ইসলামের ব্যাপকতাকে ধূলির আস্তরণ সরিয়ে মানুষের সামনে পুনরায় উদ্ভাসিত করতে ইমাম হাসান আল বান্নাকে অবিশ্রান্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। তেরো শত বছর ধরে ইসলাম যা ছিল- সেদিকে মুসলিমদের আবার ফিরিয়ে আনতে তিনি সর্বাত্মক পরিশ্রম করেছেন।

ইসলামী আইন ও পথনির্দেশ সমগ্র মানবজীবনকে শামিল করে। শুধু জন্ম থেকে মৃত্যু নয়; জন্মের পূর্বের এবং মৃত্যু পরবর্তী বিষয়ও ইসলামী আইনের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ইসলামে ভ্রূণ সংক্রান্ত কিছু বিধানও রয়েছে। এমনকি মানুষ মারা যাওয়ার পরও বেশ কিছু বিধান রয়েছে।

ইসলাম মুসলিমদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সকল বিষয়ে পথনির্দেশনা দেয়। শৌচকর্মের শিষ্টাচার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা যুদ্ধ, সন্ধি- সবক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।

ইমাম হাসান আল বান্নার এ প্রচেষ্টার ফলাফল আজ স্পষ্ট। আজ প্রত্যেকটি মুসলিম ভূখণ্ডে এমন বিশাল সংখ্যক মানুষ আছে- যারা ইসলামের ব্যাপকতায় বিশ্বাস করে। তারা আকীদা, শরিয়াহ, দ্বীন ও রাষ্ট্রভিত্তিক ইসলামের দিকে আহ্বান করে। ঔপনিবেশিকদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের বলি হওয়া একটি বড়ো অংশও আজ ইসলামের দিকে ফিরে এসেছে। তারা ঔপনিবেশিকদের চাপিয়ে দেওয়া চিন্তার বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের গোয়েন্দাদের উদ্ভাবিত মানদণ্ড ছেড়ে মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামী জাগরণের বিকাশ ঘটছে। এই গোয়েন্দারা ইসলামের ভীতিকর রূপ তৈরি করতে অসংখ্য সভা, সেমিনার ও সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। তারা প্রচুর পরিমাণে অর্থও বিনিয়োগ করতো। উসতাজ ফাহমি হুয়াইদির মতে, সে সময় শত্রুগোয়েন্দাদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন ছিল ১২০ টির মতো।

পাশ্চাত্য-চিন্তার দাসরা সুবহে সাদিককে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত। আটকে দেওয়ার চেষ্টা করত সূর্যোদয়কে। তারা চেষ্টা করত ইতিহাসের চাকাকে ঔপনিবেশিক যুগে নিয়ে থামানোর। পাশ্চাত্যপন্থীরা জোর গলায় বলতে চায়- ‘ধর্মে কোনো রাজনীতি নেই আর রাজনীতিতে কোনো ধর্ম নেই।’

পাশ্চাত্যবাদীরা জোরপূর্বক ঔপনিবেশিক সময়টি ফিরিয়ে আনতে চায়। অথচ তা আমরা অর্ধশতাব্দী পূর্বেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে এসেছি। পাশ্চাত্যপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ বহুদিন ধরে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপকে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ বলে সংজ্ঞায়িত করছে। অথচ সকল মাযহাবের ফকীহ, উসূলবিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও মুতাকাল্লিমগণ ইসলামকে পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায় থেকে শুরু করে জিহাদের অধ্যায় পর্যন্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহকারে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কুরআন-সুন্নাহর ইসলামকে পাশ্চাত্যবাদীরা ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ নাম দিতে চাচ্ছে।

