যায়নবাদ হল একটি কুমিরের মত। এর উপরের চোয়াল হল আমেরিকা আর নিচের চোয়াল হল ইউরোপিয় ইউনিয়ন। এর জিহ্বা আর দাত হল ইসরাইল এবং এর শরীর সহ অন্যান্য অঙ্গসমূহ হল মুসলিমদেশ সমূহ সহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী, মিডিয়া বাবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন।
আমি এর উপর এত জোর দিচ্ছি কেন? কারন আমাদের ভুল ধারনা হল, আমরা যায়নবাদ বলতে শুধু ইয়াহুদী জাতি আর ইসরাইলকেই বুঝে থাকি। এই বৃহৎ কুমিরটি আজ বিশ্বকে গ্রাস করে শান্তি শৃঙ্খলাকে হজম করে গাজাতে নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করছে।বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে আজ সবচেয়ে বড় বাধা হল এই যায়নবাদ।
আমরা মানবজাতিকে কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারি? কারন Great Middle East Project হল যায়নবাদীদের আকিদার সাথে সম্পর্কিত, এই বিষয়কে তারা তাদের দ্বীনে অংশ বলে মনে করে থাকে। ইসরাইল এর প্রতিটি প্রধানমন্ত্রী এই কথাটি বলে থাকেন যে, ” আমাদের দুটি মানচিত্র রয়েছে একটি হল দেওয়ালে খচিত অপরটি হল আমাদের অন্তরে খচিত মানচিত্র।”
এটা হল ইসরাইল এর পরিকল্পনা।মুসলিম হিসাবে আমরা কি করে থাকি? OIC সহ অন্যান্য সংগঠন এর নামে বিভিন্ন সম্মেলন এর আয়জন করে থাকি এবং সেখানে সারাদিন ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে থাকি এবং সভাশেষে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সারা দুনিয়ায় প্রচার করে থাকি, বলি যে অনতিবিলম্বে ইরাক থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে। টেলিভিশন অথবা পত্র পত্রিকায় এই খবর দেখে রকফেলাররা কফির কাপে আয়েশী টান দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক অট্টহাসি দিয়ে বলে তোমরা এই সকল অবাস্তব পরিকল্পনা নিয়েই বসে থাকো আর তোমরা জেনে রাখো যে আমরা আমাদের প্রত্যেকটি পরিকল্পনা পদে পদে বাস্তবায়ন করছি ।
এমনকি ইরানীরা মনে করে যে আমরা নিজেরা পারমানবিক বোমা বানাচ্ছি আমরা আধুনিক অস্ত্র বানাচ্ছি .. ইত্যাদি। সাবধান! এই সকল চিন্তার মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতারিত করবেননা । আপনারা যদি এই পথেই চলতে থাকেন তাহলে শত বছরেও ইসরাইলীদের কিছুই করতে পারবেননা । তাহলে আমরা কি করব ? এর থেকে উত্তরণের একটাই পথ হচ্ছে আমাদেরকে কোরআনের আলোকে নতুন দুনিয়া সৃষ্টি করতে হবে । কারন ইসলাম ছাড়া বিশ্ব শান্তি অসম্ভব ।
আমরা কিভাবে এই নতুন দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করব?
আমি ২৪ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে পার্লামেন্ট থেকে শপথ নেয়ার পর আমি আমার অফিসে আসি। এর পর সর্বপ্রথম আমেরিকার রাষ্ট্রদূত আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে । সে আমাকে বলে যে আমরা জানি যে আপনাদের দাওয়াত হচ্ছে ইসলাম আর আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অবশ্যই আমরা এটা পছন্দ করিনি । কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের কাজ করতে হবে ।
তবে ৬ টি শর্তে আপনার সাথে কাজ করতে পারি ।
১/ ইরানের সাথে আপনাদের বাণিজ্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলারের বেশি করতে পারবেননা।
২/ ইরানে যেতে পারবেননা,
৩/ মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পারবেননা ,
৪/ তুরস্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত আমেরিকা আর ইসরাইলের অংগ সংগঠনগুলোর কাজে বাধা দিতে পারবেননা ।
৫/ তুরস্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত অ্যামেরিকান সামরিক ঘাঁটি সমূহকে বন্ধ করতে পারবেননা ।
৬/ ইরাকের পাইপ লাইন গুলো উন্মুক্ত করতে পারবেননা ।
আমাদের ইতিহাসে আলী পাশার একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে । সেটা হল, আমি যে রাষ্ট্রীয় কাজ করতে যাইনা কেন প্রথমে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে পরামর্শ করি এবং সে যা বলে আমি ঠিক তার বিপরীতটাই করি ।
