খিলাফত-পরবর্তী তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাস

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে তুরস্ক উদীয়মান শক্তি। জ্বালানির মূল কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য হওয়ায় এবং ইহুদিদের পুণ্যভূমি ফিলিস্তিনে হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এক কথায় বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্য যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেই হবে বিশ্বমোড়ল। উসমানী খিলাফতের পতনের পূর্বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ছিল খিলাফতের অধীনে। আর ইসলামের ইতিহাসে তিনটি খিলাফত ছিল সবচেয়ে বড়। উমাইয়্যা খিলাফত; আব্বাসী খিলাফত এবং উসমানী খিলাফত। এর মধ্যে উসমানী খিলাফতের ইতিহাস ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ। তাদের সময়েই ইউরোপের বিশাল একটি অংশ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে এবং সমগ্র দুনিয়াতে ইসলাম একটি অপরাজেয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মুসলিম শাসকদের ইসলামবিমুখতা এবং ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই উসমানী খিলাফতের পতন ঘটে।

উসমানী খিলাফতের পতাকা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লিথুনিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত ৩০টি পয়েন্টে সমগ্র দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উসমানী সেনাবাহিনী অসম বীরত্ব প্রদর্শনের পরও হেরে যায়। এবং পরবর্তীতে মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে তুরস্কের আলেমদের নেতৃত্বে বর্তমান তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ইউরোপিয়ান দেশগুলো খিলাফতের ব্যাপারে আপত্তি করতে থাকে এবং তাদের দাবির মুখে ১লা নভেম্বর ১৯২২ সালে তৎকালীন সুলতান; সুলতান ওয়াহদেদ্দিনকে তুরস্ক থেকে নির্বাসিত করা হয়। অবশেষে লোজান চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর আপত্তির মুখে ২৯ অক্টোবর প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে এবং ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মুসলিমগণ নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়ে।
এর অব্যবহিত পরই মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এবং তার অধীনস্থগণ তুরস্ক থেকে ইসলাম ও ইসলামের নিশানা মুছে দেয়ার লক্ষ্যে মুসলমানদের ওপর চরম জুলুম নির্যাতন শুরু করে। আজানকে তুরকিশ ভাষায় দেয়াতে বাধ্য করে; ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করে; টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই তাদেরকে হেনস্তা করা হতো। সেই সময়ে হাজার হাজার আলেমকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে এবং অতীত ইতিহাসকে সম্পূর্ণ রূপে মুছে ফেলার জন্য আরবি হরফকে তুলে দিয়ে তদস্থলে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করে এক রাতেই গোটা জাতিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে ঠেলে দেয়। বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতিকে আমদানি করা হয়; মেয়েদেরকে মিনি খোলামেলা পোশাক পরিধান করতে বাধ্য করে এবং হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে ইউরোপিয়ান পারিবারিক আইন প্রবর্তন করা হয়। এক কথায় বলতে গেলে ইউরোপের আদলে দেশকে গড়ে তুলার জন্য ইউরোপের নগ্ন সংস্কৃতিকে আমদানি করা হয়।
১৯৩৮ সালে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক মৃত্যুবরণ করেন। তার সঙ্গী-সাথীগণ ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরি, তারা তাকে কোন প্রকার জানাজা ছাড়াই দাফন করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জুলুম নির্যাতনের অবসান হয়নি; তার সতীর্থ ইসমেত ইননু কামাল আতাতুর্কের সময়ের সেই একই জুলুম নির্যাতনকে অব্যাহত রাখেন। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরা CHP নামে একটি দল গঠন করে পুনরায় সরকার গঠন করে এবং ১২ বছর পর্যন্ত একই জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রাখে। তাদের এই জুলুম নির্যাতন যখন চরম পর্যায়ে তখন মুসলিমগণ আস্তে আস্তে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পরামর্শে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে। ১৯৫০ সালের নির্বাচনে আদনান মেন্দ্রেসের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিজয় লাভ করে। তারা ক্ষমতায় এসে ইসলামের ওপর সকল নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাহার করে; মসজিদগুলোকে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়; আরবিতে আজান দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়। আরবিতে আজান শুনে কোটি কোটি মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন; ঐতিহাসিকদের বর্ণনামতে তুরস্কের মুসলিমগণ সেদিন এতটাই আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে এর আগে বা পরে তারা আর কোন দিন এতটা আনন্দিত হতে পারেননি।
ইসলামের ওপর সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তিনি মুসলমানদেরকে স্বস্তি দেন এবং আমেরিকার সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তিনি মোট ১০ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। ১৯৬০ সালে বামপন্থী ও ইসলামবিদ্বষী সেনাবাহিনী এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