এসকল শেকড়হীন বুদ্ধিজীবীরা চায় যে, মানুষ ইসলামকে ঘৃণা করুক! কারণ, এ অঞ্চলের মানুষ প্রচলিত রাজনীতিকে ঘৃণা করে। কেননা, ঔপনিবেশিকদের চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি তাদের ওপর অনেক দুর্যোগ নিয়ে এসেছিল এবং বহুভাবে ভুগিয়েছিল। রাজনীতির প্রতি জনগণের এই ঘৃণাকে পাশ্চাত্যপন্থীরা ইসলামের পুনর্জাগরণের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চায়।

আল্লাহপ্রদত্ত ইসলাম যখন রাজনৈতিক, তখন আমরা এ বিষয়ে লুকোচুরি করব কেন? আল্লাহপ্রদত্ত ইসলাম জীবনকে আল্লাহ ও কায়সারের মাঝে ভাগ করাকে সমর্থন করে না। বরং এই ইসলাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেয় যে কায়সার, কিসরা, ফিরাউন এবং পৃথিবীর রাজা-মহারাজা সবাই আল্লাহর গোলাম।

পাশ্চাত্যপন্থীরা চাচ্ছে- আমরা আল্লাহর কিতাব, নবী(সাঃ) এর সুন্নত, উম্মাহর ইজমা এবং আমাদের উত্তরাধিকার সত্যপথ ছেড়ে দিই। তারা চায়- সমুদ্রের ওপারের রাষ্ট্রনায়কদের সন্তুষ্ট করতে নতুন ইসলাম বানাতে! তারা আধ্যাত্মিক ইসলাম চায় না। ব্রাহ্মণ্যবাদী ইসলাম চায়- যা মৃত ব্যক্তির ওপর কুরআন তিলাওয়াতেই সন্তুষ্ট থাকবে; জীবিতদের জন্য নয়। তারা চায়- ঘরের দেয়াল কুরআনের আয়াত দিয়ে কারুকার্যমণ্ডিত হবে, কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সকল অনুষ্ঠান শুরু হবে, কিন্তু বাদবাকি সব কায়সারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। বিচার কীভাবে চলবে, কোন কাজ কীভাবে হবে- সবই কায়সারের মর্জিতে নির্ধারিত হবে!

কুরআন-সুন্নাহর ইসলাম, আমাদের সালাফ ও পূর্বসূরিদের ইসলামই পরিপূর্ণ ইসলাম। এই ইসলাম জীবনের বিভক্তি ও দ্বীনের বিভাজন সহ্য করে না। রুহানী ইসলাম, আখলাকী ইসলাম, তাত্ত্বিক ইসলাম, তালীম-তারবিয়াতি ইসলাম, জিহাদী ইসলাম, সমাজ-অর্থনীতির ইসলাম, রাজনীতির ইসলাম- এভাবে ইসলামকে আলাদা করা যাবে না; বরং ইসলাম এ সবগুলোর সমষ্টি। এসবের প্রত্যেকটি অঙ্গনেই আছে ইসলামের বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য; আছে বিধিবিধান ও নির্দেশনা।

এ প্রসঙ্গে ইমাম হাসান আল বান্না বলেন-

“দ্বীন ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলার সময় দুটোকে পৃথক করে দেখে না- এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। তারা দ্বীন ও রাজনীতি এ দুটোকে দুই প্রান্তে রাখে। এ কারণেই বলা হয়- ‘এটি ইসলামি সংস্থা, রাজনীতির সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই’, ‘এটি একটি রাজনীতিমুক্ত দ্বীনি সমাবেশ’। বহু দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের শুরুতে লেখা হয় ‘এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান’।

এই তত্ত্বের শুদ্ধতা-অশুদ্ধতার দিকে যাওয়ার পূর্বে আমরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে চাই।

এক.

