ছে, ইবাদতকে ইখলাসের সাথে আদায় করে পরিপূর্ণতার দিকে ধাবিত হওয়া। নামাজ, রোজা, তাহাজ্জুদ এবং তাসাউফী( تصوفي) বিষয়সহ সকল কিছু নফসকে পরিশুদ্ধ করে আখলাক ও আধ্যাত্মিকতসম্পন্ন একজন মানুষে পরিণত করে।

 

আর এভাবেই তাদবীরে নফসের মাধ্যমে নিজেদের পরিচালনাকারী একজন পরিচালক হিসেবে নিজেদের আভির্ভূত করতে পারবো।

 

তাদবীরে মানজিল

আমাদের হৃদয়, অন্তর আত্মা, কালবকে এসকল সুন্দর বিষয়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করতে পারি তাহলে দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ তাদবীরে মানজিলে পৌঁছাতে পারবো। অর্থাৎ তাদবীরে নফস ছাড়া তাদবীরে মানজিলে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।

তাদবীরে মানজিল হচ্ছে, পরিবার গঠন, পরিচালনা। মাওয়াদ্দাত, ইহসান এবং রহমতের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরী ই হচ্ছে তাদবীরে মানজিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে কে পরিবার পরিচালনা করবে (পুরুষ নাকি মহিলা বা স্বামী নাকি স্ত্রী) এই বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে থাকি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু মাত্র পুরুষ বা শুধুমাত্র নারীকে দেন নি বরং দুইজনের মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয়েছে এবং উভয়ের উপরই এই দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সৌহার্দপূর্ণতা, ইহসানিয়্যাত-ই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের ক্ষেত্রে মাওয়াদ্দাত, ইহসান এবং রহমতের তাজাল্লী কিভাবে আসবে তা আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিত। তাছাড়া কে পরিচালনা তা মুখ্য বিষয় নয়। অন্যথায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও এই বিষয়টির দিকে উল্লেখ করা হয়েছে। ড. আলী সাল্লাবীর মতে, তাদবীরে মানজিল একটি জ্ঞানের আলাদা শাখা।

পরিবার কিংবা সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিববারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এ সামগ্রিক বিষয়কে পরিচালনা করার তার নাম হচ্ছে তাদবীরে মানজিল।

ইসলামী সভ্যতার আখলাকবিদগণ পরিবার এবং বিবাহের সম্পর্ককে একটি ভিত্তির উপর দাড় করানোর ক্ষেত্রে চারটি

মূলনীতির উপর জোর দিয়েছেন। যথা:

১. বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।

২. নফস এবং সতীত্বের নিশ্চিয়তা রক্ষা করা।

৩. ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যকার সঙ্গতি।

৪. পরস্পরের কাছ থেকে উপকৃত হওয়া (আখলাকী)।

 

বিবাহের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে-

১। দ্বীনদারিত্ব

২। বুদ্ধিমত্তা বা আকল

৩। পারস্পরিক সুখ সন্তুষ্টি বা শ্রদ্ধাবোধ

৪। কুফু বা সমতা

বিবাহ কিংবা পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে এ বিষয়সমূহকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

 

আর বিবাহের এ বিষয়সমূহকে বাস্তবায়নের জন্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনে একটি পরিভাষার ব্যবহার করেছেন তা হলো- مثاق غليظة (মিসাকুন গালিজ)। অর্থাৎ এটা এমন একটা চুক্তি যার শর্তসমূহে জটিলতায় ভরপুর। আর এই মিসাক কে আমরা ভালভাবে গ্রহণ করতে পারলে বর্তমান সময়ে কয়েকটি কথা বা শব্দের মাধ্যমে তালাকের মতো এতো বড় বিষয় সম্পন্ন হতো না।

এই মিসাকুন গালিজ একটা চুক্তি হলেও এটা তিনটা চুক্তির বা বিষয়ের সম্বন্বয়ে গঠিত। যথা-

  • عهد (আহাদ)

স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে আখলাকী চুক্তি অর্থাৎ পরস্পরের প্রতি আখলাকী দিক থেকে দায়িত্ববান হওয়া। একজন আরেকজনের সম্মানকে ক্ষুন্য না করে বরং রক্ষা করবে। আর এ কারণেই পরিবারের ক্ষেত্রে আদালত নয় ইহসান-ই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কেননা, আদালত হচ্ছে কোনো একটা মন্দ বিষয়কে সমপরিমাণ প্রতিদান দেওয়া। আর ইহসান হচ্ছে এর থেকে ভিন্ন একটা বিষয়। ইহসান পারস্পরিক ক্ষমা, মারহামাতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই পরিবারের ক্ষেত্রে আদালত নয় ইহসান হচ্ছে মূল ভিত্তি।

