চোখ মেলে তাকালেই কি রাষ্ট্রের সামগ্রিক অবস্থা দেখা যায়?
নাকি, ইস্যুতে ভরা বাংলাদেশের করুণ চিত্র ভেসে উঠে চোখের মণি কোঠায়?
অবশ্য ইস্যুও খারাপ কিছু না, যদি তা মানবতার কল্যাণকামী কোন রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন ধারার গোষ্ঠীগুলো তৈরি করতো। কিন্তু বাস্তবতা হল মেরুদণ্ড সম্পন্ন এমন কোনো দল বা গোষ্ঠী এই মুহূর্তে নেই!
বর্তমানে গোটা জাতি যে ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার কয়েকটি আলামত হল-
• BBS এর মতে করোনাকালীন সময়েই কর্মক্ষম মানুষ বেকার হয়েছে ৪ কোটি ৮২ লক্ষ! সরকারপন্থী গবেষক দল বলছে, প্রথম ৬৬ দিনে ৩ কোটি ৬৬ লক্ষ নতুন বেকার হয়েছে। আর CPD এর মতে ৫ কোটি। কিন্তু আসল হিসেব হলো ১০০ দিনে ৭ কোটি বেকার! (প্রখ্যাত গবেষক শ্রদ্ধেয় ফাইয়াজ স্যারের মতেও এটিই।)
শতদিন চলে গেছে অনেক আগেই, এখন কী অবস্থা ভাবতে পারেন?
যারা আগেই বেকার ছিল, তাদের কী অবস্থা? এর প্রভাব কোথায় কোথায় পড়বে, কতটা ভয়াবহ আকারে ছড়াবে– ভাবতে পারি আমরা? যেখানে বর্তমান কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লক্ষ।
• খাদ্য সংকটে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ৬ কোটি ৯৯ লক্ষ মানুষ।
স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে কমে গেছে। এগুলো কোনো সাময়িক সমস্যা নয়। ৬ কোটি লোক নতুন করে স্থায়ী বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছে। প্রায় ৭ কোটি লোক ব্যবসা, চাকরি ও সঞ্চয় হারিয়ে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে গিয়েছে, বাকীরা যাওয়ার পথে।
অথচ, সিস্টেমেটিক ব্যর্থতা ও চিকিৎসা বিপর্যয় ঢাকতে, টালমাটাল অর্থনীতি আড়াল করতে, ব্যাংক লুট অব্যাহত রাখতে সরকার খাদ্য সংকট ও বেকারত্বকে অস্বীকার করে!
সবকিছু ঢেকে রাখা দরকার না? তাই নানাবিধ ইস্যু দিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বস্তিতেই আছেন। শুধু শেখ হাসিনার দোষ দিয়ে কী লাভ বলেন? সকল রাজনৈতিক দলও যে এখন শীতনিদ্রা যাপন করছে!
৫০ এর উপরে খনিজ সম্পদ, সব বিদেশীদের হাতে ইজারা দেওয়া।
ইউরেনিয়ামের মত দামী সম্পদ, যার জন্য এত যুদ্ধ, তা কিনা আমরা সাম্রাজ্যবাদীদের বিনা পয়সায় দিয়ে যাচ্ছি! সবকিছু বাদ দিলাম, গ্যাস যে আমাদের কত বড় সম্পদ– তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস ক্ষেত্র আমাদের, সেটাও নিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীরা!
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় কী জানেন?
আমাদের সরকার বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মূল্যের তিনগুণ দামে গ্যাস আমদানি করছে!! পূর্বের অবস্থা তবুও একটু ভালো। যদিও সেই ভালো অবস্থাতেই বহুদিন ধরে দ্বিগুণ দামে গ্যাস আমদানি করা হয়েছিল!
আমরা এটুকুতেই থেমে নেই। এই কেনা গ্যাসেরও অপচয় হচ্ছে। অপচয়ের একটা উদাহরণ দেই, ওয়াসা বিশুদ্ধ পানি দিতে সরবরাহ করতে পারে না, তাই শুধু ঢাকাতেই ৯১ শতাংশ গ্রাহক পানি ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে পান করেন, আর এ জন্য প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়! নিজের সম্পদ দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কিনেও যেন আমাদের শান্তি হয় না!
• বন্যার অবস্থা আর কী বলবো! মূলত বন্যার পরিস্থিতি বেইজ করে ভাবলাম লিখি।
যাদের দেখলাম, তারা গত দুইমাস যাবত পানিবন্দী! ভয়াবহ অবস্থা। সরকার, প্রশাসন, কোন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গোষ্ঠীর দেখা নেই; উদ্যোগ নেই, প্রতিবাদ নেই!
