পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কিন্তু খাদ্যের উৎপাদন কিংবা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের যোগান সে পরিমাণে বাড়ছে না, এজন্যে আমাদের উন্নত প্রযুক্তির দ্বারস্থ হতে হবে। অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে অল্প ব্যয়ে অধিক ফসল অর্জনের মাধ্যমে এ ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব, নতুবা খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা যাবে-অনেকটা এরকম শঙ্কা এবং তার প্রতিকারের লক্ষ্যেই সবুজ বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়। এজন্যে মানবশ্রমের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতির কৃষি ব্যবস্থাকে সরিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো, নতুন নতুন সহনশীল জাতের উদ্ভাবন, কৃষি জমিতে ফলন বৃদ্ধির জন্যে সার ব্যবহারের আধিক্য, আগাছা নিড়ানোর জন্যে শ্রমিক নয় বরং ঔষধ দিয়ে আগাছার উৎপাদন বন্ধ করা, কীটনাশক এর ব্যপক প্রচলনসহ বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো পদক্ষেপের মাধ্যমে ৬০ এর দশকে সবার সামনে আসা সবুজ বিপ্লব সাধারণ মানুষের মনে, বিশেষ করে কৃষকদের মাঝে আশার জাগরণ ঘটিয়েছিলো। বাহ্যিকভাবে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিলো, তা আসলেই সাধারণ মানুষের মনে সম্ভাবনার আলো দেখাতে সমর্থ হয়েছিলো। এমনকি শিল্প বিপ্লবের যে প্রবাহ পশ্চিমে শুরু হয়েছিলো ১৮’শ শতকে, তারই ধারাবাহিকতায় যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রাসায়নিক সারের উৎপাদন পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রে এক আমূল বিপ্লব অত্যাবশ্যক হয়ে গিয়েছিলো। এজন্যে এ ধরণের একটি বিপ্লব যখন সমগ্র বিশ্বের কৃষি উৎপাদনে এক ঢেউ বয়ে নিয়ে আসার কথা, কয়েক বছরের ব্যবধানেই তা ফিকে হয়ে যায় মূলত তার পরিকল্পনা এবং ফলাফলের মধ্যকার অসামঞ্জস্যের কারণে! কারণ যে সকল দেশ কিংবা যে সকল বৃহৎ কোম্পানিগুলো সবুজ বিপ্লবের ধারণা নিয়ে সকলের সামনে এগিয়ে এসেছিলো, তারা কি সত্যিই সেগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলো, নাকি মানব সভ্যতাকে কেন্দ্র করে তাদের হীন এক পরিকল্পনারই একটি অংশ ছিলো এ বিপ্লব, প্রায় অর্ধ শতক পরে এখন সে সবের হিসাব নেওয়ার সময় এসেছে।
ইতিহাস :
সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয় নরওয়ে বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি প্রকৌশলী ‘নরম্যান বরলোগ’কে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যক্তি মালিকানাধীন ডু-পন্ট কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। ১৯৪২ এর দিকে বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত রকফেলার ফাউন্ডেশন মেক্সিকো সরকারের সাথে একটি চুক্তি করে, যার মাধ্যমে মেক্সিকোতে উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করা শুরু হয়। মূলত সে সময় মেক্সিকো তার প্রয়োজনের অর্ধেক পরিমাণ গম নিজে উৎপাদন করতো আর বাকিটা অন্য দেশ থেকে আমদানী করতো। কিন্তু বরলোগ এর গবেষণা এবং রকফেলার এর ফান্ডিংয়ে দ্রুতই উচ্চ ফলনশীল জাতের উদ্ভাবন হয় আর ৭০ এর দশকের মধ্যেই মেক্সিকো নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার মত গম উৎপাদন করতে শুরু করে। বিষয়টি ব্যপকভাবে প্রচার পায় এবং এর ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে ভারতে এসে চলতে থাকে। ভারতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন নতুন ধানের চাষ শুরু হয় ৭০-৮০ দশকের সময়ে। এ সব ধান সে সময়কার সাধারণ ধানের চেয়ে দেখতে সুন্দর (বেশি সাদা, চিকন, অভঙ্গুর) এবং উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় তা কৃষকদের মাঝে ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মূলত কৃষি ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির (Biotechnology) ব্যবহারের যে নতুন ধারা আমরা দেখতে পাই, তার সূচনা হয় এ সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে। মেক্সিকো ছিলো এর প্রাথমিক প্রয়োগস্থল কিন্তু সেখানে সাফল্যের পর ভারতে এসেও তা সাফল্যের মুখ দেখলে এ বিপ্লবের পরিচিতি ধীরে ধীরে বিস্তর লাভ করতে শুরু করে। এমনকি এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে বরলোগ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
আমরা কী পেলাম :
