মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
“যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে, নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রাসূল (সা.) এর জীবনীর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ ।” (৩৩:২১)
- কুরআন এবং সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরলে কেন মানুষ ভ্রান্ত (দালালাত) পথের দিকে পরিচালিত হবে না?
- রাসূলে আকরাম (সা.) এর পথ কেন দিনের আলোর মত এতো সুস্পষ্ট একটি পথ?
- নবী করীম (সা.) এর নিকটে আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা বা কল্পনা কেমন ছিলো? এই সম্পর্কে আমরা কি বলতে পারি?
সীরাত কিভাবে সুন্নাতের ব্যাখ্যা, আর সুন্নাত কিভাবে সীরাতের ব্যাখ্যা ?
আরবী ভাষায় সীরাতের বহুবচন হল ‘সিয়ার’। এর শাব্দিক অর্থ হলো-
- জীবন পরিচালনার ধরণ
- পথ
- তদবীর এবং প্রশাসন
- আচার-আচরণ
পবিত্র কোরআনে কারীমের এক স্থানে হযরত মুসা (আ.) এর মু’জিযার লাঠি সাপে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বুঝানোর সময় এটি ব্যবহার করা হয়েছে। সূরা ত্বহায় বলা হয়েছে,
قَالَ أَلْقِهَا يَا مُوسَىٰ فَأَلْقَاهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٌ تَسْعَى قَالَ خُذْهَا وَلَا تَخَفْ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا الْأُولَىٰ
অর্থাৎ আল্লাহ বললেন, হে মূসা একে ছুঁড়ে দাও ! সে ছুঁড়ে দিল এবং অকস্মাৎ সেটা হয়ে গেলো একটা সাপ, যা দৌঁড়াচ্ছিল। তিনি বললেন, ওটা ধরে ফেলো এবং ভয় করো না, আমি সেটাকে আবার ঠিক তেমনটিই করে দেবো যেমনটি সে আগে ছিলো।
سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا الْأُولَىٰ অর্থাৎ ‘অচিরেই আমি সেটাকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব’ এই আয়াতে বর্ণিত سِيرَة শব্দটিকে – অবস্থা, পরিস্থিতি, কাজের পন্থা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
হাদীস শাস্ত্রেও সীরাত শব্দটি ‘তদবীর এবং আচরণের ধরণ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- হিজরতের ষষ্ঠ বছরে রাসূলে আকরাম (সা.) দুমাতুল জান্দালে আব্দুর রহমান ইবনে আওফকে সেনাপতি হিসেবে পাঠিয়ে তাকে বলেন; হে আওফের ছেলে! ঐ পতাকাকে নাও! তোমরা সকলেই আল্লাহর পথে বের হয়ে যাও এবং যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। একই সাথে তোমরা গণিমতের মাল খেয়ানত করবে না, কারও চেহারায় আঘাত করবে না, ছোট শিশুদেরকে হত্যা করবে না। এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের চুক্তি (আহিদ) এবং তোমাদের মধ্যে অবস্থানকারী রাসূলে আকরামের সীরাত/কাজের পন্থা। (সীরাতে ইবনে হিশাম, চতুর্থ খন্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
এগুলোই হলো সীরাতের শাব্দিক অর্থ। পারিভাষিক অর্থে সীরাত হলো, ‘রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জন্ম থেকে নিয়ে ওফাত পর্যন্ত তাঁর জীবনের সকল ঘটনা, তাঁর আখলাক, শামাইল, দালাইল ও মু’জিযাসমূহ এবং তাঁর বংশ সম্পর্কিত জ্ঞানের নাম ।
রাসূলে আকরাম (সা.) এর জীবনের প্রতিটি ঘটনা এবং তাঁর জীবনের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ই একজন মুসলমানের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তিনি হলেন সবচেয়ে উত্তম উপমা, সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি উদাহরণ এবং সর্বোত্তম একজন রাহবার। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনেক আয়াতে রাসূলে আকরাম (সা.) কে অনুকরণ, অনুসরণ এবং আনুগত্যের কথা বলেছেন এবং গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। তাকে পরিপূর্ণভাবে অনুকরণ এবং অনুসরণ করা ছাড়া যে ইসলামকে পরিপূর্ণ ভাবে মানা সম্ভব নয় এই ব্যাপারে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলে আকরাম (সা.) ও বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতদিন পর্যন্ত এই দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, অপরটি হলো সুন্নাহ।
