ইসলামী ব্যবস্থা একই সাথে বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয়। তাহলে ইসলামী ব্যবস্থায় কিভাবে উপনীত হব? ধর্মীয় নবায়নের মাধ্যমে নাকি রাজনৈতিক বিপ্লবের মাধ্যমে?

এই প্রশ্নের জবাব হল, ধর্মীয় চিন্তার নবায়ন ছাড়া ইসলামের পুনর্জাগরণ শুরু হবে না, তবে রাজনৈতিক বিপ্লব ছাড়াও এটা সফলতার সাথে পূর্ণতায় পৌঁছাবে না। এই জবাব, ইসলামী পুনর্জাগরণকে দ্বিমুখী একটি বিপ্লব হিসেবে সঙ্গায়িত করে। একটি হল, আখলাকী বিপ্লব, অপরটি হল সামাজিক বিপ্লব। এই জবাবের মধ্যে ধর্মীয় চিন্তার নবায়নের প্রতি বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। এর প্রতি জোর দেওয়ার কারণ হল, ইসলামের প্রকৃতি ও মূলনীতি সমূহের পাশাপাশি মুসলিম দুনিয়ার কিছু অবশ্যস্বীকার্য বাস্তবতা।

আজকে যদি আমরা মুসলিম দেশ সমূহের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, মুসলমানদের মধ্যে আজ আখলাকহীনতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, কুসংস্কার, অলসতা, দ্বিমুখীতা, অনৈসলামী কৃষ্টি-কালচার এবং চরম বস্তুবাদীতা ব্যপকভাবে দানা বেঁধে উঠেছে। শুধু তাই নয় এর সাথে যুক্ত হয়েছে উদ্যোগ ও স্বপ্নের নির্মম অনুপস্থিতি। অবস্থা যখন এমন তখন কি কোন ধরণের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার অনতিবিলম্বে শুরু করা সম্ভব?

ইতিহাসের মঞ্চে যথাযথ ভূমিকা পালন করার পূর্বে প্রত্যেক জাতিকেই একটি অভ্যন্তরীণ আত্মশুদ্ধির পথ পাড়ি দিতে হয় এবং কিছু কিছু মৌলিক আখলাকী মূল্যবোধকে সত্যিকার ভাবে হৃদয় দিয়ে ধারণ করতে হয়। দুনিয়ার মঞ্চে আত্মপ্রকাশকারী প্রতিটি শক্তিই, বলিষ্ঠ আখলাকের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। আর প্রতিটি পরাজয়ই শুরু হয় আখলাকী অধঃপতনের মধ্য দিয়ে। যা কিছুই করতে চাওয়া হোক না কেন সর্বাগ্রে সেটা মানুষের রূহের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা রূহের জাগরণ ছাড়া কোন জাগরণই সম্ভবপর নয়।

ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হিসেবে ইসলামী চিন্তার নবায়ন বলতে কি বুঝানো হয় ?

সর্বাগ্রে এটা দুইটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেঃ নতুন এক জজবা ও নতুন এক ইচ্ছাশক্তি (ইরাদা)

ধর্মীয় চিন্তার নবায়ন করার অর্থ  হল,  জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি, কেন ও কিসের জন্য বেঁচে আছি এবং কিভাবে বেঁচে থাকা প্রয়োজন , এই সকল বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি জজবার অধিকারী হওয়া। এই উদ্দেশ্য কি ব্যক্তিগত কিংবা অভিন্ন কিছু মানে উন্নীত হওয়া ,  নিজ দেশ ও জাতির জন্য মান-মর্যাদা বইয়ে নিয়ে আসা, নিজেকে সত্যায়িত করা, নাকি আল্লাহর বিধানকে দুনিয়াতে বিজয়ী করা? আমাদের অবস্থান থেকে ধর্মীয় চিন্তার নবায়ন করার অর্থ হল, নিজেকে মুসলমান বলে দাবিকারী কিংবা তাঁদেরকে এই নামে অভিহিত করার ব্যক্তিদেরকে ইসলামীকরণ করা। এই ইসলামীকরণের সূচনাবিন্দু হল, আল্লাহর প্রতি অটল ও অবিচল ঈমান এবং ইসলামের যে আখলাকী মূল্যবোধ রয়েছে সেই সকল মূল্যবোধকে যথাযথ আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন।

ধর্মীয় চিন্তার  নবায়নের দ্বিতীয় মৌলিক ধাপ হল, মূল উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত জজবার যে দাবী সে দাবীকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত থাকা। এই কারণে ধর্মীয় চিন্তার নবায়নের অর্থ হল মানসম্পন্ন একটি উচ্চ আখলাক ও উৎসাহ-উদ্দীপনাকে হৃদয়ে লালন করা এবং  বস্তুর উপর রূহের প্রভাব যে অপরিসীম এটার উপর বিশ্বাস করা। শুধু তাই নয়, এমন একটি আদর্শ লালন করা যে আদর্শ সাক্ষ্য দেয় সাধারণ মানুষ অসীম সাহসী হয়ে থাকে এবং তাঁরা আত্মত্যাগের জন্যও সদা প্রস্তুত থাকে। বিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তির (ইরাদা) দিক থেকেও এটা অনেকটা নতুন ধরণের বিশ্বাস ও উদ্যোগ যার ভিত্তিতে সবাই তাঁদের আদর্শের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করতে উজ্জীবিত হবে।