অথচ পুরো ব্যাপারটাই রাজনৈতিক। ভারত বাঁধ খুলে দিচ্ছে, খরার সময় পুড়িয়ে মারছে আবার বর্ষার সময় বন্যায় ভাসিয়ে মারছে!
আমরা কেউ কি এসব নিয়ে কথা বলি? এগুলো নিয়ে কোনো রাজনৈতিক ইস্যু কি দেখেন? কিছু দান-সদকা দিয়েই কি এসব সমাধান করা সম্ভব? কোটি কোটি মানুষ বেকার হচ্ছে, কর্মক্ষম যুবকেরা বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। ঘরে খাবার নেই!
কুর’আনের আয়াত পড়ে ‘এসব আল্লাহর গযব’ বলে চালিয়ে দিলেই কি সমাধান হয়ে যাবে? এই বন্যা, নদী ভাংগনের গযব উন্নত দেশে হয় না কেন? নাকি পানিবিদ্যা, নগরায়ন, নদী ডিজাইন– এসব ইসলামে নেই?
পানি, নদী ভাঙন, বন্যার কারণে টানা ৬ মাস মানুষকে বেকার থাকতে হবে! চালের বস্তা, বিরিয়ানির প্যাকেট দান করার ছবি দিয়ে এসব সমাধান কখনোই সম্ভব নয়। এটা সরাসরি রাষ্ট্রীয় সংকট, সুতরাং এটাকে সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
• দরিদ্র ও অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ, অর্থাৎ সাড়ে আট কোটিতে পৌঁছাচ্ছে, যাদের দৈনিক আয় ১.৯ ডলারেরও কম।
মানুষের আয় কমছে, ব্যক্তি-সঞ্চয় ফুরিয়ে যাচ্ছে, চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। সামষ্টিক বা পরিবারিক সঞ্চয় কমছে বলে ব্যক্তিগত ধার/ঋণের সুযোগ কমছে। বেকারত্বজনিত কর্মহীনতায় পড়ে শিক্ষা খাতে ঝরে পড়া বাড়বে, কৃষি ও ভাসমান কাজে শিশু শ্রম বাড়বে। একই সাথে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ঝরে পড়াও বাড়বে এবং হয়তো পাশের হারও কমে আসবে।
শিক্ষায় ঝরে পড়া বিশাল ছাত্র-সমাজকে নিয়ে কে ভাববে? কোনো ছাত্রসংগঠকে এই ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখছি কি? আর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে, প্রতিবাদ করে ও সংকট তুলে ধরে সমাধানের ব্যাপারে যেন কারোরই কোনো মাথাব্যথা নেই!
• বেকারত্ব আর ঝরে পড়া যখন বাড়বে, সামাজিক অপরাধ কি তখন কমবে? নাকি সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ভয়াবহ আকারে বাড়তে থাকবে?
• রেমিটেন্স আমাদের আয়ের খাতের অন্যতম, অথচ প্রবাস থেকে শ্রমিকরা ফিরে আসছে প্রতিনিয়ত! সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই! এখন পর্যন্ত খালি হাতে দেশে ফিরেছেন ১৪ লক্ষ, খুব শীঘ্রই ফিরবেন আরো ২৩ লক্ষ শ্রমিক!
• কৃষি খাত
• শিল্প খাত
• চিকিৎসা খাত
• যোগাযোগ ব্যবস্থা
এসব নিয়ে আলাপ না হয় আজ না-ই করলাম!
আমার এসব বলাতে কতদূরই-বা কী হবে, তাইনা?
তবে একটা বিষয় বলতে চাই,
♦ কিছুদিন আগেই আমাদের বাজেট পাশ হল। যদিও দায়সারা কপি-পেস্ট বাজেট। কিন্তু বাজেট নিয়ে একটা মানসম্মত পর্যালোচনা দেখেছেন কেউ? (দু-চারজন লেখক, গবেষক ছাড়া? অথচ এই কাজ তো বড় বড় দলগুলোর, বড় ইন্সটিটিউটগুলোর) অন্তত আমার চোখে পড়েনি। যারাও কিছু বিবৃতি দিয়েছে, বুঝাই যায় মুখস্থ বুলি, দেখে দেখে রিডিং পড়ছে!
• সুদ!
আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) বিদায় হজ্জের ওসিয়ত, যা থেকে মুক্ত না হলে মানবতার মুক্তি অসম্ভব। কিন্তু ইসলামপন্থী কাউকেই দেখা যায় না রাষ্ট্রীয় সুদ নিয়ে কিছু বলতে! একটা মানসম্মত প্রস্তাবনা, সুদের কুফল, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা কেউ করেনি। (এবারের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে দ্বিতীয় সর্ব বৃহৎ খাতই হল সুদ! যে দেশে লক্ষ লক্ষ শিশু না খেয়ে বস্তিতে ঘুমায়, যে দেশে একজন শ্রমিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে মাত্র ৮০০০ টাকা বেতন পায়, যে দেশে দরিদ্রতার কারণে মা-বাবা তার আদরের, কলিজার টুকরো সন্তানকে বিক্রি করে দেয়, যে দেশের মানুষ অর্থ যোগানের জন্য চোরা পথে জীবিকার সন্ধানে সাগরে ডুবে মরে, সে দেশ আজ ৬৩ হাজার কোটি টাকা সুদ দিচ্ছে! কখনো প্রশ্ন করেছেন, এই টাকা কাদের দেওয়া হচ্ছে? এই টাকা দেওয়া হচ্ছে দেশের বড় বড় হোল্ডিংকে, যায়নবাদী ব্যাংক ও লবিদেরকে।)
ইসলামী দলগুলো যদি এসব নিয়ে কথা না বলে, প্রতিবাদ না করে, সমাধানের সংগ্রাম না চালায়, আর সামান্য কিছু বললেও যদি তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র পরিসরের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে কি মুক্তি মিলবে কোনোদিন? এটা আদৌও সম্ভব?
• আমাদের রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ভিত্তি ও আয়ের অন্যতম উৎস বিদেশে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাঠানো আয়। কোটি কোটি যোদ্ধাদের দুর্দশা বোঝার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণই যথেষ্ট। গত এক বছরে প্রায় ষোল লক্ষ শ্রমিক বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে খালি হাতে! কিন্তু কেউ কি খবর রেখেছে তাদের? বা তাদের কোনো মৌলিক দাবির? তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে? তাদের পারিবারিক অসহায়ত্বের কোনো সমাধান কি হয়েছে? জমি বিক্রি করে আমাদের টগবগে যুবকরা বিদেশে গিয়ে অসহায় চেহারা নিয়ে রাতদিন খেটে যায়, নির্যাতিত হয়; তাদেরকেই যখন খালি হাতে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তখন একটা লাইনও আমরা উচ্চারণ করি না! কোনো উদ্যোগ ও কর্মসূচি তো বহুদূর!মজার ব্যাপার কি জানেন?
শুধু একটা উদাহরণ দিলেই উপলব্ধিতে আসবে, বাংলার গ্রামগুলোতে ব্যাপকভাবে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প চলমান ছিল, ছোট ছোট উদ্যোক্তার ভূমিকা ছিল, কিন্তু কৃষিতে ভয়াবহ ধ্বস নেমে এসেছে গত কয়েক দশকে! যতটুকুও আছে তা কায়িক শ্রম নির্ভর, আবার সেটাতেও নেই ন্যায্যতা!
সবমিলিয়ে গাণিতিক হারে বেড়েছে নারী বেকারত্ব, নারী অসহায়ত্ব। আর এটাকেই ঘুণে ধরা রাষ্ট্র কাজে লাগিয়েছে এবং পাচার করেছে লক্ষ লক্ষ নারীকে। বর্তমান সরকার ব্যাপকহারে তাদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে; যেখানে অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য বেশ কিছু বাজার বন্ধ, সেখানে সাড়ে তিন বছরে শুধু সৌদি আরবেই গেছেন ২ লাখ ৬০ হাজার নারী। বিগত মাত্র এক বছরে তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। ফলে নির্যাতন, বেকারত্ব বিষয়ে সুরাহায় না গিয়ে সরকার আরো শ্রমিক পাঠানোর ধান্দায় থেকেছে, আছে।
যেটা বলতে চাচ্ছি, শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই দিনে আসছে গড়ে ১১ টি কফিন। এক বছরে এসেছে ৪ হাজার ৮৮১ টি। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যাও অনেক। সাড়ে তিন বছরে শুধু সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিকের লাশ এসেছে প্রায় সাড়ে তিনশ। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আত্মহত্যার এই হার তিন বছর আগের চেয়ে ১৭ গুণ বেশি। তার মানে এই সময়ে তাঁদের ওপর নির্যাতনও ১৭ গুণ বেড়েছে!
