প্রত্যেক মুমিনের অন্তরেই রাসূল (স) ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ স্তর অধিকার করে আছেন। কারণ তিনিই একজন মুমিনের প্রকৃত প্রেমাস্পদ, তাঁর ভালোবাসাই মুমিনের অন্তরে শক্তি যোগায়, জীবনীশক্তিহীন আত্মায় নবচেতনার সঞ্চার করে। মানুষ যখন আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা বিস্মৃত হয়ে অধঃপতনের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিলো, মানবতার এমনই এক দুর্দিনে বিশ্বমানবের প্রকৃত সুহৃদ ও কল্যাণকামী, মুক্তিদাতা হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স) মুক্তির জিয়নকাঠি নিয়ে আবির্ভূত হন। আত্মভোলা মানুষকে তিনি আত্মোপলব্ধির আহবান জানান, পথহারা মানুষকে দেখান পথের সন্ধান। তাঁর প্রদর্শিত পথের পথিক হয়েই মুমিন আত্ম-পরিচয় লাভে ধন্য হয়েছে, পেয়েছে মুক্তির পথ। তাঁরই বদৌলতে মুমিন তার হারানো সম্পদ ফিরে পেয়েছে, স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের পথ খুঁজে পেয়েছে। চরম লাঞ্চিত, অবহেলিত, অপমানিত জীবনের গ্লানিমুক্ত হয়ে উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আস্বাদ পেয়েছে। জগতের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন অধিকার করতে সমর্থ হয়েছে। জ্ঞান, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও চারিত্রিক দিক থেকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে স্থান করে নিতে পেরেছে। কারণ তিনিই বিশ্ববাসীকে এক উন্নত জীবনবিধান, এক উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থা ও উন্নত সভ্যতা উপহার দিয়েছেন। মুসলিমগণ এই সম্পদে সম্পদশালী হয়েই গৌরব ও মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছে। কাজেই মুসলিম মিল্লাতের সমস্ত গৌরবের উৎস হচ্ছেন মহানবী (স)।  

আমাদের ঈমান ও বিশ্বাস হলো ইসলাম ধর্ম হিসেবে আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত খোদায়ী হিদায়াত, সমাজ ও রাষ্ট্র হিসেবে একমাত্র নির্ভরস্থল নবী মুহাম্মাদ (স) এর পবিত্র সত্তা। আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু রাসূল (স) এর রিসালাতের বদৌলতেই আমাদের অন্তরে তাওহীদের বীজ সঞ্চারিত হয়েছে। তৎপূর্বে আমরা শব্দহীন অক্ষরের ন্যায় ছিলাম। রাসূল (স) এর রিসালাত তাকে সুবিন্যস্ত করে অর্থবহ শব্দে রূপান্তরিত করেছে। রিসালাতের দ্বারাই জগতে আমাদের স্থায়িত্ব ও অস্তিত্ব, রিসালাতের মাধ্যমেই আমাদের ধর্ম ও বিধান পূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা উম্মাতে মুহাম্মাদী সংখ্যায় যতই হই না কেন, চাই তা অসংখ্য হোক, রিসালতের দ্বারা আমরা এক ও অভিন্ন সত্তা, আমরা পরস্পর একটি পূর্ণাঙ্গ দেহের অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদৃশ। 

রাসূল (স) এর রিসালাতের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো এমন একটি সমাজ গঠন করা, যার সমস্ত আইন-কানুন খোদায়ী বিধানের অনুবর্তী হবে। অন্য কথায়, স্থান-কাল-পাত্র ও ভৌগোলিক সীমারেখা, গোত্র, ভাষা ও সংস্কৃতির নামে দুনিয়ার বিভিন্ন জাতি ও দেশের মধ্যে যে ভেদাভেদ তৈরি করে রাখা হয়েছে তার সমূলে উৎপাটনই রাসূল (স) এর রিসালাতের চরম লক্ষ্য। ইসলাম মূলত এক উম্মাহর নাম যার সীমানা হলোঃ