এই নব চেতনা ও রূহে উপনীত হওয়া ছাড়া বর্তমান মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সত্যিকারের কোন পরিবর্তন আসা সম্ভবপর নয়।

এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সময় অনেক সময় দেখতে পাই যে,  অনেকেই সংক্ষিপ্ত পন্থায় ক্ষমতা দখল করে ইসলামী ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করার কথা চিন্তা করে থাকেন। তাঁরা বলে থাকেন যে এই ভাবে ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা যথাযথ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ধারাবাহিকভাবে জনগণকে ধর্মীয়, আখলাকী ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা দিয়ে ইসলামী ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। 

এই ধরণের চিন্তা প্রলোভন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইতিহাসের পাতায় এমন কোন সত্যিকারের বিপ্লব পাওয়া যায় না, যা ক্ষমতার বিন্দু থেকে শুরু হয়েছে। সত্যিকারের বিপ্লব শিক্ষার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং সেই শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর মূলে আখলাকী একটি আহ্বানকে ধারণ করেছে।  

অপর দিক থেকে যারা ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাকে ক্ষমতা ও বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চান, তাঁদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় এমন ধরণের সরকার ও প্রতিষ্ঠান কোথা থেকে আসবে? তখন তাঁরা এই প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেন না। এই ধরণের সরকার কে প্রতিষ্ঠা করবে? কে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে এবং এই সরকার ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ কোথা থেকে আসবে? সর্বশেষে, এই সরকারের কর্মকাণ্ড সমূহকে কে পর্যবেক্ষণ করবে এবং যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাকে বাদ দিয়ে যে তাঁরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা শুরু করবে না এর নিশ্চয়তা কে দিবে?

ক্ষমতায় যারা থাকে তাঁদেরকে এক গ্রুপকে দিয়ে অন্য গ্রুপকে পরিবর্তন করা যায়, এটা নিত্তনৈমিত্তিক  একটি ব্যাপার। একজনের জুলুম ও স্বৈরতন্ত্র অপরের মাধ্যমে পরিবর্তন করা কিংবা দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির সম্পদও অপরের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব। নাম, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং স্লোগান সমূহকে পরিবর্তন করা যায়।  কিন্তু   এসব কিছুর মাধ্যমে পৃথিবীর এক নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে ইসলামী ব্যবস্থার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়, যার মাধ্যমে মানুষের সাথে নিজের, অন্যের এবং তাবৎ জগতের এক নতুন সম্পর্কের গতিপথ রচিত হয়।

শক্তি অর্জন কিংবা ক্ষমতা দখলের ভাবনার মধ্যে আছে মানুষের একটি সহজাত প্রবণতা, নিজের প্রবৃত্তির মোকাবেলায় যে জিহাদ তার প্রাথমিক ও কষ্টদায়ক পথটা পরিহার করা। মানুষকে তৈরি করে তাঁকে পরিচালনা করা কঠিন কিন্তু তাঁর চেয়েও কঠিন হল নিজেকে তৈরি করে সঠিক পথে পরিচালিত করা।

ধর্মীয় পুনর্জাগরণের সূচনাই হয় নিজেকে দিয়ে এবং নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে। অপর দিকে শক্তি প্রয়োগ ও জবরদস্তির ঘটনা ঘটে অন্যকে দিয়ে। আর এ  কারণেই এই চিন্তাটা এত বেশী চিত্তাকর্ষক।

এই কারণে যে আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হল ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, সর্বাগ্রে সেই আন্দোলনকে একটি আখলাকী আন্দোলন হতে হবে। আর এই ধরণের আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল মানুষকে আখলাকী দৃষ্টিকোণ থেকে উজ্জীবিত ও উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা যাবে । মানুষ যেন আরও ভালো মানুষে পরিণত হতে পারে এই জন্য আন্দোলনের মধ্যে আখলাকী কর্মকাণ্ডের ধারাকে ব্যাপকভাবে জারী রাখতে হবে। ইসলামী আন্দোলন ও সাধারণ রাজনৈতিক দলের মধ্যে এটাই হল মৌলিক পার্থক্য। কেননা সাধারণ রাজনৈতিক দলসমূহ একই চিন্তা ও অভিন্ন স্বার্থে একত্রিত হওয়ার পরে তাঁদের মধ্যে আখলাকী কোন মূল্যবোধ কিংবা আখলাকী কোন দায়িত্ত্ববোধ নেই।