  • عقد (আকদ)

মিসাকুন গালিজ এটা হচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায় আকদ। আকদ বিবাহের আইনগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। তবে এই আইন দেশভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিবাহের সাথে একে অপর থেকে এই অধিকার পরষ্পর পাবে; আবার, এই বিবাহের সমাপ্তি (তালাক) ঘটলেও এই আইনগত অধিকার নিশ্চিত করবে। আধুনিক সময়ে এসে বিভিন্ন কারণে (আর্থ-সামাজিক, সমাজ পরিবর্তন) নারীরা সমাজের সাথে সম্পৃক্ত। আর এ বিষয়টি সময়ের গতিশীলতা এবং বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত। তবে সেক্ষেত্রে নারী যতক্ষণ পর্যন্ত তার সতীত্ব কিংবা ইজ্জত রক্ষা করে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবে কিংবা কাজ করতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন প্রকার সমস্যা নেই।

  • ميثاق (মিসাক)

মিসাকুন শব্দটি আরবী। সিকাতুন থেকে এসেছে। আর এটি স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি বিশ্বাসের উপর গঠিত। আকদের সময় স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যে অধিকার তথা শর্তের কথা বলা হয়ে থাকে এটাই মিসাক। এটা শুধুমাত্র একে অপরকে কথা দেওয়া নয় বরং একইসাথে আল্লাহকেও সাক্ষ্য দেওয়া হয়। আর এই মিসাক স্ত্রীগণ স্বামী থেকে গ্রহণ করবে। এমনকি এ বিষয়টি মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাই নারীদের অবশ্যই এই মিসাক প্রদান করতে হবে। মাঝেমধ্যে অনেক সময় স্বামী- স্ত্রী, নারী বা পুরুষ উভয় এই মিসাকের বিষয়টা ভুলে যাওয়ার কারণে পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হয়, হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়।

 

মানুষ তাদবীরে মনজিল অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী উভউকেই পারিবারিক দায়িত্ববোধ পূরণ করার মাধ্যমেই তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ তাদবীরে মুদুন এ উন্নীত হতে পারবে।

একজন ব্যক্তি যে নিজেকে পরিচালনা করতে পারে না কিংবা পরিবারকেও পরিচালনা করতে পারে না; সে যেন একটা শহরকে বা সভ্যতাকে পরিচালনা করার জন্য প্রচেষ্টা না চালায়। ব্যক্তি নিজেকে এবং তার পরিবারকে পরিচালনা করতে পারার মাধ্যমে সে একটি সভ্যতা কিংবা শহর পরিচালনার অধিকার লাভ করে। আমাদের যে প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্ত্রীদের উপর দায়িত্ব অর্পনের কারণে সন্তান দেখাশুনা কিংবা পরিবার পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছে।

তাদবীরে নফস এবং তাদবীরে মানজিলের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে জীবন সুন্দর হয়ে উঠে। অন্যথায়, পারিবারিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।

 

 

তাদবীরে মুদুন-

প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ এই দুই পর্যায় অতিক্রম করার মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায় তাকবীরে মুদুন এ উপনীত হতে পারবে।

তাকদীরের মুদুনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ-

১.عدالة (আদালত)

২. خلافة (খেলাফত)

৩. عمارة (ইমারত)

 

 

শহর কিংবা সভ্যতা পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিক থেকে নয় বরং একইসাথে আধ্যাত্মিক দিক বিবেচনার মাধ্যমেই আদর্শ পরিচালক হতে পারবে। একজন শহর-প্রধান ইলেক্ট্রিসিটি, পানি, গ্যাস জাগতিক বিষয়ের সাথে সাথে শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে হৃদয়ের যে বন্ধন এটা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, আখলাকে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের মধ্যে কোন না কোন ভাবে উন্নতি ঘটাতে না পারে, তাহলে শহর আলোর মধ্যেও অন্ধকারে পরিণত হবে।

যেমন- শহরে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে পুরো শহরে যে গুপ্ত নাজির তৈরি হতে কিংবা চুরি হতে খুব বেশি সময় লাগে না।

আমাদের শহরসমূহকে এই জাগতিক বিষয়সমূহের পাশাপাশি যদি ভ্রাতৃত্ব-ভালবাসা, নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাহলে শহরের বিশৃঙ্খলা, ফিতনা, ফ্যাসাদ এগুলো দূরীবিত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে সেক্ষেত্রে একার পক্ষে শহর কিংবা সমাজ পরিচালনা সম্ভব নয়; এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবার মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামী ফাউন্ডেশন, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে একত্রে কাজ করে সমাজে ঘাটতি নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করতে পারে।

