শুধু সমালোচনা নয়, চাই বিকল্প প্রস্তাবনা

 

যে কোন সময়ের চলমান ব্যবস্থাগত জুলুম, চতুর্মুখী সঙ্কট মোকাবেলা করে যে সকল ব্যক্তিত্ব বা নেতৃত্ব সামগ্রিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন, তাদের কর্মপন্থা যদি লক্ষ্য করি, তবে দেখতে পাবো এ সকল পরিবর্তনের জন্য তারা এমন সব বিষয়কে সামনে রেখেছিলেন, এমন কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলেন, যার লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে মানব সম্প্রদায় সর্বোচ্চ ত্যাগের নজরানা পেশ করেছে, গোটা জীবনকে উৎসর্গ করেছে। সেই প্রস্তাবনায় মানব সম্প্রদায় এমনভাবে উজ্জীবিত হয়েছে যে, মুক্তির নেশায় তারা অভীষ্ট লক্ষ্যপানে ছুটে চলেছে যুগের পর যুগ। যার কারণে ওই সকল ব্যক্তিগণ বা নেতৃত্বগণ একটি বড় ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সামগ্রিক পরিবর্তনসমূহের অধিকাংশই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিতায় ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখব, মানব সভ্যতার আধুনিক রূপকার রাসূল (সাঃ) এমন একটি সময়ে এসেছিলেন, যখন বিশাল পারস্য সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্যসহ অনেকগুলো সাম্রাজ্য পৃথিবীতে বিদ্যমান। জুলুম, বিভেদ, গোত্রপ্রীতি, অন্ধ জাতীয়তাবাদ, অন্ধ অনুকরণ, মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ ক্ষুণ্ণ করাসহ নানা ধরণের অন্যায়ে পরিপূর্ণ ছিল গোটা বিশ্বব্যবস্থা। এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাসূল(সাঃ) প্রথম যে কাজটি করেছিলেন, তা হল মানবতার সামনে একটি বিকল্প স্বপ্নীল রূপরেখা প্রণয়ন। 

আর এ রূপরেখার অংশ হিসেবে কিছু বিকল্প প্রস্তাবনা তিনি মাক্কী জীবনেই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রস্তাবনাসমূহ হল:

  • আদালত ও সামাজিক নিরাপত্তা
  • গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তি
  • দাসত্ব থেকে মুক্তি
  • মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া
  • মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা
  • নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা
  • খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি

এই বিকল্প প্রস্তাবনাগুলো সাহাবাগণ ও বিভিন্ন সাম্রাজ্যে প্রেরিত দূতগণের নিকট এত বেশি স্পষ্ট ছিল যে, তারা সকলের ঘরে ঘরে, সকলের হৃদয়ে হৃদয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে গোটা দুনিয়ার গুটিকয়েক মানুষ ঈমান আনলেন ও প্রস্তাবনাসমূহ সবার হৃদয়ে কড়া নেড়ে গিয়েছিল।

মদীনায় হিজরতের পূর্বে রাসূল (সাঃ) মদীনার অধিবাসীদের সামনেও বিকল্প প্রস্তাবসমেত একটি নতুন রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন; তা হল, “আমরা যদি একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার সমস্যা অবশ্যই নিরসন করব এবং শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি উন্নত আদালতপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।” 

অতঃপর তিনি যখন মদীনা বা ইয়াসরীবে গেলেন,

  • সর্বপ্রথম আনসার মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সমাজকে ইহসানের উপর গড়ে তুলেন। যা মানবতার ইতিহাসে প্রথম ও শেষ উদাহরণ। এরকম উদাহরণ আর নেই। অন্য জায়গা থেকে আসা মুসলিম ভাইয়ের জন্য নিজের ঘর, জমি, সম্পদ এমনকি প্রিয়তমা স্ত্রীকেও দিয়ে দিয়েছেন। 

  • দ্বিতীয়ত ,তিনি বিকল্প সামাজিক মিলনস্থল ও আদালতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলেন। 

  • তৃতীয়ত ,তিনি ইয়াহুদীদের সুদভিত্তিক বাজারের বিকল্প বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলেন এবং অর্থনৈতিক ভিশন ঘোষণা করলেন, যে ভিশন গোটা মানবতার মুক্তির ভিশন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ইসলাম গোটা মানবসভ্যতাকে একটি উন্নত, ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি উপহার দিয়েছিল। 

উপরোক্ত সকল বিকল্প প্রস্তাবনার দিকেই ছিল সবার নজর, ধ্যান ও সংগ্রাম। একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখব, তারা তাদের নিজস্ব প্রস্তাবনার দিকে যতটা সময় ও শ্রম দিয়েছেন, সে তুলনায় অন্য সভ্যতা ও ধর্মের সমালোচনা করেছেন খুবই কম। যতটুকুই বা করেছেন, তা ইসলামী সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব বুঝাতে, বিকল্প প্রস্তাবনার দূরদর্শীতা বুঝাতে। কেননা দ্বীনের মুজাহিদদের এই বিকল্প প্রস্তাবনা অত্যন্ত যৌক্তিক এবং বাস্তবমুখী। আবার এই যৌক্তিক উপস্থাপনা আর বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার কারণে রাসূল (সাঃ) এর বিকল্প রূপরেখা মিন্দানাও থেকে কর্ডোভা, এক কথায় পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলামকে এমনভাবে পৌঁছে দিয়েছিল; যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১২০০ বছরের মানবতার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়ভিত্তিক সভ্যতা ‘ইসলামী সভ্যতা’।

রাসূল (সাঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণটিও ছিল একটি বিকল্প ভিশনারি প্রস্তাব। সেখানে তিনি তুলে ধরেন:

  • সুদমুক্ত অর্থনীতি তথা অর্থনৈতিক মুক্তি

  • সব ধরণের গোত্র ও জাতীয়তাবাদ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা

  • নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা

  • সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা

এগুলোও ছিল ১২০০ বছরের স্বর্ণালী সভ্যতা গড়ার সবচেয়ে বড় অংশীদার।

প্রশ্ন আসতে পারে – এ বিকল্প প্রস্তাবনা কি শুধু ইসলামী সভ্যতাই দিয়েছে? শুধু ইসলামী সভ্যতাই এর সুফল পেয়েছ?

— না। 

আমরা যদি নেপোলিয়নের ইতিহাস দেখি, তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “আমরা বিকল্প নগর প্রতিষ্ঠা করব”। তার প্রস্তাবনা ছিল এমন– আমরা কোন প্রতিষ্ঠিত সভ্যতাকে আক্রমণ করে বিজয়ী হই বা না হই; কিন্তু একটি বিকল্প সভ্যতা, বিকল্প শহর বা বিকল্প নগর প্রতিষ্ঠা করব।

তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়কে আক্রমণ করে সফলতা পাওয়া যায় না, নিজস্ব ভিত্তি ও বিকল্প প্রস্তাবনাও থাকতে হয় এবং সে প্রস্তাবনাকে বাস্তবায়ন করার যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়।

আর এ পন্থায় লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়াটাই সত্যিকার মুক্তির দিকে ধাবিত হওয়ার প্রথম দরজা।

ইসলামী সভ্যতার পতন (সাময়িক) ও বৃটিশ শাসন পরবর্তী এ সময়ে আমরা এক কণ্টকাকীর্ণ পথে হাঁটছি, কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এখনো তো সেই ইসলাম আছে, মুসলিমরা আছে; কিন্তু আমরা যারা ইসলামের জন্য কাজ করি, কথা বলি, তারা কী করছি? শুধুমাত্র বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সমালোচনা করে যাচ্ছি। 

বিকল্প কোন প্রস্তাবনা, রূপরেখা আমরা আদৌ দিতে পারছি?

দিলেও সেটি আসলে কী বা কতটা কার্যকরী? আবার কোন প্রস্তাবনা দিলে মানুষ সেটি বিশ্বাসও করছে না। কারণ, আমাদের প্রস্তাবনাগুলো শক্তিশালী ভিত্তিসম্পন্ন নয়। সবচেয়ে বড় বাস্তবতার বিষয় হল, আমাদের প্রস্তাবনাগুলোকে আমরা যৌক্তিকভাবে, সর্বোচ্চ মান দিয়ে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারি না। 

অতএব মানুষ আমাদের বিশ্বাস করবে না বা আমাদের উপর আস্থা রাখবে না এটিই তো স্বাভাবিক। অথচ ইতিহাসের দিকে তাকালেই বুঝতে পারব, মোঙ্গল পরবর্তী সময়ে ইবনে খালদুনসহ যাদের হাত ধরে, যাদের চিন্তার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তাঁরাও ইতিহাসকে নতুনভাবে পর্যালোচনা করে নতুন বিকল্প প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন ও নিরন্তর কাজ করে গেছেন, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তির শ্রেষ্ঠতম পথ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

আবার উপমহাদেশে মুসলিম সালতানাতের পতনের পরে বৃটিশরা তাদের শাসন, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন পরিচালনার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থা, সংস্কৃতির শুধু বিরোধীতাই করেনি, বিপরীতে তাদের পরিকল্পিত বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতিকে যৌক্তিকভাবে জাতির সামন তুলে ধরেছিল, ব্যাপকহারে প্রচার করেছিল। যার ফলাফল তারা সাথে সাথেই পেয়েছিল এবং তা আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। যেমন- বৃটিশ সৃষ্ট বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থাকে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগররা স্বাগত জানিয়েছিল।

একইভাবে বৃটিশরা ইসলামী সংস্কৃতির বিকল্প হিসেবে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, যা আজও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। যেমন- বিকল্প সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মক্কা বিজয় দিবসের মতো দিবসগুলোর বিকল্প হিসেবে থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ নানা ধরনের উৎসবের প্রচলন করেছিল, যা আজ তিনশো’ বছর পরে এসে আমাদের সমাজের প্রতিষ্ঠিত কর্মসূচির বিপরীতে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের উৎসবগুলোই হারিয়ে গেছে।

উপমহাদেশের এই ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রেণি কেন বৃটিশদের প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছিল? কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল এ শিক্ষাব্যবস্থা বা সংস্কৃতির এমন একটি ভিত্তি রয়েছে যা মুসলমানদের দমিয়ে তাদের ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা করবে। হিন্দুদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিহিত আছে এই বিকল্প ব্যবস্থাতেই। এর মাধ্যমে তারা তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি নির্মাণ করতে পারবে। 

এজন্য ব্রিটিশরা রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে শুধু জায়নবাদকেই প্রতিষ্ঠিত করেনি, সাথে ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতির নতুন ধারাকে বঙ্কিমদের লেখনী, উপন্যাসের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত করতে সক্ষম হয়েছিল। যার ফলাফল আজও আমরা গোটা ভারত জুড়ে দেখতে পাচ্ছি।

ব্রিটিশ পরবর্তী সময়ে মুসলমানগণ যখন তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলে, নির্দিষ্ট পরিচালনার জায়গা থেকে, আদালতের জায়গা থেকে অনেক দূরে সরে যায়, যখন গোটা মানবতা আর্তচিৎকার দিতে থাকে এবং ধ্বংসের পথপানে এগিয়ে যেতে থাকে; সে কঠিন মুহূর্তে আল্লামা ইকবাল সহ যেসব মনীষীগণ ইসলামী সভ্যতার পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছিলেন, তারা কিন্তু একটি বিকল্প জাগরণের প্রস্তাবই দিয়েছিলেন। তারা একটি বিকল্প রাজনৈতিক মডেল উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নতুন ধারার ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে আন্দোলনের ডাক, সে বিকল্প প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি অঞ্চলের, প্রত্যেকটি দেশের মুসলমানগণ তথা গোটা উম্মাহ নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছিল। 

অতএব যখনি কোথাও কোন বিকল্প সুদুরপ্রসারী প্রস্তাবনা এবং আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন একটি ভবিষ্যৎ জনগণ দেখতে পায়, তখনি তারা সে দিকে ধাবিত হতে থাকে। ইতিহাস তার সাক্ষ্য প্রতিনিয়তই দিয়ে যাচ্ছে। 

এজন্য “আহকামুস সুলতানিয়্যাহ” গ্রন্থে ইমাম আল মাওয়ারদী বলেছিলেন, “একটি রাষ্ট্রকে স্থায়িত্ব দান করে সেই রাষ্ট্রের আগামীকালের ওয়াদা।” অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্রের জন্য আমরা কী ওয়াদা তৈরি করছি, জনগণকে কী ভবিষ্যৎ দেখাচ্ছি, সেই ভবিষ্যতকে তাদের কাছে যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে পারছি কিনা– এসবের উপরেই গোটা জাতির ভবিষ্যৎ পথযাত্রা নির্ভর করছে।

  • কিন্তু আমরা কি আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে বা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী তা যৌক্তিকভাবে কোথাও তুলে ধরতে পেরেছি? 
  • আমরা বর্তমান ব্যবস্থার অক্লান্ত সমালোচনা করে যাচ্ছি, বিপরীতে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি প্রস্তাবনাও কি রয়েছে আমাদের? 
  • আদালত, সামাজিক নিরাপত্তা ও ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোন রূপরেখা কি তৈরি আছে?
  • যদি না থাকে, তবে এসব বিষয় জাতি কিভাবে জানবে? আর না জানলে গোটা জনসম্প্রদায় কিভাবে জেগে উঠবে? কোথায় খুঁজে পাবে তাদের আত্মবিশ্বাস?

