নানা কারণে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ গন্তব্য হয়ে গেছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার শিকার যেমন হয়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেও পড়েছে। সময়ের সঙ্গে এর মাত্রা আরও বাড়বে বলেই মনে করি। পশ্চিম বাংলার তরুণ-তরুণীরা আজ বাংলাকে পেছনে ঠেলে ইংরেজি ও হিন্দিকে বেছে নিয়েছেন কিংবা নিতে বাধ্য হয়েছেন আধুনিকতা অথবা কর্মের খাতিরে। মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষার গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাব শুধু সাহিত্য রচনা ও চিন্তা তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে নয়। বরং এটা পারিপার্শ্বিক বহু ঘটনার সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া। তাই সব মিলে বাংলা ভাষা বিকাশে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের দায়িত্ব বেড়েছে। চিন্তায় ও সৃজনে বাংলাকে যত্নের সঙ্গে এগিয়ে নেয়ার এ দায়িত্ব আমাদের সবার।

বাংলাকে এগিয়ে নেয়ার কথা এলেই কয়েকটা বিষয়ে নজর পড়ে। যথা, 

এক. মাতৃভাষায় প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সুযোগ।

দুই. শিক্ষা ও গবেষণা, অর্থনীতি, গণিত ও বিজ্ঞানচর্চার ভাষা হিসেবে বাংলার বিকাশের জোর চেষ্টা করা। বাংলাকে সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই দিয়ে সমৃদ্ধ করা। জনপ্রিয় দেশীয় শিক্ষকদের জ্ঞান, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, এমনকি শ্রেণি বক্তব্যকেও শ্রেণিবিন্যাস করে বাংলায় পর্যাপ্ত বই রচনা করা। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার জন্য বাংলায় পর্যাপ্ত ইউটিউব, খান একাডেমির মতো লেকচার ভিডিও, মূক বা সমজাতীয় ভিডিও কনটেন্ট, অনলাইন কোর্স একেবারেই সীমিত। অন্যদিকে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয় বলে বাংলাকে উচ্চ শিক্ষায় কিংবা বিজ্ঞানচর্চায় চালু করা সম্ভব নয় বলে যে মত রয়েছে, তাকে আমরা অগ্রহণযোগ্য মনে করি।

বিদেশি ভাষার যেসব শব্দ সমাজে ব্যাপক হারে ব্যবহার হয় তাকে সে অবস্থানে রেখে দেয়ার বিকল্প নেই। ইংরেজিসহ প্রায় সব ভাষায়ই প্রয়োজনমতো বিদেশি শব্দ সংযুক্ত করা হয়েছে। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সুতরাং গুরুগম্ভীর পারিভাষিক শব্দ খোঁজার চেষ্টাকে খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতোই মনে করি। যেসব শব্দ সমাজে, ছাত্র-শিক্ষকের কাছে সমাদৃত, তার পারিভাষিক শব্দ খোঁজার চেষ্টা অর্থহীন। ভাষা চলমান, দেয়া-নেয়ার মধ্য দিয়েই তার অনন্ত যাত্রা।

তিন. যথাসম্ভব রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা। তবে তা ইংরেজি কিংবা অপরাপর অর্থনৈতিকভাবে চাহিদাসম্পন্ন ভাষাকে বাদ দিয়ে নয়।

চার. দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি এবং কর্মক্ষেত্র চাহিদার ভিত্তিতে আরবী কিংবা চীনা ভাষা শেখানো।
অর্থাৎ যেসব দেশে আমাদের শ্রমিক ও শ্রমবাজারের চাহিদা রয়েছে বা ভবিষ্যতে কর্মের সম্ভাবনা যেসব ভাষায় উজ্জ্বল, সেসব ভাষার একটা প্রাথমিক ভিত্তি দেয়া। ভারত যদি বাংলাদেশীদের স্বাভাবিকভাবে শ্রমবাজারের সুবিধা দেয় (ওয়ার্ক পারমিট, দক্ষ ও অর্ধ-দক্ষ শ্রমিক গ্রহণ), তাহলে চতুর্থ ভাষা হিসেবে হিন্দিও আসতে পারে। এই কাজটা উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা সমমান কিংবা কারিগরি স্তরে করলে ভালো হয়, অন্যথায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ তৈরি হবে। এখানে কর্মপ্রাপ্তি সম্ভাবনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়কেও সম্মান জানাতে হবে।

