ইতিহাসে মধ্যযুগের আবিষ্কার

পাশ্চাত্যের লেখকরা শুধুমাত্র সভ্যতার ইতিহাসই নয় একইসাথে সমগ্র দুনিয়ার ইতিহাসের লেখার ধারাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে সুস্পষ্ট আলামত হল ‘মধ্য যুগ’ বা Middle Age নামে একটি পরিভাষার আবিষ্কার।

অষ্টাদশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত দুনিয়ার ইতিহাসকে দুইভাগে ভাগ করা হত,

  • প্রাচীন যুগ
  • আধুনিক যুগ।

আর আধুনিক যুগ শুরু হত ইসলামের উন্মেষের মধ্য দিয়ে। উনবিংশ শতাব্দীর পরে এসে মধ্য যুগবা Middle Age নামে একটি পরিভাষার আবিষ্কার করা হয় এবং এই মধ্য যুগকে রোমান সাম্রাজ্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দেওয়া হয়। রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মধ্যযুগ শুরু হয় এবং পূর্ব রোম তথা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ফাতিহ সুলতান মেহমেদ কর্তৃক বিজিত হলে রোমান সাম্রাজ্যের পরিপূর্ণ পতন ঘটে। ফলশ্রুতিতে  রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের শুরু হয়। পাশ্চাত্যের লেখকগণ এমন একটি ফিকশন তৈরি করে। 

যদি ভালো করে খেয়াল করা হয় তাহলে দেখা যায় যে, রোমান সাম্রাজ্যকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিলে দুনিয়ার ইতিহাস লেখার সময় বা বুঝানোর সময় মুসলমানদের ইতিহাসকে লেখার কিংবা বুঝানোর কোন প্রয়োজন পড়ে না। 

গ্রীক থেকে শুরু করে কিংবা তারও আগে প্রতিষ্ঠিত সভ্যতা সমূহকে যেভাবে, যে পর্যন্ত ইচ্ছা লেখার সেভাবে লেখার/বুঝানোর পরে রোমান সাম্রাজ্য এবং রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপের ঘটনা প্রবাহকে বিবেচনায় নিয়ে ষষ্ঠাদশ শতকে ইউরোপের ঘটনা প্রবাহ সমূহকে বুঝানো যায়। 

আর বুঝানোর সময় মাঝেমধ্যে  উসমানী খিলাফত ও মুসলমানদের সম্পর্কে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে কিছু কাহিনী বর্ণনা করে থাকে। এইভাবে ইসলামের ইতিহাসকে খুব সহজেই ইতিহাসের স্বাভাবিক ধারার বাহিরে বের করে দেওয়া খুবই সহজ হয়ে যায়। এইভাবে মুসলমানদেরকে ইতিহাসের পাতায় কোনভাবেই স্থান না দিয়েই মানব সভ্যতার ইতিহাসকে পাশ্চাত্য সভ্যতার ইতিহাস বলে লেখার/বুঝানোর সম্ভব হয়। 

আমাদের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগবে এমন একটি কাজ তারা কিভাবে করতে পারে বা চিন্তা করতে পারে? এর মূলে রয়েছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি Philosophical  Transformation ( দার্শনিক রূপান্তর) রয়েছে। আর এই Philosophical  Transformation ঘটিয়েছেন দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট। কান্টের মতে, সকল objects বা উপাদানের যামান (সময়) এবং মাকান (স্থান) মানুষের যিহীন বা (মানসিকতা) র সাথে সম্পৃক্ত। ফলশ্রুতিতে তার ধারণা মতে সময়, স্থান এবং উপাদান সমূহ মানুষের আকল কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । 

তাহলে, সময়কে যদি আমরা নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে অতীতকেও আমাদের ইচ্ছামত প্রতিষ্ঠা করতে পারি। বর্তমান সময়ে মানুষের জীবন প্রণালীকে যদি আমরাই নির্ধারণ করে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটাকে আমরা আমাদের নিজেদের ইচ্ছামত নির্ধারণ/প্রতিষ্ঠা করতে পারি। একইসাথে আমরা এর সাথে সম্পৃক্ততা রেখে আমাদের ভবিষ্যতকেও আমাদের ইচ্ছামত/চাহিদামত করে আকৃতি দান করতে পারি এবং অন্য দিক থেকে এর এক ধাপ পরে অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ সমূহকে সামনে এনে এমন একটি বিষয়ের সৃষ্টি করা, যেখানে বিষয়টি এমনভাবে ফুটে উঠবে যে, হাকিকত মূলত আমাদের লেখা ও বলার মধ্যেই নিহিত, এর বাহিরে নয়।

এমন একটি বিষয় যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখন হাকিকতকে বাদ দিয়ে তার স্থলে নিজেদের তৈরি করা ঘটনা প্রবাহের উপর ভিত্তি করে একটি অতীত রচনা করার সম্ভাবনা সামনে আসে। 

আমরা আজ যে ইতিহাস পড়ে থাকি কিংবা পড়িয়ে থাকি এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই তা লেখা হয়েছে কিংবা তৈরি করা হয়েছে।

১৬১৪ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of প্রফেসর ড. তাহসিন গরগুন