উসমানী খিলাফতের মানচিত্র

এই সামরিক সরকার ৫ বছর তুরস্ককে শাসন করে। ১৯৬৪ সালে Democrat Party র অন্যতম সদস্য সোলেয়মান ডেমিরেল আদালেত পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁকে তুরস্কের জনগণ আদনান মেন্দ্রেসের উত্তরসূরি হিসাবে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে এবং তার নেতৃত্বে আদালেত পার্টি অনেকবার সরকার গঠন করে। কিন্তু ৯০-এর দশকে তিনি নিজেকে একজন ম্যাসন (ইয়াহুদিদের দালাল) বলে স্বীকার করে নেন। তিনি তুরস্কে এখন ম্যাসন ডেমিরেল নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে ডেমিরেল ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তুরস্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডানপন্থী বামপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক ছাত্রহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা জারি থাকে।

১৯৬৯ সালে তুরস্কের রাজনীতিতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান আলেম-উলামাদের পরামর্শে এবং ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত একদল মুসলমানকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি মিল্লি নিজাম নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপজ্জনক এই অভিযোগে ১ বছর পরই এই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই দল নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই নাজমুদ্দিন এরবাকান মিল্লি সালামেত নামে নতুন একটি দল গঠন করে ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ৪৮ আসনে বিজয় লাভ করে নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

নাজমুদ্দিন এরবাকান

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে এই ৪৮ আসন ছাড়া কোনো দলই সরকার গঠন করতে পারছিল না। সুলেয়মান ডেমিরেল তখন ডানপন্থী দল হিসেবে তুরস্কে পরিচিত হওয়ায় নাজমুদ্দিন এরবাকান তার সাথে সুস্পষ্ট শর্তের ভিত্তিতে কোয়ালিশন সরকার গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেন কিন্তু তিনি এ সকল শর্তের ভিত্তিতে নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে সরকার গঠন করতে অস্বীকার করেন কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামপন্থী দলের নেতা বুলেন্ত এজেবিদ তার সকল শর্ত মেনে নিয়ে তার সাথে সরকার গঠন করেন। তার এই কোয়ালিশন সরকারের সময় ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেয়া, সাইপ্রাসকে গ্রিস থেকে মুক্ত করে তুরকিশ সাইপ্রাস গঠন করা ও মুসলিমদেরকে জুলুমমুক্ত করা, নতুন করে মাদরাসা শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা; হাজার হাজার কুরআন কোর্স চালু করা; মাদরাসার ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়া; সাইদ বদিউজ্জামান নুরসির রিসালায়ই নুরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা; সেনানিবাসসহ সকল সরকারি অফিস আদালতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা; ইসলামী বইপুস্তক প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া; অশ্লীলতা বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করাসহ অনেক কাজ করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ এই সময়ের মধ্যে তিনি ২৭০টি ভারি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন যার মধ্যে বিমান তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে সকল কিছুই ছিল। তার এই উদ্যম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দলকে তার সাথে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে এবং সরকার নতুন নির্বাচনের আয়োজন করে।
১৯৭৮ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ফলে মিল্লি সালামেত পার্টির আসন ২৮ এ নেমে আসে কিন্তু এবারও তারা নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয় কিন্তু এবার তারা নিঃস্বার্থ ভাবে Adalet Party  কে সমর্থন করে। এই সময়ে ইসলামী আন্দোলন তুরস্কের রাজনীতিতে এক নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৮৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পক্ষে সংসদ এবং সংসদের বাইরে মজবুত ভূমিকা পালন করে এবং আমেরিকা ইরাককে দিয়ে ইরানের ওপর হামলার বিপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে জনমত গঠনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এইভাবে মুসলিম বিশ্বের ওপর ইঙ্গমার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন ভূমিকা পালন করে।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে তুরস্ক যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এটাকে সাম্রাজ্যবাদীরা ভালো চোখে দেখেনি। তারা ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল দলকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ নাজমুদ্দিন এরবাকানসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদেরকে জেলে প্রেরণ করে। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে জেলে পুরে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করে। সেনাবাহিনী ডানপন্থী ও বামপন্থী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রভাব এতটাই প্রকট ছিল যে অনেক ঐতিহাসিক এই জন্য বলে থাকেন যে আধুনিক তুরস্কের ২টি ইতিহাস রয়েছেÑ একটি হলো ১৯৮০-এর আগে আরেকটি ১৯৮০ সালের পরের ইতিহাস।
সামরিক শাসন ৩ বছর পর্যন্ত জারি থাকে। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এরবাকানের দল মিল্লি সালামেত পার্টির সংসদ সদস্য তুরগুত অজাল Motherland party নামে একটি দল গঠন করে ক্ষমতায় আরোহণ করে। এই সময়ে রেফাহ পার্টি; Right way Party, Nationalist Movement party নামে আরও কয়েকটি দলের জন্ম হয়। ১৯৮৯ সালের এক রেফারেন্দামের মাধ্যমে নাজমুদ্দিন এরবাকান; বুলেন্ত এজেবিত পুনরায় রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়। এরবাকান রেফাহ পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন।
এইভাবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তুরগুত অজালের নেতৃত্বে Motherland Party তুরস্ককে শাসন করে। তুরগুত অজাল ১৯৯৩ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রেসিডেন্ট হন এবং ১৯৯৪ সালে তাঁকে বিষপানে হত্যা করা হয়। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তুরস্কের জাতীয় সংসদ সুলেয়মান দেমিরেলকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই সময়ে ১৯৯৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিপুল বিজয় অর্জন করে। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তার দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরায় এবং এরবাকান জাতির সামনে এক ভিশন নিয়ে আসায় রাজনীতির দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিজয় লাভ করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের দালালগণ তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এরবাকনের নেতৃত্বে রেফাহ পার্টি Right Way Party ‘র নেত্রী তানসু চিল্লারের সাথে সরকার গঠন করে। এরবাকান ক্ষমতা গ্রহণ করেই জনগণের ক্ষমতায়ন শুরু করেন। সকল দরিদ্রকে সরকারিভাবে ভাতা দেওয়া শুরু করেন। হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য ইসলামি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার ঘটান ও আলেম ওলামাদেরকে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রধান করেন। D-8 প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুদের হারকে কমিয়ে নিয়ে আসেন।