পাঁচ. বাংলা ভাষার অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক দিগন্ত উন্মোচন। জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উদ্যোক্তাপ্রবণ হয়ে উঠলে ভাষাও শক্তিশালী হবে। সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় পণ্যের মাধ্যমে ভাষাকে কীভাবে ছড়ানো যায়, তার বুদ্ধিবৃত্তিক চেষ্টাও লাগবে। কাজগুলো মোটেই সহজ নয়। তবে এর জন্য চাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা।

পুরোনো জঞ্জাল মোছা

ঔপনিবেশিক ঔরসে গড়ে ওঠা ‘আভিজাত্য’ মোড়ানো শব্দে, বানানে, উচ্চারণে ‘জমিদারি’ বাংলা, যাকে প্রমিত বাংলা বলা হয়; তা আসলে আমাদের লোকালয়গুলোর বাংলা থেকে বেশ বিচ্ছিন্ন। প্রমিত বাংলা আমাদের নাগরিকের মুখে আসে না সহজাতভাবে। এটাকে প্রত্যাখ্যান করে আমাদের বহু কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা আলো ছড়াচ্ছেন, ভাষাকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছেন; এটা বড় আনন্দের বিষয়। বাংলা ভাষায় আমরা গাইব সাধারণ মানুষের জীবনের জয়গান। কৃষক, শ্রমিক, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতি, ছাত্র, যুবা যে ভাষায় জীবনকে দেখে, যে ভাষায় স্বপ্ন দেখে, অনুভূতি প্রকাশ করে সেটাই আমাদের ভাষা মান। যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা প্রতিবাদের ভাষাই আমাদের প্রাণের ভাষা। প্রমিত বা মান ভাষা নয় বরং আঞ্চলিক ভাষাই আমার মায়ের ভাষা। সেটাই আমার গৌরব, হোক অভিজাতদের কাছে তা আদিখ্যেতা, হোক তা চাষার ভাষা ! তাই মান ভাষার জঞ্জাল সরিয়ে তাকে বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষাগুলোর খুব কাছাকাছি রাখা হোক। এতে শিক্ষায় মনস্তাত্ত্বিক বাঁধা কাটানো যাবে।