  •  তাওহীদ অর্থাৎ, অনাদি ও অনন্ত সত্তা মহান আল্লাহর একত্বের উপর ঈমান।
  • রিসালাত অর্থাৎ সকল নবী ও রাসূলের উপর ঈমান।
  • খতমে নবুওয়াত অর্থাৎ নবী (স)-ই যে শেষ নবী, তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না, এই সত্যের উপর দৃঢ় ঈমান। আর এই শেষোক্ত বিশ্বাসই মূলত একজন মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রকৃষ্ট মাধ্যম।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে খতমে নবুওয়াত এক অভিনব চিন্তা-ই মনে হবে। কিন্তু প্রাক-ইসলামী যুগের অগ্নিপূজক সমাজের সভ্যতা সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই এ সংশয় সহজেই বিদূরিত হয়ে যায়। রাসূল (স) যেহেতু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিধান সম্বলিত এক পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী জীবনবিধান নিয়ে এসেছেন, সেহেতু এরপর আর কোন নবী বা শরীয়তের কোন প্রয়োজন-ই থাকেনা। অথচ ইতিপূর্বে মানবজাতির প্রয়োজনের তাগিদে আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন আর এ প্রয়োজন পূরণ হওয়ার নাম খতমে নবুওয়াত। অতএব একে অভিনব মনে করার আর কোন কারণ থাকেনা, বরং এটাই বাস্তব ও যুক্তিসঙ্গত। 

হযরত নূহ (আ) এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বপ্রথম শরীয়ত প্রবর্তনের ধারা শুরু করেন। পূর্ববর্তী নবীগণ শুধু সামাজিকতা শিক্ষা দিতেন, শরীয়ত বা খোদায়ী বিধান সামগ্রিকভাবে নূহ (আ) থেকেই শুরু হয়। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পরবর্তী নবী রাসূলগণের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করতে থাকে। আর, হযরত নূহ (আ) কর্তৃক সূচনাকৃত এই শরীয়তই হযরত মুহাম্মাদ (স) এর মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। মানবজাতির জন্য আল্লাহর দেয়া বিধান যেহেতু পূর্ণতার লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে, কাজেই কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী-রাসূলের আবির্ভাব হবেনা, নতুন কোন শরীয়ত প্রবর্তিত হবেনা। কাজেই হযরত মুহাম্মাদ (স) সর্বশেষ নবী, তাঁর শরীয়ত সর্বশেষ শরীয়ত, তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিল্লাত সর্বশেষ মিল্লাত তথা মুসলিম মিল্লাত।

আল্লাহ তা’য়ালা যেমন আমাদের উপর শরীয়ত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, রাসূল (স) এর উপর রিসালাত কে সমাপ্ত করেছেন। এখন আমরাই বিশ্বমাহফিলের আলোকবর্তিকা। নবী (স) নবুওয়াতের ধারাকে সমাপ্ত করেছেন, আর আমরা জাতিসমূহকে নিঃশেষিত করেছি (অর্থাৎ আমাদের পরে পৃথিবীতে আর কোন নতুন জাতির অভ্যুদয় ঘটবে না)। অতঃপর বিশ্বমাহফিলের ‘সাকী’র দায়িত্ব পালনের ভার এখন আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে। কারণ সর্বশেষ পাত্রটিই সোপর্দ করা হয়েছে আমাদের হাতে (পিপাসার্ত মানুষ যেমন ‘সাকী’র শরণাপন্ন হয়, তেমনি দুনিয়ার জাতিসমূহ হিদায়াতের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হবে)। নবী (স) এর ঘোষণা “লা নাবিয়া বা’দি”-আমার পরে আর কোনো নবী নেই” বস্তুত আমাদের উপর এক বিরাট খোদায়ী ইহসান। এর দ্বারাই ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ইহসান-ই আমাদের শক্তির উৎস, আমাদের জাতীয় সংহতি রক্ষার চাবিকাঠি।

