الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام علي اشرف الانبياء والمرسلين سيدنا محمد وعلي اله واصحابه اجمعين اللهم علمنا بما ينفعنا وانفعنا بما علمتنا انك انت العليم الحكيم اللهم زدنا علما و فهما والحقنا بالصالحين يا معلم ابراهيم علمنا يا مفهم سليمان فهمنا يا مصبر ايوب صبرناواخر دعونا عن الحمد لله رب العالمين
প্রথমেই সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ থেকে আয়োজিত এমন একটি প্রোগ্রাম আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে যে সকল ভাই-বোনেরা আমাদেরকে শুনছেন সবাইকে সাদর অভিবাদন জানাচ্ছি – আসসলামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ ।
আজ সমগ্র বিশ্ব মানবতা এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহামারী যা আজ গোটা বিশ্বকে পরিগ্রহ করেছে তার ভয়াবহতা থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন বাংলাদেশ ও তুরস্কসহ সমগ্র মানবতাকে হেফাজত করেন সেই দোয়ার মাধ্যমে শুরু করছি। রাসূল (স.) একটি হাদীসে ইরশাদ করেন- ‘যারা জ্ঞানার্জন করে সেইসকল শিক্ষার্থীদের জন্য ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয়। আমি দোয়া করছি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন যেন আপনাদেরকেও তাঁর ফেরেশতাদের ডানা পরিবেষ্টনের মধ্য দিয়ে অসীম রহমতের চাদরে আবৃত করে নেন।
আজ গোটা বিশ্বমানবতা যার জন্য অধীর আগ্রহে প্রত্যহ গুনছে তা হচ্ছে ‘ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণ’। আজকে আমি সেই পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে মুসলমান যুবকদের কি করণীয় তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
সমগ্র মানবতা সাধারণত যে ধরণের বড় বড় সংকটের মুখোমুখি হয়ে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক সংকট, মহামারী দূর্যোগ ইত্যাদি। কিন্তু মানবতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে ভয়ংকরতম সংকট হচ্ছে মানুষ যখন তার স্বীয় জীবনের ‘অর্থবহতা’কেই (Meaning) হারিয়ে ফেলে।
মানুষ আজ তার জীবনোদ্দেশ্য, স্ব-সৃষ্টির মাহাত্ম্য থেকে পুরোপুরি বিস্মৃত হয়ে গেছে। আর যারা এই উদ্দেশ্য ও সৃষ্টির মাহাত্ম্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে তারা মূলত ‘বুরহান’ কেই হারিয়ে বসে। ফলস্বরূপ তারা আত্ম-বিস্মৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি গভীর সংকটে আবদ্ধ হয়ে যায়। যারা বুরহান তথা দলীলকে হারিয়ে ফেলে তারা বুহরান তথা সংকটের মধ্যে নিপতিত হয়। তবে এখানে বুরহান (দলীল) বলতে বোঝানো হচ্ছে আল্লাহ রব্বুল আ’লামিন কর্তৃক প্রদত্ত ওহীর কম্পাস (নির্দেশনা) এবং রাসূল (স.) এর প্রদর্শিত জীবনধারা।
আজকে আমাদেরকে দুইটি বিষয়কে সংরক্ষণ করতে হবে। যথাঃ
১. ইনসান
২. ঈমান
আজ মানুষকে একটি ‘উপাদান’ (Object) -এ রূপান্তরিত করার কারণে বিশ্বমানবতা থেকে সত্যিকার ‘ইনসানিয়্যাত’ হারিয়ে যাচ্ছে।
ইনসান (মানুষ) কোন উপাদান নয় বরং ইনসান (মানুষ) হচ্ছে ‘আয়াত’ তথা নিদর্শন। আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে উপাদান থেকে অবমুক্ত করে আয়াতের পর্যায়ে উন্নীত করা। মানুষকে যখন আজ যত্রতত্র বিক্রয়যোগ্য একটি পণ্যাকারে উপস্থাপন করা হয়েছে তার প্রত্যুত্তরে আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষকে এই হীন অবস্থা থেকে উদ্ধার করে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত একজন মহান ‘খলিফা’র মর্যাদায় ভূষিত করা এবং সেই অবস্থানে তাকে পৌঁছে দেওয়া।
আজকে মানুষকে শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের একেকটি ডাটা হিসেবে পরিগণিত করা হয়েছে অথচ প্রত্যেকটি মানুষই সর্বদা, সর্বত্র ইলাহি নাফখা (হাকীকত) বহন করে চলা এক মহা-নিদর্শন।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে মানুষের ত্রিস্তরের বর্ণনা এসেছে। যথা-
- বাশারিয়্যাত
- আদামিয়্যাত
- ইনসানিয়্যাত
- ইলম ও হিকমতের মাধ্যমে; আজ বিশ্বমানবতা যে সংকটের মধ্যে উপনীত হয়েছে তা কেবলমাত্র ইলম ও হিকমতের মাধ্যমে সমাধান করতে পারি এবং বিশ্বমানবতার নিকট উপস্থাপন করতে পারি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা আজ সেই অবস্থায় নেই। একই সাথে আমাদের নিকট সঞ্চিত জ্ঞান মুসলিম দেশসমূহের মূর্খতাকে নিরসনের ক্ষেত্রে এবং মুসলিমদের মধ্যকার তাফরিকাত বা দলাদলি নিরসনের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ নয়। সেক্ষেত্রে আজকে প্রতিটি যুবকের দায়িত্ব হচ্ছে যেমনটি রাসূল (স.) বলেন- شاب نشا في عبادة الله অর্থাৎ আল্লাহর উপর ইমান আছে এমন প্রত্যেকটি যুবকের কর্তব্য হচ্ছে সে নিজেকে জ্ঞানের দ্বারা সুসজ্জিত করবে। বিশ্ববাসীর সামনে একজন আলেম হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে। তাদের অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা যুবকরা ইলম, ফিকির তথা চিন্তা এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি করবে।
- ইসলামকে বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দ্বিতীয় কর্মপন্থা হচ্ছে ইখলাস, আমলে সালিহ ও আখলাক। বাস্তবিকভাবে এটি প্রথম কর্মপন্থা থেকেও আরো বেশি শক্তিশালী ও অধিক প্রভাবক। ইসলামকে জ্ঞানের মাধ্যমে তাবলীগ (প্রচার) করার পূর্বে আখলাকের মাধ্যমে তাবলীগ তথা প্রচার করতে হয়। গোটা দুনিয়াবাসীর নিকট ইসলাম প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে আলেম বা দরবেশের চেয়ে ব্যবসায়ীরাই অধিক ভূমিকা পালন করেছে। কারণ যারা সাদিক (সৎ) ব্যবসায়ী তারা ইসলামের পূর্বে হালাল এবং আখলাককে সে অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ ইসলামের বিধান সম্পর্কিত জ্ঞান প্রসারের পূর্বে ঈমান ও সুমহান আখলাককে দিগ্ববিদিক বহন করে ছড়িয়ে দিয়েছেন ।
- জ্ঞানের আন্দোলন
- আখলাকের আন্দোলন
- ওহী,
- ইনসান,
- মহাবিশ্ব,
- আহদ
- আকদ
- মিসাক