এই জন্য আমাদের উচিত হলো রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বরকতময় জীবনকে বিস্তারিতভাবে শেখা, বুঝা এবং উপলব্ধি করা।
আয়াত এবং হাদীসের আলোকে কেন রাসূলের সীরাতকে বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন এটা আমি এখন আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
১) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্দেশ করে বলেন:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে একটি উত্তম আদর্শ। তিনি আরও বলেছেন, রাসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো।
এই সকল কথা বলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর বরকতময় জীবনের দিকে ধাবিত করেছেন। তাঁর আখলাক যে সমগ্র মানবতার জন্য অনুপম আদর্শ ,এটা যে সকল মানুষের গ্রহণ করা উচিত এই কথা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে বার বার বলেছেন। এ জন্য আমাদের উচিত হলো তাঁর বরকতময় জীবনকে সুন্দরভাবে শিক্ষা করা, তাঁর গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপ, তাঁর বলা প্রতিটি কথা, চুপ থেকে স্বীকৃতিদান কৃত কর্ম সমূহ আমাদের ভালোভাবে অনুধাবন এবং আত্বস্থ করা প্রয়োজন।
২। আমাদের রবকে আরও ভালোভাবে, আরও সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গভাবে চেনার জন্য এবং বুঝার জন্য:
মানুষ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে তার আকলের মাধ্যমে চিনতে পারে, কিন্তু তাকে পরিপূর্ণভাবে চেনার জন্য ও জানার জন্য শুধুমাত্র আকলই যথেষ্ট নয়। তাকে ভালোভাবে চেনার জন্য সহীহ এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানের প্রয়োজন। এই সকল জ্ঞানের বা তথ্যের মধ্যে সবচেয়ে সহীহ এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান হলো মহাগ্রন্থ আল কুরআন। কুরআনে বর্ণিত মহান আল্লাহর সিফাত সমূহ, আসমাউল হুসনা সমূহ এবং এই সকল বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয় সমূহকে ভালোভাবে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে যিনি বুঝেছেন এমন একজন ব্যক্তির মাধ্যমে মানুষকে বুঝানো প্রয়োজন। যিনি মানুষকে কুরআনে বর্ণিত বিষয় সমূহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছা এবং আদেশ অনুযায়ী শিক্ষা দিবেন। আর এই দায়িত্ব হলো রাসূল (সা.) এর। তিনি তাঁর সমগ্র জীবন জুড়ে সঠিকভাবে তাঁর এই দায়িত্বকে পালন করেছেন।
এজন্য আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে এবং সঠিকভাবে জানার জন্য রাসূল (সা.) এর ব)কতময় জীবনকে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে রাসূলে আকরাম (সা.) এর সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে আমাদের সাথে মহান আল্লাহর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এই বিষয়টি আমরা কেবল মাত্র তাঁর জীবন থেকেই ভালোভাবে জানতে পারব।
৩) কুরআন কি বলেছে এবং কি বলতে চেয়েছে এটাকে ভালোভাবে বুঝার জন্য:
কুরআনের সর্বপ্রথম পাঠক হলেন রাসূলে আকরাম (সা.)। কেননা কুরআন তাঁর উপরেই নাযিল হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি সমগ্র মানবতার কাছে এটাকে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং এই কুরআনকে কিভাবে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে এই শিক্ষাও তিনি দিয়েছেন। এই জন্য তিনি কেবলমাত্র একজন প্রচারক নন, তিনি একই সাথে একজন ব্যাখ্যাকারী, একই সাথে পরিশুদ্ধকারী এবং একই সাথে একজন শিক্ষক।
এ জন্য রাসূলে আকরাম (সা.) কোরআন পড়ার পদ্ধতি থেকে শুরু করে, এটাকে জীবনে কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, কোন অবস্থায় কোন ধরণের কাজ করতে হবে এই ধরণের সকল বিষয়ের ব্যাখ্যা করেছেন এবং নিজের জীবনে সেটাকে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
৪) সীরাতের অধিকারীর মূল্য এবং মানকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য:
