ইসলামে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে আমরা বিভিন্ন কথা শুনে থাকি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলো বলা হয়, তার মধ্যে কিছু গ্রহণযোগ্য। আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে । নারী-পুরুষ সবারই অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া অপরিহার্য। কারণ সমাজ দিনে দিনে সামনে এগোচ্ছে । শুধু নারী বা শুধু পুরুষেরই নয়, সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

গত ৫০ বছরে সমাজ অনেকটা এগিয়েছে। এ সময়ে পুরুষের সাথে নারীরাও সমানতালে না হলেও এগিয়ে এসেছে। বেগম রোকেয়ার সময়ে যে সমাজ ছিল, সে সমাজকে আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি । তিনি দেখেছিলেন, সে সময়ে মেয়েরা লেখাপড়া করার কোনো সুযোগই পেতো না। তখন বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষার ব্যাপারে সাহসী উদ্যোগ না নিলে আজ এ উপমহাদেশের নারীরা কেউই পড়ালেখা শিখতে পারতেন না। সমগ্র পৃথিবীতে, এমনকি আমাদের দেশে মানুষের ওপর, বিশেষ করে নারীর ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, তার একটা ভিত্তি আছে । অত্যাচার আকাশ থেকে আসছে না। নারীর ওপর পুরুষের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরও যে অত্যাচার, তার আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন হলো সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে, বিশেষ করে পুরুষেরা বিশ্বাস করে যে, নারী পুরুষের চেয়ে ছোট। তাদের কোয়ালিটি খারাপ এবং তারা নীচু। এই বিশ্বাস অবশ্য নারীর মধ্যেও কিছুটা বিদ্যমান। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কতগুলো বিভ্রান্তি থেকে এ বিশ্বাসের জন্ম। আর এই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে নারীদের প্রতি অবহেলা, বঞ্চনা ও নির্যাতন।

আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয়, তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না। আমি এটা খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের মতো ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে চলা সম্ভব হবে না। যারা ইসলাম থেকে বিদ্রোহ করেছে তারা কিন্তু টিকতে পারেনি, পারছে না। যারা বিদ্রোহ করেছিলেন, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি, খারাপ হয়েছে। বিনীতভাবে বলতে চাই ইসলামের কাঠামোর মধ্যে আমরা যদি এগোতে পারি, তবে তা সবচেয়ে ভালো হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে এ রকম একটি ফ্রেমওয়ার্ক আছে, যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে।

আমি ইসলামের কোনো সাময়িক ব্যাখ্যা দেয়ার পক্ষে নই । সত্যিকার অর্থেই ইসলাম নারীকে ক্ষমতা দিয়েছে এবং সম্মানিত করেছে। নারীকে অধিকার দিয়েছে। সেগুলো ব্যাখ্যা করার আগে “আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন’-এর নতুন ভিত্তি যেটা হতে পারে, সে প্রসঙ্গে বলতে চাই।

কী সেই ভিত্তি, যে ভিত্তির ওপর নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য বিদ্যমান? আল্লাহ মানুষের চেহারা এক রকম করেননি। সব দিক থেকে যেকোনো দুজন মানুষ সমান নয়। ওজন, উচ্চতা, বর্ণ, শিক্ষা ইত্যাদি সব কিছুতে একজন মানুষ থেকে আরেকজন আলাদা। কিন্তু মৌলিকভাবে প্রত্যেক মানুষই সমান; আল্লাহর কাছে সমান। এর পাঁচটি প্রমাণ নিয়ে তুলে ধরছি-

প্রথমত, আল্লাহ তা’য়ালা এ কথা খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’, যাকে আমরা আত্মা বলি । মূল মানুষ কিন্তু শরীর নয়। দেহ তো কবরে পচে যাবে । আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাস করি, তারা জানি- মূল মানুষ হলো ‘রূহ। আল্লাহ সব মানুষকে, তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন, একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন। আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সবাই একই দিয়েছিল । আল কোরআনের সুরা আ’রাফের একটি আয়াত হলো:

“স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলে, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক । আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না’ (সুরা আল আরাফ, ৭: ১৭২) 