বাংলাদেশের আঞ্চলিক ধ্বনিগুলোকে গুরুত্ব দেয়া ‘অভিজাত’দের প্রমিত ভাষা কাঠামো নির্মাণে পূর্ব বাংলার মানুষের সবগুলো ধ্বনিকে বিবেচনায় আনা হয়নি বলে দীর্ঘ অভিযোগ আছে। সুতরাং এই বিষয়ে আমাদের ভাষাবিজ্ঞানীদের দায়িত্ব দেয়া চাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌলিক ধ্বনিগুলোকে বর্ণে কিংবা ভাবের প্রকাশে কীভাবে স্থান দেয়া হবে, তা গবেষকদের ইখতিয়ারে দেওয়া চাই। একই সঙ্গে অভিজাত প্রভাবে বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, যুক্তবর্ণ, পরিভাষা নির্মাণ ও নির্ধারণ, বানানরীতিসহ বাংলা ব্যাকরণে যে যে বিকৃতিগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো সংশোধনে আঞ্চলিক গণশুনানি করা দরকার। যে পদ্ধতিতে কলকাতায় বসে পূর্ববঙ্গের মানুষের ভাষাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, একইভাবে ঢাকার নতুন অভিজাতদের দিয়ে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর একই ক্ষতি আমরা করতে পারি না। এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির নেতৃত্ব নির্বাচনে আঞ্চলিক কবি সাহিত্যিক শিল্পীদেরও সংশ্লিষ্টতা রাখা উচিত। বাংলা একাডেমিকে স্বৈরাচারের প্রতিনিধিত্ব মুক্ত করা আজ সময়ের দাবি।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে মান ভাষার ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না, তবে তাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা চাই। প্রমিত ভাষা এমন হতে হবে, যাতে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর রূপ থেকে তা অনেক দূরে অবস্থান না করে। ঢাকার তথাকথিত অভিজাতরা যে ভাষায় রেডিও টিভিতে এসে কথা বলেন, তা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রংপুর, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের ভাষা থেকে বেশ বিচ্ছিন্ন। ভাষা বহমান নদীর মতো। জীবনধারা, ব্যবসা, ধর্ম ও লোকায়ত সংস্কৃতির প্রভাবে আঞ্চলিক যোগাযোগের মিথস্ক্রিয়ায় নতুন শব্দ, বাক্য, প্রবাদ, শ্লোক ও বয়ান তৈরি হয়। গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে ভাষায় বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে সহজাত প্রক্রিয়ায়, লম্বা সময় নিয়ে। অভিজাত প্রমিত বাংলার সমস্যটা হচ্ছে এই মান ভাষার সঙ্গে পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক ভাষাগুলোর দূরত্বটা অনেক, এখানে সংস্কৃত শব্দ চাপিয়ে দেয়ার বিষয় আছে। এমন সব শব্দ অভিজাতদের সাহিত্যে ও কর্মে ব্যবহার করা হয়; যা প্রায় শত বছর পরেও পূর্ব বাংলার মানুষের মুখে উঠে আসেনি। এসব শব্দ রয়ে গেছে গুরুগম্ভীর কিংবা ভাবগম্ভীর। সহজাতভাবে প্রবেশ করেনি বলে শব্দগুলো সাধারণের মুখে শোভা পায় না। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এই নিয়ে যা বলেছেন তার ভাবার্থ এরকম- পূর্ব বাংলার মানুষের লোকায়ত ভাষা থেকে কলকাতার অভিজাতদের চাপিয়ে দেয়া ভাষার দূরত্বটা এতই বেশি যে, সাধারণের মুখে ভাষাটা আসে না। সাধারণকে ভাষাটা শিখতে হয় বরং লেখাপড়া করে ‘লায়েক’ হওয়ার পরই কেবল এ ভাষায় কথা বলা যায়, শুধু তখনই এটা মুখে আসে! অথচ মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের প্রধানতম বিষয়টা হচ্ছে শিক্ষার্থীর ওপর থেকে ভাষার দেয়াল সরিয়ে দিয়ে শিশুর বিকাশকে, সাহিত্যের সৃষ্টিকে স্বাভাবিক করা, সহজাত করা, দৈনন্দিন জীবনের অংশ করা। বাংলাকে এগিয়ে নিতে হলে এই দিকটায় নজর দিতে হবে, অন্তত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে।

আঞ্চলিক ভাষা এবং নৃতাত্ত্বিক ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া

ঔপনিবেশিক বিকাশের বেলায় কলকাতার জমিদারি প্রভাবশালীরা ‘প্রমিত বাংলা’র নাম করে সংস্কৃতকে বলপ্রয়োগে অনুপ্রবেশ করানোর পাশাপাশি আসাম, সিলেট, উড়িষ্যার নিকটঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে স্বাধীন ও আলাদা ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে কিংবা উপেক্ষা করে যে ভুল করা হয়েছে, তার মাশুল পশ্চিমের বাঙালিরা আজ রাজনৈতিকভাবে দিচ্ছেন। আমাদেরও পরোক্ষভাবে দিতে হবে। আসাম, দার্জিলিং, বিহার কিংবা উড়িষ্যায় আজ বাঙালিকে ‘তোমরা ও আমরা’র রাজনীতি চালু করা হয়েছে। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দেখছি এই রাজনীতির মাশুল প্রাণঘাতী। এসব থেকে শিক্ষা নেয়া হোক। পূর্ব বাংলার অবহেলিত ধ্বনিগুলো মূল ভাষায় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থান না পেলেও এই নিয়ে করা গবেষণা কাজগুলোকে সম্মান জানাই। সিলেটের নাগরিক বর্ণমালাসহ পূর্ব বাংলার অপরাপর ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক (চাকমা, সাঁওতাল প্রভৃতি) জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর বিকাশ ও সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্টতা খুব জরুরি বিষয়।

