মুসলিম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস সমাপ্ত করার পূর্বে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ সম্বন্ধে একটি সংক্ষিপ্ত অধ্যায় এখানে সংযোজিত করা একান্ত আবশ্যক মনে করছি, যাতে বাংলার মুসলিম সমাজ পূর্ব উল্লেখিত অনৈসলামিক কার্যকলাপ ও রীতিনীতি হতে মুক্ত হয়ে সে আদর্শ অনুসারে নিজেদের জীবন গঠনে প্রয়াসী হতে পারেন। বস্তুতঃ মানব মনের গতি পরিবর্তনকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ এবং তিনিই সর্বসিদ্ধিদাতা রহমানুর রহীম। আমরা সঠিক পথের সন্ধান লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর-ই আশ্রয় কামনা করি।

‘ইসলামের আদর্শ’ কথাটি অত্যন্ত গভীর, অত্যন্ত ব্যাপক। ইসলামের প্রকৃত স্বরূপের সম্যক উপলব্ধি করতে না পারলে সে আদর্শের যথাযথ ধারণা করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। অথচ এই উপলব্ধির জন্য জ্ঞানের ও ভাবের মধ্যে দিয়ে যে সাধনার আবশ্যক হয়, তার আয়েশ স্বীকারে আমরা অনেক সময় কুণ্ঠিত হয়ে থাকি। পক্ষান্তরে সে সাধনায় প্রবৃত্ত হওয়ার পূর্বে যে নিষ্ঠা ও সংকল্পের দরকার হয়ে থাকে, আমরা তারও বড় একটা ধার ধারতে চাই না। ফলে অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, আলোচনার সময় একদল সেই আদর্শকে টেনে-হিঁচড়ে নিজেদের ধারণা ও সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্য করে নিতে প্রয়াস পাচ্ছেন। আর এক দল নিজেদের সাময়িক খেয়াল, হুজুক বা পরিকল্পনার সাথে সে আদর্শকে অসামঞ্জস্য মনে করে সম্মোহিত মুসলমানকে তার মায়াপাশ মুক্ত করে ফেলার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করছেন। এরূপে ইসলামী আদর্শের মারাত্মক সংকোচ ঘটিয়ে অথবা অন্যায়রূপে তার সংহার সাধনের চেষ্টা করে নিজ নিজ শিক্ষা, রুচি ও আবশ্যকতা অনুসারে সাময়িকভাবে বর্তমানে যে স্বস্তি বা তৃপ্তি লাভের চেষ্টা করা হচ্ছে, বস্তুতঃ তা আত্মবঞ্চনার এবং সামাজিক হিসাবে আত্মহত্যার নামান্তর মাত্র।

এ আলোচনার সময় আমরা একেবারে ভুলে যাই যে, সকল যুগের, সকল দেশের এবং সকল স্তরের ও সকল অবস্থার মানব সমাজের জন্য এক স্থায়ী শাশ্বত ও স্বর্গীয় আদর্শের নাম ‘ইসলাম’। নিজের সংস্কারের সাথে সামঞ্জস্য করে নেওয়ার জন্য তার সেই বিরাটতা খর্ব করতে যাওয়া যেমন অন্যায়, সাময়িক পরিকল্পনাবিশেষের সাথে অসামঞ্জস্যের আশঙ্কায় তাকে অস্বীকার করতে যাওয়াও সেরূপ অসমীচীন, অযৌক্তিক। স্মরণ রাখতে হবে যে, পরিবর্তনশীল বর্তমানের কল্পিত বাস্তবতার মধ্যে কোন আদর্শকে আবদ্ধ করতে যাওয়া, আর আদর্শ শব্দের মূল তাৎপর্যকে অস্বীকার করা একই কথা। ইসলামের আদর্শ সম্বন্ধে বিচারে প্রবৃত্ত হওয়ার সময় এই সত্যের যথাযথ প্রণিধান করা বিশেষরূপে আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব মানবতাকে স্তবকে স্তবকে উন্নীতকরতঃ তাকে ক্রমশঃ উন্নত হতে উন্নততম আদর্শের দিকে আকর্ষণ করাই ইসলামী আদর্শের বিশেষত্ব।

لتركين طبقا عن طبق
মানুষকে নিশ্চয়ই স্তরে স্তরেআরোহণ করতে হবে।

পক্ষান্তরে-

يا ايها الانسان انك كادح الى ربك كدحا فملاقيه .
‘হে মানব! নিজের রবের পানে (অগ্রসর হওয়ার জন্য) তোমাকে যথেষ্ট প্রচেষ্টা করে যেতে হবে, তার পর এমন এক অবস্থা আসবে, যখন তুমি তাঁর ‘লেকা’ বা মিলন লাভ করতে পারবে।’