রাসূলে আকরাম (সা.) এর বরকতময় জীবনের মূল্যমানকে কেবলমাত্র তাঁর জীবনকে সঠিকভাবে অধ্যয়ন করেই জানা সম্ভব অন্য কোনভাবে নয়। রাসূলে আকরাম (সা.) এর নবুওয়ত পূর্ব পাক পবিত্র ৪০ বছরের জীবন, এরপর ২৩ বছরের নবুয়তী জিন্দেগী এবং তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া হাজার হাজার ঘটনা যতবেশি সঠিকভাবে বুঝা যাবে, আমাদের কাছে রাসূলের জীবন ততবেশি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। আর একজন মুসলমানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে যে রাসূলের উপর ঈমান এনেছে সে তাঁর সেই রাসূলকে যত ভালোভাবে চিনতে পারবে তার প্রতি তার ভালোবাসা ততবেশি বৃদ্ধি পাবে।
পাশ্চাত্যের গবেষকরাও যখন নিরপেক্ষ মন ও মানসিকতা নিয়ে আমাদের রাসূল (সা.)-কে গবেষণা করে তারাও তাঁর প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায়। তাহলে একজন মুসলমান, যিনি তার ঈমান আনীত রাসূলকে ভালোভাবে চিনতে পারবে সে কি মুগ্ধ না হয়ে পারবে? এই জন্য সীরাত, রাসূলে আকরাম (সা.) এর বরকতময় জীবনকে সঠিকভাবে জানা এবং বুঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৫) ইসলাম, ঈমান, ইহসান এবং ইখলাসের মূল্য ও গুরুত্ব জানার জন্য:
ইনসান তাসাউউরকে ( চিন্তাশক্তি দিয়ে কোন কিছুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করা ) গঠন করার জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। এগুলোর অর্থ যদি সঠিকভাবে বুঝা সম্ভব হয় তাহলে তাসাউউরও সঠিক হবে, আর যদি না হয় তাহলে তাসাউউরও ভুল হবে। রাসূলে আকরাম (সা.) পরিভাষা সমূহকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অনেক পরিভাষার জন্ম দিয়েছেন। যেমন হাদীসে জিব্রাইল। ওই হাদীসের মাধ্যমে তিনি ইসলাম, ঈমান, ইহসানকে শিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসে এই ধরণের অনেক উদাহরণ আমরা দেখতে পাই। এ জন্য সীরাতকে সঠিক ভাবে শেখার অর্থ হলো, ইসলামের পরিভাষা সমূহকে সঠিকভাবে শেখা।
৬) হাদীস, সুন্নাত এবং ইতিহাসকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য:
কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য যেমন সীরাতকে সঠিক বুঝা প্রয়োজন তেমনিভাবে হাদীস এবং ইতিহাসকে বুঝার জন্যও সীরাতকে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। কারণ সীরাত হলো সুন্নাতের ব্যাখ্যা, আর সুন্নাত হলো কুরআনের ব্যাখ্যা, শানে নুযুল জানা।
৭) আদর্শ একজন মানুষ হওয়ার জন্য এবং আদর্শ একজন মুমিন হওয়ার পথ সমূহ জানার জন্য:
একজন আদর্শ মানুষ এবং মুমিন হওয়ার জন্য আল্লাহ যে সকল বিষয়কে সামগ্রিকভাবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন, সে সকল বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ককে ছিন্ন না করা এবং এই সকল সম্পর্ককে আল্লাহ যে পর্যায়ে চেয়েছেন সে পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন। এই সকল সম্পর্ককে আমরা এইভাবে লিখতে পারি-
♦ আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক
♦ অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক
♦ বিশ্বসৃষ্টি এবং দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক
মানব সৃষ্টির সবচেয়ে কামিল (পরিপূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ) মানুষ হলেন মুহাম্মদ (সা.)। এই সকল সম্পর্ককে সবচেয়ে সুন্দর ভাবে মানুষের সামনে পেশ করেছেন তিনি। এই সকল উপমা সমূহ ভালোভাবে আত্তস্থ করার জন্য তাঁর জীবনকে খুব ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীরাতের পৃষ্ঠাসমূহকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন।
৮) সকল সময়ে, সকল স্থানে এবং সকল ঘটনাকে সঠিকভাবে কেমন করে বিশ্লেষণ করতে হবে সেটা সঠিকভাবে জানার জন্য:
স্থান-কাল এবং পাত্র পরিবর্তন হয়ে গেলে এই অবস্থায় মানুষ কিভাবে কাজ করবে কোন পন্থা অবলম্বন করবে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। কোথায় চুপ থাকতে হবে, কোথায় কথা বলতে হবে, কখন নরম হতে হবে, কখন কঠিন হতে হবে এই সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো ‘সময়কে চেনা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমাদের রাসূলে আকরাম (সা.) এই সকল বিষয়ের সবচেয়ে উত্তম উপমা। সীরাত গ্রন্থ সমূহে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শত শত তথ্য এবং উপমা আমাদেরকে এই বিষয় সম্পর্কে সবচেয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে থাকে। এই জন্য এক দিক থেকে সীরাত মুমিনের জন্য কৌশলগ্রহণের সবচেয়ে সেরা উৎস।