রাজনীতি ও সংগঠন পুরোপুরি একই জিনিস নয়; বরং এতদুভয়ের মাঝে আছে অনেক পার্থক্য এবং সেইসাথে আছে অনেক মিলও। আবার কিছু বিষয় স্পষ্টত ভিন্ন প্রকৃতির। একজন ব্যক্তি সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক হতে পারে; যদিও কোনো সংগঠনের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত লোকের অবস্থা এমনও হতে পারে, সে রাজনীতির কিছুই বোঝে না। আবার কেউ যুগপৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক হতে পারে। হতে পারে দলীয় রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলীয়। আমি যখন রাজনীতি নিয়ে কথা বলব, তখন সাধারণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলব। দলীয় গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে উম্মাহর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর দৃষ্টিপাত করব।

দুই.

ইসলামের ব্যাপকতর ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞ অমুসলিমরা যখন ইসলামের কোনো দিক নিয়ে হতাশ হয়েছে, যেমন- মুসলিমদের দৃঢ় মনোবল, জানমাল উৎসর্গ করার প্রবণতা, ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা ইত্যাদি তখন তারা ইসলামের নাম, বাহ্যিক রূপ ও সত্তার ওপর কথা বলে মুসলিমদের সরাসরি আঘাত না দিয়ে ইসলামকে নির্দিষ্ট কিছু কর্মের গণ্ডিতে সীমিত করতে চেয়েছে। তারা ইসলামের নাম, চেহারা ও বাহ্যিক দিকগুলো ছেড়ে দিয়েছে। কারণ, ইসলামের এ খণ্ডিত রূপ নিজেও পুষ্ট নয় এবং অন্যকেও পুষ্টির জোগান দিতে পারে না।

পাশ্চাত্যপন্থীরা মুসলিমদের বুঝিয়েছে- ইসলাম এক জিনিস, সমাজ অন্য জিনিস। ইসলাম এক বিষয়, আইন আরেক বিষয়। ইসলামের সাথে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইসলামের সম্পূর্ণ বাইরের একটি বিষয়। ইসলামকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে।

 

প্রিয় ভাইয়েরা! ইসলাম যদি হয় রাজনীতিবিহীন, সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতিমুক্ত কিছু, তাহলে ইসলাম আসলে কী? তবে কি ইসলাম কেবল নামাজের এই রাকাতগুলো? নাকি রাবিয়া আল আদাবিয়ার এই কথামালা- ‘ইসতিগফারেরও ইসতিগফার দরকার!’ আর কুরআন কি এ জন্যই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে নাযিল হয়েছে?

تِبْيَـٰنًۭا لِّكُلِّ شَىْءٍۢ وَهُدًۭى وَرَحْمَةًۭ وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ

“আমি মুসলিমদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম।” (সূরা নাহল: ৮৯)

ইসলামী তত্ত্বের এই ক্ষুদ্রকরণ চেষ্টা এবং ইসলামকে সংকীর্ণ এই গণ্ডিতে সীমিতকরণ মূলত ইসলামের শত্রুদের দীর্ঘমেয়াদী চেষ্টার ফসল। তারা ইসলামকে একটি সীমিত গণ্ডিতে বাঁধতে চেয়েছিল। আর এ কথা বলে হাসাহাসি করতে চেয়েছিল- ‘আমরা তো তোমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছি। তোমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম তো ইসলাম।’

প্রিয় ভাইয়েরা! আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিরোধী পক্ষগুলো এবং মুসলিম নামধারী ইসলামের শত্রুরা ইসলামকে যে অর্থে ব্যবহার করতে চাচ্ছে- তা প্রকৃত ইসলাম নয়। তারা ইসলামকে সীমাবদ্ধ করতে চাচ্ছে। ইসলামের সাথে শর্ত লাগিয়ে দিতে চাচ্ছে। আকীদা ও ইবাদত, ভূখণ্ড ও জাতীয়তা, নম্রতা ও শক্তি প্রদর্শন, চরিত্র ও পার্থিবতা, সংস্কৃতি ও আইনের সমষ্টির নাম ইসলাম। একজন মুসলিম ইসলামের বিধিবিধান দ্বারা আদেশপ্রাপ্ত। উম্মাহর সকল বিষয় তাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিষয়াদিতে গুরুত্ব দেয় না, সে মুসলিমদের দলভুক্ত নয়।