ধর্মীয় চিন্তার নবায়নকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি ইসলামের মূল উৎস সমূহের মধ্যেও সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়।

প্রথমত, কোরআনে কারীম উল্লেখ করেছে যে অভ্যন্তরীণ পুনর্জাগরণ হল জনগণের অবস্থার পরিবর্তন বা উন্নতির পূর্বশর্ত।

দ্বিতিয়ত, এই অমোঘ বিধানটি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কর্তৃক  ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে এবং প্রথম যুগে ইসলামকে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায় সত্যায়িত হয়ে আছে। প্রথম তের বছর ধরে কোরআনে কারীমের শুধুমাত্র ঈমানী ও দায়িত্ত্বশীলতা সংক্রান্ত বিষয়ে জোর প্রদানের বিষয়টিও এই বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে। এই ১৩ বছর ধরে কোরআনে কারীম কোন ক্রমেই রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার বিষয়ে কোন ধরণের মতামত পেশ করেনি এবং সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত ইসলামী কোন সমাধানও তুলে ধরেনি।

ধর্মীয় চিন্তার নবায়নের পূর্বে তিনটি গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় চাই;

১। কোরআনে কারীমের আদেশ সমূহের, বিশেষ করে শিকড় সমূহ গভীরে প্রোথিত এমন সামাজিক সমস্যা সমূহ সংক্রান্ত বিষয়াদি কিংবা ক্ষমতাসীন অথবা সম্পদশালীদেরকে বিরক্ত করে এমন আদেশ সমূহের মধ্যে কোন ধরণের পরিবর্তন না ঘটিয়ে এবং কোন প্রকার আপোষ না করে সেই আদেশ সমূহকে বাস্তবায়ন করার জন্য যে দৃঢ়তা প্রয়োজন সেটা কেবলমাত্র ধর্মীয় চিন্তার নবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। ধর্মীয় চিন্তার নবায়নের মাধ্যমে কোন প্রকারের শক্তি প্রয়োগ না করেই এবং ঘৃণাবোধকে জাগিয়ে না তুলেই করা সম্ভব। কেননা তখন সকলেই কিংবা নতুনভাবে জাগ্রত সমাজের অধিকাংশই মনে করবে যে এটাই হচ্ছে স্রষ্টার নির্দেশ এবং আদালতের মানদণ্ড, যা আমাদের সকলের মেনে চলতে হবে।

২। ইসলামী পুনর্জাগরণ, এমন মানুষ ছাড়া কল্পনাও করা যাবে না যারা এই ধর্মীয় পুনর্জাগরণের জন্য বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিকভাবে সকল কিছুকেই ত্যাগ করতে প্রস্তুত। অনুরূপভাবে পারস্পারিক আস্থা ও সহযোগিতা ছাড়াও এই জাগরণের কথা চিন্তাও করা যায় না। আবার এই বৃহৎ ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কুরবানীর ফলাফল যে নিজের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও অন্যকে অধীনস্ত করে রাখার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হবে না এর নিশ্চয়তা কে দেবে? কোন ব্যবস্থা একটি নৈতিক ব্যর্থতার ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারবে যার উদাহরণ ইসলামের ইতিহাসে সুপ্রচুর। ইসলামী ব্যবস্থাসহ প্রতিটি ব্যবস্থাই শেষ পর্যন্ত ঘোষিত নীতির চেয়ে সেই সব মানুষকে প্রতিফলিত করে যারা এর প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত।

৩।  মুসলিম উম্মাহ আজ ঘোরতর পশ্চাদপদতার মধ্যে  নিপতিত। এই অবস্থা থেকে মুসলিম উম্মাহকে উদ্ধার করতে হলে শিক্ষা ও শিল্পায়নের দিকে জোর দিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব এই ক্ষেত্রে  গৃহীত পরিকল্পনাসমূহকে বাস্তবায়ন করতে হবে।  বে পাশ্চাত্যের হুবুহু অনুকরণ করতে গিয়ে যদি যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া যদি উন্নয়নের দিকে যাওয়া হয় সেই অতি উন্নয়ন স্বৈরাচার, দুর্নীতি, পারিবারিক ব্যবস্থার অবক্ষয়, দ্রুত ও বৈষম্যমূলকভাবে সম্পদ বৃদ্ধি, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অবিবেচক ও সম্পদশীল লোকদের উত্থান, ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে গিয়ে অপরিকল্পিত নগরায়ন, সমাজের ভাঙ্গন ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিক্ততা বৃদ্ধি, মাদকাসক্তি ও গণিকাবৃত্তির প্রসারের মত আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এই অপসংস্কৃতি ও আদিমতার তুফানকে মোকাবেলা করার জন্য অনুপম পন্থা হল, আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং ধর্মীয় অনুশাসনকে সমাজের সকলে বাস্তবায়ন। এই ক্ষেত্রে ধর্মই পারে সংস্কৃতিকে ধর্মহীন সভ্যতা থেকে রক্ষা করতে। নিছক বস্তুগত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আদিমতার প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারে। যার অহরহ নজির আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি।

