সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

আবু হামিদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল গাজ্জালী সমগ্র দুনিয়াতে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ নামে অর্থাৎ ইসলামের নিশ্চিত দলীল নামে পরিচিত। তিনি ফিকহ, কালাম, দর্শন ও তাসাউফের মত বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার সাথে সমালোচনামূলক একটি সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং এই সকল ধারায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছেন। তিনি ১০৫৬ সালে বর্তমানের দক্ষিনপূর্ব ইরানের তুস শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তুস, নিশাপুর, ইস্পাহান, বাগদাদ, শাম, হিজাজ ও কুদুস শহরে তিনি তার জীবনকাল অতিক্রম করেন। সমগ্র মানব সভ্যতার চিন্তার ইতিহাসকে প্রভাবিতকারী এই মহান ইমাম ১১১১ সালে তাঁর জন্মস্থান তুসে মৃত্যুবরণ করেন।

 

ইমাম গাজ্জালীর গুরুত্বঃ

ইমাম গাজ্জালীর গুরুত্বকে কয়েকটি পয়েন্টে একত্রিত করে তুলে ধরা সম্ভব।
প্রথমত, আমরা জানি যে, দর্শন বা ফিলোসফি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের শক্তিকে শানীত করে। মূলত ইবনে সিনার মাধ্যমে এই দার্শনিক ধারা মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আর ইমাম গাজ্জালী প্রথমবারের মত এই দার্শনিক ধারাকে কালামী দৃষ্টিকোণ থেকে সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করেন।

দ্বিতীয়ত, ফালাসিফা বা দার্শনিকগণের চিন্তাকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণকারী গাজ্জালী যে সকল চিন্তা ক্ষতিকর নয়, যে সকল চিন্তাকে ধারণ করেন। তাঁর এই পন্থা কালামী ও তাসাউফী ধারায় অনেক বড় একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে।

তৃতীয়ত, ইমাম গাজ্জালী নাকলী (ওহী ভিত্তিক) জ্ঞানের ইতিহাসকেও সমালোচনামূলক একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেন। এই সকল জ্ঞানকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার পর তিনি দাবী করেন যে, এই সকল জ্ঞান তার উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে গিয়েছে এবং সময়ের পরিক্রমায় রূহ বিহীন হয়ে শুধুমাত্র জ্ঞানের একটি ফরমাল শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই সমালোচনা ইমাম গাজ্জালীকে তাসাউফ থেকে প্রাপ্ত ইলহামের মাধ্যমে নাকলী জ্ঞানকে নতুন করে গঠন করার দিকে ধাবিত করে।

 

ইমাম গাজ্জালীর রচনাবলিঃ

জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে ইমাম গাজ্জালীর যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। আমরা যদি তাঁর শিক্ষাজীবনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, তিনি মূলত শাফেয়ী মাজহাবের একজন ফকিহ ছিলেন এবং তিনি শাফেয়ী মাজহাবের ফুরু’ ফিকহ সম্পর্কে “আল-বাসিত”, “আল ওয়াসিত” ও “আল ওয়াজিজ” এর মত গ্রন্থ রচনা করেন। এর পাশাপাশি শাফেয়ী মাজহাবের মূলনীতির আলোকে “আল-মানখুল” নামক গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থটিকে তাঁর জীবনের প্রথম গ্রন্থ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। একইভাবে উসূলে ফিকহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ “আল-মুসতাসফা”ও তিনি রচনা করেছেন তাঁর জীবনের শেষ ভাগে

ইলমুল উসূল নিয়ে তাঁর লেখা গ্রন্থ মুসতাসফার শুরুতেই তিনি ইবনে সিনার ধারার মানতিককে যুক্ত করে দেন। মানতিককে ইলমুল উসূলের সাথে এভাবে যুক্ত করে দেওয়ার কারণে তা নাকলী জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়।

অপরদিকে ইমাম গাজ্জালী তাঁর যুগের বাতিনি ফিতনার বিরুদ্ধেও কলম ধরেন এবং রাজনৈতিক ও ই’তিকাদী দিক থেকে হুমকি সৃষ্টিকারী এই ধারার অসারতা প্রমাণ করার জন্য সিরিজ আকারে গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হল আব্বাসী খলিফা আল-মুস্তাজহির বিল্লাহর জন্য রচিত গ্রন্থ “ফাদায়িহুল বাতিনিয়্যা” ও “ফাযাইলুল মুস্তাজহিরিয়্যা”।

