যায়নবাদ হল একটি কুমিরের মত। এর উপরের চোয়াল হল আমেরিকা আর নিচের চোয়াল হল ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এর জিহ্বা আর দাত হল ইসরাইল এবং এর শরীর সহ অন্যান্য অঙ্গসমূহ হল মুসলিমদেশ সমূহ সহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী, মিডিয়া বাবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন।
আমি এর উপর এত জোর দিচ্ছি কেন? কারন আমাদের ভুল ধারনা হল, আমরা যায়নবাদ বলতে শুধু ইয়াহুদী জাতি আর ইসরাইলকেই বুঝে থাকি। এই বৃহৎ কুমিরটি আজ বিশ্বকে গ্রাস করে শান্তি শৃঙ্খলাকে হজম করে গাজাতে নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করছে।বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আজ সবচেয়ে বড় বাধা হল এই যায়নবাদ।
আমরা মানবজাতিকে কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারি? কারন Great Middle East Project হল যায়নবাদীদের আকিদার সাথে সম্পর্কিত, এই বিষয়কে তারা তাদের দ্বীনে অংশ বলে মনে করে থাকে। ইসরাইল এর প্রতিটি প্রধানমন্ত্রী এই কথাটি বলে থাকেন যে, ” আমাদের দুটি মানচিত্র রয়েছে একটি হল দেওয়ালে খচিত অপরটি হল আমাদের অন্তরে খচিত মানচিত্র।”
এটা হল ইসরাইল এর পরিকল্পনা।মুসলিম হিসাবে আমরা কি করে থাকি? OIC সহ অন্যান্য সংগঠন এর নামে বিভিন্ন সম্মেলন এর আয়জন করে থাকি এবং সেখানে সারাদিন ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে থাকি এবং সভাশেষে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সারা দুনিয়ায় প্রচার করে থাকি, বলি যে অনতিবিলম্বে ইরাক থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। টেলিভিশন অথবা পত্র পত্রিকায় এই খবর দেখে রকফেলাররা কফির কাপে আয়েশী টান দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক অট্টহাসি দিয়ে বলে তোমরা এই সকল অবাস্তব পরিকল্পনা নিয়েই বসে থাকো আর তোমরা জেনে রাখো যে আমরা আমাদের প্রত্যেকটি পরিকল্পনা পদে পদে বাস্তবায়ন করছি ।
এমনকি ইরানীরা মনে করে যে আমরা নিজেরা পারমানবিক বোমা বানাচ্ছি আমরা আধুনিক অস্ত্র বানাচ্ছি .. ইত্যাদি। সাবধান! এই সকল চিন্তার মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতারিত করবেননা । আপনারা যদি এই পথেই চলতে থাকেন তাহলে শত বছরেও ইসরাইলীদের কিছুই করতে পারবেননা । তাহলে আমরা কি করব ? এর থেকে উত্তরণের একটাই পথ হচ্ছে আমাদেরকে কোরআনের আলোকে নতুন দুনিয়া সৃষ্টি করতে হবে । কারন ইসলাম ছাড়া বিশ্ব শান্তি অসম্ভব ।
আমরা কিভাবে এই নতুন দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করব?
আমি ২৪ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে পার্লামেন্ট থেকে শপথ নেয়ার পর আমি আমার অফিসে আসি। এর পর সর্বপ্রথম আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে । সে আমাকে বলে যে আমরা জানি যে আপনাদের দাওয়াত হচ্ছে ইসলাম আর আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অবশ্যই আমরা এটা পছন্দ করিনি । কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হবে ।
তবে ৬ টি শর্তে আপনার সাথে কাজ করতে পারি ।
১/ ইরানের সাথে আপনাদের বাণিজ্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলারের বেশি করতে পারবেননা।
২/ ইরানে যেতে পারবেননা,
৩/ মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পারবেননা ,
৪/ তুরস্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত আমেরিকা আর ইসরাইলের অংগ সংগঠনগুলোর কাজে বাধা দিতে পারবেননা ।
৫/ তুরস্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত অ্যামেরিকান সামরিক ঘাঁটি সমূহকে বন্ধ করতে পারবেননা ।
৬/ ইরাকের পাইপ লাইন গুলো উন্মুক্ত করতে পারবেননা ।
আমাদের ইতিহাসে আলী পাশার একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে । সেটা হল, আমি যে রাষ্ট্রীয় কাজ করতে যাইনা কেন প্রথমে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে পরামর্শ করি এবং সে যা বলে আমি ঠিক তার বিপরীতটাই করি ।
আমিও ঠিক একই কাজটি করেছি । সে যা বলেছে তার বিপরীত কাজগুলাই করেছি সে বলেছিল ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য করতে পারবেননা অথচ আমি ইরানের শুধুমাত্র গ্যাসের জন্যই ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করি এমনকি আমি সিদ্ধান্ত নেই যে ইরানের সাথে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১০ বিলিয়ন, ২০ বিলিয়ন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই সীমিত থাকবেনা বরং আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জার্মানি এবং ফ্রান্সের সাথে যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে তার চাইতেও বেশি হবে ।
১৫ দিন পর আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ারেম .এম ক্রিস্টিফার এবং আঙ্কারার রাষ্ট্রদূত ক্রসমানার এই দুই ইয়াহুদি শলাপরামর্শ করে, যে যাই হোক না কেন রেফা পার্টি এবং এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে । তাদের সেই ষড়যন্ত্রের দলিলগুলো আমার কাছে আছে ।
আমি এই সকল কথা কেন বলছি ? আমরা দোয়া করি যে ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে । কিন্তু আমরা এটা জানি যে আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য ওরা যে ষড়যন্ত্র করছে আর ইরানের বিপ্লবও যাতে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারে এই জন্য তারা সকল ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাবে এবং আপনারা এদেরকে সুযোগ না দেয়ার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকবেন । কারন যায়নবাদীরা ৫৭০০ বছরেরে একটি পুরাতন সংগঠন ।
আমেরিকার চল্লিশটি রণতরী রয়েছে এবং তারা হুমকি দিয়ে বলে যে ইরানকে ভালভাবে শায়েস্তা করবে । এমতাবস্থায় আমরা কি খালি বসে থাকব? নাকি ৪১ টি রণতরী বানাবো ? আর এগুলো বানাতে যে সময় লাগবে সেই সময়টুকুতে ওরা আমাদের নিঃশ্বেষ করে দিবে আর এই রণতরীগুলো বানানোর জন্য আমরা এত আর্থিক যোগানইবা কোথা থেকে দেবো ? আমরা ৪১ টি বানাতে বানাতে ওরা ৮০ টি বানিয়ে ফেলবে । তাহলে আমরা যায়নবাদকে কিভাবে পরাজিত করব ?