উৎসঃ ইসলামী ডেক্লারেশন

 

অনুবাদক: বুরহান উদ্দিন আজাদ

৩৩১৫ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ

আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ

আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ হলেন গোটা দুনিয়ার ইসলামী আন্দোলনের একজন মহান পুরুষ। বিংশ শতাব্দীতে জন্ম লাভ করা এই মহাপুরুষ দুনিয়াবাসীর সামনে পেশ করেছেন বিরল অনেক দৃষ্টান্ত। তিনি বসনিয়া হেরসেকের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা, যার হাত ধরেই বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মুক্তি পেয়েছিলো পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। বিশ্ব মোড়লদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে অসম যুদ্ধে জয়ী হয়ে শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করেছিলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে।

জন্ম ও শৈশবকাল:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ১৯২৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় বস্নাকা ক্রুপা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিলো ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষায় ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি পরিবার। কিন্তু আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ইসলাম বিরোধী একটি বৈরী পরিবেশ ও ইউরোপিয়ানদের দারা দখলকৃত একটি ভূমিতে বেড়ে উঠেন। সারায়েভোর একটি জার্মান স্কুলে তিনি তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। একজন মেধাবী ও সুশৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে সবার কাছে ছিলেন অতি পরিচিত। তিনি তার স্কুল জীবনেই পাশ্চাত্য ও ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের জন্য তার সহপাঠীদের কাছে ছিলেন অতি পরিচিত। সে সময়েই তিনি তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে মিলে গড়ে তুলেন মেলাদি মুসলমানি (মুসলিম যুবসংঘ) নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠন কায়েমকালে তার বয়স ছিলো মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু তার জ্ঞান এবং চিন্তার প্রখরতার কারণে সবার কাছেই ছিলেন প্রিয় একজন মানুষ। আর এই কারণেই তার প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্লাব না হয়ে পরিণত হয় সক্রিয় একটি সংগঠনে। যার ফলে এটি হয়ে ওঠে ছাত্রদের ক্যারিয়ার গঠন ও গঠনমূলক কাজের অন্যতম সূতিকাগার। অপরদিকে মেয়েদের জন্য গড়ে তোলা হয় আলাদা একটি সংগঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সংগঠনটি দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ এর প্রতিষ্ঠিত এই মুসলিম যুবসংঘটি যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার এই যুগান্তকারী ভূমিকা তাকে ও তার সংগঠনকে সবার সামনে নিয়ে আসে। এই যুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনী বসনিয়াতে ১ লাখেরও বেশি মুসলমান হত্যা করে।

কম্যুনিস্ট শাসনের জুলুম-নির্যাতন:
১৯৪৬ সালের ১৩ জানুয়ারি বসনিয়া পুনরায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু এই সংগ্রামে বামপন্থি নেতাদের আধিপত্য থাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বামপন্থিরা ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে। বসনিয়া একটি স্বায়ত্ত শাসিত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এক চুক্তি অনুযায়ী যুগোশ্লাভিয়ার সাথে আরও ৬টি দেশ মিলে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা লাভ করবে। বসনিয়া হয় এই ৬টি দেশের একটি।
কম্যুনিস্টরা ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ায় এবং নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার ভূমিকার কারণে কম্যুনিস্টদের টার্গেটে পরিণত হন। ১৯৪৯ সালে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। এবং তিনি একাধারে ৫ বছর বন্দি জীবন যাপন করেন।
১৯৫৩ সালে টিটু (Titu) ক্ষমতায় আসার পর আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের উপর জুলুম-নির্যাতন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তিনি এ সকল জুলুম- নির্যাতনের পরেও তার বিপ্লবী ভূমিকা অব্যাহত রেখে জনগণের মধ্যে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কাজকে অব্যাহত রাখেন, চিন্তার রাজ্যে বিপ্লব ঘটানোর কাজে রত থাকেন। এ সময়ে তিনি অন্য একটি ইসলামী দলের নেতা হাসান দুজুর সাথে মিলে তার কাজের গতি বৃদ্ধি করেন।
১৯৭৪ সালে টিটুর নতুন সংবিধান প্রবর্তনের পর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসা নতুন করে উন্মুক্ত হয়। ইসলামী আন্দোলনের উপর জুলুম-নির্যাতন কমে আসায় অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলোর উপর পরিমাণে স্বল্প হলেও জুলুম-নির্যাতন কমে আসে। ইসলামী সংগনগুলোর কাজের ফলে জনগণের মধ্যে ইসলামের একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়।