দর্শনের ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। দর্শনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে তিনি মানতিক সম্পর্কিত “মি’য়ারুল ইলম” ও “মিহাক্কুন নাজার” নামক দুইটি গ্রন্থ রচনা করেন। বিশেষ করে ফকিহদের নিকটে মানতিককে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই সকল গ্রন্থে তিনি অনেক প্রচেষ্টা চালান। এছাড়াও দার্শনিকগণের চিন্তাধারাকে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার জন্য “মাকাসিদুল ফালাসিফা” অর্থাৎ দার্শনিকগণের উদ্দেশ্য নামক গ্রন্থ রচনা করেন। একইভাবে দার্শনিকগণের একচ্ছত্র কর্তৃত্বে ফাটল ধরানোর জন্য “তাহাফাতুল ফালাসিফা” অর্থাৎ দার্শনিকগণের অসঙ্গতিসমূহ নামক গ্রন্থও রচনা করেন।

তবে যে গ্রন্থটি ইমাম গাজ্জালীকে মুসলিম উম্মাহর কাছে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে, সেটি হল “ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন”। এই গ্রন্থের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি তাসাউফ ও ফিকহকে স্থান দিলেও এখানে অনেক দার্শনিক কথাবার্তাও রয়েছে। এই গ্রন্থে তিনি আখেরাতের পথের জ্ঞান নামে নামকরণকৃত জ্ঞান ইলমুল মুয়ামালাতকে নতুন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেন।

তবে ইসলামী চিন্তাধারার আধুনিক সময়ে এসে তাঁর এত বেশি গ্রহনযোগ্যতার অন্যতম কারণ হল তাঁর রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ “আল মুনকিজু মিনাদ-দালাল ওয়া মুসলিহ বিল আহওয়াল”। এই বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে তিনি কালাম, দর্শন, তাসাউফ ও বাতিনিয়্যাতের মধ্যে আবর্তিত হওয়া তাঁর হাকিকতের অনুসন্ধানকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

 

ইমাম গাজ্জালীর মৌলিক চিন্তাসমূহঃ

ইমাম গাজ্জালী ইসলামী চিন্তা ও দর্শনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন দর্শনের প্রতি তাঁর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। তাঁর “তাহাফাতুল ফালাসিফা” নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত। তাঁর এই গ্রন্থটিকে মানব সভ্যতার চিন্তার ইতিহাসে রচিত দর্শনের প্রথম সামগ্রিক সমালোচনামূলক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই গ্রন্থে ইমাম গাজ্জালী দেখিয়েছেন যে, এরিস্টটল নিজেই তাঁর পূর্বের দার্শনিকদের প্রযোজ্যতা অকার্যকর করে দিয়েছেন। আর এটিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে তিনি এরিস্টটলের দার্শনিক চিন্তা ও মুসলিম চিন্তাধারার মধ্যে তাঁর (এরিস্টটল) চিন্তার সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত ফারাবী ও ইবনে সিনার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তাঁদের সমালোচনা করেছেন।

তাঁর চিন্তাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি কখনো কখনো সামগ্রিকভাবে সকল দার্শনিক চিন্তাকে সমালোচনা করেছেন। তবে দার্শনিকগণের প্রতি তাঁর যে সমালোচনা, সেটি আংশিক। তিনি দর্শনকে সামগ্রিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেননি। গাজ্জালীর মতে দর্শন হল জ্ঞানের সামগ্রিক একটি ধারা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বীনের সাথে গণিত, মানতিক, ফিজিক্স, মেটাফিজিক্স, আখলাক ও রাজনীতির যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ককে তিনি স্বতন্ত্রভাবে পর্যালোচনা করেছেন।

জ্ঞানের এই সকল শাখার মধ্যে মানতিক ও গণিত সম্পূর্ণভাবে আকল কর্তৃক উদ্ভাবিত হওয়ায় এবং চিন্তা করার ক্ষেত্রে অবজেক্টিভ নিয়মনীতিসমূহও দেওয়ায় গাজ্জালীর মতে এই সকল জ্ঞান দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তিনি আরও মনে করেন যে, এই সকল জ্ঞানের নির্ভুলতায় প্রতারিত হয়ে দার্শনিকগণের সকল চিন্তাকেই গ্রহণ করাটা যেমন ভুল, একইভাবে দার্শনিকগণের সমালোচনা করার নামে তাঁদের সকল চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করাটাও একটি ভুল।

আখলাক ও রাজনীতি জ্ঞানের ব্যাপারেও গাজ্জালীর অবস্থান ইতিবাচক। তিনি মনে করেন, দার্শনিকগণের রাজনৈতিক চিন্তার মূলে পয়গাম্বরগণ ও তাঁদের আনীত গ্রন্থের প্রভাব রয়েছে এবং আখলাকী চিন্তার ক্ষেত্রে সুফীদের চিন্তার প্রভাব রয়েছে। উৎসগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই সকল জ্ঞান গ্রহণযোগ্য হলেও দার্শনিকগণের ভুল তত্ত্ব ও চিন্তাকে পৃথক করার জন্য বিশেষ একটি যোগ্যতার প্রয়োজন। এই ধরনের বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ যখন রাজনীতি ও আখলাকের জ্ঞানকে দার্শনিকগণের ভুল চিন্তা ও তত্ত্ব থেকে মুক্ত করবেন, তখন দ্বীনী দৃষ্টিকোণ থেকে এই সকল জ্ঞানের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না।

তাহাফাতুল ফালাসিফার মূল আলোচ্য বিষয় হল ফিজিক্স ও মেটাফিজিক্স। এই দুইটি বিষয়কে তিনি ২০ টি মূল পয়েন্টে আলোচনা করেছেন। এই ২০ টি পয়েন্টের মধ্যে ১৬ টি মেটাফিজিক্স নিয়ে আর ৪ টি ফিজিক্স নিয়ে। এই গ্রন্থের ১৭ নম্বর পয়েন্টটি (মাসায়েল) পড়লে বুঝা যায় ফিজিক্স তথা পদার্থ বিজ্ঞানে ইমাম গাজ্জালীর গভীরতা কত বেশি ছিল। এই মাসায়েল বা পয়েন্টটির অসাধারণ উপস্থাপনা ও আলোচনা তাঁকে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছে।

ইমাম গাজ্জালীর মতে কারণ ও কার্য তথা Cause and Effect এর মধ্যে মৌলিকত্বের দিক থেকে আবশ্যিক সম্পর্ক থাকার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই ব্যাপারে তাঁর একটি উদাহরণ রয়েছে, তা হল আগুন ও তুলার উদাহরণ। তাঁর মতে, আগুন ও তুলা পাশাপাশি আসলেই যে আগুনের পোড়াতে হবে আর তুলার পুড়তেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আগুন ছাড়াও তুলা পুড়তে পারে, আবার আগুন দিলেও তুলা নাও পুড়তে পারে।

মূলত মু’জিজার বিষয়টিকে একটি ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব সময় এই দুনিয়ার নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে চলছেন এই বিষয়কে বুঝার জন্য তিনি এ রকম একটি ব্যখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। এখান থেকে কেউ যেন আবার এমন কথা বের না করে যে, পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে, তার সবকিছুই কাকতালীয়।
এক্ষেত্রে তিনি আদাতুল্লাহ (আল্লাহর নীতি) ও সুন্নাতুল্লাহ (আল্লাহর রীতি) এই দুইটি পরিভাষাকে সামনে রেখে এই কাকতালীয়তার যে সন্দেহ, সেটির অবসান ঘটিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন যে, এই জগতে যা কিছুই হচ্ছে, সেটির ক্ষেত্রে মহান স্রষ্টার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে।

তাহাফাতুল ফালাসিফা নামক গ্রন্থে ইমাম গাজ্জালী সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন মেটাফিজিক্স নিয়ে। তাঁর মতে দার্শনিকগণ যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ও ভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছেন, সেই বিষয়টি হল মেটাফিজিক্স। গাজ্জালী বলেন, দার্শনিকগণ কোন একটি বিষয়কে প্রমাণ করার জন্য মানতিক বা যুক্তিবিদ্যায় যে সকল শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, মেটাফিজিক্সের ক্ষেত্রে তারা সকল শর্ত মেনে চলেননি।

মেটাফিজিক্সকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার পর তিনি বলেন, যদি দার্শনিকগণ নিমোক্ত তিনটি চিন্তা ধারণ করেন, তাহলে তাঁদেরকে তাকফির করা যাবেঃ

  • ১। যদি তারা জগতকে চিরস্থায়ী মনে করেন।
  • ২। তারা যদি মনে করেন যে আল্লাহ জুযয়ী বা আংশিক বিষয়সমূহ জানেন না।
  • ৩। যদি তারা আখেরাতের জীবনকে জিসমানী বা শারীরিক মনে না করে রূহানী মনে করেন।

এই বিষয় তিনটি গাজ্জালী পরবর্তী সময়েও দার্শনিকগণকে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইটেরিয়া হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
দর্শনের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাসাউফের সাথে সম্পৃক্ততার ফলে ইমাম গাজ্জালী আরও একটি বিষয়ের অবতারণা করেন, আর সেটি হল আকলের সীমাবদ্ধতা।

তাঁর মতে ইন্দ্রিয়ের উপর যেমন আকল রয়েছে, অনুরূপভাবে আকলেরও বাহিরে উপলব্ধি (ইদরাক)-র জন্য আরও একটি ক্ষেত্র রয়েছে, আর সেটি হল কালব। এই কালব মানুষকে ইদরাকী শক্তি দান করে থাকে। ইমাম গাজ্জালী জোর দিয়ে বলেন যে, পয়গাম্বরগণ হলেন মানুষের কালবের চিকিৎসক। তারা হলেন শাফিউল কুলুব। আর এক্ষেত্রে আকলের কাজ হল পয়গাম্বরগণের সত্যতাকে স্বীকার করা ও যারা কালবের রোগ থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাদেরকে পয়গাম্বরের নিকটে নিয়ে যাওয়া। এই অর্থে পয়গাম্বরদের মিশনকে সত্যিকারার্থে তারাই ধারাবাহিক রাখতে পারবেন, যারা পয়গাম্বরগণের সকল অবস্থা অনুভব করতে পারবেন। অন্য কথায় তাসাউফের উচ্চ শিখরে আরোহনকারী আলেমগণের পক্ষেই কেবল পয়গাম্বরগণের রেখে যাওয়া কাজের আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব।

 

ইমাম গাজ্জালী যেভাবে ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করেছেনঃ

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইমাম গাজ্জালী যেমন বহুমুখী চিন্তার অধিকারী ছিলেন, তেমনি তাঁর প্রভাবও ছিল বহুমুখী। দর্শনের প্রতি, বিশেষ করে দার্শনিকগণের মেটাফিজিক্যাল চিন্তার প্রতি গাজ্জালীর সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি মুসলমানদের মধ্যে দার্শনিক চিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করেনি, বরং সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে তিনি দর্শনকে সহজভাবে তুলে ধরার কারণে দর্শন মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মানতিকের প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানতিক শুধুমাত্র দর্শনের জন্য নয়, সকল প্রকার তাত্ত্বিক তথা থিওরিটিক্যাল জ্ঞানের জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু হয়।

ইবনে সিনা -পন্থী মনস্তত্ত্ব (সাইকোলজি) ও জ্ঞানতত্ত্ব (এপিস্টেমোলজি)–কে গ্রহণ করার ফলে একই সাথে তা কালাম ও তাসাউফের উপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে কালাম ও তাসাউফের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রূহ ও শরীর, আকল ও আখলাকের চিন্তার ক্ষেত্রে নতুন একটি মাত্রা দান করে। “নূর” পরিভাষাকে কেন্দ্রে স্থাপন করে তিনি যে অন্টোলজিক্যাল একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছিলেন, সে তত্ত্বটি তাসাউফের মত ইশরাকী ধারাতেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

এই মহান চিন্তাবিদ শুধুমাত্র মুসলিম চিন্তাবিদগণ-ই নয়, পাশ্চাত্যের চিন্তাবিদদেরকেও প্রভাবিত করেছেন ব্যাপকভাবে। এই কারণে রেনে দেকার্তে ও তাঁর অনুসারীদের সন্দেহবাদ বা স্কেপটিসিজমের মধ্যে, হিউমের ক্যাজুয়ালিটি (causality)-র মধ্যে এবং ইমান্যুয়েল কান্টের ফিজিক্সের সমালোচনার মধ্যে ইমাম গাজ্জালীর চিন্তার ছাপ পাওয়া
যায়।

অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ

১১৯ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক । ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অনলাইন মুখপাত্র। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সময়ের চিন্তাগত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাবে।
Picture of রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক । ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অনলাইন মুখপাত্র। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সময়ের চিন্তাগত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাবে।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top