আল্লাহ মহান রাব্বুল আলামিন দয়াবান এবং দয়ালু । প্রযুক্তির উন্নয়ন ইসলামের জন্য একটি অনেক বড় একটি নিয়ামত । আমরা এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করব যে আমাদেরকে আক্রমণ করার সময় তাদের ক্ষেপনাস্ত্র গুলো দিয়েই তাদের রণতরীগুলো ধ্বংস করে দিব । এটা কি সম্ভব নয় ? হ্যাঁ এটা ইলেক্ট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্সে সম্ভব।
আমরা ওজন ছাড়া বিমান তেহরান থেকে তেলআবিবে পাঠাবো আর এখানে বসে দেখবো । এরপর এটি ইসরাইলে অবস্থিত পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানবে । এগুলো কি সম্ভব ? হ্যাঁ সম্ভব আমি এগুলোর প্রটোটাইপ তৈরি করে নিয়ে এসেছি । কারন টেকনোলজির কোন শেষ নেই । ইরানের ইসলামী বিপ্লব নতুন দুনিয়া সূচনার একটি দরজা । তুরস্ক এবং ইরানের সম্পর্ক হচ্ছে একটি বীজের মত । এর চারপাশে রয়েছে D-8 । D-8 এর চারপাশে রয়েছে D-60 । ৬০ টি মুসলিম দেশ এবং নিপীড়িত ১০০ টি দেশ । এরপর রাশিয়া চীন আফ্রিকা ভারত সহ ৬০০ কোটি মানুষকে নিয়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে চাই ।
আমরা কমন মুদ্রা হিসেবে ইসলামী দিনার চালু করবো । ইসলামী জাতিসংঘ এবং নিজস্ব ন্যাটো প্রতিষ্ঠা করব। আর এভাবে আমরা একটি নতুন দুনিয়া গড়ব ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা ইব্রাহিমের ৪৬ আয়াতে বলেছেন।
﴿وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ﴾
” তারা তাদের সব রকমের চক্রান্ত করে দেখেছে কিন্তু তাদের প্রত্যেকটি চক্রান্তের জবাব আল্লাহর কাছে ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন পর্যায়ের ছিল যাতে পাহাড় টলে যেতো৷”
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন
إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ
“যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তাহলে কেও তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না।”
আমি এর আগে ইরানে D-8 খুলেছিলাম । এখন আমি আসছি দুটি লক্ষ্য নিয়ে ।
১/ ইরানের বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য । যদি আত্মবিশ্বাস রাখেন আপনারাই বিজয়ী হবেন । আল্লাহ আপনাদের সহায় হবেন ।
২/ ইরান এবং তুরস্ক নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে ইনশাআল্লাহ্‌ ।
(২০০৯ সালে ইরান সফরে দেওয়া বক্তব্যের আংশিক অনুবাদ)
অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ
১৬১৩ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান

প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান

জন্ম
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯২৬ সালের ২৬ অক্টোবর তুরস্কের সিনপ শহরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মেহমেদ সাবরি এরবাকান। তিনি ছিলেন তুরস্ক সরকারের একজন বিচারপতি। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি বিভিন্ন শহরে বদলি হন। ফলে প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও বিভিন্ন শহরে পরিবারের সাথে বসবাস করতে হয়।

শিক্ষা জীবন
প্রফেসর এরবাকান কায়সেরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। পাশাপাশি গৃহশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ইসলামী শিক্ষাও গ্রহণ করতে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ইস্তাম্বুলে তার মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু করেন। প্রখর মেধা ও অসীম প্রতিভা দেখে শিক্ষকগণ তাকে 'দরিয়ায়ে নাজমুদ্দিন' (জ্ঞানের সাগর) উপাধিতে ভূষিত করেন। ভালো ফলাফলধারী ছাত্র-ছাত্রীরা কোনো প্রকার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতো। কিন্তু প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সমগ্র তুরস্কে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তার পড়াশোনা শুরু করেন। তদানীন্তন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য নামাজের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।
তিনি ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন করে সেখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করার মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। অতঃপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। শুধুমাত্র PhD. ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার সুযোগ পেতো না, কিন্তু প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানকে ক্লাস নেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষকতাকালীন এ সময়েই তিনি তার PhD'র থিসিস তৈরি করেন। উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে ১৯৫১ সালে তিনি জার্মানির Aachen Technical University-তে গিয়ে পৌঁছেন। সেখানকার প্রখ্যাত জার্মানবিজ্ঞানী স্কিমিদ-এর সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাজও করেন। মাত্র দু'বছরের ব্যবধানে ৩টি থিসিস পেপার তৈরি করে PhD ডিগ্রি লাভ করেন। তার থিসিসের বিষয় ছিলো 'কীভাবে কম জ্বালানি ব্যয় সম্পন্ন ইঞ্জিন উদ্ভাবন করা যায়'। তিনি তার গবেষণায় সফল হন। তার থিসিস পেপার কটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নালে প্রকাশিত হয়। জার্মানির বিখ্যাত ইঞ্জিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান DEUTZ-এর ডিরেক্টর প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ডক্টর ফ্ল্যাটস তাকে Leopard Tank-এর গবেষণার জন্য আহ্বান জানান। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে Leopard Tank- কে এক অনন্যসাধারণ Tank-এ পরিণত করেন। জার্মানিতে বিভিন্ন গবেষণা এবং কর্মব্যস্ত সময় পার করে পুনরায় তুরস্কে ফিরে আসেন। আবারও তিনি ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তিনি এই পদ লাভের গৌরব অর্জন করেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে প্রথম ৬ মাস এবং লেফটেনেন্ট হিসেবে পরবর্তী ৬ মাস কাজ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত একটি সেনাবাহিনীর কেমন অস্ত্রের প্রয়োজন, এমন একটি তালিকাও প্রস্তুত করেন। আমেরিকার জনৈক ক্যাপ্টেন তালিকাটি দেখে এরবাকানের সাথে দেখা করতে চান। ক্যাপ্টেন তাকে প্রশ্ন করেন, "কেন আপনি এমন অস্ত্র তৈরির কথা ভাবছেন? এসব অস্ত্রের ব্যাপারে তুরস্ক সরকার আমেরিকার সাথে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ।" জবাবে এরবাকান বলেন, "এসব অস্ত্র উৎপাদন করার ক্ষমতা আমেরিকার থাকলে আমাদের থাকবে না কেন?"
তখন তুরস্কে ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিলো। ফলে, এরবাকানের পিতা গৃহশিক্ষক রেখে শিশুকাল থেকেই তাকে ইসলামী ভাবধারায় গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে ইস্তাম্বুলের প্রখ্যাত আলেম মেহমেদ জাহিদ কতকুর সান্নিধ্যে ইসলামী শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। এরবাকানের বক্তব্য জুড়ে থাকতো কোরআন-হাদীসের জ্ঞান ও ইসলামের সোনালী ইতিহাস।