টিটুর মৃত্যু ও আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের ইসলামী মেনিফেস্টো (Islamic Menifesto):
১৯৮০ সালে টিটুর মৃত্যুর পর ফেডারেশন প্রেসিডেন্টের বিষয়ে একটি চুক্তি প্রস্তাবিত হয়। আর এটি হলো ৬টি স্বায়ত্ত শাসিত দেশের প্রেসিডেন্টগণ সবাই এক বছর করে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই চুক্তির কারণে স্বল্প পরিসরে হলেও গণতন্ত্র ফিরে আসে। চুক্তির আলোকে সকলেই কাজ করার সুযোগ পায়। আর এ সময়েই আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের ছেলে তার পিতার বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রবন্ধসমূহকে ১৯৮৩ সালে Islamic Menifesto নামে বই আকারে প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে Islamic Declartion নামে একটি বই প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে Islamic Menifesto নামে এই বই প্রকাশিত হওয়ায় আলীয়া ইউরোপের প্রাণ কেন্দ্রে রেডিকেল ইসলামের প্রবর্তন করতে চাচ্ছেন, এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচকে আদালতে নেওয়া হলে তিনি উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন করে বসনিয়া হেরসেককে একটি কল্যাণমূলক ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর তারা তাকে এক অন্যায় আদেশের মাধ্যমে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। এবং তার বইকেও নিষিদ্ধ করে। এতে করে এই বই এর প্রচার ও প্রকাশনা গোপনে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এবং এই বই (ডেক্লারেশন) লেখার কারণেই লেখক আজ কারাগারে এই বিষয়টি পাঠকের মনে এক নীরব বিপ্লবের সূচনা করে।

জেল জীবন:
উচ্চ আদালত তার ১৪ বছরের সাজা কমিয়ে ১১ বছরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এক ক্ষমার মাধ্যমে তাকে মুক্তি দান করে। ৫ বছরের জেল জীবনে আলীয়া তার চিন্তার রাজ্যে বিপ্লব ঘটান। তার আগের চিন্তাগুলোকে সংশোধন করে মজবুত যুক্তির উপর দাঁড় করান। তার যুক্তিভিত্তিক যে লেখনীর কারণে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, তিনি তার সেই যুক্তিকে শাণিত করে কারাগারে বসেই লিখেন তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ Islam between East and West। তার এক বন্ধু অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সব জায়গায় তার এই বইটিকে ছড়িয়ে দেন। আর তিনি আলীয়ার এই বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষিত মুসলিমদেরকে আলীয়ার দলে ভিড়াতে থাকেন। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে তার এই জেল জীবন তাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলে এবং তিনি সকলের মাঝে একজন স্কলার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর জনগণ তাকে একজন মহান নেতা হিসাবে বরণ করে নেয়। তিনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বসনিয়া হেরসেক-এর স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও বেগবান করেন।

রাজনৈতিক জীবন:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ যখন জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘণ্টা বেজে গিয়েছিলো। যুগোস্লাভিয়াতে স্বাধীনতা সংগ্রাম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলো। অপরদিকে ফেডারেল রাষ্ট্রগুলোও একে একে স্বাধীনতার দিকে আগাতে থাকে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাতে তার নেতৃত্বে Democratic Action Party (SDA) নামে একটি দল গঠন করেন। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন এই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে এবং আলীয়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রথম বার নির্বাচন করেই তার দল সরকার গঠন করে এবং পার্লামেন্টে ৮৬টি আসন লাভ করে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম:
১৯৯০ দশকের দিকে যুগোশ্লাভিয়া ফেডারেশন স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফেডারেশন এর ৬টি দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ১ মার্চ ১৯৯২ সালের এক রেফারেনডামের মাধ্যমে তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কারণ শতকরা ৬২% জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সার্বিয়া বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় হামলা করে মুসলিম নিধনের নতুন এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একই ফেডারেশনের দেশ ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকে সাধুবাদ জানালেও মুসলিমদের দেশ বসনিয়া হেরসেক- এর উপর সার্বিয়ার হামলাকে সাধুবাদ জানায়। বসনিয়া হেরসেক-এর দুর্দশায় নতুন মাত্রা যোগ করে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর অধিকারী দেশ যুগোস্লাভিয়া। তারা সার্বিয়ার এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন জানিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি ছাড়া এ সময় কোনো মুসলিম দেশ নির্যাতিত বসনিয়ান মুসলিমদের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহর শত্রুপক্ষ দখল করে নেয়। এই আগ্রাসনে তারা লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিশেষ করে তারা ইসলামের ইতিহাস সম্বলিত বিভিন্ন স্থাপনা ও মসজিদসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়। এই সময় বিভিন্ন মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতা খুব একটা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। কারণ একথা সত্য যে, বাতিলরা কখনো মুখের কথায় তাদের জুলুম বন্ধ করে না। তাদের জুলুমকে বন্ধ করার জন্য তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে হয় এবং তারা কেবলমাত্র শক্তিকেই ভয় করে। ১৯৯৪ সালের শেষ নাগাদ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজারে। সব মিলিয়ে ১ মিলিয়ন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ে বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ। এই ভয়াবহতার মধ্যেও তিনি তার নেতৃত্বের অসীম গুণাবলী দ্বারা ও সাহসিকতার সাথে তার দেশের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তার জাতিকে একত্রিত করে সার্বিয়ার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