ইসলামের সংহতি ও বিশ্ব-মুসলিমের সৌভ্রাতৃত্ব উপরোক্ত মৌলিক বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। এরই মাধ্যমে বিশ্ব-মুসলিমের মধ্যে অধিকতর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, যার বদৌলতে মুসলিমগণ বিশ্বরাজনীতিতে নিজ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সাফল্য অর্জন করবে। রাজনৈতিকভাবে ইসলামের সংহতি তখনই বিনষ্ট হয় যখন একটি মুসলিম রাষ্ট্র অপর একটি মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আক্রমণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ঠিক তেমনিভাবে ইসলামের ধর্মীয় সংহতি তখনই নষ্ট হওয়া শুরু করে যখন কোন একজন বা একদল মুসলমান ইসলামের উপরোক্ত মৌলিক বিশ্বাসের কোনো একটি অথবা আরাকানে ইসলামের কোনো রুকন অমান্য করতে থাকে। এমনকি এর প্রতি সামান্যতম শৈথিল্যও মিল্লাতের ঐক্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর।

বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যিকারের শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যদি একক সমাজদর্শনের চিন্তা করা হয়, তবে ইসলামই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। কারণ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে মূলতঃ সমাজদর্শন-ই নেই। ইসলাম গোটা মানবতাকে এমন এক সমাজদর্শন উপহার দিয়েছে, যাকে সত্যিকারভাবে অনুসরণ করা হলে সমগ্র বিশ্বমানবতা একটি অভিন্ন সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং একমাত্র ইসলামের মাধ্যমেই গোটা বিশ্বে শান্তির পথ উন্মুক্ত হওয়া সম্ভব। পবিত্র কোরআন সুদীর্ঘকালব্যাপী অনুশীলনের মাধ্যমে আমি যে ধারণা লাভ করেছি তা হলোঃ

ইসলাম শুধু ব্যক্তির চারিত্রিক সংশোধনই কামনা করেনা, বরং সমগ্র মানবজাতির সমষ্টিগত জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করাই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। গোত্রীয় ও আঞ্চলিক চিন্তাধারার সংকীর্ণ আবর্ত থেকে মুক্তিদান করে গোটা মানবজাতিকে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদে উদ্বুদ্ধ করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য।

বিভিন্ন জাতির ধর্মীয় ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাক ইসলামী যুগে যেসকল ধর্ম প্রচলিত ছিলো তার অধিকাংশই ছিলো জাতিভিত্তিক। যেমন- মিসরীয় ধর্ম, ইরানী ধর্ম, ভারতীয় ধর্ম ইত্যাদি। অতঃপর তা বংশ ও গোত্রীয় ধর্মে পরিগ্রহ করে। যেমনঃ বনী ইসরাইলের ধর্ম। অতঃপর ঈসা (আ) এর অনুসারীগণ ধর্মকে ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই ইউরোপীয়রা এই ধারণা পোষণ করতে থাকে যে, মানুষের সমষ্টিগত ও সামাজিক জীবন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এককভাবে রাষ্ট্রের, ধর্মের সেখানে কোন দায়-দায়িত্ব নেই। কিন্তু ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যা সমগ্র মানবতাকে এই বাণী শুনিয়েছে যে, ধর্মের ভিত্তি জাতীয়তা বা গোত্র-বর্ণের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং তা নিছক ব্যক্তিগত কিংবা আধ্যাত্মিক ব্যাপার ও নয়, বরং তা আন্তর্জাতিক মানবতাকেন্দ্রিক। সমগ্র মানব জাতিকে সকল প্রকৃতিগত বৈষম্য সত্ত্বেও একই জীবনবিধানের অধীনে সংঘবদ্ধ করাই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। আর যে ধর্মের ভিত্তি এরূপ ব্যাপক ও সুবিস্তৃত, তা নিছক কতিপয় আকীদা-বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেনা। তার কর্মক্ষেত্র যেমন ব্যাপক ও সুবিস্তৃত, তেমনি এর লক্ষ্যও ব্যাপক ও সামগ্রিক। ব্যক্তির জীবনের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও আন্তর্জাতিক সকল দিক নিয়ন্ত্রণ-ই এর পরিধির অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বজনীন জীবনদর্শন যা কোনো বিশেষ স্থান, কাল ও বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। 

