“ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা”

আমরা যদি ইসলামী সভ্যতার ইতিহাসকে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই যে, বিজয় নিশানা উড়িয়ে ইসলামী সভ্যতা যখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল- তখন গ্রীক সভ্যতা, রোমান সভ্যতা সহ আরও বড় বড় সভ্যতা ও তাদের জ্ঞান সম্ভারের মুখোমুখি হয়। তৎকালীন যুগ জিজ্ঞাসার জবাব, যুগের চাহিদা, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা ও ভবিষ্যতের শক্তিশালী ভিত্তি নির্মাণের জন্য আলেমগণ ইসলামী জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা উদ্ভাবন করেন। এই সময়েই বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান ও ওহীর সাথে মেলবন্ধন ঘটে। আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, অন্যান্য সভ্যতা ও দর্শনের মোকাবেলায় ইলমুল কালামের মত জ্ঞানের শাখাগুলো সৃষ্টি হয়, চিন্তার স্বাধীনতাসহ নানাবিষয়ে নতুন গতিতে কাজ শুরু হয়।

এভাবেই এক এক করে মানব সভ্যতার জ্ঞানের ইতিহাসে ইসলাম এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে। আবিষ্কৃত হয় “উসূল”, যা উম্মাহর জন্য ইসলামের সেরা উপহার। ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারকারী শাস্ত্র হলো উসূল শাস্ত্র। কারণ উসূল ব্যতীত কখনোই জ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা ও সামগ্রিকতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। এজন্য দার্শনিক ইবনে রুশদ বলেন,

“উসূল হল মিস্তারা বা স্কেলের মত। একজন স্থাপত্যবিদ যেমন স্কেল ছাড়া দালান নির্মাণ করতে পারেনা, তেমনিভাবে একজন আলেমের কাছেও যদি উসূল না থাকে তাহলে দ্বীনকে তিনি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না।”

এভাবেই বড় বড় সমস্যার মোকাবিলায় ও অগ্রসরমান ইসলামী জ্ঞান এক নতুন মেথডোলজিতে রূপান্তরিত হয়। তবে, প্রথম কয়েকশো বছর সময়ের প্রাসঙ্গিকতা বুঝেই আলেমগণ কাজ করে যেতেন। যেমন- খোলাফায়ে রাশেদার সময় সবথেকে বেশি চর্চা হয়েছে সমাজ, মানুষের চরিত্র, চরিত্রের বিকাশ, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে। কারণ তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ছিল এসবই।

পরবর্তী সময়ের চাহিদার আলোকে বিশ্ব সাম্রাজ্যের সামনে ইসলামের বিশ্বজনীনতা তুলে ধরতে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখেন ইমামে আজম আবু হানীফা(র)। তৎকালীন প্রেক্ষাপট ও ইসলামী সভ্যতার স্থায়ীত্বের জন্য ‘ইসলামের বিশ্বজনীনতা, ফিকহ’ নিয়ে তিনি আমৃত্যু কাজ করে গিয়েছেন। সাহাবাদের পরবর্তী সময়ে সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা, ভবিষ্যতের শক্তিশালী ভিত্তি নির্মাণের জন্য তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেন দ্বীনের অন্যতম মূলনীতি সমূহ (উসুল), মৌলিক সূত্রসমূহ। (ইলমুল কালাম, দর্শন, আইন, ফিক্বহ, এসকল ক্ষেত্রে অবদান রাখা ছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা ও মৌলিক কাজ।)। আবার এই উসূল বা মুলনীতিসমূহ শুধু তৎকালীন সময়ের জন্য নয় বরং ভবিষ্যতের জন্যও সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। যা স্থায়ী জ্ঞান হিসেবে আজও চলমান।

আবার পরবর্তীতে যখন ইসলামী সভ্যতা সংকটাবস্থায় নিপতিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়েও মহান আলেমগণ স্রোতের সাথে নিজেদের ভাসিয়ে না দিয়ে, যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে সামগ্রিকভাবে ভূমিকা রেখেছেন। যেমন- ইমাম গাজ্জালী, তিনি স্রোতের সাথে মিলিয়ে নতুন করে মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেননি; কারণ মাযহাব এর প্রয়োজনীয়তা যখন ছিলো, তখন ইমামে আযম, ইমাম মালেকেরা সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকা রেখে গিয়েছিলেন। তাই তিনি তার সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা, সংকটের মোকাবেলা ও ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণের জন্য কাজ করলেন “মাকাসিদ আশ-শরিয়াহ” নিয়ে। আর এই মাকাসিদ হচ্ছে, “কেন?” প্রশ্নের উত্তর। মু’মিন এই “কেন?” নামক প্রশ্ন থেকে ভয় পেতে পারে না। আমরা মুসলিম, আমরা এমন একটি দ্বীনের অনুসারী; যে দ্বীন হল ‘বিশ্বজনীন একটি দ্বীন’। যে দ্বীন নির্দিষ্ট কোন অঞ্চলের জন্য কিংবা কওমের জন্য আসেনি। আমাদের দ্বীন নির্দিষ্ট কোন সময়ের জন্যও নয়! কিয়ামত পর্যন্ত এই দ্বীনের কার্যকারিতা অক্ষত থাকবে। তাই এই দ্বীনকে শুধুমাত্র নিজে বুঝলেই চলবে না, অন্যের সামনে এই দ্বীনকে যুক্তিপূর্ণ ভাবে তুলে ধরতে হবে। আর অন্যের সামনে তুলে ধরার জন্য ও বিশ্লেষণ করার জন্য ‘কেন?’ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।

যে সভ্যতা ‘কেন?’ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না, সে সভ্যতার পক্ষে ইতিহাসের মঞ্চে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভবপর নয়! যুব সমাজের ও আগামী প্রজন্মের মাথায় পুঞ্জিভূত হওয়া সকল প্রশ্নসমূহের হিকমাহ পূর্ণ জবাব আমাদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। যেন আমাদের সভ্যতা পুনরায় ইতিহাসের গতিপথকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।

একটু চিন্তা করলেই উপলব্ধি করা যায় উম্মাহর সংকটকালে ‘মাকাসিদ’ কত বড় ভূমিকা রেখেছে, কিভাবে ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে নিয়ে গিয়েছে। এভাবেই ইমাম জুয়াইনি, ইমাম গাজ্জালীরা তৎকালীন সময়ের জন্য এবং ইসলামি সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন। (এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। যেমন- ইমাম আবু হানীফা, ইমাম গাজ্জালীরা তাদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজগুলো করেছেন, সময়ের আলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কাজ করেছেন। অর্থাৎ যুগের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলিতেই কাজ আঞ্জাম দিতেন। আর এভাবে কাজ করলে শুধুমাত্র যুগ/সময়ের সমাধান-ই হয়না। বরং সেই মৌলিক কাজ/জ্ঞান স্থায়ী মূলনীতিতে পরিণত হয়। এই মূলনীতি বা জ্ঞানের শক্তি এতোবেশি যে চৌদ্দশ বছর পরেও ইমাম আবু হানীফা, ইমাম গাজ্জালীরা সর্বদাই প্রাসঙ্গিক, জ্ঞানগুলিও আলোচ্যমান।) এভাবেই ইসলাম জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধাপেধাপে এগিয়েছে, প্রতিটি উন্নয়নও করেছে ধাপেধাপে।

আমরা লক্ষ্য করলে এটিও দেখব যে, ইসলামের ইতিহাসের কয়েকশো বছর চিন্তার যে স্বাধীনতা ছিল তা মানব ইতিহাসে খুজে পাওয়া অসম্ভব। সেসময় অনেক চিন্তার যে সকল ধারার উদ্ভব হয়েছিল এর মধ্যে দুটি প্রণিধানযোগ্যঃ
• আহলে রায় (হযরত উমর (রাঃ) এর ধারা)
• আহলে হাদীস।

হিজায অঞ্চলের অধিকাংশ চিন্তাবিদই ছিলেন আহলে হাদীস যেহেতু তাদেরকে ভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতার মোকাবেলা করতে হয়নি। কিন্তু হিজাযের বাহিরে ইরাক, শাম, হিন্দুস্তান মধ্য এশিয়ায় ও চীনে যখন ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়। সেসকল সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আহলে রায় এর চিন্তাবিদগণ সঠিক উসূলের মাধ্যমে ইজতিহাদের পথ অবলম্বন শুরু করেন, যার মাধ্যমে সুবিশাল এই অঞ্চলে ইসলাম প্রায় হাজার বছরের মতো প্রভাবশালী সভ্যতা হিসেবে বিরাজমান ছিল।

কিন্তু বর্তমানে লক্ষ্য করলে দেখব যে, উপরোক্ত কোন ঘটনাপ্রবাহ কেই আমরা মাথায় রেখে ইসলাম চর্চা করিনা, সমাজ বিনির্মাণের রূপরেখা অংকন করিনা! অথচ ইসলামী চিন্তার ইতিহাস ও উসুলের ধারাকে ভালভাবে পর্যালোচনা ব্যাতীত ইসলাম বুঝা অসম্ভব।

আজ মুসলিম উম্মাহ একটি জ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বিশৃঙ্খল সময় অতিবাহিত করছে! আমাদের উসূল বা মূলনীতি সমূহ নিয়ে কাজ কোথায়! যুগ জিজ্ঞাসার জবাব, যুগের আলোকে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার ক্ষমতা, এসব কি আদৌও আছে আমাদের মাঝে!? কারণ যখনই যুগ জিজ্ঞাসা, সিদ্ধান্ত, ইজতিহাদের ক্ষেত্রে উসূলবিহীনতা ঠাই নেয়া শুরু করে তখন থেকেই আমরা যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব দেয়ার পরিবর্তে, এড়িয়ে যেতে চেয়েছি সমস্যাগুলোকে। এতে করে সমস্যা আরও ঘণীভূত হয়েছে। আমরা ভাষাকে হারাম করেছি, গণিতের মতো জ্ঞানের শাখাকে হারাম করেছি! জ্ঞানের ক্ষেত্রে দ্বীনি-দুনিয়াবী বিভাজন সৃষ্টি করেছি। আকল ব্যবহার করাকে ভ্রান্ত আকিদায় শামিল করছি! এ সবকিছুই মূলত উসূলবিহীনতার কারণেই হয়েছে। এইজন্য উস্তাদ মেহমেদ গরমেজ বলছেন, ‘তাফসীর যতটা ইসলামী জ্ঞান, গণিতও ঠিক ততটাই ইসলামী জ্ঞান। হাদীস যতটা দ্বীনী জ্ঞান; পদার্থ-রসায়ন-জীববিজ্ঞানও ততটাই দ্বীনি জ্ঞান।’ আমাদের সভ্যতায় আমরা কখনোই ‘ইলমুল আহকাম’ ও ‘ইলমুল হিকমাহ’ পৃথকভাবে দেখিনি। ‘আকল’ ও ’নাকলে’র মধ্যকার যে ভারসাম্য আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম হাজার বছর পূর্বে তারই ফল ছিল আমাদের স্বর্ণালী সভ্যতা। ইমাম গাজ্জালী বলেন- “আল-কোর’আন হচ্ছে সূর্যের আলোর মতো, আর আকল তথা বুদ্ধি-বিবেক হচ্ছে চোখের আলোর মতো। অর্থাৎ আকল হলো চোখের মতো আর ওহী হচ্ছে আলোর মতো। তাই আলো যদি না থাকে তাহলে চোখ কোন কিছু দেখতে পাবে না। একই সাথে চোখ বন্ধ করে রাখলে সূর্যের আলোর কোন উপকারিতা পাওয়া যাবে না।”

কিন্তু! চৌদ্দশ বছরের ইতিহাসে সবথেকে গহীন ক্রান্তিকালে প্রাথমিক সময়ের এই দুটি ভিত্তি “উসুল এবং মাকাসিদ” যা আমাদের সভ্যতাকে, ইসলামী জ্ঞানকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছিল, সে সম্পর্কে আমাদের কোন আলাপ বা চর্চা আছে? ওহী ও আকলের সঠিক প্রয়োগ নিয়ে কিইবা জানি আমরা? কেন প্রশ্নের উত্তর, যৌক্তিকভাবে জবাব তুলে ধরা এসব তো চিন্তাও করতে পারিনা! বরং যুগের আলোকে ইজতিহাদ ও ভবিষ্যতের নতুন দুনিয়ার ভিত্তি নির্মাণের কাজ ফেলে পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ধাপগুলি/ভিত্তি গুলিতেই(যেমন- মাযহাব) কুড়াল মারছি প্রতিনিয়ত! সেগুলি নিয়েই বির্তক, অনৈক্যে ব্যস্ত রয়েছি!
তাই মনে রাখতে হবে, উসূলবিহীন জ্ঞানচর্চা কখনোই ঐক্য নিয়ে আসবেনা, মৌলিক চিন্তা নিয়ে আসবেনা! বরং ছোটখাট ইখতিলাফ নিয়ে বিভেদের রাস্তা তৈরি করে দিবে!

এরপরে অন্যতম জরুরী আলাপ হল, ইসলাম শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসেনি বা নির্দিষ্ট কোন গোত্রের জন্য আসেনি। তাই দ্বীনকে একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির প্রোডাক্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেমন উচিৎ নয় ঠিক সেভাবে নির্দিষ্ট একটি সংস্কৃতিকে দ্বীনে পরিণত করাও মারাত্মক একটি ভুল। এসবের পার্থক্য করতে আজ আমরা ব্যর্থ! (যার কারণে বিশৃঙ্খলা, মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে প্রতিনিয়ত!! আর আমরাও সামগ্রিকভাবে না দেখে স্রেফ অন্ধভাবে ডিফেন্স করে গিয়েছি)

আজ সুন্নত নিয়ে কেন এতো বিতর্ক! আবার সাহাবীদের মধ্যকার রাজনৈতিক ইখতিলাফকে আমরা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব? নাকি একে ফিতনা আখ্যা দিয়ে শ্রান্ত হয়ে পৃথিবীর শেষ দেখার অপেক্ষায় বসে থাকব? ফিতনা আখ্যা দিয়ে তো আমাদের কিছু আলেমরা সেই ১০০০ বছর থেকেই পৃথিবীর শেষ দেখে আসছেন!! মোংগলদের আক্রমণকে ইয়াজুজ মাজুজের সাথে তুলনা দিয়ে যুদ্ধ না করে পৃথিবী শেষ হওয়ার প্রহর গুণেছিলেন তৎকালীন অধিকাংশ আলেম। বর্তমানে আমাদের অবস্থা কী তার থেকে কোন অংশে পৃথক? কোনটি দ্বীন আর কোনটি সংস্কৃতি? দিরায়েত কেন প্রয়োজনীয়?

এজাতীয় সকল প্রশ্নের জবাব ও সমাধান নিয়েই কাজ করছেন উস্তাদ মেহমেদ গরমেজ। “ইসলামী জ্ঞানে উসূলের ধারা” সেই চিন্তার দিকেই ধাবিত করবে।

প্রিয় সহযোদ্ধার ভাষায়, “অসাধারণ একটি বই। গণিতের সূত্রের মতো। আমরা যেমন ডিফারেন্সিয়েশন ও ইন্টিগ্রেশনের সূত্রসমূহকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে সমস্যা সমাধান করি। Squeeze theorem, Mean Value Theorem যেভাবে সমাধান বের করতে সহায়তা করে ঠিক সেভাবেই এই বইটি বর্তমান সময়কার হাজারো প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেবে আপনার অজান্তেই। আপনাকে শুধু সূত্রের সাথে হাটতে হবে, সেই সাথে নিজের বুদ্ধি বিবেককে একটু খাটাতে হবে, আকলের দরজাকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সূর্যের আলো সর্বদা থাকবে, শুধু আমাদেরকে চোখ মেলে তাকাতে হবে। তা নাহলে সূর্যের রশ্মির তাপই শুধু অনুভব করব, অথচ এর ফোটনের মাধ্যমে যে হাজারো মেগাপিক্সেলের একটি চোখ সঞ্চালিত হতে পারে সে সম্পর্কে বেখবর থেকে যেতে হবে।

সর্বশেষ বলতে চাই, উম্মাহর এই মহা সংকটকালে সবথেকে বড় প্রয়োজন ইসলামী সভ্যতার ১২০০ বছরের স্বর্ণালী ইতিহাসের পর্যালোচনা, অভিজ্ঞতা ও পতনকালকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান দুনিয়াকে সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝা। আর এই সকল বিষয়ের আলোকে “ইজতিহাদ করা”। যুগের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ও ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় “জ্ঞানের পুনর্জাগরণ করা”। (যেভাবে- ইসলামের আন্তর্জাতিক রূপদানকারী খ্যাত ইমাম আবু হানিফা, ইসলামী সভ্যতার সারমর্ম খ্যাত ইমাম গাজ্জালীরা তাদের সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন)। তাই প্রতিনিয়তই সময়ের সাথে স্পষ্টতর হচ্ছে উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে ইসলামী জ্ঞান ও সভ্যতার মূলনীতি বা উসুলকে, মাকাসিদ’কে ভালভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতোখানি। সেজন্য নতুন ধারা নির্মাণ করা, যে ধারা উসূলকে পড়তে শিখাবে, সভ্যতাকে বিশ্লেষণ করতে শিখাবে, ক্ল্যাসিক গ্রন্থসমূহ বুঝতে শিখাবে, নিজেদের যোগ্য করে যুগ সমস্যার সমাধান করতে ভবিষ্যৎ এর দিগন্ত উন্মোচন করতে শিখাবে।

১২৩২ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়।পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন।বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।
Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়।পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন।বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top