ডেটন চুক্তি:
বসনিয়া হার্জেগোভিনার মুসলিমদের এই সংগ্রামে বিশ্বের মুসলিমগণ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বিভিন্ন মুসলিম দেশের যুবকগণ বসনিয়ার মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সংগ্রাম ও জিহাদের পাশাপাশি বসনিয়ান মুসলিমদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। তিনি তুরস্ক থেকে হাজার হাজার যুবক পাঠান বসনিয় মুসলিম ভাইদের সাহায্য করার জন্য। তার সম্পদের বিশাল এক অংশ দিয়ে বসনিয়ায় গড়ে তুলেন অস্ত্রাগার। OIC-ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে বসনিয় মুসলিমদের সাহায্যার্থে ভঙ্গ করেন জাতিসংঘের সকল চুক্তিকে। ইরানকে সাথে নিয়ে মনোবল বৃদ্ধি করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মহান নেতা আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের। এরবাকান তৎকালীন তুরস্ক সরকারকে বাধ্য করেন বসনিয় মুসলিমদের সাহায্য করতে। আর এই সময়ে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিয়াকে তাদের এক তরফা সমর্থন দিতে থাকে। তারা সার্বিয়ার সাথে চুক্তি করার জন্য বসনিয়াকে চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। কারণ তিনি তাতে রাজি না হলে এই অসম যুদ্ধে নিরস্ত্র বসনিয়ানরা আরও হত্যার শিকার হতো। অবশেষে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই চুক্তিতে বসনিয়া পায় ৫১% ভূমি আর ক্রোয়েশিয়াকে দেওয়া হয় ৪৯% ভূমি। এবং বিভিন্ন অসম চুক্তিতে বসনিয়াকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।

মৃত্যু:
এই মহান মানুষটি ১৯ অক্টোবর ২০০৩ সালে ৭৮ বছর বয়সে দুনিয়াবাসীকে কাঁদিয়ে চলে যান মহান মনিবের দরবারে।
Picture of আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ

আলীয়া ইজ্জেতবেগভিচ

আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ হলেন গোটা দুনিয়ার ইসলামী আন্দোলনের একজন মহান পুরুষ। বিংশ শতাব্দীতে জন্ম লাভ করা এই মহাপুরুষ দুনিয়াবাসীর সামনে পেশ করেছেন বিরল অনেক দৃষ্টান্ত। তিনি বসনিয়া হেরসেকের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা, যার হাত ধরেই বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা মুক্তি পেয়েছিলো পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। বিশ্ব মোড়লদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে অসম যুদ্ধে জয়ী হয়ে শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করেছিলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে।

জন্ম ও শৈশবকাল:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ১৯২৫ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় বস্নাকা ক্রুপা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিলো ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষায় ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি পরিবার। কিন্তু আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ইসলাম বিরোধী একটি বৈরী পরিবেশ ও ইউরোপিয়ানদের দারা দখলকৃত একটি ভূমিতে বেড়ে উঠেন। সারায়েভোর একটি জার্মান স্কুলে তিনি তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। একজন মেধাবী ও সুশৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে সবার কাছে ছিলেন অতি পরিচিত। তিনি তার স্কুল জীবনেই পাশ্চাত্য ও ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের জন্য তার সহপাঠীদের কাছে ছিলেন অতি পরিচিত। সে সময়েই তিনি তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে মিলে গড়ে তুলেন মেলাদি মুসলমানি (মুসলিম যুবসংঘ) নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠন কায়েমকালে তার বয়স ছিলো মাত্র ১৬ বছর। কিন্তু তার জ্ঞান এবং চিন্তার প্রখরতার কারণে সবার কাছেই ছিলেন প্রিয় একজন মানুষ। আর এই কারণেই তার প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্লাব না হয়ে পরিণত হয় সক্রিয় একটি সংগঠনে। যার ফলে এটি হয়ে ওঠে ছাত্রদের ক্যারিয়ার গঠন ও গঠনমূলক কাজের অন্যতম সূতিকাগার। অপরদিকে মেয়েদের জন্য গড়ে তোলা হয় আলাদা একটি সংগঠন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সংগঠনটি দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ এর প্রতিষ্ঠিত এই মুসলিম যুবসংঘটি যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার এই যুগান্তকারী ভূমিকা তাকে ও তার সংগঠনকে সবার সামনে নিয়ে আসে। এই যুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনী বসনিয়াতে ১ লাখেরও বেশি মুসলমান হত্যা করে।

কম্যুনিস্ট শাসনের জুলুম-নির্যাতন:
১৯৪৬ সালের ১৩ জানুয়ারি বসনিয়া পুনরায় স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু এই সংগ্রামে বামপন্থি নেতাদের আধিপত্য থাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বামপন্থিরা ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে। বসনিয়া একটি স্বায়ত্ত শাসিত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এক চুক্তি অনুযায়ী যুগোশ্লাভিয়ার সাথে আরও ৬টি দেশ মিলে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা লাভ করবে। বসনিয়া হয় এই ৬টি দেশের একটি।
কম্যুনিস্টরা ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ ইসলামী আন্দোলনের নেতা হওয়ায় এবং নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে তার সোচ্চার ভূমিকার কারণে কম্যুনিস্টদের টার্গেটে পরিণত হন। ১৯৪৯ সালে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। এবং তিনি একাধারে ৫ বছর বন্দি জীবন যাপন করেন।
১৯৫৩ সালে টিটু (Titu) ক্ষমতায় আসার পর আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের উপর জুলুম-নির্যাতন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তিনি এ সকল জুলুম- নির্যাতনের পরেও তার বিপ্লবী ভূমিকা অব্যাহত রেখে জনগণের মধ্যে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কাজকে অব্যাহত রাখেন, চিন্তার রাজ্যে বিপ্লব ঘটানোর কাজে রত থাকেন। এ সময়ে তিনি অন্য একটি ইসলামী দলের নেতা হাসান দুজুর সাথে মিলে তার কাজের গতি বৃদ্ধি করেন।
১৯৭৪ সালে টিটুর নতুন সংবিধান প্রবর্তনের পর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসা নতুন করে উন্মুক্ত হয়। ইসলামী আন্দোলনের উপর জুলুম-নির্যাতন কমে আসায় অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলোর উপর পরিমাণে স্বল্প হলেও জুলুম-নির্যাতন কমে আসে। ইসলামী সংগনগুলোর কাজের ফলে জনগণের মধ্যে ইসলামের একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়।

টিটুর মৃত্যু ও আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের ইসলামী মেনিফেস্টো (Islamic Menifesto):
১৯৮০ সালে টিটুর মৃত্যুর পর ফেডারেশন প্রেসিডেন্টের বিষয়ে একটি চুক্তি প্রস্তাবিত হয়। আর এটি হলো ৬টি স্বায়ত্ত শাসিত দেশের প্রেসিডেন্টগণ সবাই এক বছর করে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই চুক্তির কারণে স্বল্প পরিসরে হলেও গণতন্ত্র ফিরে আসে। চুক্তির আলোকে সকলেই কাজ করার সুযোগ পায়। আর এ সময়েই আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের ছেলে তার পিতার বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রবন্ধসমূহকে ১৯৮৩ সালে Islamic Menifesto নামে বই আকারে প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে Islamic Declartion নামে একটি বই প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে Islamic Menifesto নামে এই বই প্রকাশিত হওয়ায় আলীয়া ইউরোপের প্রাণ কেন্দ্রে রেডিকেল ইসলামের প্রবর্তন করতে চাচ্ছেন, এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচকে আদালতে নেওয়া হলে তিনি উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন করে বসনিয়া হেরসেককে একটি কল্যাণমূলক ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর তারা তাকে এক অন্যায় আদেশের মাধ্যমে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। এবং তার বইকেও নিষিদ্ধ করে। এতে করে এই বই এর প্রচার ও প্রকাশনা গোপনে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এবং এই বই (ডেক্লারেশন) লেখার কারণেই লেখক আজ কারাগারে এই বিষয়টি পাঠকের মনে এক নীরব বিপ্লবের সূচনা করে।

জেল জীবন:
উচ্চ আদালত তার ১৪ বছরের সাজা কমিয়ে ১১ বছরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এক ক্ষমার মাধ্যমে তাকে মুক্তি দান করে। ৫ বছরের জেল জীবনে আলীয়া তার চিন্তার রাজ্যে বিপ্লব ঘটান। তার আগের চিন্তাগুলোকে সংশোধন করে মজবুত যুক্তির উপর দাঁড় করান। তার যুক্তিভিত্তিক যে লেখনীর কারণে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়, তিনি তার সেই যুক্তিকে শাণিত করে কারাগারে বসেই লিখেন তার ঐতিহাসিক গ্রন্থ Islam between East and West। তার এক বন্ধু অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সব জায়গায় তার এই বইটিকে ছড়িয়ে দেন। আর তিনি আলীয়ার এই বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষিত মুসলিমদেরকে আলীয়ার দলে ভিড়াতে থাকেন। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে তার এই জেল জীবন তাকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলে এবং তিনি সকলের মাঝে একজন স্কলার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর জনগণ তাকে একজন মহান নেতা হিসাবে বরণ করে নেয়। তিনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বসনিয়া হেরসেক-এর স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও বেগবান করেন।

রাজনৈতিক জীবন:
আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ যখন জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘণ্টা বেজে গিয়েছিলো। যুগোস্লাভিয়াতে স্বাধীনতা সংগ্রাম মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলো। অপরদিকে ফেডারেল রাষ্ট্রগুলোও একে একে স্বাধীনতার দিকে আগাতে থাকে। আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাতে তার নেতৃত্বে Democratic Action Party (SDA) নামে একটি দল গঠন করেন। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন এই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে এবং আলীয়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রথম বার নির্বাচন করেই তার দল সরকার গঠন করে এবং পার্লামেন্টে ৮৬টি আসন লাভ করে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম:
১৯৯০ দশকের দিকে যুগোশ্লাভিয়া ফেডারেশন স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ফেডারেশন এর ৬টি দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ১ মার্চ ১৯৯২ সালের এক রেফারেনডামের মাধ্যমে তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কারণ শতকরা ৬২% জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সার্বিয়া বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় হামলা করে মুসলিম নিধনের নতুন এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একই ফেডারেশনের দেশ ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকে সাধুবাদ জানালেও মুসলিমদের দেশ বসনিয়া হেরসেক- এর উপর সার্বিয়ার হামলাকে সাধুবাদ জানায়। বসনিয়া হেরসেক-এর দুর্দশায় নতুন মাত্রা যোগ করে ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর অধিকারী দেশ যুগোস্লাভিয়া। তারা সার্বিয়ার এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন জানিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি ছাড়া এ সময় কোনো মুসলিম দেশ নির্যাতিত বসনিয়ান মুসলিমদের পাশে দাঁড়ায়নি। ফলে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহর শত্রুপক্ষ দখল করে নেয়। এই আগ্রাসনে তারা লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিশেষ করে তারা ইসলামের ইতিহাস সম্বলিত বিভিন্ন স্থাপনা ও মসজিদসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়। এই সময় বিভিন্ন মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতা খুব একটা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। কারণ একথা সত্য যে, বাতিলরা কখনো মুখের কথায় তাদের জুলুম বন্ধ করে না। তাদের জুলুমকে বন্ধ করার জন্য তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে হয় এবং তারা কেবলমাত্র শক্তিকেই ভয় করে। ১৯৯৪ সালের শেষ নাগাদ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৫০ হাজারে। সব মিলিয়ে ১ মিলিয়ন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ে বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ। এই ভয়াবহতার মধ্যেও তিনি তার নেতৃত্বের অসীম গুণাবলী দ্বারা ও সাহসিকতার সাথে তার দেশের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তার জাতিকে একত্রিত করে সার্বিয়ার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

ডেটন চুক্তি:
বসনিয়া হার্জেগোভিনার মুসলিমদের এই সংগ্রামে বিশ্বের মুসলিমগণ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বিভিন্ন মুসলিম দেশের যুবকগণ বসনিয়ার মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সংগ্রাম ও জিহাদের পাশাপাশি বসনিয়ান মুসলিমদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। তিনি তুরস্ক থেকে হাজার হাজার যুবক পাঠান বসনিয় মুসলিম ভাইদের সাহায্য করার জন্য। তার সম্পদের বিশাল এক অংশ দিয়ে বসনিয়ায় গড়ে তুলেন অস্ত্রাগার। OIC-ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে বসনিয় মুসলিমদের সাহায্যার্থে ভঙ্গ করেন জাতিসংঘের সকল চুক্তিকে। ইরানকে সাথে নিয়ে মনোবল বৃদ্ধি করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী মহান নেতা আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচের। এরবাকান তৎকালীন তুরস্ক সরকারকে বাধ্য করেন বসনিয় মুসলিমদের সাহায্য করতে। আর এই সময়ে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিয়াকে তাদের এক তরফা সমর্থন দিতে থাকে। তারা সার্বিয়ার সাথে চুক্তি করার জন্য বসনিয়াকে চাপ দিতে থাকে। পরবর্তীতে আলীয়া ইজ্জেতবেগোভিচ তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। কারণ তিনি তাতে রাজি না হলে এই অসম যুদ্ধে নিরস্ত্র বসনিয়ানরা আরও হত্যার শিকার হতো। অবশেষে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই চুক্তিতে বসনিয়া পায় ৫১% ভূমি আর ক্রোয়েশিয়াকে দেওয়া হয় ৪৯% ভূমি। এবং বিভিন্ন অসম চুক্তিতে বসনিয়াকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।

মৃত্যু:
এই মহান মানুষটি ১৯ অক্টোবর ২০০৩ সালে ৭৮ বছর বয়সে দুনিয়াবাসীকে কাঁদিয়ে চলে যান মহান মনিবের দরবারে।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top