প্রত্যেক শিশুর মায়ের ভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকার করতে হবে, একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও নিতে হবে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগে মান ভাষার ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না, তবে তাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা চাই। মায়ের ভাষা হিসেবে আঞ্চলিক ভাষা (প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষারও একটা সাধু রূপ থাকে) যত বেশি সমাদৃত হবে মান বা প্রমিত ভাষা তত বেশি সাধারণের কাছাকাছি আসবে। এতে নতুন শিল্প ও সাহিত্যের সৃজনে, চিন্তার গঠনে ভাষার প্রভাব আরও বলবান ও বেগবান হবে। বাংলাকে যত্নের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হলে মান ভাষাকে ‘অভিজাতদের গুরুগম্ভীরতার মোড়কে’ রেখে না দিয়ে সাধারণের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে।

নতুন জঞ্জাল থামানো পুরোনো জঞ্জালের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে বিদেশি শব্দ খুঁজে বের করে সেগুলোকে অসনীয় বানান রীতিতে ফেলা। হ্রস্ব স্বরে ই-উ কার, দীর্ঘ স্বরে ঈ-ঊ কার পূর্ব বাংলার সহজাত বিষয়। ভাষায় সহজাতভাবে ঢুকা শব্দকে বিদেশি হিসেবে আলাদা করে তার জন্য প্রতিষ্ঠিত লোকায়ত নিয়মকে পাল্টে দেয়ার ফল অভিজাত শব্দের মতোই বিচ্ছিন্ন হবে। ঈদকে ইদ বানানোর মধ্যে কোনো গৌরব নেই। বানানরীতি পাল্টানো বড় কথা নয় বরং উচিত হবে উচ্চারিত ধ্বনিকে অনুসরণ করা। বানানরীতি জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জমিদারি মানসিকতা পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশে ব্যর্থ প্রমাণিত। এটা বৈজ্ঞানিকও নয়। বর্ণের ভিত্তি হচ্ছে ধ্বনি। ধ্বনি যেভাবে উচ্চারিত হবে বর্ণ ও বানান সেভাবে তৈরি হবে। এখানে জোরাজোরি চলে না, তাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সময় ও অর্থ অপচয়ের লাগাম টানা উচিত।

লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা বনাম শিক্ষার ভাষা

একটা জনপ্রিয় স্লোগান আছে এমন- ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। এটা দিয়ে আক্ষরিকভাবে আসলে মুখের ভাষা নয়, বরং মনে করি অধিকারের বিষয়ই সামনে আসে। মাতৃভাষা আসলে কেউ কেড়ে নিতে পারে না। তবে মাতৃভাষায় শিক্ষার ও কর্মের অধিকার কেড়ে নেয়া যায়। সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার ও কর্মের অধিকার কেড়ে নিলে চিন্তার স্বাধীনতা ধীরে ধীরে হারায়, এতে ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। বায়ান্নর আগে উর্দুকে ইংরেজির বদলে নতুন লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ভাষা করার একটা চেষ্টা হয়েছিল- আমরা যে যেভাবে বুঝি। পাকিস্তানে উর্দু আর ভারতে হিন্দি ইংরেজির বিপরীতে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ভাষার বিকল্প প্রার্থী। বহু উর্দু কিংবা হিন্দি স্কুল রয়েছে পাকিস্তান ও ভারতে। ইংরেজির বিপরীতে স্থানীয় একটা প্রধান ভাষাকে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা করার চেষ্টাটা কতটা সফল, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক করা যায়। ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশে দারিদ্র্যের যে হার, তাতে মনে হয় না যে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কাভিত্তিক ভাষা আঞ্চলিক ভাষাভাষী মানুষের স্বাভাবিক শিক্ষা ও চিন্তার বিকাশে ‘কেতাবি ভাষা’ নামক ‘দেয়াল’ বা বাধাকে ভেঙে দিতে পেরেছে। হতে পারে এটাও এজন্য যে, উর্দু ও হিন্দির যে ধারা শিক্ষালয়ে পড়ানো হয়, তা অভিজাত ধারা। ফলে শিশুর জন্য এটা নিজের মায়ের ভাষা থেকে দূরবর্তী। অভিজাত বাংলারও একই সমস্যা দেখি।