তার মানে আল্লাহর সাথে একটি পয়েন্টে সব নারী ও পুরুষের একটি চুক্তি হলো আপনি আমাদের প্রভু, আমরা আপনাকে মেনে চলব। এ ক্ষেত্রে পুরুষের চুক্তি আলাদা হয়নি। নারীর চুক্তি আলাদা হয়নি। সুতরাং আমরা দেখলাম, আমাদের আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের প্রথম কথা হচ্ছে, মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’ এবং তা সবার সমান। এই সাম্যের পরে যদি কোনো অসাম্য থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত নগণ্য। তার মানে হচ্ছে, মানুষের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এক এবং সে মানুষ হিসেবে একই। এটি হলো নারী-পুরুষের সাম্যের প্রথম ভিত্তি।

দ্বিতীয়ত, আমরা পুরুষেরা গর্ব করি, আমাদের শারীরিক গঠন বোধ হয় নারীর তুলনায় উত্তম । আল্লাহ বোধ হয় আমাদের তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন এবং মেয়েরা আনকোয়ালিফায়েড বা অযোগ্য। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা একটি কথা কোরআনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, সব মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু প্রত্যেক মানুষ “ফার্ট ক্লাস’ । যারা নামাজ পড়েন তারা এই আয়াত জানেন, সুরা ‘ত্বিন’-এ আল্লাহ বলেছেন:

“নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয়” (সুরা আততীন, ৯৫: ৪)

তিনি এখানে ‘পুরুষকে’ বলেননি। তার মানে আমাদের গঠনে পার্থক্য আছে, আমরা এক নই, আমরা ভিন্ন কাঠামোর, কিন্তু সবাই ফার্স্ট ক্লাস বা সর্বোত্তম ।

সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য, নতুন নারী আন্দোলনের জন্য অথবা নতুন মানব আন্দোলনের জন্য এটা দ্বিতীয় ভিত্তি। মৌলিক এ কারণে বলছি, নারী-পুরুষের মধ্যে ছোটখাটো পার্থক্য বিদ্যমান। পুরুষদের এ কথা বলা ঠিক হবে না যে, মেয়েদের স্ট্রাকচার খারাপ। আল্লাহ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন। যারা মুমিন, যারা বিশ্বাসী, তারা এ কথা বলবেন না। সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্যের এটা হলো দ্বিতীয় প্রমাণ।

তৃতীয়ত, আল্লাহ তা’য়ালা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সব মানুষ একই পরিবারের; আদম ও হাওয়ার পরিবারের । সুরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন:

“হে মানবজাতি, সেই রবকে তুমি মানো, যিনি তোমাদের একটি মূল সত্তা (নফস) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্তা থেকে তার সঙ্গীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ দু’জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন ” (সুরা আন নিসা, ৪:১)

তার মানে আমরা এক পরিবারের। আমরা হচ্ছি বনি আদম বা আদমের সন্তান। আল্লাহ কোরআন শরিফে অন্তত ২০-৩০ বার বলেছেন, “ইয়া বনি আদামা (হে আদমের সন্তানেরা)”। বাবা-মা এবং সন্তানেরা মিলে যেমন পরিবার তৈরি হয়, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজাতি একটি পরিবার। সব পরিবারের ওপরে হলো মানবজাতির পরিবার।

তার মানে, আমাদের মৌলিক যে সম্মান ও মর্যাদা তা সমান। ছোটখাটো কারণে আমাদের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। তবে জাগতিক মর্যাদা আসল মর্যাদা নয়। আইনের ভাষায় যেমন বলা হয়, আইনের চোখে সকল মানুষ সমান, তেমনি আল্লাহর কাছেও সবাই সমান। আল্লাহর কাছে সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া। আল্লাহ বলেননি, তার কাছে পুরুষ সম্মানিত বা নারী সম্মানিত। আল্লাহ বলেছেনঃ

“তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন।” (সুরা হুজুরাত, ৪৯:১৩) 

আল্লাহর কাছেই যদি মর্যাদার এই ভিত্তি হয়, তাহলে মানুষের পার্থক্যে কি কিছু যায় আসে? আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাকওয়া ছাড়া (আল্লাহকে কে ভয় করে আর কে করে না) কোনো পার্থক্য করেন না। অতএব, আমরা এক পরিবারের সন্তান, আমাদের মৌলিক মর্যাদা সমান।

কোরআনের সুরা নিসার  প্রথম আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেছেন:

“এবং ভয় করো সে আল্লাহকে, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবি করে থাকো। এবং ভয় পাও গর্ভকে বা মাকে।” (সুরা আন নিসা, ৪: ১)