প্রফেসর ড. তাহসিন গরগুন

উম্মাহর প্রখ্যাত দার্শনিক ও উসূলবিদ প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন। যিনি একজন জ্ঞানের মুজাহিদ, শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটেন নি কখনো। উসমানী ধারার বড়বড় আলেমদের নিকট পড়েছেন, ইসলামী দর্শন ও সভ্যতা বিষয়ে অর্জন করেছেন গভীর পাণ্ডিত্য। এরপরে ইউরোপে গিয়ে ফ্রেঞ্চ ও জার্মান শিখেছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতা নিয়ে দীর্ঘসময় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ইউরোপে অধ্যাপনা করেছেন, গবেষণা শেষে দেশে ফিরেছেন। কোথাও পিএইচডি করেছেন, কোথাও একবছর থেকেছেন, এভাবে জ্ঞানের জন্যই বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। একইসাথে নয়টি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। ইসলামী চিন্তাবিদগণ এই আলেম সম্পর্কে বলেন, বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন এবং চিন্তাগত দিক থেকে তিনি দ্বিতীয় আল্লামা ইকবাল। আর, কাজ করেছেন এবং যেসব বিষয়ে কাজ করেন, ১. উসূলে ফিকহ। ২. উসমানী ও মাওয়ারাউন নাহর সভ্যতা। ৩. ইসলামি চিন্তার ইতিহাস। ৪. ফিলোসোফির ভাষা। ৫. এপিস্টেমোলজি। ৬. আখলাক। ৭. ইতিহাস। ৮. রাজনীতি। ৯. বিজ্ঞান। ১০. সমাজ। ১১. আল কুরআন। ১২. উসমানী এবং পাশ্চাত্যের সম্পর্ক। ১৩. পাশ্চাত্য সভ্যতায় উসমানী খেলাফতের প্রভাব। ১৪. জার্মান আইডিয়ালিস্ট ফিলোসোফি। এর পাশাপাশি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু গবেষণা পত্র হচ্ছে, • ভাষা জ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, ভাষার দর্শন এবং বালাগাত। • ইউরোপের অর্থসামাজিক গঠনে চালিকাশক্তি হিসেবে উসমানী খিলাফত। • পাশ্চাত্য সভ্যতায় ইসলামি জ্ঞান সম্ভব কিনা। • আধুনিক জ্ঞানে দ্বীনি জ্ঞানের বিষয় সমূহে প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি। • জ্ঞানের উৎস হিসেবে খাবারুস সাদিক। • একটি সমস্যা হিসেবে আধুনিকতা। • আধুনিক সভ্যতা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ইসলামি জ্ঞান আমাদের কি মূলনীতি দিয়েছে?
Picture of প্রফেসর ড. তাহসিন গরগুন

প্রফেসর ড. তাহসিন গরগুন

উম্মাহর প্রখ্যাত দার্শনিক ও উসূলবিদ প্রফেসর ডঃ তাহসিন গরগুন। যিনি একজন জ্ঞানের মুজাহিদ, শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটেন নি কখনো। উসমানী ধারার বড়বড় আলেমদের নিকট পড়েছেন, ইসলামী দর্শন ও সভ্যতা বিষয়ে অর্জন করেছেন গভীর পাণ্ডিত্য। এরপরে ইউরোপে গিয়ে ফ্রেঞ্চ ও জার্মান শিখেছেন। পাশ্চাত্য সভ্যতা নিয়ে দীর্ঘসময় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ইউরোপে অধ্যাপনা করেছেন, গবেষণা শেষে দেশে ফিরেছেন। কোথাও পিএইচডি করেছেন, কোথাও একবছর থেকেছেন, এভাবে জ্ঞানের জন্যই বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। একইসাথে নয়টি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। ইসলামী চিন্তাবিদগণ এই আলেম সম্পর্কে বলেন, বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন এবং চিন্তাগত দিক থেকে তিনি দ্বিতীয় আল্লামা ইকবাল। আর, কাজ করেছেন এবং যেসব বিষয়ে কাজ করেন, ১. উসূলে ফিকহ। ২. উসমানী ও মাওয়ারাউন নাহর সভ্যতা। ৩. ইসলামি চিন্তার ইতিহাস। ৪. ফিলোসোফির ভাষা। ৫. এপিস্টেমোলজি। ৬. আখলাক। ৭. ইতিহাস। ৮. রাজনীতি। ৯. বিজ্ঞান। ১০. সমাজ। ১১. আল কুরআন। ১২. উসমানী এবং পাশ্চাত্যের সম্পর্ক। ১৩. পাশ্চাত্য সভ্যতায় উসমানী খেলাফতের প্রভাব। ১৪. জার্মান আইডিয়ালিস্ট ফিলোসোফি। এর পাশাপাশি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু গবেষণা পত্র হচ্ছে, • ভাষা জ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, ভাষার দর্শন এবং বালাগাত। • ইউরোপের অর্থসামাজিক গঠনে চালিকাশক্তি হিসেবে উসমানী খিলাফত। • পাশ্চাত্য সভ্যতায় ইসলামি জ্ঞান সম্ভব কিনা। • আধুনিক জ্ঞানে দ্বীনি জ্ঞানের বিষয় সমূহে প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি। • জ্ঞানের উৎস হিসেবে খাবারুস সাদিক। • একটি সমস্যা হিসেবে আধুনিকতা। • আধুনিক সভ্যতা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ইসলামি জ্ঞান আমাদের কি মূলনীতি দিয়েছে?

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top