কর্মজীবন
সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি 'গুমুশ মোটর' নামে একটি ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তুরস্কের ইতিহাসে এটিই ছিলো সর্বপ্রথম দেশীয় কোনো ইঞ্জিন কোম্পানি। তার জীবনের বড় একটি সংগ্রাম ছিলো এটি। কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় তিনি অভ্যন্তরীণ ইহুদী লবির ষড়যন্ত্রের শিকার হন। অনেক চড়াই-উত্রাই- এর মধ্যে দিয়ে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কোনো এক প্রোগ্রামে এত বাধা-বিপত্তির কথা শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দরেস আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, "আগে এ সম্পর্কে জানতে পারলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়ই এটি করে দিতাম।" সে প্রোগ্রামে এরবাকান শিল্পায়নের উপর একটি যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। তার এই বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আদনান মেন্দরেস তাঁকে Automobile ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। তিনি অল্পদিনের মধ্যেই দেভরিম নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর ক'দিন পরই এক সামরিক অভ্যুত্থানে আদনান মেন্দরেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সামরিক সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সময় এরবাকান দেখতে পান-দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ যেন কোনোভাবেই অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য The Union of Chambers and Commodity Exchange of Turkey এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে যাচ্ছে। এটি অবসানের জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি হওয়ার পরপরই সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেন। ফলে, অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক শক্তির জোরে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন।

রাজনৈতিক জীবন
১৯৬৯ সালে প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান কোনিয়া থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অসাধারণ এক বক্তা ছিলেন। তার বক্তব্যে সবাই বিমোহিত হতো। অল্প সময়েই তিনি একজন সুবক্তা হিসেবে সবার মনে জায়গা করে নেন। সমগ্র তুরস্কে 'ইসলাম ও বিজ্ঞান' শিরোনামে তিনি কনফারেন্স করতে শুরু করেন। (তার এ বক্তব্য বাংলা ভাষায় 'ইসলাম ও জ্ঞান' শিরোনামে অনূদিত হয়েছে)। তার শিক্ষক প্রখ্যাত আলেম মেহমেদ জাহিদ কতকু এবং অন্যান্য যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের পরামর্শে গঠন করেন 'মিল্লি গরুশ'। এর মাধ্যমেই তুরস্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী আন্দোলনের দুর্নিবার যাত্রা শুরু হয়।

মিল্লি গরুশ
তুরস্কে ইসলামের নামে যেকোনো ধরনের সংগঠন করা ছিলো নিষিদ্ধ। এ কারণে তিনি প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে ইসলাম বোঝাতেন। 'মিল্লি গরুশ' তেমনিই একটি বাক্যাংশ। 'মিল্লি গরুশ' অর্থ-জাতীয় ভিশন। অবশ্য, তিনি মিল্লি গরুশ দ্বারা মুসলিম মিল্লাতের ভিশনকেই বুঝিয়েছেন।