আমি নিশ্চিত, আমাদের পূর্ববর্তী প্রাথমিক যুগের মুসলিমরা ইসলামের এই ব্যাপকতর অর্থই বুঝেছেন। তারা ইসলামের নিয়মনীতি মেনেই বিচারকার্য, জিহাদ ও লেনদেন পরিচালনা করতেন। তারা সকল দুনিয়াবি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থেকেই এবং একইভাবেই আখিরাতমুখী কাজগুলোও করতেন।

প্রথম খলিফা সাইয়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর ওপর আল্লাহ রহম করুন। তিনি বলেছেন-

“উটের দড়ি হারিয়ে গেলেও আমি তা কুরআনে খুঁজে পাই।”

প্রখ্যাত ইতিহাসবেত্তা জিয়াউদ্দিন আর রইস তাঁর ‘আন নাজরিয়‍যাতুস সিয়াসিয়্যাতুল ইসলামিয়্যাহ’ (ইসলামি রাজনীতির তত্ত্ব) গ্রন্থে বলেন-

“সন্দেহাতীতভাবে মুহাম্মাদ(সা.) এবং তাঁর অনুসারী মুমিনরা যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যদি সেই রাষ্ট্রকে বাহ্যিক কর্মকাণ্ড এবং আধুনিক রাজনৈতিক মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়, তাহলে ‘রাজনীতি’ শব্দের প্রত্যেকটি অর্থের বিবেচনায় তা ছিল- রাজনৈতিক রাষ্ট্র। একইসাথে যদি এই রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ইতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং মূল ভিত্তিকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে একে বলতে হবে- দ্বীনি রাষ্ট্র।”

সুতরাং, রাষ্ট্রব্যবস্থা একই সময়ে দুটি বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট হতে পারে। কারণ, ইসলামের মৌলিকত্ব বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিককেই একসাথে মিলিয়ে নেয়। সেইসাথে মানুষের কর্মকে দুনিয়াবী ও পরকালীন জীবনে প্রভাবক হিসেবে দেখায়। অর্থাৎ, ইসলামের দর্শন দুটো বিষয়কেই একীভূত করে নেয়।

কেবল দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য ছাড়া এ দুয়ের মাঝে আর কোনো বিভাজন ইসলাম স্বীকার করে না। সত্তাগতভাবেই তারা একসাথে গঠিত বা সাজানো এবং অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাদের একটিকে অপরটি থেকে আলাদা করে কল্পনা করা যায় না। এটি ইসলামের স্বাভাবিক প্রকৃতির মাঝেই সুস্পষ্ট। এটা প্রমাণের জন্য বড়ো কোনো পরিশ্রমের দরকার হয় না। ইতিহাসের বাস্তবতা এটাকেই জোরালোভাবে সমর্থন করে। অতীতের সকল যুগে মুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাস ছিল এটাই। এমনকি প্রাচ্যবিদরা পর্যন্ত ইসলামি পরিবেশের কাছাকাছি না থাকলেও এটা বুঝতে শুরু করেছে। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- কিছু জন্মসূত্রে মুসলিম, যারা নিজেদের সংস্কারক বলেও দাবি করে, তারাই প্রকাশ্যে এই সত্যকে অস্বীকার করছে। তাদের দাবি হলো- ‘ইসলাম শুধুই একটি ধর্মীয় দাওয়াত।’ তারা বোঝাতে চাচ্ছে- ‘ইসলাম কেবল একটি বিশ্বাস এবং মানুষের সাথে রবের আত্মিক সম্পর্ক মাত্র; দুনিয়ার জীবনের বৈষয়িক বিষয়াবলির সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই; এখানে যুদ্ধ ও  সম্পদের ইস্যুগুলো রয়েছে- যার মূল রাজনীতি।’ তাদের সকল কথার সারকথা হলো- ‘দ্বীন এক জিনিস, আর রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।’

