ইসলামী জ্ঞানসমূহ আজ বড় বড় কিছু সমস্যার সম্মুখীন। সমস্যাগুলো হলো: কার্যকারিতা, সামগ্রিকতা এবং উসূল ও মেথডোলজির সমস্যা। এখানে উসূল দ্বারা শুধুমাত্র উসূলে ফিকহ-ই নয়, সাধারণভাবে দ্বীনকে বুঝার উসূলের কথা বলা হয়েছে।
‘ইসলামী জ্ঞানসমূহ’ পরিভাষাটিকে সময়ের ব্যবধানে সংকীর্ণ করে শুধুমাত্র কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এটিকে কেবলমাত্র তাফসীর, হাদীস, কালাম, ফিকহ এবং তাসাউফের মতো জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলা হয়েছে এবং দ্বীনী জ্ঞান-প্রাকৃতিক জ্ঞান, আকলী জ্ঞান-নাকলী জ্ঞান হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করে বিভাজিত করে ফেলা হয়েছে। যার ফলে এটির সামগ্রিকতায় ব্যাঘাত ঘটেছে। অথচ তানযিল এবং তানভীন, আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ এবং আফাক ও আনফুসে অবস্থিত আয়াতসমূহকে পরস্পর থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়।
আমাদের একাডেমিক ধারা বিশেষায়িতকরণের (স্পেশালাইজেশন) নামে দ্বীনী জ্ঞান হিসেবে বিভাজিত এ সংকীর্ণ ক্ষেত্রকে আরও বেশি সংকীর্ণ করে ফেলেছে। এ দৃষ্টিভঙ্গী ইসলামী চিন্তাকে ইন্টার ডিসিপ্লিনার একটি পদ্ধতির মাধ্যমে সামগ্রিক একটি মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত করছে কিংবা সামগ্রিক একটি অধ্যয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। অথচ ইসলামে জ্ঞানের ধারায় সকল প্রকার জ্ঞানই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত, জ্ঞানসমূহ একে অপর থেকে আলাদা নয় বরং তাদের মধ্যে একই সাথে সম্পৃক্ততা ও তারতীব রয়েছে।
প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে মুসলিম আলেম ও দার্শনিকগণ জ্ঞানের শ্রেণিবিন্যাস এবং মারাতিপ সংশ্লিষ্ট সকল জ্ঞানকে অভিন্ন একটি গ্রাউন্ডে সিস্টেম্যাটিক একটি তারতীবের মধ্যে একত্রিত করে এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ আমাদের জন্য মিরাস হিসেবে রেখে গিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাদের রেখে যাওয়া এ সকল গ্রন্থ মূল্যায়ন করার সময় ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ ও শর্তসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে তৈরিকৃত এ জ্ঞানগত ব্যাখা ও বিশ্লেষণসমূহকে শর্তহীনভাবে গ্রহণ করে সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি হিসেবে চিন্তা করে থাকি। আর এভাবে গ্রহণ করার অর্থ হল তাদের পরবর্তীতে যারা আসবেন, তাদের দ্বারা চিন্তা করে নতুন কোন কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। এছাড়াও একটি মেথডোলজিকে মুতলাক অর্থাৎ সঠিক মেথডোলজি হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা এবং সকলকে সেটি গ্রহণ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা প্রতিটি চিন্তাবিদের জন্যই নতুন চিন্তা উৎপাদনের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করে, সে চিন্তাবিদ নিজের পদ্ধতির আলোকে যতই সঙ্গতিপূর্ণ চিন্তা উৎপাদন করুন না কেন।
আমি মনে করি, ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে এ অর্থগত সংকীর্ণতা, বিশেষায়িতকরণ এবং মুতলাকীকরণ ইসলামী চিন্তার সামগ্রিকতায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং এর কার্যকারিতা ও সামঞ্জস্যকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