মেক্সিকোতে বরলোগের সাফল্যের পিছনে যে অনেক শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা আমরা শুরুতে জানতে পেরেছি। কিন্তু শ্রম ব্যয় করার সামর্থ্য কম বেশি সবার থাকলেও, অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য কি সবার থাকে? উত্তরটি এক শব্দেই হবে-‘না’। বরলোগের উদ্ভাবিত জাতের গম উচ্চ ফলনশীল হলেও তাতে চাষের জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসল তোলার আগ পর্যন্ত অনেক অর্থ ব্যয় করতে হতো। যেমন, জমি প্রস্তুতের পূর্বে সার দেওয়া, বপনের পর থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত নিয়মিত পানি দেওয়া, কীটনাশক ও আগাছানাশক ছিটানো থেকে শুরু করে ফসল তোলার ক্ষেত্রে ভারী অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করা- সাধারণ কৃষকের পক্ষে এ ব্যয় বহন করা মোটেও সম্ভব নয়। মূলত যে সকল কৃষকেরা এসকল উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার করতে আগ্রহী হতো, তাদের বিভিন্নভাবে ঋণ দিয়ে সহায়তা করা হতো, কিন্তু যারা এটি করতে আগ্রহী হতো না, তাদের জন্যে কোনো ঋণের/সহায়তার ব্যবস্থা থাকতো না। এমনকি সবুজ বিপ্লব মেক্সিকো এবং পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের সরকারের সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ায় সরকারি পর্যায়ে এ সকল উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করা হতো। যার ফলে, একদিকে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারকারী কৃষকেরা প্রচুর উৎপাদন করে মুনাফা অর্জন করতে পারতো, অন্যদিকে প্রাচীন (Classic) পদ্ধতিতে উৎপাদনকারী কৃষকেরা চাহিদা পরিমাণে কিংবা চাহিদার চেয়েও কম উৎপাদন করতে সক্ষম হতো। এ অসম প্রতিযোগিতায় উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার না করা কৃষকেরা ক্রমেই নিঃস্ব হতে থাকল। এভাবে ধীরে ধীরে স্থানীয় বীজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনকারী কৃষকেরা কৃষিকাজ থেকে সরে যেতে বাধ্য হলো এবং বাজার নতুন জাতের বীজে সয়লাব হয়ে যেতে লাগলো।
এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে, উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহার করতে ক্ষতি কোথায়, যদি আমরা বেশি বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারি? এখানে প্রথমত যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার, উচ্চ ফলনশীল জাত অবশ্যই ভালো হবে, যদি তা পরিবেশ ও মানুষের জন্যে বিপদ বয়ে না আনে। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের পর সমগ্র দুনিয়াতে নতুন জাত উদ্ভাবনের যে হিড়িক পড়ে যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, এ সব জাতের বীজ থেকে ফসল উৎপাদন করতে অতিরিক্ত পরিমাণে সার, রাসায়নিক কীটনাশক, প্রচুর পানি ইত্যাদির দরকার। এমনকি এসকল রাসায়নিক দ্রব্য মাটির উর্বরতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, বিশ্বের প্রণিধানযোগ্য ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উর্বর ভূমিগুলোকে বছরের পর বছর অতিরিক্ত রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করিয়ে উৎপাদনের অনুপযোগী করে তুলেছে! আমাদের সামনে আফ্রিকাকে যদিও মরুভূমি কিংবা অনুর্বর হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়ে থাকে, একটি জিনিস আমাদের ভুলে যাওয়া ঠিক না, আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশই আবহাওয়া এবং ভৌগলিক দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বেশি উর্বর। একটি উদাহরণ দেই। সোমালিয়া আমাদের মত গ্রীষ্মপ্রধান (Tropical) একটি দেশ, অথচ আমরা বাংলাদেশকে উর্বর ভাবি কিন্তু সোমালিয়াকে মনে আসলে আমাদের চিন্তায় ক্ষুধাপীড়িত একটি দেশ বলে মনে হয়। যার মাটি কিনা অতি অনুর্বর! একদিকে আমাদের মনের ভিতরে এরকম একটি চিত্র তুলে ধরানো হয়েছে, অপরদিকে সে সব দেশের মাটিগুলোকে ধীরে ধীরে চাষাবাদের অনুপযোগী করে ফেলা হচ্ছে। মূলত এ সকল উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদ করতে গিয়ে অনেক অনুন্নত দেশই খরায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। এছাড়া গ্রামের কৃষকদের যেখানে উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হচ্ছে, সেখানে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা অতি দ্রুত ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এ বীজগুলো বপনের পরে যদি পর্যাপ্ত (অন্যান্য বীজের চেয়ে বেশি) পানি বা সার না দেওয়া হয়, তাহলে তা কখনোই ভালো ফলন দিবে না। তাই কৃষকদের নিকট উচ্চ ফলনশীল জাত বিক্রি করা শুধু বীজ বিক্রি করা নয় বরং একইসাথে কীটনাশক, সার, আধুনিক যন্ত্রপাতিও বিক্রি করা। যে সব কৃষক এ অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে পেরেছে তারাই প্রতিযোগিতায় টিকেছে, যারা পারেনি তারা বাধ্য হয়েছে কৃষি কাজ ছাড়তে।