আল্লাহ বলেছেন, গর্ভকে ভয় পাও। কোরআন শরিফের এই আয়াতটির তাফসীরে মিসরের বিখ্যাত আলেম সাইয়েদ কুতুব লিখেছেন, “এই ভাষা পৃথিবীর কোনো সাহিত্যে কোরআনের আগে লেখা হয়নি। আল্লাহ গর্ভকে ভয় করতে বলে মাকে সম্মান করার কথা বলেছেন, নারী জাতিকে সম্মান করার কথা বলেছেন” (সুরা নিসার তাফসির, সাইয়েদ কুতুব)।

সুতরাং আমাদের মৌলিক সামাজিক মর্যাদা এ ক্ষেত্রেও সমান বলে প্রতীয়মান হলো । এটা আমাদের নতুন আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রমাণ ।

চতুর্থত, আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সৃষ্টির সময় বলে দিলেন, তোমরা সবাই খলিফা। তিনি বলেন, “ইন্নি জায়েলুন ফিল আরদি খলিফা”। আল্লাহ বলেননি, পৃথিবীতে তিনি নারী পাঠাচ্ছেন বা পুরুষ পাঠাচ্ছেন। এমনকি তিনি বলেননি, তিনি মানুষ পাঠাচ্ছেন। আল্লাহ বললেন, তিনি খলিফা পাঠাচ্ছেন। পাঠালেন মানুষ, বললেন খলিফা। মানুষকে তিনি খলিফা নামে অভিহিত করলেন। খলিফা মানে প্রতিনিধি। আমরা পুরো মানবজাতি হচ্ছি, আল্লাহর প্রতিনিধি । পুরুষ-নারী নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তার প্রতিনিধি, আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে এ কথা ঠিক, যদি আমরা গুনাহ করি, অন্যায় করি, খুন করি, অত্যাচার করি, জুলুম করি, ঈমান হারিয়ে ফেলি- তাহলে আমাদের খলিফার মর্যাদা থাকে না। কিন্তু মূলত আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা (দ্রষ্টব্য; সুরা বাকারা, ২:৩০, সুরা ফাতির, ৩৫:৩৯)।

খলিফার মর্যাদার মধ্যেই রয়েছে সব ক্ষমতায়ন, যে ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলে থাকি । ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না। খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রত্যেক নারী ও পুরুষের কিছু ক্ষমতা থাকতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি এই খেলাফতের মধ্যে রয়েছে। শুধু নারী নয়, খেলাফত শব্দের মধ্যে নারী, পুরুষ, গরিব, দুর্বল সবার ক্ষমতায়নের ভিত্তি রয়েছে। সুতরাং নারী-পুরুষ মৌলিক সাম্যের এটি হলো চতুর্থ প্রমাণ।

ইসলাম চায় প্রত্যেককে ক্ষমতা দিতে। কিন্তু এ মুহূর্তে যদি নারীরা পিছে থেকে যায়, তবে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। পুরুষেরা কোনো দিক থেকে বঞ্চিত হলে তাকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। তবে যে বঞ্চিত, তার কথা আমাদের আগে ভাবতে হলে। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বর্তমানে আমাদের আগে কাজ করতে হবে ।

পঞ্চমত, আজকে মেয়েদের আসল কাজ কী তা নিয়ে কথা উঠছে। তারা কি ঘরে বসে থাকবে- এমন প্রশ্ন উঠছে । কোনো মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধান্তে ঘরে থাকতে চায়, তবে তার সেটা করার অধিকার আছে। পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। কিন্তু আল্লাহ কোথাও বলেননি, নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে, বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবেন না, বরং আল্লাহ মূল দায়িত্ব নারী-পুরুষের একই দিয়েছেন । সুরা তওবার ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নারী পুরুষের দায়িত্ব ছয়টি:

১. তারা ভালো কাজের আদেশ দেবে।

২. মন্দকাজের ব্যাপারে নিষেধ করবে।

৩. উভয়ে নামাজ কায়েম করবে।

৪. যাকাত দেবে।

৫. আল্লাহকে মানবে।

৬. রাসূল (সা.)-কে মানবে।

এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের সব ভালো কাজে অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। এটাই ইসলামের নীতি। এ বিষয়ে আল্লাহ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যারা এ ছয়টি দায়িত্ব পালন করবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করবেন। কোরআনের বেশ কয়েকটি তাফসীর পড়ে এবং পবিত্র কোরআন ও সুন্নতে রাসূলে পুরোপরি বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এ ছয়টি দায়িত্বের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই সমান। রাজনীতি, সমাজসেবা ইত্যাদি সব কাজই এ ছয়টির আওতায় পড়ে।

আয়াতটিতে আরো বলা হয়েছে: 

“মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী একে অপরের অভিভাবক (ওয়ালি), একে অপরের বন্ধু, একে অপরের সাহায্যকারী।” (সুরা আত-তাওবা, ৯: ৭১)।

এই আয়াত কোরআন শরিফের শেষদিকের সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত । উল্লিখিত বিষয়ে আগে যেসব আয়াত আছে, সেগুলোকে এই আয়াতের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে । এই আয়াতে বলা আছে, নারী-পুরুষ একে অপরের অভিভাবক, গার্জিয়ান অনেকে বলেন, নারী গার্জিয়ান হতে পারে না; কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, নারী গার্জিয়ান হতে পারে। কোরআনে এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই ।

আজ আমরা ইসলামের মূল জিনিস পরিত্যাগ করে ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি । মানুষের তৈরি বিভিন্ন কিতাবের ওপর নির্ভর করছি । আল্লাহর মূল কিতাবকে আমরা সে তুলনায় গুরুত্ব দিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না। এখানে একটি কথা বলা দরকার: ইসলামকে কেউ যদি অন্যের মাধ্যমে শেখেন, তবে তারা কখনো মুক্তি পাবেন না। তাই প্রত্যেককে কোরআনের পাঁচ-ছয়টি তাফসীর নিজে পড়তে হবে। অনেকে অনুবাদের মধ্যে তাদের নিজেদের কথা ঢুকিয়ে দেন। ফলে পাঁচ-ছয়টি তাফসীর পড়লে আমরা বুঝতে পারব- কোথায় মানুষের কথা ঢুকেছে, আর আল্লাহর কথাটা কী। কয়েক রকম ব্যাখ্যা পড়লে আমরা ঠিক করতে পারব, কোন ব্যাখ্যা সঠিক। মেয়েদের মধ্যে বড় তাফসীরকারক তৈরি হননি। মেয়ে তাফসীরকারক থাকলে হয়তো লিঙ্গ পক্ষপাতিত্ব হতো না। তবে কোরআন শরিফের কিছু তাফসীর আছে, যেগুলো লিঙ্গ পক্ষপাতিত্বমুক্ত, যেমন মুহাম্মদ আসাদের ‘দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন।

সূত্রঃ বিআইআইটি কর্তৃক প্রকাশিত “উন্নত চিন্তা, মহৎ জীবন, আদর্শ সমাজ”  ।

 

১২৭৮ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of শাহ আব্দুল হান্নান

শাহ আব্দুল হান্নান

শাহ আব্দুল হান্নান (১৯৩৯ – ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামী দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজ সেবক। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং ধারার পথিকৃৎ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের প্রথম সারির ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এর চেয়ারম্যানও ছিলেন। এর বাইরে তিনি দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন।
শাহ আব্দুল হান্নান ইসলামী অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেনঃ
১। ইসলামী অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকা
২।ইসলামী অর্থনীতি দর্শন ও কর্মকৌশল
৩।নারী সমস্যা ও ইসলাম
৪।নারী ও বাস্তবতা
৫।সোস্যাল ল অব ইসলাম
৬।দেশ সমাজ ও রাজনীতি
৭।বিশ্ব চিন্তা
৮।সোভিয়েত ইউনিয়নে ইসলাম
৯।উসুল আল ফিকহ
১০। ল ইকনোমিক অ্যান্ড হিস্টোরি
১১। আমার কাল, আমার চিন্তা
Picture of শাহ আব্দুল হান্নান

শাহ আব্দুল হান্নান

শাহ আব্দুল হান্নান (১৯৩৯ – ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামী দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজ সেবক। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং ধারার পথিকৃৎ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের প্রথম সারির ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এর চেয়ারম্যানও ছিলেন। এর বাইরে তিনি দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য ছিলেন।
শাহ আব্দুল হান্নান ইসলামী অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু বই লিখেছেনঃ
১। ইসলামী অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকা
২।ইসলামী অর্থনীতি দর্শন ও কর্মকৌশল
৩।নারী সমস্যা ও ইসলাম
৪।নারী ও বাস্তবতা
৫।সোস্যাল ল অব ইসলাম
৬।দেশ সমাজ ও রাজনীতি
৭।বিশ্ব চিন্তা
৮।সোভিয়েত ইউনিয়নে ইসলাম
৯।উসুল আল ফিকহ
১০। ল ইকনোমিক অ্যান্ড হিস্টোরি
১১। আমার কাল, আমার চিন্তা

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top