সেজন্য ইসলামের আদর্শ একদিকে যেমন বর্তমানকে অস্বীকার করে না, অন্যদিকে বর্তমানকে মাত্র অবলম্বন করে তার মধ্যে সমাপ্ত হয়ে যায় না। সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না। ভবিষ্যতের অসংখ্য অনাগত বাস্তব নূতনের সৃষ্টির জন্য চিরকালই সে আদর্শের সদা সজ্জন পটীয়সী (অসাধ্য সাধনে পটু) শক্তির অনুসরণ করে চলতে থাকবে। কোরআনে বর্ণিত বিশ্বমানবের এই অবিরত অপ্রতিহত সাধনাকে সুনিয়ন্ত্রিত, সুপরিচালিত ও সাফল্যমণ্ডিত করার নিমিত্ত, সে আদর্শের আবশ্যক চিরকালই হতে থাকবে। ইসলামের এ আদর্শকে তার যথাযথরূপে দর্শন করার প্রয়াস যারা পেয়েছেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান জগতের জ্ঞান সাধনার মূলীভূত পিপাসার উপলব্ধি করতে যারা সমর্থ হয়েছেন, তাঁরা ন্যায়তঃ স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মানুষের চিন্তার ক্রমমুক্তি এবং তার জ্ঞানের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের স্বরূপ ও তার আদর্শও অধিকতর সুন্দর, অধিকতর উজ্জ্বল এবং অধিকতর ব্যাপকরূপে বিকশিত হতে থাকবে, তার সত্যতা অধিকতর দৃঢ় যুক্তি প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। এটা ভাবপ্রবণতার যুক্তিহীন অভিব্যক্তি নয়। ভাবহীন যুক্তিবাদের অনর্থক আত্মম্ভরিতাও নয়। মধ্যাহ্ন মার্তণ্ডের ন্যায় এটা স্বয়ংপ্রকাশ ও স্বয়ংপ্রমাণ অকাট্য সত্য, আজকের জ্ঞান গবেষণার বহু সিদ্ধান্তকে এই দাবির প্রমাণরূপে পেশ করা যেতে পারে। কিন্তু বর্তমান প্রবন্ধে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা মূল প্রসঙ্গের অবতারণা করা হবে মাত্র।

ইসলামী সভ্যতার সত্যিকার স্বরূপকে যথাযথভাবে জ্ঞাত হতে ও গ্রহণ করতে হলে, সর্বপ্রথমে জানতে হবে আল্লাহর প্রেরিত কোরআনকে সেই কোরআনের বাহক ও বাস্তবস্বরূপ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফাকে। প্রকৃতপক্ষে কোরআন ভাব, আর মোস্তফা তার অভিব্যক্তি, কোরআন শিক্ষা এবং হজরত তার আদর্শ। ভাব ও অভিব্যক্তির এই মহা সম্মিলনের সারাৎসার যা, তাই হচ্ছে-‘ইসলামের আদর্শ’। বলা বাহুল্য, এ আদর্শের বিচার বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হওয়ার পূর্বে তার মূল উৎসের বিশেষ পরিচয় গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। এ সাধনায় প্রবৃত্ত হতে হলে সাধকের প্রথম দরকার হবে- যথার্থ সত্যানুসন্ধিৎসার, তার গভীরতর সত্যলিন্সার ও অবিচল সংকল্পের। সেজন্য কোরআনের প্রথম পারার প্রথম আয়াতে, বুখারীর প্রথম পারার প্রথম হাদীসে এই নিষ্ঠা ও সংকল্পের সবক পড়িয়া দেওয়া হয়েছে। এই নিষ্ঠা অর্জন ও সংকল্প গ্রহণের পর, নিজের শক্তির পরিমাণ ও ‘অধিকারে’র আয়তনটুকুকে অনতিরঞ্জিতরূপে পেশ করে বুঝে নিতে হবে। অন্যথায় সব সাধনাই পণ্ড হয়ে যাবে। তার পর নিজ নিজ শক্তি ও অধিকার অনুসারে অনুশীলনে প্রবৃত্ত হতে হবে। কোরআন সকল দেশের, সকল যুগের সমস্ত মানুষের সর্ববিধ মঙ্গল ও মুক্তির জন্য প্রেরিত আল্লাহর শাশ্বত বাণী আর মোস্তফা হচ্ছেন সে বাণীর স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তব বিকাশ। বিবি আয়েশাকে হজরতের ‘চরিত্র’ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বলেন- خلقنه القرآن (কোরআন হচ্ছে তাঁর চরিত্রের বাস্তব প্রকাশ)।

