আপনারা সকলেই জানেন যে পবিত্র কোরআনে হাদীদ নামে একটি সূরা রয়েছে। হাদীদ অর্থ হল, লোহা। সূরা হাদীদের ২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
অর্থাৎঃ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায় নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি লৌহও দিয়েছি যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি এবং রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ; এটা এ জন্য যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন কে প্রত্যক্ষ না করেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী“।
এই আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিতাব ও মীযানের সাথে সাথে লোহাও নাযিলের কথা বলেছেন। কোরআনের যারা বৈজ্ঞানিক তাফসীর করেন তারা বলে থাকেন যে, আকাশ থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথর এসে দুনিয়ায় পড়েছে এর সাথে সাথে লোহাও দুনিয়াতে এসেছে। আমি এই ধরণের তাফসীরকে খুব বেশী গ্রহণযোগ্য মনে করি না।
আমার মতে, এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কিতাব বলতে তার অবতীর্ণ আসমানী কিতাবের কথা বুঝিয়েছেন, মীযান বলতে আদালত বুঝিয়েছেন, আর লোহা বলতে শক্তি ও ক্ষমতার কথা বুঝিয়েছেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে বলেছেন, কিতাব বিহীন মীযান হবে না, আবার লোহা বিহীনও মিযান হবে না।
কেননা, লোহাবিহীন মীযান (আদালত) কিতাবকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়, কিতাব বিহীন লোহা (শক্তি ও ক্ষমতা) মীযানকে (আদালত) অদৃশ্য করে দেয়।
যদি আরও সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই তাহলে বলব যে, কিতাব হল, আদালতের উৎস; মীযান হল স্বয়ং আদালত নিজে, শক্তি ও ক্ষমতা হল, শক্তি ও ক্ষমতা।
এই তিনটি বিষয় এক সাথে না হলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেখানে কিতাব নেই সেখানে শক্তি ও ক্ষমতা ‘মীযানকে’ (আদালত) নির্ধারণ করে।
আর ঐ সময়ে আদালতের শক্তি নয়, শক্তির ও ক্ষমতার আদালত প্রভাবশালী বা কর্তৃত্বশালী হয়।
যদি মীযান না থাকে, তাহলে শক্তি ও ক্ষমতা, কিতাবকে তার নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং কিতাবকে তার নিজের স্বার্থ উদ্ধাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নিজের মত করে ব্যাখা করার চেষ্টা করে থাকে। কিতাব যখন শক্তি ও ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণাধীন হয়, কিতাব তখন অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এর জ্বলন্ত উদাহরণ হল পূর্ববর্তী পরিবর্তীত ও পরিবর্ধিত দ্বীন সমূহ। শক্তি ও ক্ষমতা না থাকলে মিযান (আদালত) শুধুমাত্র থিওরী হিসেবে রয়ে যায়, সমাজে ও রাষ্ট্রে যার কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। কিতাবকে মিযানের সাথে এক হয়ে সামাজিক জীবনে প্রভাবশালী হওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন, একটি শক্তির প্রয়োজন, যে শক্তি কিতাবের আইন সমূহকে বাস্তবায়ন করবে।
সূরা হাদীদের এই আয়াতের মাধ্যমে বুঝতে পারি যে; কিতাব, মিযান এবং হাদীদ তথা কিতাব, মিযান (আদালত) ও রাষ্ট্র ক্ষমতা যখন একসাথে হবে, তখনই কেবলমাত্র পৃথিবীতে সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।