একথা চিরন্তন সত্য যে, ইসলাম কোন গীর্জাভিত্তিক মতবাদ নয়। ইসলাম পরিপূর্ণরূপেই একটি রাষ্ট্রদর্শনের নাম। এ এক সুসংহত ও সুশৃঙ্খল জীবনবিধানরূপে আবির্ভূত হয়েছে, যখন সমকালীন বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণাও জন্মলাভ করেনি। এর মধ্যে উন্নত চরিত্রের সকল বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীই বিদ্যমান,যা দ্বারা মানুষ শুধু নিছক সৃষ্টিই নয়, তার সাথে সাথে বিশ্বস্রষ্টার প্রতিনিধিও হয়ে ওঠে। 

একজন অমুসলিম ইউরোপীয় পণ্ডিতের মুখে যদিও একথা শোভা পায় যে, ‘ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক ব্যাপার’, কিন্তু তা কোন মুসলমানের মুখে কোনভাবেই শোভা পায়না। কারণ ইসলাম খৃষ্ট ধর্মের ন্যায় ধর্মকে নিছক গির্জা বা মসজিদকেন্দ্রিক মনে করেনা। ইউরোপে খৃষ্টধর্ম একটি গীর্জাকেন্দ্রিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাদের ধারণা, ধর্ম জড়জগতের কলুষতামুক্ত এক আধ্যাত্মিক মতবাদ। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণহীনতার পরিণাম পাশ্চাত্যজগতে যা হওয়ার কথা, তা-ই হয়েছে। স্বৈরাচারিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ রাজত্ব কায়েম হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ব্যক্তির জীবনের সর্বক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মানুষ যেমন আল্লাহর সৃষ্টি, তদ্রূপ তার জীবনের সকল ক্ষেত্র ও দিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ও অধিকার একমাত্র আল্লাহর। আর তাই স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতির জীবনের সকল ক্ষেত্রই খোদায়ী অনুশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

কেউ যদি এমন ধারণা পোষণ করে থাকে যে, সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম একইসাথে পাশাপাশি চলতে পারি, তাহলে আমি পূর্বাহ্নেই তাদেরকে সতর্ক করে দিতে চাই। কারণ এর পরিণতি হিসেবে ধর্ম শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তা যদি না-ও হয়, তাহলে ধর্ম রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হারিয়ে নিছক ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক ব্যাপারে পরিণত হবে। এর ফলে ধর্মহীনতার যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে, তার ফলে জাতিকে কোনভাবেই আদর্শ ও মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত ও নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান করে তোলা যাবে না। 

পৌত্তলিকতার নবসৃষ্টির মধ্যে অন্যতম হলো ‘দেশ’। আর এর বহিরাবরণ ধর্মের কাফনস্বরূপ। আমি জীবনের প্রারম্ভিক যুগ থেকেই পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধাচরণ করে আসছি। তখন শুধু উপমহাদেশ-ই নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্ব-ই এর পরিণতি সম্পর্কে কিছুই অবগত ছিলোনা। ইসলামের ‘উম্মাহ’ এর ধারণাকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার উদ্দেশ্যে এ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। মুসলিম দেশগুলোতে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার উপর ব্যাপক প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয়েছিলো। বলা বাহুল্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা এই ষড়যন্ত্রে কিছুটা সাফল্যও লাভ করে।