 

তাদবীরে আ’লাম-

তাদবীরে আলাম হচ্ছে- সমগ্র বিশ্বকে পরিচালনা করা।

আর এটারও দুটো পর্যায় রয়েছে-

০১। الاهية (ইলাহিয়্যাত)- স্রষ্টার দিক থেকে বিশ্বকে পরিচালনা করা।

০২। بشرية (বাশারিয়্যাত)- সৃষ্টির দিক থেকে সমগ্র বিশ্বকে পরিচালনা করা।

 

মহাবিশ্বের একক মুদাব্বির (مدبر) তথা একমাত্র পরিচালক মহান আল্লাহ। আর সমগ্র বিশ্ব তার তৈরীকৃত বিধানের আলোকে পরিচালিত হয়। তিনি মহাবিশ্বের রব হওয়ার কারণে এত সুশৃঙ্খলভাবে সমগ্র বিশ্ব পরিচালনা করতে পারেন। মহান আল্লাহ মহাবিশ্ব এবং প্রাকৃতিকভাবে এই সমগ্র বিশ্ব পরিচালনার জন্য যা প্রয়োজন সব সৃষ্টি করে মানুষের উপর এই পরিচালনা তথা খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করেন। আর তখন থেকেই মানুষের বিনির্মাণের দায়িত্ব শুরু হয়। খেলাফত নিজের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার কোন নাম নয় বরং খেলাফত এই পৃথিবীতে ইমারত এবং বিনির্মাণ করার নাম।

আমাদের মূল দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল এই পৃথিবীর বিনির্মাণ। কিন্তু তা থেকে আমরা দূরে সরে গিয়েছি। মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা কিংবা আকল প্রয়োগ করি না। ফলশ্রুতিতে, মহান আল্লাহ এই মহাবিশ্বকে পরিপূর্ণ নেয়ামতের মাধ্যমে আমাদের প্রদান করলেও তা আজ সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে। আমরা মানুষ হিসেবে মহাবিশ্বের এতটাই ক্ষতির সম্মুখীন করেছি যে, যার ফলে মহাবিশ্ব আজ আমাদের ধারণ করতে অক্ষম। যেমন- ওজন স্তরের পরিবর্তন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বন্যা, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ইত্যাদি। যা আসলেই আমাদের কাজের ফলাফল। যেমন- বনাঞ্চল কর্তন, নদী-খাল ধ্বংস,   আল্লাহ কোরআনে বলেন- অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অতিরিক্ত গরম তা মানুষের কাজের ফসল। অর্থাৎ জেনেটিক্যালী পরিবর্তন সহ সবকিছু কারণে আমরা ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছি। অর্থাৎ মানুষ কলব পরিশুদ্ধ এবং আখলাককে বিনির্মাণ করতে না পারার কারণে এই সকল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যে তার নিজের নফসকে পরিচালনা করতে পারে না সে পরিবারকে পরিচালনা করতে পারেনা। যে তাদবীরে মানজিলের মাধ্যমে পরিবার পরিচালনা কিংবা পরিবারে ইহসান প্রতিষ্ঠা করতে পারে না তার জন্য একটি শহর পরিচালনা করা অসম্ভব। আর যে একটি শহর বিনির্মাণ করতে পারেনা তার জন্য একটি দুনিয়া বিনির্মাণ করা অসম্ভব। এজন্য আমাদের কাজ আমাদের নফসকে বিনির্মাণ করা এরপর পরিবারকে বিনির্মাণ করা এবং পরবর্তীতে শহরকে বিনির্মাণ করতে পারি তাহলে আমরা এই দুনিয়াকে বিনির্মাণ করতে পারবো।

আমরা যদি একটি দুনিয়া বিনির্মাণ করতে চাই, আখলাকসম্পন্ন সমাজ গঠন করতে চাই এবং আমাদের সমাজিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে চাই তাহলে ইসলামী চিন্তাবিদ গণ কর্তৃক দেওয়া ৪টি তাদবীরকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বাস্তবায়ন করা আমাদের উপর কর্তব্য। আর আখলাকসম্পন্ন একটি সমাজ গঠনের জন্য এই মুলনীতিসমূহ আবশ্যক। অন্যথায় আখলাকসম্পন্ন সমাজ গঠন সম্ভব নয়। আল্লাহ আমাদের ব্যক্তি, পারিবারিক, সমাজ এবং রাষ্ট্র জীবনে এগুলো বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

 

অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ

৬৩৯ বার পঠিত

শেয়ার করুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top