আব্দুল করিম বাদায়ুনি একজন বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক। মহান এই ঐতিহাসিক ১৫৪০ সালে জয়পুরের বাদায়ুনে জন্মগ্রহণ করেন । সেই সময়ে মুঘল সালতানাতের সুলতান ছিলেন নাসিরুদ্দিন হুমায়ুন। জয়পুরে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি ১৫৫৩ সালে তাঁর বাবার সাথে মুঘলদের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আগ্রায় গমন করেন এবং সেখানে মুফতি আব্দুল ফাত্তাহ বিন আব্দুল গাফুর, আবুল ফজল আল্লামী ও শায়েখ মোবারক নাগেব্রির নিকট শিক্ষা লাভ করেন। এই সকল শিক্ষকদের নিকট দারস নেওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রখ্যাত হানাফি ফকিহ কাজী আবুল মায়ালী থেকেও ফিকহে হানাফীর উপর শিক্ষা লাভ করেন। ১৫৬২ সালে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর জন্মস্থান বাদায়ুনে চলে আসেন। বাদায়ুনে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি পাতিয়ালি শহরে গমণ করেন এবং সেখানে ৯ বছর অবস্থান করেন।
১৫৭৪ সালে তাঁর বন্ধু হাকিম আয়নুল মূলক ও জামাল খান তাঁকে তৎকালীন শাসক সুলতান আকবর শাহের নিকট নিয়ে যান এবং তাঁকে সুলতান আকবরের নিকট তুলে ধরেন। এই একই বছর সুলতান আকবর তাঁকে রাজ প্রসাদের মূল ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। সেখান অবস্থান কালীন সময়ে তিনি সুলতান আকবরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানগত কর্মকাণ্ডে যোগদান করেন এবং কিছু কিছু আরবী ও সংস্কৃত ভাষায় রচিত বইকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন। এই সময়ে তিনি ষোড়শ শতাব্দীর বিখ্যাত ঐতিহাসিক তাবাকাত-ই আকবরীর লেখক নিজামুদ্দিন আহমেদ হারাবীর সাথে পরিচয় হন এবং তাঁর অধীনে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ সময়ে তিনি ইতিহাস নিয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন তাঁর মধ্যে অন্যতম হল ‘মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ’।
মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ
আব্দুল করিম বাদায়ুনির লেখা এই গ্রন্থটি তারিখে বাদায়ুনি নামেও পরিচিত। এই গ্রন্থের মাধ্যমেই তিনি মূলত বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিন খণ্ডের এই গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে তিনি গজনবি শাসক নাসিরুদ্দিন সাবুক্তগিনের ক্ষমতাগ্রহণ (৩৬৬/৯৭৭) থেকে মুঘল সুলতান হুমায়ুনের মৃত্যু পর্যন্ত (৯৬৩/১৫৫৬) সময়কাল নিয়ে আলোচনা করেন । দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি সুলতান আকবরের শাসন কালের প্রথম চল্লিশ বছর নিয়ে (১৫৫৬-১৫৯৬) আলোচনা করেন। আর তৃতীয় খণ্ডে তিনি তাঁর সময়কালের আলেম, কবি, দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ ও সুফী-সাধকদের পরিচিতি তুলে ধরেন। গ্রন্থটির দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি সুলতান আকবরের দ্বীনী দৃষ্টিভঙ্গীকে সুন্নী দৃষ্টিকোন থেকে তুলে ধরেছেন। যার কারণে আকবরের সময়কালকে বুঝার জন্য এই খণ্ডটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। বাদায়ুনী এই গ্রন্থটি রচনা করার সময় নিজামুদ্দিন আহমেদ হারাবীর তাবাকাত-ই আকবর নামক গ্রন্থ থেকে অনেক বেশী উপকৃত হয়েছেন।
এই গ্রন্থে তিনি সুলতান আকবরের কিছু চিন্তা ও কাজকে সমালোচনা করার কারণে এ টি তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। ফার্সি ভাষায় রচিত এই গ্রন্থটি দুই খণ্ডে আহমাদ আলী ও কবিরউদ্দিন আহমাদ ১৮৬৪-১৮৬৯ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন । উক্ত গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ইংরেজিতে অনুবাদ করেন G. S. A. Ranking (Calcutta 1898) , দ্বিতীয় খণ্ডের অনুবাদ করেন H. W. Lowe (Calcutta 1884, 1924), এবং তৃতীয় খণ্ডের অনুবাদ করেন W. Haig । অনুবাদের পর এই গ্রন্থটি ১৮৮৬ সালে দিল্লী থেকে প্রকাশিত হয়।