ফলস্বরূপ, বর্তমানে ইসলামী সৌভ্রাতৃত্ববোধ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, প্রতিটি দেশই একটি স্বতন্ত্র জাতির গোড়াপত্তন করেছে। যখনই ভৌগোলিক সীমারেখাকে জাতীয়তার মাপকাঠি স্থির করা হয়েছে, তখনই মানবজাতিকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে।

‘আত্মা দেহ ছেড়ে উড়ে গেছে, শুধু আত্মাহীন কায়াই পড়ে আছে। আর এই ধ্বংসাবশেষের উপরই বিভিন্ন জাতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত’।

দেশ ও আঞ্চলিকতার এ সংকীর্ণতার দ্বারা মানুষের চিন্তাধারা স্বভাবত ঐ দিকেই ধাবিত হয়, মানবসভ্যতা এর মাধ্যম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং এর পরিণতি এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে, এরপর আর পুনরায় এদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া ধর্মও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে তৈরী হতে থাকে, যেমনটা প্রাক ইসলামী যুগে ছিলো। বর্তমানেও পৃথিবীতে অনেক ধর্ম আছে, যেগুলো এই আঞ্চলিক সংকীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে বহির্বিশ্বে সম্প্রসারণ লাভ করতে পারেনি। অধিকন্তু এর ফলে মানুষ ক্রমেই ধর্ম সম্পর্কে সন্দেহ ও সংশয়বাদী হয়ে অবশেষে ধর্মহারা হয়ে নাস্তিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে। 

আধুনিক জাতীয়তাবাদে নাস্তিকতার এই বিষাক্ত জীবাণু লক্ষ্য করে আমি প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধাচরণ করে আসছি। কারণ আমার দৃষ্টিতে দেশপ্রেম ও দেশপূজা এক কথা নয়। দেশই মানুষের চরম লক্ষ্য নয়, বরং ঈমান, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই মানুষের মূল লক্ষ্য। মানুষ যদি বেঁচে থাকে তাহলে এর উপর ভিত্তি করেই বেঁচে থাকবে আর জীবন উৎসর্গ করতে হলেও সেজন্যই করবে। 

আধুনিক বিশ্বে আরেকটি সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা হলো বর্ণ ও গোত্রবাদ। আমার মতে, মানবসভ্যতার ললাটে এ এক মারাত্মক কলঙ্কটিকা। এশীয়গণ যদি ইউরোপের ন্যায় পরিস্থিতির শিকার না হতে চায়, তাহলে তাদের কালবিলম্ব না করেই ইসলামের আন্তর্জাতিক চিন্তাধারাকে গ্রহণ করা উচিত। বর্ণগত ও গোত্রীয় ভেদাভেদ ভুলে ইসলামের আন্তর্জাতিক মানবতাবাদ গ্রহণ করাই তাদের জন্য বিধেয়।

