দীর্ঘ ২’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলের জুলুম, নিষ্পেষণের অন্যতম হাতিয়ার ছিলো বিভিন্ন ভাইরাস সৃষ্টির মাধ্যমে গণহত্যা সৃষ্টি। পাশাপাশি আমাদের কৃষিখাত ও স্বাস্থ্যখাতে ধস নামানো ছিলো তাদের অন্যতম লক্ষ্য। ব্রিটিশরা বাংলার উর্বর জমিতে তামাক, নীল ইত্যাদি ফসল চাষে বাধ্য করেছিলো আমাদের কৃষকদেরকে, ফলশ্রুতিতে জমিগুলো উর্বরতা হারায়। জমির উর্বরতা নষ্ট করার সাথে সাথে তারা খাদ্যনীতিতেও নিয়ে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ফলে ভেজাল ও অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ আমাদের খাদ্যাভাসে পরিনত হয়। ব্রিটিশ পরবর্তী সময়েও এ ধারা অব্যাহত থাকে।
একটা সময় ব্রিটিশরা প্রত্যক্ষ শোষণের সুযোগ হারালেও নতুন রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের তৈরি বড় বড় সংস্থার মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিতে থাকে। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিলো তাদের পরিকল্পনার আলোকে কৃষিনীতি, খাদ্যনীতি, স্বাস্থ্যনীতি সাজানো ও বাস্তবায়ন করা; যার উদ্দেশ্য ছিলো মূলত এই নতুন রাষ্ট্রকে গঠনগত দিক থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে না দেওয়া। তাদের মাধ্যমেই সবুজ বিপ্লব সৃষ্টি হয়; বিভিন্ন হাইব্রিড ফসলের বীজ, হাইব্রিড পলিসি আমদানি হয়। ভেজাল খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে আমরা অসুস্থ জাতিতে পরিণত হতে শুরু করি। আবার সুস্থতা লাভের জন্য তাদের থেকে আমদানিকৃত বা তাদের তৈরিকৃত ঔষধই খেতে বাধ্য করা হচ্ছে আমাদেরকে। অর্থাৎ এক মহা জুলুমের শিকার সবাই!
এ জুলুমের ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে, পুষ্টিহীনতা, সুচিকিৎসার অভাব এবং ঔষধের অপ্রতুলতার কারণে প্রতি ১০০০ নবজাতকের ৩০০ জনই জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে মারা যেতো। ঔষধ পাওয়া গেলেও তা ছিলো চড়া মূল্যের, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অতঃপর নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হতে থাকে এবং নব্বইয়ের দশকের পরে হাইব্রিড ও ভেজাল খাদ্য, আমদানিকৃত ও ভেজাল ঔষধে বাজার সয়লাব হয়ে যায়, যা এখনো চলমান। এ বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে ৯০% এরও বেশি মানুষ পরিপূর্ণ সুস্থ নয়। অসুস্থতা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়, আর চিকিৎসকরা তাদের যে ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেন, সে ঔষধই নতুন রোগের সৃষ্টি করছে। সুবিধাভোগী বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এসব ঔষধ তৈরি করছে, আমদানি করছে। এ খাত নিয়ন্ত্রণের একচ্ছত্র অধিকার তাদেরই।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো থেকে ঔষধ আমদানি হতো, এ খাতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য পরিলক্ষিত হতো। ৭০ এর দশক পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া এবং বিভিন্ন খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণ করা হলেও সেখান থেকে কোনো ধরনের কার্যকরী ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. এম এম হক এ ধরনের ঔষধের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তার পদ পর্যন্ত হারান।