অভিজাত প্রমিত বাংলাকে আমি আঞ্চলিক পরিবেশে শিশুর স্বাভাবিক শিক্ষার পথে কিঞ্চিৎ বাধা হিসেবে দেখি, এটা নিয়ে সমীক্ষা হতে পারে। গ্রামে অনেক শিক্ষককেই পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুকে আঞ্চলিক ভাষায় বুঝিয়ে দিতে দেখি। ফলে বিষয়টা ফেলে দেয়ার মতো নয়। মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধানতম বিনিয়োগ। তাই লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ভাষার সঙ্গে সরাসরি মাতৃভাষায় কিংবা মাতৃভাষার ‘খুব কাছাকাছি একটা ভাষায়’ একটা মধ্যম স্তর পর্যন্ত শিক্ষা দেয়ার তরিকা নিয়ে ভাবা যায়। তাই পাঠ্যবইয়ের ভাষা যাতে আঞ্চলিক ভাষা থেকে দূরে অবস্থান না করে সেদিকেও আন্তরিকভাবে খেয়াল রাখা দরকার। সবমিলে সময় এসেছে বাংলা ভাষা নিয়ে নতুনভাবে ভাবনার।

১১০৪ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of ফয়েজ আহমদ তৈয়ব

ফয়েজ আহমদ তৈয়ব

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ, ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি এলকাটেল লুসেন্ট বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একটেল (বর্তমান রবি), এমটিএন কমিউনিকেশনস নাইজেরিয়া, এরিকসন নাইজেরিয়া, এরিকসন ঘানা, এরিকসন দক্ষিণ কোরিয়া, এরিকসন নেদারল্যান্ডস এ কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জনাব ফয়েজ তৈয়্যব একজন ‘টেকসই উন্নয়ন ও অবকাঠামো’ বিষয়ক প্রবন্ধকার। টেকসই উন্নয়নের নিরিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং প্রযুক্তির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধানের পর্যালোচনা করে থাকেন। তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। তাই এসকল বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মুক্ত চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেন। তাঁর লিখায় যা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়ঃ সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিক, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটি, অর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি ইত্যাদি খাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগরি প্রস্তুতি, ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের কারিগরি দিক এবং অটোমেশন। সামাজিক সংযোগের দিক থেকে উনি একজন টেকসই উন্নয়ন কর্মী, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। গ্রীণপিস নেদারল্যান্ডস এর সদস্য। দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক শেয়ারবিজ ও দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের উপ সম্পাদকীয় কলাম লেখক।
Picture of ফয়েজ আহমদ তৈয়ব

ফয়েজ আহমদ তৈয়ব

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ, ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি এলকাটেল লুসেন্ট বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একটেল (বর্তমান রবি), এমটিএন কমিউনিকেশনস নাইজেরিয়া, এরিকসন নাইজেরিয়া, এরিকসন ঘানা, এরিকসন দক্ষিণ কোরিয়া, এরিকসন নেদারল্যান্ডস এ কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জনাব ফয়েজ তৈয়্যব একজন ‘টেকসই উন্নয়ন ও অবকাঠামো’ বিষয়ক প্রবন্ধকার। টেকসই উন্নয়নের নিরিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং প্রযুক্তির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধানের পর্যালোচনা করে থাকেন। তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। তাই এসকল বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মুক্ত চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেন। তাঁর লিখায় যা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়ঃ সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিক, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটি, অর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি ইত্যাদি খাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগরি প্রস্তুতি, ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের কারিগরি দিক এবং অটোমেশন। সামাজিক সংযোগের দিক থেকে উনি একজন টেকসই উন্নয়ন কর্মী, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। গ্রীণপিস নেদারল্যান্ডস এর সদস্য। দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক শেয়ারবিজ ও দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের উপ সম্পাদকীয় কলাম লেখক।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top