আমরা জানি যে, একই মাটিতে একই ফসল ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন করাটা অনুচিত। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে কিংবা একটি শস্যের ফসল ঘরে তোলার পর সেখানে অন্য কোনো শস্য চাষাবাদ করা উচিত, এতে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, সে সাথে পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকে। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের পরে একই ফসল বার বার বপনের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জনের যে ধারা প্রচলিত করা হয়েছে, তাতে মাটির ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। এমনকি বাস্তুসংস্থানের অন্যতম উপাদান যে সব উপকারী কীটপতঙ্গ আমরা জানি, কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে অপকারী কীটগুলোর সাথে সাথে উপকারী কীটগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে বাস্তুসংস্থানের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি এখন আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বে “এ অঞ্চলে এ ফসলের ব্যবসা করে কোটিপতি” বলে যে সকল খবরগুলো বের হচ্ছে, এর প্রভাব সম্পর্কে কেউ একবারও ভেবে দেখছে না। আমাদের দেশেই এর অন্যতম বড় উদাহরণ চিংড়ি চাষ। চিংড়ি চাষ একটি সময় অধিক মুনাফা এনে দেওয়ায় অনেকে ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করে, কিন্তু এর চাহিদা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসা শুরু করায় পরবর্তীতে আর সে জমিতে শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। কারণ ততদিনে এ মাটি অধিক লবণাক্ত হয়ে গেছে। এভাবে ফসলি জমি কৃষি কাজের অনুপযুক্ত হালে নিয়ে আসা হয়েছে।
সবুজ বিপ্লবের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার। উন্নত দেশগুলোতে শ্রমবাজার দামি হওয়ায় সেখানে যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষকদের জন্যে উপকারী হলেও, ক্ষুদ্র পরিসরে কৃষকদের জন্যে সে সকল যন্ত্রপাতি কেনা বা ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছে। ৩য় বিশ্বের দেশ হিসেবে যেখানে আমাদের জনসংখ্যা অনেক, সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ তা ভেবে দেখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। কারণ, কৃষি শিল্পে বিপ্লব ঘটানো হল্যান্ড এর দিকে যদি আমরা তাকাই, তাঁদের জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৮০ লক্ষ, ইউরোপে শ্রম বাজারও অনেক ব্যয়বহুল। তাই তাদের জন্যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার আমাদের দৃষ্টিতে নান্দনিক দেখালেও, আমাদের প্রেক্ষিতে এর বাস্তুবতা কতটুকু, তা আরেকবার ভেবে দেখা উচিত। আমাদের অবশ্যই কৃষিতে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত, তবে নিজেদের পারিপার্শ্বিকতার আলোকে সব কিছু বিবেচনা করেই সে ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
আমাদের যে বিষয়টি সবুজ বিপ্লবকে চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে তা হলো ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপরীতে যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন। কিন্তু আসলেই কি তা হচ্ছে? আজ সমগ্র বিশ্বে হাইব্রিড বীজের ছড়াছড়ি, কিন্তু বিশ্বে অনাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে! ফাও (FAO) এর মতে, বিগত বছর পৃথিবীতে ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্য অপচয় ও নষ্ট করা হয়েছে, যা কিনা মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক তৃতীয়াংশ! যেখানে এত এত গবেষণা, এত এত নতুন জাতের উদ্ভাবন, সেখানে বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা এতটাই ভঙ্গুর যে, এক প্রান্তে অতিরিক্ত খাদ্য নষ্ট করা হচ্ছে অপরদিকে মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় দুরাবস্থা রয়ে গেলেও, বীজ ব্যবস্থাপনা ঠিকই সাধারণ কৃষকদের হাত থেকে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে গেছে। আজ আমাদের কৃষি উৎপাদন এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, কেউ চাইলেও প্রাচীন বীজগুলো নিয়ে উৎপাদন করতে পারবে না। বীজের সত্যায়ন (Certification) ও মান (Standard) এর নামে কৃষকদের পরোক্ষভাবে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করে বিশেষ গোষ্ঠী মুনাফা অর্জন করে আসছে। সবুজ বিপ্লব কি আসলেই কৃষকদের জন্যে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে? নাকি গুটিকয়েক ধনী গোষ্ঠীকে/কৃষককে আরও ধনী করে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে? এগুলো ভেবে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে দেরি হয়ে গেলেও, সময় শেষ হয়ে যায়নি বলে আমার বিশ্বাস।