মিল্লি গরুশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:
• আধ্যাত্মিক উন্নতি। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া জাতিকে পুনরায় ইসলামের দিকে আহ্বান এবং তাদেরকে যোগ্য মুসলিম রূপে গড়ে তোলা। বিশেষ করে যুবকদের মাঝে ইসলামের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা।
• অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। আমেরিকা ও রাশিয়ার অনুকরণ না করে স্বতন্ত্রভাবে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নতি করে এক নতুন তুরস্ক গঠন। • ইসলামী ইউনিয়ন গড়ে তোলা এবং সব মুসলিমকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে সাম্রাজ্যবাদীদের কালো হাত থেকে রক্ষা করা।
'মিল্লি গরুশ' প্রতিষ্ঠার পর তার রাজনৈতিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন 'মিল্লি নিজাম পার্টি'। কিন্তু এ দলটিকে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে নিষিদ্ধ করা হয়। অতঃপর তিনি গঠন করেন 'মিল্লি সালামেত পার্টি'। এই দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪৮টি আসন লাভ করে এবং কোয়ালিশন করে শর্তভিত্তিক সরকার গঠন করে। এরবাকান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীনির্বাচিত হন (অর্থনীতি বিষয়ক)। এছাড়া তার দল থেকে মন্ত্রীসভায় শিল্পমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও মনোনীত হয়।
এ কোয়ালিশন সরকারের সময় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার অপরাধে বন্দি হওয়া ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাইপ্রাসকে গ্রীস থেকে মুক্ত করে তার্কিশ সাইপ্রাস গঠন করা ও মুসলিমদেরকে জুলুমমুক্ত করা, নতুন করে মাদ্রাসা শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা, হাজার হাজার কোরআন কোর্স চালু করা, মাদ্রাসার ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসির রিসালা-ই-নূরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা, সেনানিবাসসহ সব সরকারি অফিস-আদালতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা-সহ ইসলামী বই-পুস্তক প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। অশ্লীলতা-বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করা হয়। এছাড়া ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনি ২৭০টি ভারী শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বিমান তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তার এই উদ্যম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার সাথে কোয়ালিশনে থাকা অন্য দলকে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে তুরস্কের কোনিয়াতে কুদস দিবসের সমাবেশ পালনের অভিযোগে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে সামরিক শাসকরা ক্যু করে এই পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে। সে সাথে সব রাজনৈতিক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়। এরবাকানকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়।
তার ওপর এসব জুলুম-নির্যাতন এবং রাজনীতিতে তাকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ১৯৮৩ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তিলাভের পর দলের অন্য নেতৃবৃন্দদের দিয়ে তিনি রেফাহ পার্টি প্রতিষ্ঠা করান। এ পার্টি স্বল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তিনি আবারও রাজনীতিতে আসেন। রেফাহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পরই রেফাহ পার্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরই ধারাবাহিকতায়১৯৯৪ সালের স্থানীয় মেয়র নির্বাচনে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারাসহ অনেক সিটি কর্পোরেশনে তার দল বিজয় লাভ করে। এ জয়ের ধারাবাহিকতায় নতুন উদ্যোমে কাজ করে 'ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা' এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেন। কিন্তু ১১ মাস সরকার পরিচালনার পর এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান তার ১১ মাসের শাসনামলে D-8 প্রতিষ্ঠা করেন। সুদের হার কমিয়ে আনেন। মাত্র ১১ মাসের শাসনামলে তিনি দেশকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। তুরস্কে শিল্পায়নের গতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের মধ্যে তুরস্কের শিল্পায়ন জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন।
মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন। তার উত্তরোত্তর সফলতায় আতঙ্কিত হয়ে ইহুদীরা রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রোপাগাণ্ডা চালায়। তার পার্টি 'শরীয়ত কায়েম করবে' এই অভিযোগে তাকে অপসারণের জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এ অবস্থায় প্রফেসর এরবাকান এ শর্তে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন যে, তার কোয়ালিশন পার্টির নেত্রী তানসুকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু ফ্রি ম্যাসন ও ইহুদীদের ধারক-বাহক সোলাইমান দেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেয়। এভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি প্রফেসর এরবাকানকেও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর মিল্লি গরুশের অপর নেতা রেজাই কুতানের মাধ্যমে ফজিলত পার্টি গঠন করা হয়। এই পার্টিকেও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০১ সালের ২০ জুলাই সাদেত পার্টি তার যাত্রা শুরু করে। কতিপয় নেতা মিল্লি গরুশে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব দাবি করে। তারা মূল আন্দোলনেও লিবারেল সেক্যুলারিজম প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালায়। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে মিল্লি গরুশকে ভেঙ্গে তারা গঠন করেএকে পার্টি। মিল্লি গরুশ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সা'দাত পার্টি রয়ে যায় মূলধারার ইসলামী আন্দোলন হিসেবে। সাদেত পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ৮৪ বছর বয়সে ২০১০ সালে প্রফেসর এরবাকানকে পুনরায় সাদেত পার্টির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শত প্রতিকূলতার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাদেত পার্টি এখনও তাদের এ কর্মস্পৃহা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে দলটি তুরস্কের ৪র্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি।

মৃত্যু
৮৫ বছর বয়সে ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান মহান এ নেতা। তার জানাযায় এত পরিমাণ লোকের সমাগম হয়েছিলো, ইস্তাম্বুলের ৩০০০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এত লোকের সমাগম হয়নি। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে। মিডিয়ার ভাষ্য মতে, তার জানাযায় ৩৫-৪০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিলো। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর সরকার যেন তাকে বিশেষ কোনো সম্মানে দাফন না করে।
Picture of প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান

প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান

জন্ম
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯২৬ সালের ২৬ অক্টোবর তুরস্কের সিনপ শহরের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মেহমেদ সাবরি এরবাকান। তিনি ছিলেন তুরস্ক সরকারের একজন বিচারপতি। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তিনি বিভিন্ন শহরে বদলি হন। ফলে প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও বিভিন্ন শহরে পরিবারের সাথে বসবাস করতে হয়।

শিক্ষা জীবন
প্রফেসর এরবাকান কায়সেরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। পাশাপাশি গৃহশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ইসলামী শিক্ষাও গ্রহণ করতে থাকেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ইস্তাম্বুলে তার মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু করেন। প্রখর মেধা ও অসীম প্রতিভা দেখে শিক্ষকগণ তাকে 'দরিয়ায়ে নাজমুদ্দিন' (জ্ঞানের সাগর) উপাধিতে ভূষিত করেন। ভালো ফলাফলধারী ছাত্র-ছাত্রীরা কোনো প্রকার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতো। কিন্তু প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সমগ্র তুরস্কে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তার পড়াশোনা শুরু করেন। তদানীন্তন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য নামাজের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।
তিনি ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন করে সেখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করার মধ্যদিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। অতঃপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। শুধুমাত্র PhD. ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার সুযোগ পেতো না, কিন্তু প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানকে ক্লাস নেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষকতাকালীন এ সময়েই তিনি তার PhD'র থিসিস তৈরি করেন। উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে ১৯৫১ সালে তিনি জার্মানির Aachen Technical University-তে গিয়ে পৌঁছেন। সেখানকার প্রখ্যাত জার্মানবিজ্ঞানী স্কিমিদ-এর সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাজও করেন। মাত্র দু'বছরের ব্যবধানে ৩টি থিসিস পেপার তৈরি করে PhD ডিগ্রি লাভ করেন। তার থিসিসের বিষয় ছিলো 'কীভাবে কম জ্বালানি ব্যয় সম্পন্ন ইঞ্জিন উদ্ভাবন করা যায়'। তিনি তার গবেষণায় সফল হন। তার থিসিস পেপার কটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নালে প্রকাশিত হয়। জার্মানির বিখ্যাত ইঞ্জিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান DEUTZ-এর ডিরেক্টর প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ডক্টর ফ্ল্যাটস তাকে Leopard Tank-এর গবেষণার জন্য আহ্বান জানান। তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে Leopard Tank- কে এক অনন্যসাধারণ Tank-এ পরিণত করেন। জার্মানিতে বিভিন্ন গবেষণা এবং কর্মব্যস্ত সময় পার করে পুনরায় তুরস্কে ফিরে আসেন। আবারও তিনি ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তিনি এই পদ লাভের গৌরব অর্জন করেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট হিসেবে প্রথম ৬ মাস এবং লেফটেনেন্ট হিসেবে পরবর্তী ৬ মাস কাজ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত একটি সেনাবাহিনীর কেমন অস্ত্রের প্রয়োজন, এমন একটি তালিকাও প্রস্তুত করেন। আমেরিকার জনৈক ক্যাপ্টেন তালিকাটি দেখে এরবাকানের সাথে দেখা করতে চান। ক্যাপ্টেন তাকে প্রশ্ন করেন, "কেন আপনি এমন অস্ত্র তৈরির কথা ভাবছেন? এসব অস্ত্রের ব্যাপারে তুরস্ক সরকার আমেরিকার সাথে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ।" জবাবে এরবাকান বলেন, "এসব অস্ত্র উৎপাদন করার ক্ষমতা আমেরিকার থাকলে আমাদের থাকবে না কেন?"
তখন তুরস্কে ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিলো। ফলে, এরবাকানের পিতা গৃহশিক্ষক রেখে শিশুকাল থেকেই তাকে ইসলামী ভাবধারায় গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে ইস্তাম্বুলের প্রখ্যাত আলেম মেহমেদ জাহিদ কতকুর সান্নিধ্যে ইসলামী শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। এরবাকানের বক্তব্য জুড়ে থাকতো কোরআন-হাদীসের জ্ঞান ও ইসলামের সোনালী ইতিহাস।