মানবসভ্যতার ইতিহাস পারস্পারিক হানাহানি, ঝগড়া-বিবাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভরা। এ অবস্থায় তার পক্ষে জীবনের এমন একটি ভিত্তি নির্মাণ করা সম্ভব ছিলো না, যার দ্বারা মানবজীবনের ভিত্তি শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ইসলাম তাওহীদের ঐক্যসূত্র গ্রথিত করে মানুষকে সেই সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান লাভের যোগ্য করে দিয়েছে। কিন্তু এমন পূর্ণাঙ্গ ও সামগ্রিক জীবনবিধান খুজে বের করা, কিংবা স্বয়ং রচনা করা মানবজাতির পক্ষে সম্ভব ছিলোনা। ইসলামের বিধানসমূহ, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালা, তার সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সাহিত্যকে গভীর অভিনিবেশ সহকারে দীর্ঘকালব্যাপী অনুশীলন করে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, ইসলাম এক আন্তর্জাতিক জীবনবিধান। মুসলমানগণ সামাজিকভাবে এক সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ জাতি, যার ভিত্তিপ্রস্তর তাওহীদ ও খতমে নবুওয়াতের বিশ্বাসের উপর স্থাপিত। এতে বর্ণবাদ, গোত্রবাদ কিংবা আঞ্চলিকতাবাদের ন্যায় সংকীর্ণ চিন্তাধারার কোন সুযোগই নেই। কারণ, আল্লাহ যেমন রাব্বুল আলামীন, রাসূল (স) ও তেমনি রহমাতুল্লিল আলামীন। ইসলাম এক বিশ্বজনীন জীবনবিধান। ইসলামের অনুসারীগণও তেমনই এক বিশ্বজনীন উম্মাহ-মুসলিম উম্মাহ। এ কারণে পবিত্র কুরআন মানুষকে একই মহাজাতির আওতাভুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মানুষ যখন ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তখনই তাকে ‘মিল্লাত’ ও ‘উম্মত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ফলে যে কেউই রাসূল (স) এর নেতৃত্বে আস্থা স্থাপন করে ইসলামের গণ্ডীভুক্ত হয়েছে, তখন থেকেই সে ‘মিল্লাতে ইসলামী’ ও ‘উম্মতে মুসলিমা’র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একদিন সে অঞ্চল ও গোত্রের দাসত্ববন্ধনে আবদ্ধ ছিলো, ইসলাম তাকে সে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দান করেছে। ইসলামের আন্তর্জাতিক মানবতাবাদ-ই বিশ্বশান্তি ও মানবতার মুক্তির মহাসনদ। এটাই মুসলিমদের মর্যাদার একমাত্র বাহন। আর যে মহামানবের বদৌলতে আমরা এই পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান লাভ করেছি, সেই রাসূল (স)-ই আমাদের মর্যাদা ও গৌরবের উৎস।     