আমরা যেভাবে চলছি, আমাদের এসব কার্যক্রমের ফলাফল মূলত শূন্য। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। তা হল, একজন ব্যক্তি সাঁতার কেটে একটি নদী পার হতে চাইলো। কিন্তু ঘন কুয়াশা থাকার কারণে সে নদীর অপরপ্রান্ত দেখতে পায়নি। সাঁতার কাটতে কাটতে তীরের কাছাকাছি পৌঁছেও সে ভাবলো হয়ত অনেক পথ বাকি, তাই সে ফিরে যেতে চাইলো। ফিরে আসতে গিয়ে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে মাঝ নদীতে ডুবে মারা গেলো। এক্ষেত্রে যদি কুয়াশা না থাকতো, তবে সে নদীর অপর প্রান্ত দেখতে পেতো এবং খুব দ্রুতই আত্মবিশ্বাস নিয়ে, শরীরের সমস্ত সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে তীরে পৌঁছাতে পারতো।

আজকে গোটা উম্মাহ এর সামনে এক অজানা কুয়াশা, অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার বিরাজমান। যার কারণে আমরা জানি না আমাদের সেই তীর কোথায়! সে বন্দর কোথায়! অর্থাৎ তীর, বন্দর বা বিকল্প প্রস্তাবনা, ভিশন আমাদের সামনে নেই। অথচ এ তীর ছাড়া কোন জাতিকে, কোন সম্প্রদায়কে বা গোটা উম্মাহকে কখনই জাগিয়ে তোলা সম্ভব নয়, কোন লক্ষ্যপানে ধাবিত করাও সম্ভব নয়। যতটুকুই বা হয় তা স্থায়ী হয় না, মাঝ নদীতে ডুবে যায়।

এ জন্য একটি বিকল্প প্রস্তাবনাকে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবী। এটিও মনে রাখতে হবে, শুধু বিকল্প প্রস্তাবনা বা রূপরেখা প্রণয়নই যথেষ্ট না, এ প্রস্তাবনা বা রূপরেখাকে হতে হবে শক্তিশালী ভিত্তিসম্পন্ন ও যৌক্তিক। তা না হলে সেটি ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে থেকে যাবে, ইতিহাসের গতিপথকে পরিবর্তন করতে পারবে না। 

পরিশেষে, এই শতাব্দীর অন্যতম মুজাহিদ নাজমুদ্দিন এরবাকান এর উদাহরণ দিবো, যিনি শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ বা একজন বিজ্ঞানীই ছিলেন না; সকল ক্ষেত্রেই তিনি বিকল্প প্রস্তাবনা ও রূপরেখা তুলে ধরেছেন, বাস্তবায়নের জন্য সুনিপুণভাবে কাজ করে গেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উত্তম মিরাস ডি-৮ রেখে গেছেন। তার বিকল্প প্রস্তাবনাগুলোই পরবর্তী প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে, আমরা আজ স্বপ্ন দেখতে শিখছি, গোটা দুনিয়াব্যাপী এক পুনর্জাগরণের ঢেউ দেখতে পাচ্ছি, বহু যোগ্য মুজাহিদ ও আলেম তৈরি হয়েছে, হচ্ছে।

আমাদের লক্ষ্য পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বর্তমান জুলুমপূর্ণ ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী সভ্যতার সঠিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে তা বাস্তবায়নের ভিশনারি লক্ষ্যপানে আমাদের অবশ্যই অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় কাজ। এজন্যেই নাজিমুদ্দিন এরবাকান বলেছিলেন, “আমরা ডাঙ্গায় বিকল্প জাহাজ নির্মাণ করেই যাব, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনই সমুদ্রকে আমাদের নিচে এনে দেবেন, ইনশাআল্লাহ্।

 

১০৪৮ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়। পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।
Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়। পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top