কোনটা আত্মহত্যা আর কোনটা হত্যা, তাই বা কে বলবে? কেনই বা পরিবারের জন্য নিবেদিতপ্রাণ আমাদের মায়েরা আত্নহত্যা করে? কেউ আছে আমাদের? আছে কোনো পররাষ্ট্রনীতি, কোনো বৈদেশিক শ্রম ও অধিকার মন্ত্রণালয়? (বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ দেশের ভিতরেও তার নারী শ্রমিকের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা দেয় না। ধর্মীয়শ্রেণি বই লিখে- নারী ফিতনা, কীভাবে পুরুষদের চরিত্র ধ্বংসের কারণ নারী ইত্যাদি।)
যাই হোক, মজার ব্যাপার বলতে যেটা বুঝাচ্ছিলাম সেটা হল, আমাদের দৈন্যদশার কথা।
দেশের প্রধান আয়ের ব্যাপারে, কোটি কোটি শ্রমিকের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দিচ্ছে! এবং তাদেরই ব্যর্থতা এটা!
কিছুদিন আগে দেখলাম ধর্মীয় সেলিব্রিটি/শায়খ (ফেসবুকে তার কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার) ভিডিও বার্তায় বলছেন যে, নারীদের এ লাশ হয়ে ফিরে আসার জন্য নারীরা নিজেরাই দায়ী, তারা গায়রে মাহরাম ছাড়া বিদেশে কেনো গেল! তারা পর্দা বিধান পালন না করে কেনো বাহিরে যায়! পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা তাদের জন্য কাল হয়ে এসেছে!
তার মানে কী?
এ সকল ধর্মীয় সেলিব্রেটিরা রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইসলামী অর্থনীতি, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, নারীর মর্যাদা, খাদ্যসংকট ও বেকারত্বসহ সামাজিক কোনো বিষয়েই ন্যূনতম ধারণা রাখার চেষ্টা করেন না বা সে আলোকে সমাধান খুঁজেন না, সব কিছুকেই ধর্মীয় খোলসে নিজেদের মত করে ব্যাখ্যা করাই তাদের কাজ!
আজ এ রকমটা হওয়াই তো স্বাভাবিক, তাই না? কারণ দাবীগুলো, কথাগুলো বলার কথা ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের, জনগণের নেতাদের। তাই তাদের ব্যর্থতার কারণে ক্রিকেটার, ফেইসবুক হুজুর, টিকটক গায়ক আজকাল জনগণের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে!
• দারিদ্রতার হার যেখানে বেড়ে গিয়ে প্রায় ৪০%, সেখানে অর্থনীতির অন্যতম আরেক ভিত্তি আমাদের সমুদ্র বন্দর, যে বন্দর নানাবিধ অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও সামগ্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে! কিন্তু এ সকল সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার বদলে পুরো বন্দরকে দিয়ে দেওয়া হল ভারতের হাতে!
চিন্তা করা যায়? একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বন্দর নিয়ন্ত্রণ করবে ভিন্ন একটি দেশ। আবার চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সাহেব গর্ব করে বললেন, “দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী অবশ্যই ভারতের পণ্যবাহী জাহাজগুলোকেই আগে প্রায়োরিটি দিতে হবে।” (সূত্র- ডেইলি স্টার, জুলাই ১৬, ২০২০)
আচ্ছা, এসবে কি আমরা রাজনীতি খুঁজে পাই না? এসব কি বড় ইস্যু হতে পারে না? নাকি ইসলাম শুধুমাত্র আর্লি ম্যারেজ, সূরা কাহাফ রিমাইন্ডার, হাতমোজা পরা পর্দা, ডিপ্রেশন আর দাড়িতেই সীমাবদ্ধ?
অথচ আমাদের কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও মুক্তির ক্ষেত্র এই বন্দরগুলো।
তাই কষ্ট নিয়ে এটাই বলতে হয় যে, মানুষের মুক্তি, মানবতার কল্যাণ ও ব্যবস্থাগত উন্নয়ন এসবে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো ভয়াবহভাবে ব্যর্থ!
• সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপারগুলোর একটি হচ্ছে,
আমাদের নৌবাহিনীর অভ্যন্তরীণ শক্তি পুরোটাই এখন ভারতের হাতে! সবাই-ই লক্ষ্য করেছি এসব নিয়ে কোথাও কেউ কথা বলছে না, কোনো এজেন্ডাও নেই!
আমরা জানি যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের বাণিজ্যিক সী লাইন অব কমিউনিকেশন স্লক, ওয়াটার টেরিটরিজ, মেরিন ফিশারিজ, মেরিটাইম সিকিউরিটি, হাইড্রোকার্বন রিজার্ভ ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত। একটি নৌবাহিনীর অন্যতম কৌশলগত অবকাঠামো হলো তার সার্ভেইলেন্স ইনফ্রাস্ট্রকচার। আর ঠিক এটাই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে দাসবৃত্তিক সরকার।
আচ্ছা, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা কোথায় রইলো? কেউ বলতে পারবেন?