১৩২১ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইকবাল

আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইকবাল

আল্লামা ইকবাল১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। ইকবালের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সাপ্রু বংশীয় কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। সপ্তদশ শতাব্দীর কোন এক সময় জনৈক সুফির সংস্পর্শে এসে পরিবারটি ইসলাম গ্রহণ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের সময় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দরুন এই পরিবার কাশ্মীর ত্যাগ করে শিয়ালকোটে বসতি স্থাপন করে। আল্লামা ইকবালের পিতার নাম নূর মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন একজন ন্যায়নিষ্ঠ,ধার্মিক,তাসাউফের অনুরাগি এবং সূফি তরিকার অনুবর্তী। তার মা ইমন বিবিও ছিলেন সমান ধর্মপ্রাণা। আল্লামা ইকবাল দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন।আল্লামা ইকবাল তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন শিয়ালকোটের মিশনারি স্কুলে। এখানেই তিনি তাঁর প্রবেশিকা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি একই শহরের স্কচ মিশন কলেজ থেকে এফ.এ পাস করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অগ্রবর্তী ছাত্র হিসেবে যোগ দেন এবং একই সাথে লিংকনস ইনে আইন অধ্যায়নের জন্য ভর্তি হন। ক্যামব্রিজে প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ ম্যাকটেগার্টের তত্ত্বাবধানে তিনি কাজ করেন এবং "ফিলোসফিক্যাল ট্রিপস ডিগ্রি" অর্জন করেন।এসময়ে তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ডক্টরের ডিগ্রির জন্য যোগ দেন এবং এখানে তার বিখ্যাত অভিসন্দর্ভ,"দ্যা ডেভলপমেন্ট অফ মেটাফিজিকস ইন পার্শিয়া" জমা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর সেখান থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ইকবাল ১৯০৭ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন।ইতোপূর্বে এম.এ পাশ করবার পরে তিনি লাহোরের অরিয়েন্টাল কলেজে আরবির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরেই ইংরেজি ও দর্শনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তিনি লাহোর সরকারি কলেজে যোগদান করেন। ১৯০৯ সাল থেকে তিনি সার্বক্ষণিক আইনি পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি একজন উঁচুমাপের লেখকের পাশাপাশি একজন সফল আইনজীবীও ছিলেন।আল্লামা ইকবাল ছিলেন একজন দার্শনিক। আধুনিকোত্তর পৃথিবীতে ইসলাম যখন অনেকটা নির্জীব তখনই আল্লামা ইকবাল একটি গতিধর্মী ও বিপ্লবী ইসলামের ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি তার অদম্য চিন্তাশক্তি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে, একদিকে সর্বভুক আগ্রাসী পাশ্চাত্যের দাপাদাপি অন্যদিকে স্বসম্প্রদায়ের রাষ্ট্রিক, সামাজিক,অর্থনৈতিক, তমুদ্দুনিক নির্জীবতা ও অবক্ষয়ের এটিই হচ্ছে একমাত্র উত্তরণের পথ।এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুসলমানের আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রতিষ্ঠার নির্ভুল উপায়।ইসলামী রেনেসাঁর কবি ও মহান এই দার্শনিক ১৯৩৮ সালের ২১শে এপ্রিল ইন্তেকাল করেন।আল্লামা ইকবালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ :(১)ইলম আল ইক্তিউদ (The Science of Economics)- উর্দু ছন্দে (ca ১৯০১)(২)Islam as an Ethical and Political Ideal- ইংরেজি (১৯০৮)(৩)The Development of Metaphysics in Persia- ইংরেজি (১৯০৮) ( বাংলা অনুবাদ : প্রজ্ঞান চর্চায় ইরান)(৪)আসরার ই খুদি (The Secrets of the Self)- ফার্সি (১৯১৫)(৫)রুমিজ ই বেখুদি (The Mysteries of Selflessness)- ফার্সি (১৯১৭)(৬)পয়গাম ই মাশরিক (The Message of the East)- ফার্সি (১৯২৩)(৭)বাং ই দারা (The Call of the Marching Bell)- উর্দু ও ফার্সি (১৯২৪)(৮)জুবুর ই আজাম (The Psalms of Persia)- ফার্সি (১৯২৭)(৯)The Reconstruction of Religious Thought in Islam- (ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন) (১৯৩০)(১০)জাভেদ নামা (The Book of Eternity)- ফার্সি (১৯৩২)(১১)বাল ই জিবরাইল (The Gabriel’s Wings)- উর্দু ও ফার্সি (১৯৩৩)(১২)পাস ছে বায়াদ কারদ আই আক্বওয়াম ই শারক (So What Should be Done O Oriental Nations)- ফার্সি (১৯৩৬)-(১৩)মুসাফির (The Wayfarer)- ফার্সি (১৯৩৬)(১৪)জারব ই কালিম (The Blow of Moses) উর্দু ও ফার্সি (১৯৩৬)(১৫)আরমাঘান ই হিজাজ (The Gift for Hijaz)- ফার্সি ও উর্দু (১৯৩৮)
Picture of আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইকবাল

আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইকবাল

আল্লামা ইকবাল১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। ইকবালের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সাপ্রু বংশীয় কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। সপ্তদশ শতাব্দীর কোন এক সময় জনৈক সুফির সংস্পর্শে এসে পরিবারটি ইসলাম গ্রহণ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের সময় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দরুন এই পরিবার কাশ্মীর ত্যাগ করে শিয়ালকোটে বসতি স্থাপন করে। আল্লামা ইকবালের পিতার নাম নূর মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন একজন ন্যায়নিষ্ঠ,ধার্মিক,তাসাউফের অনুরাগি এবং সূফি তরিকার অনুবর্তী। তার মা ইমন বিবিও ছিলেন সমান ধর্মপ্রাণা। আল্লামা ইকবাল দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন।আল্লামা ইকবাল তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন শিয়ালকোটের মিশনারি স্কুলে। এখানেই তিনি তাঁর প্রবেশিকা পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি একই শহরের স্কচ মিশন কলেজ থেকে এফ.এ পাস করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে অগ্রবর্তী ছাত্র হিসেবে যোগ দেন এবং একই সাথে লিংকনস ইনে আইন অধ্যায়নের জন্য ভর্তি হন। ক্যামব্রিজে প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ ম্যাকটেগার্টের তত্ত্বাবধানে তিনি কাজ করেন এবং "ফিলোসফিক্যাল ট্রিপস ডিগ্রি" অর্জন করেন।এসময়ে তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ডক্টরের ডিগ্রির জন্য যোগ দেন এবং এখানে তার বিখ্যাত অভিসন্দর্ভ,"দ্যা ডেভলপমেন্ট অফ মেটাফিজিকস ইন পার্শিয়া" জমা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর সেখান থেকে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ইকবাল ১৯০৭ সালে ব্যারিস্টারি পাশ করেন।ইতোপূর্বে এম.এ পাশ করবার পরে তিনি লাহোরের অরিয়েন্টাল কলেজে আরবির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পরেই ইংরেজি ও দর্শনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তিনি লাহোর সরকারি কলেজে যোগদান করেন। ১৯০৯ সাল থেকে তিনি সার্বক্ষণিক আইনি পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি একজন উঁচুমাপের লেখকের পাশাপাশি একজন সফল আইনজীবীও ছিলেন।আল্লামা ইকবাল ছিলেন একজন দার্শনিক। আধুনিকোত্তর পৃথিবীতে ইসলাম যখন অনেকটা নির্জীব তখনই আল্লামা ইকবাল একটি গতিধর্মী ও বিপ্লবী ইসলামের ব্যাখ্যা দান করেন। তিনি তার অদম্য চিন্তাশক্তি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে, একদিকে সর্বভুক আগ্রাসী পাশ্চাত্যের দাপাদাপি অন্যদিকে স্বসম্প্রদায়ের রাষ্ট্রিক, সামাজিক,অর্থনৈতিক, তমুদ্দুনিক নির্জীবতা ও অবক্ষয়ের এটিই হচ্ছে একমাত্র উত্তরণের পথ।এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুসলমানের আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রতিষ্ঠার নির্ভুল উপায়।ইসলামী রেনেসাঁর কবি ও মহান এই দার্শনিক ১৯৩৮ সালের ২১শে এপ্রিল ইন্তেকাল করেন।আল্লামা ইকবালের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ :(১)ইলম আল ইক্তিউদ (The Science of Economics)- উর্দু ছন্দে (ca ১৯০১)(২)Islam as an Ethical and Political Ideal- ইংরেজি (১৯০৮)(৩)The Development of Metaphysics in Persia- ইংরেজি (১৯০৮) ( বাংলা অনুবাদ : প্রজ্ঞান চর্চায় ইরান)(৪)আসরার ই খুদি (The Secrets of the Self)- ফার্সি (১৯১৫)(৫)রুমিজ ই বেখুদি (The Mysteries of Selflessness)- ফার্সি (১৯১৭)(৬)পয়গাম ই মাশরিক (The Message of the East)- ফার্সি (১৯২৩)(৭)বাং ই দারা (The Call of the Marching Bell)- উর্দু ও ফার্সি (১৯২৪)(৮)জুবুর ই আজাম (The Psalms of Persia)- ফার্সি (১৯২৭)(৯)The Reconstruction of Religious Thought in Islam- (ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন) (১৯৩০)(১০)জাভেদ নামা (The Book of Eternity)- ফার্সি (১৯৩২)(১১)বাল ই জিবরাইল (The Gabriel’s Wings)- উর্দু ও ফার্সি (১৯৩৩)(১২)পাস ছে বায়াদ কারদ আই আক্বওয়াম ই শারক (So What Should be Done O Oriental Nations)- ফার্সি (১৯৩৬)-(১৩)মুসাফির (The Wayfarer)- ফার্সি (১৯৩৬)(১৪)জারব ই কালিম (The Blow of Moses) উর্দু ও ফার্সি (১৯৩৬)(১৫)আরমাঘান ই হিজাজ (The Gift for Hijaz)- ফার্সি ও উর্দু (১৯৩৮)

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top