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন এ খাত স্বাভাবিকভাবেই সরাসরি সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে চলে যায়। তবে তার শাসনামলের শুরুর দিকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, যেখানে শর্তারোপের মাধ্যমে কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিলো। ঔষধ কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়া থেকে শুরু করে নানাবিধ নীতিমালা সামনে নিয়ে আসেন তারা। প্রায় ১৭৪২ টি ক্ষতিকারক ঔষধ সনাক্ত করেন এবং ৯০০ টির বেশি ঔষধ বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া বা বাজেয়াপ্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। পাশাপাশি অবৈজ্ঞানিক কারখানা ও দালালি ব্যবসার মাধ্যমে গড়ে উঠা ঔষধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কিছু বিধিনিষেধ আরোপেরও সুপারিশ করেন। এভাবে কিছু ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তব রূপ বা প্রতিফলনের আলো দেখেনি, কমিটিও বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। তৎকালীন সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরশাদের সাথে দেখা করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের উপর নেদারল্যান্ড, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সরকারি চাপ আসতে থাকে। ফলশ্রুতিতে এরশাদ ঔষধনীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে বাধ্য হন।
পূর্বে ঔষধ ও খাদ্যনীতির যে সাম্রাজ্যবাদ ছিলো, তা নতুন রূপে হাজির হয় এই ৮০ এর দশকেই। তখন থেকে সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণাও শুরু হয়। এসবের বিপক্ষে কথা বললে বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে, ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে, মানুষের দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পাবে অথবা বাংলাদেশ আরো বেশি দারিদ্র্যতার দিকে ঝুঁকে পড়বে, দেশের জনগন সুচিকিৎসা পাবে না– এ ধরনের নানাবিধ প্রচারণা চলতে থাকে, যেগুলোর পেছনের মূল চালিকাশক্তি ছিলো সাম্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা এসব দেশীয় দোসর কোম্পানিগুলো। এ আগ্রাসন ৯০ এর দশকে আরো বেড়ে যায়। ২০০০ সাল পরবর্তী বাংলাদেশ কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার এক জরাজীর্ণ অবস্থায় প্রবেশ করে, যার ফলাফল আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ভেজাল বীজ থেকে উৎপন্ন খাদ্যের কারণে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে কৃত চুক্তির কারণে চাইলেই অন্য কোনো ঔষধ দিতে পারছে না। এসব ঔষধ মানুষকে সাময়িকভাবে সুস্থ করে তুললেও করলেও পরবর্তীতে আবার নতুন রোগের সৃষ্টি করছে। যদি, শুধু ঔষধের হিসাবের আলোকে বিচার করি, তাহলেও দেখা যায় গত এক যুগে রোগ দেড় গুণ বেড়েছে। এ হিসাব তো কাগজে-কলমে, বাস্তবতা তা আরো ভয়াবহ! বর্তমানে বিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী মানুষরাও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাচ্ছে। কিডনির সমস্যা, ডায়বেটিস, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছে। মা ও নবজাতক শিশুদের অধিকাংশই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ২০ বছর আগে বা স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশের সাধারণ রোগগুলো কী কী ছিলো, বা তখনকার আর এখনকার ক্যান্সারের রোগী, হৃদরোগী, ডায়াবেটিস রোগী, কিডনির রোগীর সংখ্যা তুলনা করলেই বর্তমান অবস্থা খুব ভালোভাবে বোঝা যাবে।
আবার শুধুমাত্র চিকিৎসাব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা যদি বাদ দিই, তবে দেখবো এ সমস্যাটি সামগ্রিকও। যে দেশগুলো থেকে আমরা ঔষধ আমদানি করছি, সে দেশগুলোর খাদ্য, কৃষি, জলবায়ু আমাদের দেশের থেকে ভিন্ন, তাই তাদের রোগের চিকিৎসাও ভিন্ন। ফলশ্রুতিতে একই ঔষধনীতির অনুকরণ আমাদের জন্য মারাত্মক!