মাত্র ১১ মাসের শাসনামলে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। সকলের বেতন তিনি ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। শিল্পায়নে গতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের মধ্যে তুরস্ককে জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন। তার এই সকল উত্তরোত্তর সফলতায় ইয়াহুদিরা রেফাহ পার্টিকে বন্ধ করার লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রপাগান্ডা চালায় ও তার পার্টি শরিয়ত কায়েম করবে এই অভিযোগে তাকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এই অবস্থায় এরবাকান এই শর্তে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন যে তার কোয়ালিশন পাটির নেত্রী তানসুকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কিন্তু মাসন ও ইয়াহুদিদের ধারক সোলেয়মান ডেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী করে। এইভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর তিন মাস পর ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ইসলামপন্থী গণ রেফাহ পার্টির অন্যতম নেতা রেজায় কুতানের নেতৃত্বে ফাজিলেত পার্টি গঠন করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১১৪টি আসন লাভ করে। কিন্তু কিছুদিন পর এই দলটিকেও নিষিদ্ধ করে। এরপর গঠিত হয় সাদেত পার্টি। এবং শুধুমাত্র ফাজিলেত পার্টি ছাড়া অন্য সকল দল মিলে সরকার গঠন করে কিন্তু তাদের দুর্নীতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে। অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামে এবং মুদ্রাস্ফীতি সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০০২ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে রজব তায়্যিব এরদোগানের নেতৃত্বে একে পার্টি ৩৪.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং এরপর ২০০৭ সালে ৩৮.৬ এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ৪৯.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনা করছে।

১১৯৪ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of বুরহান উদ্দিন আজাদ

বুরহান উদ্দিন আজাদ

অনুবাদক এবং জ্ঞান ও সভ্যতা বিষয়ক গবেষক বুরহান উদ্দিন আজাদ জামালপুর জেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশসেরা মাদরাসা থেকে আলেম পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করেন এবং তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আঙ্কারা সোস্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। তুরস্কে অবস্থানকালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে বড় বড় আলেম, স্কলার, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদের সান্নিধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, উসূল ও মাকাসিদসহ আরও অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষালাভের পাশাপাশি Institute of Islamic Thought এবং Economic and Social Researches Center এর মত প্রসিদ্ধ দুইটি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে অবস্থান করছেন এবং European Youth Association এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য দুইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনূদিত গ্রন্থের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ও ব্লগসাইটে উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম, দার্শনিক ও মুতাফাক্কিরগণের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।তার অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো হলো; ১। ইসলাম ও জ্ঞান || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ২। দাওয়াম || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ৩। ইসলাম শিক্ষা || প্রফেসর ডঃ সাইফুদ্দিন ইয়াজিযি ৪। উসমানী খিলাফতের ইতিহাস || প্রফেসর ডঃ ইহসান সুরাইয়্যা সিরমা ৫। মুসলিম যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য || প্রফেসর ডঃ ইউসুফ আল কারদাভী ৬। Müslüman Lider Nasıl Olmalı || Prof. Gulam Azam (İlk Baskı, 2019) ৭। ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ (প্রথম প্রকাশ, ২০১৯) ৮। বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম উম্মাহ এবং সভ্যতা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ৯। ইসলামী ডেক্লারেশন || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ১০। বিশ্বব্যাপী আখলাকী সংকট || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১১। সুন্নত ও হাদীস বুঝার মেথডোলজি || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১২। ইসলামী সভ্যতায় নারী || ড: খাদিজা গরমেজ ১৩। ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ও নতুন দুনিয়া || প্রফেসর ড: নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য) ১৪। জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও মেথডোলজি ¬¬|| প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন (প্রকাশিতব্য) ১৫। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর শিক্ষাদান পদ্ধতি || ইবরাহীম হালিল আর ১৬। আমাদের আন্দোলনের মূলভিত্তি || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য)তাঁর অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধসসমূহ হলঃ১।ইবনে খালদুন ও ইলমুল উমরান || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ২।শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী ও উসূল || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৩।ইসলামী চিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ || প্রফেসর ড: উমর তুরকের ৪।আল্লামা ত্বহা আব্দুর রহমানের চিন্তাদর্শন || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৫।আল কোরআনের ১৪০০ বছর পূর্তিতে তাফাক্কুর || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ৬। ইমাম আল-মাওয়ার্দি ও তাঁর চিন্তাধারা || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ৭। ইবনে খালদুন ও ইলমূল উমরান || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন ৮। পাশ্চাত্য চিন্তার ভিত্তি || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন
Picture of বুরহান উদ্দিন আজাদ

বুরহান উদ্দিন আজাদ

অনুবাদক এবং জ্ঞান ও সভ্যতা বিষয়ক গবেষক বুরহান উদ্দিন আজাদ জামালপুর জেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। দেশসেরা মাদরাসা থেকে আলেম পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করেন এবং তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আঙ্কারা সোস্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেন। তুরস্কে অবস্থানকালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে বড় বড় আলেম, স্কলার, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদের সান্নিধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, উসূল ও মাকাসিদসহ আরও অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষালাভের পাশাপাশি Institute of Islamic Thought এবং Economic and Social Researches Center এর মত প্রসিদ্ধ দুইটি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে অবস্থান করছেন এবং European Youth Association এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দেশের উল্লেখযোগ্য দুইটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।তাঁর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনূদিত গ্রন্থের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ও ব্লগসাইটে উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম, দার্শনিক ও মুতাফাক্কিরগণের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।তার অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো হলো; ১। ইসলাম ও জ্ঞান || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ২। দাওয়াম || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান ৩। ইসলাম শিক্ষা || প্রফেসর ডঃ সাইফুদ্দিন ইয়াজিযি ৪। উসমানী খিলাফতের ইতিহাস || প্রফেসর ডঃ ইহসান সুরাইয়্যা সিরমা ৫। মুসলিম যুবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য || প্রফেসর ডঃ ইউসুফ আল কারদাভী ৬। Müslüman Lider Nasıl Olmalı || Prof. Gulam Azam (İlk Baskı, 2019) ৭। ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ (প্রথম প্রকাশ, ২০১৯) ৮। বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম উম্মাহ এবং সভ্যতা || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ৯। ইসলামী ডেক্লারেশন || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ১০। বিশ্বব্যাপী আখলাকী সংকট || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১১। সুন্নত ও হাদীস বুঝার মেথডোলজি || প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ ১২। ইসলামী সভ্যতায় নারী || ড: খাদিজা গরমেজ ১৩। ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ও নতুন দুনিয়া || প্রফেসর ড: নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য) ১৪। জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও মেথডোলজি ¬¬|| প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন (প্রকাশিতব্য) ১৫। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর শিক্ষাদান পদ্ধতি || ইবরাহীম হালিল আর ১৬। আমাদের আন্দোলনের মূলভিত্তি || প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান (প্রকাশিতব্য)তাঁর অনূদিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধসসমূহ হলঃ১।ইবনে খালদুন ও ইলমুল উমরান || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ২।শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী ও উসূল || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৩।ইসলামী চিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ || প্রফেসর ড: উমর তুরকের ৪।আল্লামা ত্বহা আব্দুর রহমানের চিন্তাদর্শন || প্রফেসর ড: মেহমেদ গরমেজ ৫।আল কোরআনের ১৪০০ বছর পূর্তিতে তাফাক্কুর || আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ ৬। ইমাম আল-মাওয়ার্দি ও তাঁর চিন্তাধারা || প্রফেসর ড: তাহসিন গরগুন ৭। ইবনে খালদুন ও ইলমূল উমরান || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন ৮। পাশ্চাত্য চিন্তার ভিত্তি || প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top