মানে আমাদের অভ্যন্তরীণ সব কিছু ভারত জানবে এবং যদি কখনো বাংলাদেশ নেভি ইন্ডিয়ামুখী হয়, তা সাথে সাথেই ট্রেক এন্ড ট্রেইস করতে পারবে তারা।
হায়রে স্বাধীনতা! ৭১ এর চেতনা!
যেখানে আগ্রাসী ভারতীয় বাহিনীর দৈনন্দিন ঝামেলা, সামরিক বেসামরিক অন্যায়, ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রশ্রয়ে গড়ে উঠা সুবিশাল জলদস্যুতা, মৎস্য দস্যুতা, সুন্দরবন দস্যুতার নেটওয়ার্ক, মিয়ানমারের ড্রাগ ট্রাফিকিং নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের ব্লকে ভারত ও মিয়ানমার উভয় দেশের হাইড্রোকার্বন ড্রিলিং অপতৎপরতা– সবই ভারতীয় বাহিনী করছে, সেখানে আমাদের সব তাদের হাতেই তুলে দিলাম!
৯০% মুসলমানের দেশে কেউ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার খবর রাখে না? লেখনী, লেকচার, ইসলাম চর্চা, ইসলামী রাজনীতি পুরোটাই যেন ধর্মীয় কিছু ইবাদতে সীমাবদ্ধ! তালিম-তারবিয়াত আর নসিহতের গণ্ডিবদ্ধ!
• এদিকে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা, নেই চিকিৎসা ব্যবস্থা। রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ আমাদের অপরিচ্ছন্নতা ও ভয়াবহ নোংরা পরিবেশ।
কোথাও কোনো ভালো ড্রেন ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই, সেখানে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে! সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার কী জানেন? গোটা ভারতের সকল আবর্জনা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার অববাহিকার বিপুল পানির স্রোত বহন করে এনে বাংলাদেশের কৃষিভূমি ও নদীগর্ভ হয়ে সাগরে ফেলছে।
বাহ! কি অসাধারণ, তাইনা?
আবার আমাদের অবস্থা তো আমরা ভালভাবেই জানি! সবচেয়ে বড় পরিবেশ দূষণকারী তো আমরা নিজেরাই, নিজেদের কোনো কিছু নিয়েই তো ভাবনা নেই! সেখানে গোটা উপমহাদেশীয় ময়লা, আবর্জনা এসে পড়ছে আমাদের উপরে!
কেউ কি আওয়াজ তুলেছে?
নাকি ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’ শুধু ব্যক্তির ইসলামে? সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যবস্থা– এসবে কি ইসলামের এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয়?
নগরায়ন, নদী-ব্যবস্থা, ড্রেন-ব্যবস্থা কি ইসলামী সভ্যতায় ছিলো না?
নিজের কাছেই প্রশ্ন করি, প্রকৃতি, বাস্তুসংস্থান ও কৃষি ভূমির রূহকে হত্যা করে কিভাবে এই সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকব আমরা?
• সর্বোপরি কথা হল, আভ্যন্তরীণ উন্নয়ন লাগবে। এছাড়া মুক্তি মিলবে না। ঋণ গ্রহণ, হাবিজাবি কথিত উন্নয়নের ডায়ালগ বাদ দিয়ে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি, কৃষিকে উন্নত করতে হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ছোট শিল্প, ছোট উদ্যোগ, মৎস্য শিল্প, পোল্ট্রি ও সবজি উৎপাদনে ব্যাপক পরিমাণে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে কথা বলতে হবে।
জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল কমিটি, জাতীয় সংকট মোকাবেলা কমিটি এবং জাতীয় উন্নয়ন কমিটি করে আগাতে হবে। এসবের জন্য নাজমুদ্দিন এরবাকান হোজার মত সেরা সফলতম উদাহরণ আছে আমাদের সামনে।
♦ আফসোসের বিষয় কি এটা নয়?
• ১৩ কোটি কর্মক্ষম মানুষ,
• বিশাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সম্ভাবনা,
• দুনিয়ার সেরা কৃষি (১০বছরে সেরা ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সম্ভব),
• গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর,
• এত এত খনিজ সম্পদ,
• বনাঞ্চল,
• মৎসশিল্প ইত্যাদি দিয়ে মাত্র বিশটা বছর ভালভাবে কাজ করলে এদেশে বেকারত্ব, খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকট এসবের সমাধান তো হবেই, যাকাত নেওয়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ইসলামী সভ্যতা যার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
# ইসলামী সভ্যতা
# নতুন বাংলাদেশ