কর্মজীবন
সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি 'গুমুশ মোটর' নামে একটি ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তুরস্কের ইতিহাসে এটিই ছিলো সর্বপ্রথম দেশীয় কোনো ইঞ্জিন কোম্পানি। তার জীবনের বড় একটি সংগ্রাম ছিলো এটি। কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় তিনি অভ্যন্তরীণ ইহুদী লবির ষড়যন্ত্রের শিকার হন। অনেক চড়াই-উত্রাই- এর মধ্যে দিয়ে এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কোনো এক প্রোগ্রামে এত বাধা-বিপত্তির কথা শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দরেস আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, "আগে এ সম্পর্কে জানতে পারলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়ই এটি করে দিতাম।" সে প্রোগ্রামে এরবাকান শিল্পায়নের উপর একটি যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। তার এই বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আদনান মেন্দরেস তাঁকে Automobile ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। তিনি অল্পদিনের মধ্যেই দেভরিম নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর ক'দিন পরই এক সামরিক অভ্যুত্থানে আদনান মেন্দরেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সামরিক সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
ইঞ্জিন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার সময় এরবাকান দেখতে পান-দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ যেন কোনোভাবেই অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য The Union of Chambers and Commodity Exchange of Turkey এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সাথে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে যাচ্ছে। এটি অবসানের জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি হওয়ার পরপরই সেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেন। ফলে, অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক শক্তির জোরে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দেন।

রাজনৈতিক জীবন
১৯৬৯ সালে প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান কোনিয়া থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অসাধারণ এক বক্তা ছিলেন। তার বক্তব্যে সবাই বিমোহিত হতো। অল্প সময়েই তিনি একজন সুবক্তা হিসেবে সবার মনে জায়গা করে নেন। সমগ্র তুরস্কে 'ইসলাম ও বিজ্ঞান' শিরোনামে তিনি কনফারেন্স করতে শুরু করেন। (তার এ বক্তব্য বাংলা ভাষায় 'ইসলাম ও জ্ঞান' শিরোনামে অনূদিত হয়েছে)। তার শিক্ষক প্রখ্যাত আলেম মেহমেদ জাহিদ কতকু এবং অন্যান্য যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের পরামর্শে গঠন করেন 'মিল্লি গরুশ'। এর মাধ্যমেই তুরস্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী আন্দোলনের দুর্নিবার যাত্রা শুরু হয়।

মিল্লি গরুশ
তুরস্কে ইসলামের নামে যেকোনো ধরনের সংগঠন করা ছিলো নিষিদ্ধ। এ কারণে তিনি প্রতীকী শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে ইসলাম বোঝাতেন। 'মিল্লি গরুশ' তেমনিই একটি বাক্যাংশ। 'মিল্লি গরুশ' অর্থ-জাতীয় ভিশন। অবশ্য, তিনি মিল্লি গরুশ দ্বারা মুসলিম মিল্লাতের ভিশনকেই বুঝিয়েছেন।