ঔষধের সংখ্যা এবং ঔষধ কোম্পানির হিসাব যদি করি, ২০১৫ এর সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে অনুমোদিত এলোপ্যাথিক ঔষধ ৩১২৬৮ টি, আয়ুর্বেদিক ঔষধ ৪৫৩৮ টি, হারবাল ঔষধ ১১ টি, ইউনানী ঔষধ ৭৫৪৫ টি এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ২৩৯৩ টি।
এর মাঝে বাহির থেকে আমদানিকৃত এলোপ্যাথিক ঔষধের সংখ্যা ১১৫২ টি। বাংলাদেশে এলোপ্যাথিক ঔষধের কোম্পানি আছে ২৮৩ টি। এসব কোম্পানি ঔষধ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন দেশের মোট ২৮০৪ টি স্থান থেকে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে, যার ৮০ ভাগেরও বেশি আসে ভারত থেকে! অর্থাৎ নিজেদের উৎপাদিত ঔষধের ক্ষেত্রেও আমরা আত্মনির্ভরশীল নই!
আরেকটি বিষয় আমরা সবাই লক্ষ্য করছি, তা হলো সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু নয়, উপরন্তু অপ্রতুল; যার কারণে রোগীদের ৭০ ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে তারা অতিরিক্ত টাকা খরচ, অহেতুক টেস্ট, অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মানুষ প্রতিদিন প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ঔষধ ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঔষধের বাজার ১৩ হাজার কোটি টাকার, অর্থাৎ পুরো জাতি বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঔষধ খায়! এক্ষেত্রে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিজনের গড়ে বাৎসরিক ঔষধ খরচ পড়ে ৮১২.৫ টাকা। পরিবার প্রতি হিসাব করলে ৫ জনের একটি পরিবারে ঔষধ খরচ পড়ে ৪০৬২ টাকা।
২০০৩-০৪ সালে ঔষধের অভ্যন্তরীণ বাজার ছিলো ২৬৪২ কোটি টাকার, যখন জনসংখ্যা ছিলো ১৩ কোটি, অর্থাৎ ঔষধ খাতে গড়ে মাথাপিছু বাৎসরিক ব্যয় ছিলো ২০৩ টাকা যা মাথাপিছু ব্যয়ের ০.৮৪%। এই অনুপাত ২০১৫-১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.২৮% এ! শুধু বার্ষিক মাথাপিছু আয় এবং মাথাপিছু ব্যয়ের হিসাব করলেও দেখা যায় ঔষধের জন্য বিগত ১২ বছরে আমাদের মাথাপিছু ব্যয় বেড়েছে ০.৪৪%! অর্থাৎ এক যুগে ঔষধ খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ! আর এতে মূলত সাম্রাজ্যেবাদী কোম্পানিগুলোই লাভবান হচ্ছে। এ তো শুধুমাত্র ঔষধ খরচ, এর সাথে হাসপাতাল ব্যয়, চিকিৎসকের ফি প্রদানসহ আরো নানা ব্যয় তো আছেই!
অন্যদিকে যারা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছে না, তাদের অবস্থা কতটা দুর্বিষহ তা খুব সহজেই অনুমেয়। গ্রাম আর শহরাঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণি ভয়ে চিকিৎসা করায় না, কারণ তাদের এ ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানোর মতো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নেই। ফলশ্রুতিতে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। আবার অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে খাচ্ছে, ফার্মেসির মালিকরাও তাদের কাছে ঔষধ বিক্রি করে বাণিজ্য করছে। এ ঔষধ খেয়ে তারা সাময়িক স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে বড় বড় রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আবার অনেকে জমি বিক্রি করে, ঋণ নিয়ে, অনেক ক্ষেত্রে সুদে ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, আগামী ২০/৩০ বছরের ব্যবধানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৯০ ভাগই দেউলিয়া হয়ে যাবে। আবার চিকিৎসা করিয়েও যেন নিস্তার নেই। একটি রোগ ভালো হচ্ছে তো আরেকটি রোগ সৃষ্টি হচ্ছে, ঔষধের পর ঔষধ সেবন করে যেতে হচ্ছে। এ এক ভয়াবহ চক্র, যা থেকে কেউ বের হতে পারছে না।