আমিও ঠিক একই কাজটি করেছি । সে যা বলেছে তার বিপরীত কাজগুলাই করেছি সে বলেছিল ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য করতে পারবেননা অথচ আমি ইরানের শুধুমাত্র গ্যাসের জন্যই ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করি এমনকি আমি সিদ্ধান্ত নেই যে ইরানের সাথে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১০ বিলিয়ন, ২০ বিলিয়ন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই সীমিত থাকবেনা বরং আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জার্মানি এবং ফ্রান্সের সাথে যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে তার চাইতেও বেশি হবে ।
১৫ দিন পর আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ারেম .এম ক্রিস্টিফার এবং আঙ্কারার রাষ্ট্রদূত ক্রসমানার এই দুই ইয়াহুদি শলাপরামর্শ করে, যে যাই হোক না কেন রেফা পার্টি এবং এরবাকানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে । তাদের সেই ষড়যন্ত্রের দলিলগুলো আমার কাছে আছে ।
আমি এই সকল কথা কেন বলছি ? আমরা দোয়া করি যে ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে । কিন্তু আমরা এটা জানি যে আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য ওরা যে ষড়যন্ত্র করছে আর ইরানের বিপ্লবও যাতে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারে এই জন্য তারা সকল ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাবে এবং আপনারা এদেরকে সুযোগ না দেয়ার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকবেন । কারন যায়নবাদীরা ৫৭০০ বছরেরে একটি পুরাতন সংগঠন ।
আমেরিকার চল্লিশটি রণতরী রয়েছে এবং তারা হুমকি দিয়ে বলে যে ইরানকে ভালভাবে শায়েস্তা করবে । এমতাবস্থায় আমরা কি খালি বসে থাকব? নাকি ৪১ টি রণতরী বানাবো ? আর এগুলো বানাতে যে সময় লাগবে সেই সময়টুকুতে ওরা আমাদের নিঃশ্বেষ করে দিবে আর এই রণতরীগুলো বানানোর জন্য আমরা এত আর্থিক যোগানইবা কোথা থেকে দেবো ? আমরা ৪১ টি বানাতে বানাতে ওরা ৮০ টি বানিয়ে ফেলবে । তাহলে আমরা যায়নবাদকে কিভাবে পরাজিত করব ?
আল্লাহ মহান রাব্বুল আলামিন দয়াবান এবং দয়ালু । প্রযুক্তির উন্নয়ন ইসলামের জন্য একটি অনেক বড় একটি নিয়ামত । আমরা এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করব যে আমাদেরকে আক্রমণ করার সময় তাদের ক্ষেপনাস্ত্র গুলো দিয়েই তাদের রণতরীগুলো ধ্বংস করে দিব । এটা কি সম্ভব নয় ? হ্যাঁ এটা ইলেক্ট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক্সে সম্ভব।
আমরা ওজন ছাড়া বিমান তেহরান থেকে তেলআবিবে পাঠাবো আর এখানে বসে দেখবো । এরপর এটি ইসরাইলে অবস্থিত পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানবে । এগুলো কি সম্ভব ? হ্যাঁ সম্ভব আমি এগুলোর প্রটোটাইপ তৈরি করে নিয়ে এসেছি । কারন টেকনোলজির কোন শেষ নেই । ইরানের ইসলামী বিপ্লব নতুন দুনিয়া সূচনার একটি দরজা । তুরস্ক এবং ইরানের সম্পর্ক হচ্ছে একটি বীজের মত । এর চারপাশে রয়েছে D-8 । D-8 এর চারপাশে রয়েছে D-60 । ৬০ টি মুসলিম দেশ এবং নিপীড়িত ১০০ টি দেশ । এরপর রাশিয়া চীন আফ্রিকা ভারত সহ ৬০০ কোটি মানুষকে নিয়ে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে চাই ।
আমরা কমন মুদ্রা হিসেবে ইসলামী দিনার চালু করবো । ইসলামী জাতিসংঘ এবং নিজস্ব ন্যাটো প্রতিষ্ঠা করব। আর এভাবে আমরা একটি নতুন দুনিয়া গড়ব ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা ইব্রাহিমের ৪৬ আয়াতে বলেছেন।
﴿وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ﴾
” তারা তাদের সব রকমের চক্রান্ত করে দেখেছে কিন্তু তাদের প্রত্যেকটি চক্রান্তের জবাব আল্লাহর কাছে ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন পর্যায়ের ছিল যাতে পাহাড় টলে যেতো৷”
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন
إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ
“যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তাহলে কেও তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না।”
আমি এর আগে ইরানে D-8 খুলেছিলাম । এখন আমি আসছি দুটি লক্ষ্য নিয়ে ।
১/ ইরানের বিপ্লবের অভীষ্ট লক্ষ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য । যদি আত্মবিশ্বাস রাখেন আপনারাই বিজয়ী হবেন । আল্লাহ আপনাদের সহায় হবেন ।
২/ ইরান এবং তুরস্ক নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে ইনশাআল্লাহ্ ।
(২০০৯ সালে ইরান সফরে দেওয়া বক্তব্যের আংশিক অনুবাদ)
অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