এই সকল নামধারী মুসলিমদের কথার জবাবে ইসলামি স্কলারদের কথা আনার তেমন দরকার নেই। কেননা, এই নামধারী মুসলিমরা কখনোই প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করতে চায় না। তারা নিজেরা যা বলে, তা নিয়েই তৃপ্ত থাকতে চায়। ইতিহাসের বাস্তবতা নিয়েও কথা বলে লাভ নেই। তাতে তারা বড়ত্বের প্রতিযোগিতা শুরু করবে। তো আমরা কিছু ওরিয়েন্টালিস্ট ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে এই প্রসঙ্গটা শেষ করতে চাই। এই ওরিয়েন্টালিস্ট গবেষকরা নিজেদের মতামত স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে। তাদের মতগুলো উল্লেখ করার কারণ হলো- জন্মসূত্রে এই সকল কথিত মুসলিম সংস্কারবাদীরা ওরিয়েন্টালিস্টদের চেয়ে বেশি আধুনিক যুগের সাথে কখনোই সম্পৃক্ত ছিল না। তারা আধুনিক গবেষণাপদ্ধতির ব্যবহারে ওরিয়েন্টালিস্টদের চেয়ে বেশি সক্ষমও নয়।

বিজ্ঞানের অঙ্গনে ওরিয়েন্টালিস্টরা প্রত্যেকটি দিক থেকে তাদের চেয়ে এগিয়েই ছিল। তারা ওরিয়েন্টালিস্টদের মান্যও করে খুব গুরুত্বের সাথে। সুতরাং ওরিয়েন্টালিস্টদেরই কিছু উক্তি নিয়ে আসা এখানে প্রাসঙ্গিকই হবে-

* Dr. V. Fitzgerald: “ইসলাম নিছক একটি ধর্ম নয়, এটি একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাও।”

এরপরও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কিছু আধুনিক দাবিদার মুসলিম সন্তানের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা এ দুটোকে আলাদা করতে চায়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ধারণা স্পষ্ট হলে দেখা যায়, ইসলাম অঙ্গাঙ্গিভাবে এ দুটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে; এর একটি থেকে অপরটিকে আলাদা করা যায় না।

* C. A. Nallino: “মুহাম্মদ সা. একই সময়ে একটি দ্বীন এবং একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর পুরো জীবন জুড়ে রয়েছে এ দুটোর বিস্তার।”

* Dr. Schacht: “ইসলাম ধর্মের চেয়েও বেশি কিছু। ইসলাম আইনি ও রাজনৈতিক তত্ত্বও বর্ণনা করেছে। মোটকথা, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা- যা দ্বীন ও রাষ্ট্রকে একইসাথে শামিল করে।”

* R. Strothmann: “স্পষ্টতই ইসলাম একটি রাজনৈতিক ধর্ম। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা একাধারে ছিলেন রাজনীতিক, বিচারক ও রাষ্ট্রনায়ক।”

* D. B. Macdonald: “এখানেই (মদিনা) প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইসলামী আইনের বুনিয়াদি দিকগুলো তৈরি হয়েছে।”

* Sir. T. Arnold: “নবি সা. একই সময়ে একটি ধর্মের প্রধান এবং একটি রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন।”

* H. A. R. Gibb০ : “ইসলাম শুধু ব্যক্তিপর্যায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস নয়। ইসলাম একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিচ্ছে, যার রয়েছে নিজস্ব বিচারপদ্ধতি, আইনকানুন ও প্রশাসন।”

এই কথাগুলো তাদের জন্যই উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের শুধু পাশ্চাত্যের কথাই সন্তুষ্ট করতে পারে। এই কথাগুলো তাদের বড়ো বড়ো কথা থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

অনুবাদঃ তারিক মাহমুদ

১৫১ বার পঠিত

শেয়ার করুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top