এর মূল কারণ কী? মূল কারণ একটিই, আমাদের যেমন নিজস্ব কোনো সুষ্ঠু ও বিকল্প খাদ্যনীতি নেই, তেমনি নেই কোনো সুষ্ঠু ও বিকল্প চিকিৎসানীতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমাদের দেশে যেমন কোনো সুষ্ঠু খাদ্যনীতি গড়ে ওঠেনি, তেমনি গড়ে ওঠেনি সুষ্ঠু চিকিৎসানীতিও। এ নিয়ে নেই কোনো চিন্তা, নেই কোনো উদ্যোগ। আমাদের জাতিগত, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক বিষয়গুলোকে সামনে রেখে চিকিৎসাব্যবস্থা দাঁড় করানোর ব্যাপারেও নেই কোনো ধরনের চিন্তা! এর সাথে সংশ্লিষ্ট আমাদের স্থাপত্য, আমাদের নগরায়নকে আমাদের বাস্তুতন্ত্র, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করছে না কেউ! অথচ আমাদের হওয়ার কথা ছিলো আইডিয়ার উদ্ভাবক, আমাদের উচিৎ ছিলো তাদের মেথডোলজি অনুসরণ না করে নিজস্ব মেথডোলজির ধারা সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের এই খাদ্যনীতি, চিকিৎসানীতি নিয়ে এ অঙ্গন থেকে নয়া প্রস্তাবনা, সংস্কার সাধনের জন্য সামগ্রিক রূপরেখা কেউ দিতে পারেনি। গড়ে ওঠেনি কোনো সামগ্রিক আন্দোলন, চিন্তার ক্ষেত্র, লিখালিখির ক্ষেত্র। অথচ আমরা সবাই বুঝি, এ অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয়, যদি বিকল্প খাদ্যনীতি ও চিকিৎসা নীতির প্রস্তাবনা প্রদান এবং সে আলোকে আন্দোলন গড়ে না উঠে, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বর্তমান সময়ের অন্যতম অস্ত্র ‘বায়োলজিক্যাল ওয়ার’ এর মাধ্যমে আমরা নিঃশেষ হয়ে যাবো।
ব্রিটিশ শাসনামলে আমরা যেভাবে সরাসরি লুন্ঠন, গনহত্যার শিকার হয়েছি, এখনো সেভাবেই লুন্ঠন এবং গণহত্যার শিকার হচ্ছি, শুধু ধরনটা পাল্টে গেছে। কিন্তু আমরা যেন দেখেও দেখছি না! আমাদের চোখে পরে থাকা রঙিন চশমার কারণে আমরা এই নব্য লুন্ঠন, গণহত্যা দেখতে পাচ্ছি না, দেখতে পাচ্ছি না এই গোলামীর জিঞ্জির বা কারাগারকে, দেখতে পাচ্ছি না নিজেদের অক্ষমতা ও দুরবস্থাকে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ঔষধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার নতুন আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার থাকার কথা ছিলো চিকিৎসকগণ, ফার্মাসিস্টগণ এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের। তাদেরই উচিত ছিলো মানুষের মুক্তির কথা বলা। অথচ তারাই আজ নির্লিপ্ত বা নির্লিপ্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তারাই আজ বড় বড় ঔষধ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের তৈরিকৃত ঔষধ প্রদান করছেন, টেস্ট দিচ্ছেন, তাদের নীতি অনুরসণ করে ঔষধ তৈরি করছেন। তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে জেগে উঠার কথা ছিলো যেসব নেতৃস্থানীয়দের, তারাও আজ বড় বড় ঔষধ কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও মালিক হয়ে বসে আছে।
হাইব্রিড পণ্য, ভেজাল খাদ্য, অমৌলিক খাদ্য আমদানি করে বাজারজাত করার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তারাই সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানিগুলোর তৈরি ঔষধ, ঔষধের কাঁচামাল এ দেশে আমদানি করছেন। ফলশ্রুতিতে মজবুত হচ্ছে চিকিৎসাব্যবস্থা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংসের ভিত্তি।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন?…