অনুমান বা অনুগতির বশবর্তী হয়ে একথা বলছি না, কোরআন হাদীসের বহু দলিল দ্বারা এটা স্পষ্টরূপে প্রমাণ হচ্ছে এবং মুসলমান আলেমগণ তা এক বাক্যে স্বীকারও করে থাকেন। অতএব এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, কোরআনের শিক্ষায়, সকল যুগের, সকল মানুষের, সমস্ত সমস্যার সমাধানে ইসলামের যোগ্যতায় এবং মোস্তফা জীবনের স্বর্গীয় আদর্শ কস্মিনকালে কোনোদিক থেকে কোন প্রকারের স্থবিরতা স্পর্শ করতে পারে না। তা চির সরস, চির সবুজ, চির সজীব, চির সচল। সুতরাং সকল যুগের সকল মানুষের জন্য তা চির বরণীয় ও চির অনুকরণীয় আদর্শ হওয়ার যোগ্য। এজন্য হযরত স্বয়ং ইসলাম ও ফিতরাত (প্রকৃতি বা Nature)-কে অভিন্নরূপে বর্ণনা করেছেন।

কোরআনেও ‘দীন’ ও ‘ফিতরাত’ একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সংক্ষেপে এর তাৎপর্য এই যে, প্রকৃতি জিনিসটা যেমন ব্যাপক হলেও দুনিয়ার প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে তার একটা স্বতন্ত্র প্রভাব বিদ্যমান, তা যেমন যুগপৎভাবে পুরাতন ও নিত্য উভয়ই, সেরূপ দুনিয়ার প্রাকৃতিক ধর্ম ইসলাম ব্যাপক হয়েও যুগে যুগে অভিনব স্বরূপ নিয়ে প্রকটমান এবং যুগপৎভাবে তা সনাতন ও শাশ্বত উভয়ই। বুড়ো হয়ে গেছে বলে প্রকৃতির আইন-কানুন যেমন অচল হয়ে পড়ে না, প্রাকৃতিক ধর্ম ইসলামও সেরূপ কখনো ক্ষয়প্রাপ্ত হয় নি, হবেও না। আদম চোখ মেলে দেখেছিলেন এই ইসলামকে, জগতের সকল দেশের সমস্ত নবী-রাসূল, সমস্ত সত্যিকার মুনি ঋষি এই ইসলামের একেক দিকের সাধনা করে গেছেন এবং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত আল্লাহর কালামগুলো এই ইসলামের একেক অংশের একেকটা ভাবধারার মহিমা কীর্তন করে গেছে। তা পুরাতন অথচ নিত্য, তা সনাতন অথচ শাশ্বত। এটা ইসলামের একটা প্রধান অভিজ্ঞান এবং স্পষ্ট করে বলা আবশ্যক যে, শেষ নবী ও শেষ ধর্মের দাবি, একমাত্র এই সত্যের উপর তার সমীচীনতা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে। নাহলে দাদা আদম হতে হযরত ঈসা পর্যন্ত দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে এই বহু সংখ্যক কিতাব ও হাজার হাজার নবী আসার অনুকূলে কার্যকারণের যে হেতুবাদ, সে কারণ পরম্পরার তিরোধান তো এখনো হয় নি?

 

আমরা উপরে যে সকল মতের অভিব্যক্তি করেছি, অন্তত ‘নীতির’ হিসেবে তা সকলের স্বীকৃত। এই মতের প্রত্যেক দিকের যথাযথ আলোচনার জন্য স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনার আবশ্যক হবে। দলিল প্রমাণ উল্লেখ করা আজ সম্ভব হবে না, তা পূর্বে উল্লেখ করেছি। কিন্তু এ সত্যটা পরিস্ফুট করার জন্য এখনকার মত রাসূলে কারীমের একটি হাদীস স্বয়ং তাঁর মুখের বাণী, নিম্নে উদ্ধৃত করে দেওয়া নিতান্ত আবশ্যক মনে করছি।

হযরত আলী বলছেন, একদা হযরত সমবেত ভক্তবৃন্দকে সম্বোধন করে বললেন- “মুসলমানগণের উপর অতঃপর একটা ঘোর বিপদ, একটা ভয়ংকর পরীক্ষা উপস্থিত হবে।” আলী বলছেন, আমি আরজ করলাম- হযরত! সে বিপদ হইতে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী? হযরত বললেন- “উপায় আল্লাহর কিতাব। অতীতের সব বার্তা, ভবিষ্যতের সকল পয়গাম এবং বর্তমানের সমস্ত করণীয় এই কেতাবে নিহিত রয়েছে। এই কিতাব হচ্ছে দুনিয়ার সকল সমস্যার সার্থক সমাধান। সাবধান! এটাকে ত্যাগ করলে অবিলম্বে তোমাদের টুকরা টুকরা উড়িয়ে দেওয়া হবে। এটাকে ছেড়ে পথের সন্ধান করতে গেলেই তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। এই কোরআন হচ্ছে আল্লাহর সুদৃঢ় রজ্জু, তাঁর প্রেরিত জ্ঞানময় শিক্ষা এবং তাঁর নির্ধারিত সহজ-সরল মুক্তিপথ।” অধিকন্তু এই কিতাবের বিশেষত্ব এই যে-

لا تشبع منه علماء ولا يخلق على كثرة الرد ولا تنقض عجائبه

অর্থাৎ, (ক) বিদ্বোৎসমাজ যতই তার অনুশীলন করবেন, নিত্য-নূতন সত্যের সন্ধান পেয়ে তাঁর জ্ঞানলিপ্সা ততই বেড়ে যাবে, সে জ্ঞানের বা জ্ঞানলিপ্সার পরিসমাপ্তি হবে না। (খ) পুনঃ পুনঃ ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও তা কখনও পুরাতন বা অব্যবহার্য হয়ে যাবে না। (গ) তার অভিনবত্ব কখনোই শেষ হয়ে যাবে না।

হযরত রাসূলে করিমের এই হাদীস হতে কোরআনের ও ইসলামের স্বরূপ অত্যন্ত স্পষ্টরূপে দেদীপ্যমান। ইসলামের আদর্শের অনুসন্ধান করতে হবে এই কোরআনে। হযরতের দেওয়া এই দিব্য আলোকের সাহায্যে। অশেষ পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে, এ জ্ঞান হতে মুসলমান আজ নিজেকে বঞ্চিত করে নিয়েছে, এ আদর্শ হতে সে আজ লক্ষ যোজন দূরে সরে গেছে। তাই আজ সে অবশ-অচলভাবে নিজের জাতীয় জীবনকে এমন দুর্বহ বলে মনে করছে, তার স্থবির পঙ্গু মস্তিষ্কটা কেবল বিভীষিকার স্বপ্ন দেখছে; আর তার আবিষ্ট আড়ষ্ট কণ্ঠে কেবল মরণের আর্তনাদ জেগে উঠছে।

ইসলামের প্রকৃত আদর্শের অনুশীলন ও অনুসরণ করতে হলে কোরআনকে অবলম্বন করতে হবে। একথা প্রত্যেক মুসলমান-ই অন্ততঃ মৌখিকভাবে স্বীকার করেন। কিন্তু কোরআনের সত্যিকার স্বরূপকে কার্যতঃ অস্বীকার করিতেও অনেকে আবার কোন প্রকার কুণ্ঠা বোধ করেন না। একটা উদাহরণ দিয়ে কথাটা পরিস্ফুট করার চেষ্টা করব।

দেশাচারের চাপ, পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব এবং পূর্ববর্তীগণের মতের অন্ধ অনুগতি দ্বারা মানুষের জ্ঞান, বিবেক ও তার চিন্তাধারা বিকৃত ও বিপথগামী হয়ে পড়ে এবং কোনো সত্যকে দর্শন বা গ্রহণ করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে দাসত্বের এই লা’নত হইতে মুক্ত করে দেওয়াই যে ইসলামের একটি অন্যতম সাধনা, যাঁরা সরাসরিভাবেও কোরআনের কোনো অংশ একবার পাঠ করে দেখেছেন, সে কথা তাঁদেরকে মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করতেই হবে।

কিন্তু কোরআন এখন আর বিশ্বমানবের সাধারণ সম্পদ নয়, হযরতের বর্ণিত তার সমস্ত গুণ এখন তিরোহিত হয়ে গেছে! দীর্ঘ এক সহস্র বৎসর পূর্বে সেই অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষিত হয়ে গেছে! কারণ, আমাদের পুরোহিত পণ্ডিতরা ব্যবস্থা দিয়েছেন যে, কোরআন সম্বন্ধে যা কিছু করার ছিল, যা কিছু ভাবার ছিল, যা কিছু বলার ছিল, বোজর্গানে দীন ও সালফে সালেহীন বহু পূর্বে সে সমস্ত ভেবে ও বলে শেষ করে রেখেছেন। কেবল সওয়াব হাসিল করার জন্য তুমি কোরআন শরীফের আবৃত্তি মাত্র করতে পার, ভক্তির উচ্ছ্বাস দেখাবার জন্য তা চুম্বন করতে পার, তা সুশ্রী যুজদানে পুরে বরকতের জন্য ঘরের মাচার উপর তুলে রাখতে পার; কিন্তু তার অন্তর্নিহিত ভাব ও শিক্ষা সম্বন্ধে কোনো প্রকার আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়ার কোনো অধিকার তোমার নেই। আর তুমি কেন্! কোনো স্যার, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমেরও আজ সেই অধিকার নাই। কস্মিনকালেও আর হবে না। অধিকন্তু তাফসিরের রাবীগণ যে আয়াতের, যে শব্দের, যে অর্থ এবং যে তাৎপর্য বর্ণনা করে গেছেন, তাতে এক বর্ণের এক বিন্দুর যোগ-বিয়োগ হতে পারবে না। কারণ, ইজতিহাদের দরজাও বহু শতাব্দী পূর্বে চিরকালের তরে সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া গেছে। পাঠক-পাঠিকাগণ, কোরআনের ও হযরতের ইসলামের সাথে মানুষের রচিত এই অভিনব ইসলামের তুলনায় সমালোচনা করে দেখুন, আর বিচার করে বুকে হাত দিয়ে বলুক এটা অপেক্ষা ইসলামের সর্বনাশ আর কী হতে পারে?

ফলে মানুষের মন ও মস্তিষ্কের নিগড়গুলো ভেঙ্গে দেয়াই ছিল ইসলামের প্রথম সাধনা, তাই আজ ইসলামের নামে অভিহিত হচ্ছে। জ্ঞানের এই মর্মন্তুদ আত্মরক্ষার উপমা নেই, তাই মুসলমানের এই অচিন্ত্যনীয় অধঃপতনেরও তুলনা নেই!

অথচ কোরআন প্রেরণ করার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে স্বয়ং আল্লাহ আমাদেরকে বলে দিচ্ছেন-

کتاب انزلناه اليك مبارك ليدبروا آياته وليذكر اولوا الباب.
“হে মোহাম্মদ! এই কল্যাণময় মহাগ্রন্থ আমরা তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করেছি, যেন সকলে তার আয়াত (বচন, যুক্তি, প্রমাণ) গুলো অনুশীলন করে দেখে, বিশেষতঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ যেন তা হতে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা সোয়াদ)

চিন্তাশীল পাঠক, আল্লাহর এই আয়াতের সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করে দেখুন!

ولقد يسرنا القرآن للذكر فهل من مذكر ؟
লোকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে—এই উদ্দেশ্যে বস্তুতঃ কোরআনকে আমরা নিশ্চয়ই সহজ করে দিয়েছি। অতএব আছে কি কেউ চিন্তাশীল?

আল্লাহর এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চাও, হে আলেম সমাজ! আল্লাহকে ভেবে একবার মুক্ত কণ্ঠে তা প্রকাশ কর। আজ অগণিত আল্লাহর বান্দা তার তখতে জালালকে সম্বোধন করে তোমাদের নামে যে নালিশ করছে, তার উত্তর দেও! শ্রবণ কর, লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের সমবেত আর্তনাদ: হে আল্লাহ! আমরা তোর আহ্বানে সাড়া দেয়ার, তোমার পবিত্র কালামের অনুশীলন করার জন্য প্রস্তুত, লালায়িত। কিন্তু তোমার প্রিয় নবীর নায়েব হওয়ার দাবিদারগণ আজ জোর করে তোর প্রদত্ত সেই ‘শিক্ষা ও রহমত’ হতে আমাদেরকে বঞ্চিত রাখছে!

আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিনে পরওয়ার দিগারের হুযুরে ফরিয়াদ করে বলবেন-

رب ان قومي اتخذوا هذا القرآن مهجورا –

হে পরওয়ারদিগার! আমার কওম এই কোরআনকে তামাদি বলে স্থির করে নিয়েছিল।২

আল্লাহ বলছেন, বিশ্বমানবের জ্ঞান আহরণের জন্য কোরআনকে সহজসাধ্য করে দেয়া হয়েছে। আর মানুষের অভিমত তার প্রতিবাদ করে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করছে, কোরআন অত্যন্ত কঠিন, মানুষের পক্ষে একেবারে অবোধগম্য। আল্লাহ বলছেন সর্বসাধারণকে কোরআনের অনুশীলন করতে, জ্ঞানবান ব্যক্তিবর্গকে তা হতে তত্ত্ব আহরণ করতে। তিনি এটিও বলে দিচ্ছেন যে, দুনিয়ায় কোরআনের আবির্ভাব হয়েছে কেবল এই উদ্দেশ্যে। আর মানুষের ফরমান আমাদের জ্ঞান গবেষণার মাথায় আঘাত করে আমাদেরকে বলপূর্বক তা হতে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করছে। কোরআনের বাহক হযরত রাসূলে করীম বলছেন, ভবিষ্যতের কোন যুগেও কোরআনের অভিনবত্ব শেষ হবে না, তার সজীব সচল স্বরূপের বিকাশ অনিত্য নয়, ক্ষণস্থায়ীও নয়। তিনি স্পষ্টকণ্ঠে বলে দিচ্ছেন, বিশ্বের জ্ঞানীজনেরা যুগে যুগে যতই কোরআনের অনন্ত জ্ঞানভাণ্ডারের সেবা করবেন, তার অনন্ততার স্বরূপও সঙ্গে সঙ্গে ততই স্পষ্টতর হয়ে উঠবে। তা ফুরিয়ে যাবে না, পুরনো হবে না, কোন যুগে অচল হয়ে যাবে না। আর সেই রসূলের নায়েবগণ বলছেন সে ভাণ্ডার ফুরিয়ে গেছে, সে উৎস শুকিয়ে গেছে। এখন আল্লাহর বাণী অচল হয়ে পড়ছে, তার আসন অধিকার করেছে তাফসীরের রেওয়ায়েত!

এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে, আল্লাহর কালাম বড়, না কয়েকজন মৌলবীর ফতওয়া বড়? অর্থাৎ, এখন মুসলমানের চোখে আল্লাহ ও কয়েকজন মৌলবীর মধ্যে কে বড় কে ছোট, কার আদেশ পরিত্যাজ্য এবং কার হুকুম অগ্রগণ্য? এই প্রশ্নের মীমাংসার উপর মুসলমানের ও ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে। আমাদের মুখে এই উক্তি শুনে অনেকে হয়ত ক্রোধে অভিমানে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছেন। এমন সাংঘাতিক কথা, এমন ভীষণ উক্তি! এক আল্লাহর উপাসক মুসলমান, অনাবিল তাওহীদের শ্রেষ্ঠতম সেবক মুসলমান, তার সম্বন্ধে এমন জঘন্য অভিযোগ কি ক্ষমা করা যেতে পারে! আমাদের এই উক্তি যদি বাস্তবে কোন মুসলমানের অন্তঃকরণে প্রকৃত ক্রোধের সৃষ্টি করতে পারে, তা হলে আমরা বিশেষ সুখী হব। কিন্তু এক্ষেত্রে বিনীতভাবে জানিয়ে রাখতে চাই যে, আল্লাহর শাশ্বত বাণী কোরআন মুসলমানের এই লজ্জাজনক অধঃপতনের আভাস দিয়ে রাখতেও ত্রুটি করেনি। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের চরম আদর্শ মুসলমানের সম্মুখে উপস্থিত করে কোরআন নিজেই বলছে-

اتخذوا احبارهم ورهبانهم اربابا من دون الله والمسيح بن مريم

আল্লাহকে পরিত্যাগকরতঃ নিজেদের আলেম ও পীর-ফকিরকেই তারা রব বানিয়ে নিয়েছে। আর রব বানিয়েছে মরিয়মের পুত্র মসীহকে।

এই আয়াতের অর্থ ও তাৎপর্য কী! তা নিয়ে বাক বিতণ্ডার কোন আবশ্যকতা নেই। কারণ, যার উপর এটি অবতীর্ণ হয়েছিল, তিনি স্বয়ং এই আয়াতের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আদি ইবনে হাতেম সাহাবী হযরতের মুখে এই আয়াতের আবৃত্তি শুনে একটু বিস্মিতভাবে বললেন-কই, তারা তো নিজেদের আলেম ও পীরদেরকে খোদা বলে গ্রহণ করেনি। হযরত তখন বুঝিয়ে বললেন—তাদের পণ্ডিত ও সাধুরা যে কাজকে সংগত বলে ব্যবস্থা দেয়, তারা বিনা বিচারে তাকে হালাল বলে গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে ঐ আলেম ও ফকিরেরা যে কাজকে নিষিদ্ধ বলে ফতোয়া দেয়, তারা চোখ বন্ধ করে তাকে অন্যায় বলে ধরে নেয়। এটিই হচ্ছে আল্লাহকে ত্যাগ করা, এটিই হচ্ছে পীর পুরোহিতদের আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয়া, আর এটিই হচ্ছে ঐ শ্রেণীর আলেম ও পীর ফকিরদের স্পষ্ট খোদায়ী দাবি! অতএব আমরা দেখছি যে, কোরআনের প্রকৃত স্বরূপের যথাযথ ধারণা করতে হলে মানুষকে খোদার আসন হতে নামিয়ে ফেলতে হবে, বহু খোদার পূজা পরিত্যাগ করে মুসলমানকে আবার এক আল্লাহর বান্দা হতে হবে, আল্লাহর দেয়া মুক্ত জ্ঞানকে নিয়ে মুক্ত ইসলামের সেবায় প্রবৃত্ত হতে হবে। পথের কাটাগুলিকে দলে মথে গন্তব্যের পানে চলে যেতে হবে। এতে প্রথম প্রথম পায়ে এক আধটু বাঁধবে, তা সয়ে নিতে হবে।

 

আরবী ভাষা পূর্বের ন্যায় জীবন্ত ও সচল হয়ে আছে। ব্যাকরণ অলঙ্কার অভিধানাদির কত অমূল্য পুস্তক প্রকাশিত হয়ে আরবী সাহিত্যকে পুষ্টতর করে তুলেছে। মুদ্রাযন্ত্রের কল্যাণে তার সম্পদ আজ শতগুণে বেড়ে গিয়েছে। দুনিয়ার সমস্ত মুহাদ্দিসগণের সংকলিত রত্নভাণ্ডারস্বরূপ হাদীস গ্রন্থগুলো সমস্তই আজ আমরা একত্রে হস্তগত করতে পেরেছি। “দুনিয়ার প্রাচীন ইতিহাস ও অজ্ঞাতপূর্ব পুরাতত্ত্বের নিত্য-নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে কোরআনের উপাখ্যান ভাগের সত্যতা বাস্তবতার দৃঢ়ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে।” জ্ঞান-বিজ্ঞানের কত অভিনব আবিষ্কারে কোরআনের কত অজ্ঞাত পূর্বতত্ত্বের স্বরূপ প্রকাশ করে দিচ্ছে। মানুষের দেয়া আবরণের শত অন্তরাল হতেও ইসলামের নূরের আভাস দেখে আজ দুনিয়া তাকে চিনার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করছে। ভবিষ্যতের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাচ্ছে। অথচ এরা কোরআনকে নিয়ে সেরে ফেলছে হাজার বছরের এক ঘুণধরা দুর্গন্ধ সিন্দুকের আবর্জনা স্তূপের মধ্যে। তাফসীরকারগণের মতে, অর্থাৎ দীর্ঘ বার শত বৎসর পূর্বে বর্ণিত এক ডজন রা’বীর পরস্পর বিরুদ্ধ কল্পনা যা বহু স্থানে কোরআন হাদীসের ও ইসলাম ধর্মের মূলনীতির, ব্যাকরণ অলঙ্কার ও অভিধানের, সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ঐতিহাসিক সাক্ষ্যের এবং নিত্য লক্ষিত শত শত প্রত্যক্ষ সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা অধিকাংশ খোশ খেয়ালের কল্পনা, অথবা ইহুদী, খ্রিস্টান ও মজুছদের প্রক্ষিপ্ত পুরাণ পুঁথির প্রচলিত কিংবদন্তির বিকৃত বা অবিকল নকল ব্যতীত আর কিছুই নয়। যে রেওয়ায়াতগুলোর মূল রা’বীগণের মধ্যে অনেকেই পূর্বতন ইমাম ও চরিতশাস্ত্রকারগণ কর্তৃক অত্যন্ত কঠোর ও অপ্রীতিকর সমালোচনার বিষয়ীভূত হয়েছেন। তার অন্ধ অনুকরণ না করলে সমস্ত দ্বীন, ঈমান পণ্ড হয়ে যাবে! এই মারাত্মক সংস্কারকে দূর করে দিতে না পারলে ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে দেখা ও দেখানো সম্ভবপর হবে না।

 

এই চিত্রের আরো একটা দিক আছে, এই প্রসঙ্গে তারও একটু আলোচনা হওয়া আবশ্যক। আজকাল সমাজে এক শ্রেণীর লোক পাশ্চাত্যবাদের অন্ধ অনুকরণে আপনহারা হয়ে পড়েছে। এই সংস্কার তাদের মন ও মস্তিষ্কের উপর এমন প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে বসেছে যে, তার বিপরীত প্রত্যেক বিষয়কে তারা বিনা বিচারে পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত। বিজ্ঞানের নামে তারা অজ্ঞানের মত অনেক প্রগলভতা থাকেন। Progressive Science এর নিত্য পরিবর্তনশীল থিওরিগুলি তাদের নিকট Exact Science রূপে গৃহীত হয় এবং বিজ্ঞানের নামে বৈজ্ঞানিক থিওরি মাত্রকে অবলম্বন করে তার মধ্যবর্তীতায় ধর্মশাস্ত্রের সমালোচনা করার জন্য, তারা অনেক সময় আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। যুক্তি হিসাবে কোরআনের সমালোচনা করতে তারা কুণ্ঠিত হন না বটে, কিন্তু পাশ্চাত্যের ভাবধারার অনুকরণ করার সময় বৈজ্ঞানিক থিওরিগুলিকে অকাট্য সত্য বলে গ্রহণ করার কালে, তাদের যুক্তিবাদের এই বহু বিশ্রুত অভিমানটির বিশেষ কোন সন্ধান পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে, একশ্রেণীর পণ্ডিত কোরআনকে আধুনিকতার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য অতি নির্মমভাবে যথেচ্ছাচারের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তারা ভুলে যান, এটিও সংস্কারের দাসত্ব, এটিও হুজুগের গড্ডালিকা প্রবাহে আত্মসমর্পণ। এখানে তাদেরকে স্মরণ করে দিতে চাই যে, বৈজ্ঞানিক থিওরি আর বিজ্ঞানের সত্য এক নয়, জ্ঞানের স্বাধীনতা আর প্রবৃত্তির উচ্ছৃঙ্খলতা এক নয়। পায়জামা-কোর্তা পরা সংস্কারের ন্যায় কোট-পাৎলুন আঁটা সংস্কারগুলোও মানুষের জ্ঞানের পক্ষে সমান মারাত্মক। ইসলামের প্রকৃত আদর্শ গ্রহণ করতে হলে, তাদেরকে এ সংস্কারের হাত হতেও মুক্তিলাভ করতে হবে।

 

উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনার খোলাসা এই যে, ইসলামের স্বর্গীয় আদর্শগুলোর পরিচয় জানতে হলে কোরআনের আশ্রয় গ্রহণ করা ব্যতীত উপায়ান্তর নেই। আল্লাহর শাশ্বত বাণী এই কোরআন, সকল যুগের, সকল দেশের, সকল মানুষের জন্য সমানভাবে উপযোগী, সমানভাবে কার্যকরী এক চিরস্থায়ী অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার। কোরআন দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান, কোরআন বিশ্বমানবের অফুরন্ত জ্ঞানভাণ্ডার, কোরআন আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত জীবন আদর্শ। সুতরাং মুসলমান অমুসলমান নির্বিশেষে আল্লাহর সকল বান্দার সমান অধিকার তাতে আছে এবং চিরকাল থাকবে। কোরআনের জীবন্ত, জ্বলন্ত, ব্যাপক ও শাশ্বত স্বরূপকে উপেক্ষা করে, বিশ্বমানবের এই আল্লাহ প্রদত্ত অধিকারকে অস্বীকার করে মুসলমান নিজের, ইসলামের এবং বিশ্বমানবের ঘোর অনিষ্ট সাধন করে চলছে। বর্তমানের সমস্ত স্থবিরতা এবং সমস্ত অধঃপতনের মূল এখানে। নতুন যাত্রার এই শুভ মুহূর্তে, জীবন সাধনার এই পুণ্য প্রভাতে আমাদের প্রত্যেক যাত্রীকে, হাদীকে এ কথাগুলো সর্বাগ্রে সম্যকরূপে উপলব্ধি করে নিতে হবে।

সাবধান! প্রত্যেক পশ্চাতে ‘ভূতের’ মায়া কাঁদন, সম্মুখে আলেয়ার জ্বলন্ত মোহ। সাবধান!

در کفی جام شریعت در کفی سندان عشق
هر هو مناکی نداند جام وسندان باختن !

فالحمد لله الذي بنعمته تتم الصلحات والصلوة

والسلام على مفخر الموجودات محمد المصطفى
وعلى اله واصحابه مادامت الارض والسموات

১২৭৬ বার পঠিত

শেয়ার করুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top