মিল্লি গরুশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:
• আধ্যাত্মিক উন্নতি। ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া জাতিকে পুনরায় ইসলামের দিকে আহ্বান এবং তাদেরকে যোগ্য মুসলিম রূপে গড়ে তোলা। বিশেষ করে যুবকদের মাঝে ইসলামের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা।
• অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। আমেরিকা ও রাশিয়ার অনুকরণ না করে স্বতন্ত্রভাবে শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নতি করে এক নতুন তুরস্ক গঠন। • ইসলামী ইউনিয়ন গড়ে তোলা এবং সব মুসলিমকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে সাম্রাজ্যবাদীদের কালো হাত থেকে রক্ষা করা।
'মিল্লি গরুশ' প্রতিষ্ঠার পর তার রাজনৈতিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন 'মিল্লি নিজাম পার্টি'। কিন্তু এ দলটিকে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে নিষিদ্ধ করা হয়। অতঃপর তিনি গঠন করেন 'মিল্লি সালামেত পার্টি'। এই দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪৮টি আসন লাভ করে এবং কোয়ালিশন করে শর্তভিত্তিক সরকার গঠন করে। এরবাকান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীনির্বাচিত হন (অর্থনীতি বিষয়ক)। এছাড়া তার দল থেকে মন্ত্রীসভায় শিল্পমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও মনোনীত হয়।
এ কোয়ালিশন সরকারের সময় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার অপরাধে বন্দি হওয়া ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাইপ্রাসকে গ্রীস থেকে মুক্ত করে তার্কিশ সাইপ্রাস গঠন করা ও মুসলিমদেরকে জুলুমমুক্ত করা, নতুন করে মাদ্রাসা শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করা, হাজার হাজার কোরআন কোর্স চালু করা, মাদ্রাসার ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেওয়া, বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসির রিসালা-ই-নূরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা, সেনানিবাসসহ সব সরকারি অফিস-আদালতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা-সহ ইসলামী বই-পুস্তক প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। অশ্লীলতা-বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করা হয়। এছাড়া ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনি ২৭০টি ভারী শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে বিমান তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তার এই উদ্যম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার সাথে কোয়ালিশনে থাকা অন্য দলকে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে তুরস্কের কোনিয়াতে কুদস দিবসের সমাবেশ পালনের অভিযোগে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে সামরিক শাসকরা ক্যু করে এই পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে। সে সাথে সব রাজনৈতিক দলকেও নিষিদ্ধ করা হয়। এরবাকানকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ এবং গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়।
তার ওপর এসব জুলুম-নির্যাতন এবং রাজনীতিতে তাকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ১৯৮৩ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্তিলাভের পর দলের অন্য নেতৃবৃন্দদের দিয়ে তিনি রেফাহ পার্টি প্রতিষ্ঠা করান। এ পার্টি স্বল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৮৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে ড. নাজমুদ্দিন এরবাকানের ওপর রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তিনি আবারও রাজনীতিতে আসেন। রেফাহ পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পরই রেফাহ পার্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরই ধারাবাহিকতায়১৯৯৪ সালের স্থানীয় মেয়র নির্বাচনে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারাসহ অনেক সিটি কর্পোরেশনে তার দল বিজয় লাভ করে। এ জয়ের ধারাবাহিকতায় নতুন উদ্যোমে কাজ করে 'ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা' এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেন। কিন্তু ১১ মাস সরকার পরিচালনার পর এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান তার ১১ মাসের শাসনামলে D-8 প্রতিষ্ঠা করেন। সুদের হার কমিয়ে আনেন। মাত্র ১১ মাসের শাসনামলে তিনি দেশকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। তুরস্কে শিল্পায়নের গতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের মধ্যে তুরস্কের শিল্পায়ন জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন।
মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন। তার উত্তরোত্তর সফলতায় আতঙ্কিত হয়ে ইহুদীরা রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রোপাগাণ্ডা চালায়। তার পার্টি 'শরীয়ত কায়েম করবে' এই অভিযোগে তাকে অপসারণের জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এ অবস্থায় প্রফেসর এরবাকান এ শর্তে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন যে, তার কোয়ালিশন পার্টির নেত্রী তানসুকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু ফ্রি ম্যাসন ও ইহুদীদের ধারক-বাহক সোলাইমান দেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেয়। এভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি প্রফেসর এরবাকানকেও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর মিল্লি গরুশের অপর নেতা রেজাই কুতানের মাধ্যমে ফজিলত পার্টি গঠন করা হয়। এই পার্টিকেও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে নিষিদ্ধ করা হয়।
২০০১ সালের ২০ জুলাই সাদেত পার্টি তার যাত্রা শুরু করে। কতিপয় নেতা মিল্লি গরুশে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব দাবি করে। তারা মূল আন্দোলনেও লিবারেল সেক্যুলারিজম প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালায়। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে মিল্লি গরুশকে ভেঙ্গে তারা গঠন করেএকে পার্টি। মিল্লি গরুশ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সা'দাত পার্টি রয়ে যায় মূলধারার ইসলামী আন্দোলন হিসেবে। সাদেত পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ৮৪ বছর বয়সে ২০১০ সালে প্রফেসর এরবাকানকে পুনরায় সাদেত পার্টির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শত প্রতিকূলতার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সাদেত পার্টি এখনও তাদের এ কর্মস্পৃহা ধরে রেখে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে দলটি তুরস্কের ৪র্থ বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি।

মৃত্যু
৮৫ বছর বয়সে ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবাইকে কাঁদিয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান মহান এ নেতা। তার জানাযায় এত পরিমাণ লোকের সমাগম হয়েছিলো, ইস্তাম্বুলের ৩০০০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এত লোকের সমাগম হয়নি। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই মানুষ তার জানাযায় অংশগ্রহণ করে। মিডিয়ার ভাষ্য মতে, তার জানাযায় ৩৫-৪০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিলো। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর সরকার যেন তাকে বিশেষ কোনো সম্মানে দাফন না করে।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top