৯) রাসূলে আকরাম (সা.) কে সত্যিকারভাবে ভালোবাসার জন্য এবং সত্যিকারভাবে অনুসরণ করার জন্য:
রাসূলে আকরাম (সা.) কে ভালোবাসা একজন মুসলমানের জন্য কেবল আবেগের কিংবা জযবার একটি বিষয় নয়। এটি একই সাথে ঈমানী একটি বিষয়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূলকে ভালোবাসা এবং তাঁর অনুসরণ করাকে পরিপূর্ণভাবে ঈমানদার হওয়ার জন্য অন্যতম একটি শর্ত হিসেবে গণ্য করেছেন। রাসূলে আকরাম (সা.) ও এই বিষয়টিকে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। তাঁর প্রতি সত্যিকার ভালোবাসা পোষণ করতে হলে তাকে সত্যিকার অর্থে চিনতে হবে। একটি কথা আছে ‘যতবেশি ভালোভাবে চিনতে পারবে, ততবেশি ভালোবাসা জন্মাবে’। আর কাউকে চেনার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো তার জীবনীকে ভালোভাবে জানা। এখন আসা যাক আমরা তাকে কিভাবে ভালোবাসবো?
- জীবনের সকল ক্ষেত্রে কোন ধরণের দ্বিধাদ্বন্দে না ভুগে তাকে রাহবার হিসেবে গ্রহণ করে।
- তাঁর দেওয়া হুকুম আহকাম সমূহকে জীবনে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করে।
- শুধুমাত্র আকল দ্বারা নয়, একই সাথে আকল এবং অন্তর দিয়ে বিশেষ করে অন্তর দিয়ে ভালোবেসে।
- তাঁর সাথে জীবন্ত একটি সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে।
- সকল ব্যাপারে তাঁর দেখানো পথে কাজ করে।
১০) রাসূলে আকরাম (সা.) এর মতো শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য এবং তার মতো করে শিক্ষা দেওয়ার জন্য:
রাসূল (সা.) বলেছেন ” أدَّبني ربي فأحسن تأديبي ” অর্থাৎ: “আমার রব আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি কত সুন্দর করেই না আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন।”
রাসূলে আকরাম (সা.) কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে শিক্ষা দান করেছেন। ওহী পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাকে বিশেষভাবে গড়ে তুলেছেন এবং নবী বলে ঘোষণা করার পর তাঁর প্রেরিত আয়াত দিয়ে তাকে সেই আলোকে গড়ে তুলেছেন। এই জন্য রাসূলের পবিত্র জীবন হলো ‘কুরআনকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবো?’ এই প্রশ্নের একটি জবাব। সীরাতের মাধ্যমে যদি আমরা এই বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝতে পারি তাহলে আমরা আমাদের নিজেরদেরকে গড়ে তুলতে পারবো এবং আমাদের অধীনস্থদেরকেও কুরআনের শিক্ষার আলোকে গড়ে তুলতে পারবো।
১১) নববী পন্থার পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানার জন্য:
‘আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার’ (সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ) কুরআন ও হাদীস কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব সমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্বকে পালন করার সময় রাসূলে আকরাম (সা.) এর পন্থাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন। কেননা সোজা স্কেল দিয়েই কেবলমাত্র সোজা দাগ টানা সম্ভব। বাঁকা স্কেল দিয়ে নয়। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, হক্বকে বুঝা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, হক্বের পথে থাকাটাও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য হক্বের পথে চলা এবং হক্বকে বুঝার জন্য সীরাতের শিক্ষার্থী হতে হবে। সীরাতের শিক্ষার্থী হওয়া ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। সীরাত আল্লাহর পথকে দেখানোর পাশাপাশি, এই পথে কিভাবে চলতে হবে সেটাও দেখিয়ে দিবে। কোথা থেকে কিভাবে শুরু করতে হবে এবং কোথায় গিয়ে থামতে হবে অর্থাৎ সকল পথ এবং পন্থা সীরাতই আমাদেরকে দেখিয়ে দিবে।
অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ


