যুবকদের প্রতি ইমাম হাসান আল বান্নার ২০টি উপদেশ

বিংশ শতাব্দীতে যে সকল মহান মনীষীরা সমগ্র মানবতার মুক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী মুক্তি আন্দোলন শুরু করেন তাঁদের একজন হলেন ইমাম হাসান আল বান্না। ইসলামকে মানুষের সামনে সহজভাবে তুলে ধরে মুসলমানদেরকে যেভাবে মুক্তির নেশায় পাগল করে তুলেছিলেন তা  ইতিহাসে বিরল। মহান  এই ব্যক্তিত্ব যুবকদের প্রতি অনেক বেশী গুরুত্ব দিতেন  এবং তাদের উদ্দেশ্যে জীবন নির্ভর ও বাস্তবভিত্তিক সুন্দর সুন্দর উপদেশ দিতেন; তাঁর মধ্যে কয়েকটি হল নিচে উল্লিখিত উপদেশবাণী সমূহ।

১. তোমরা যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আযান শোনার সাথে সাথে নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
২. কোরআনকে পাঠ করো এবং এটা নিয়ে গবেষণা কর। যত কম সময়ই হোক না কেন সেটাকে আজেবাজে কাজে ব্যয় কর না।
৩. সবসময় স্পষ্টবাদী হওয়ার চেষ্টা করবে কেননা এর দ্বারাই প্রমাণ হবে তুমি যে মুসলিম। আরবী ভাষা শেখার চেষ্টা করো কেননা কেবলমাত্র আরবি ভাষার মাধ্যমেই কুরআনকে ভালোভাবে বুঝা সম্ভব।
৪. কোনো বিষয়েই মাত্রাতিরিক্ত তর্কে জড়াবে না। কেননা এটা কোনো সময় সফলতা বয়ে না।
৫. কখনোই বেশি হাসবে না কেননা। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত আত্মা সবসময় শান্তচিত্ত ও ভারি হয়।
৬. কখনোই অতিরিক্ত ঠাট্টা মশকরা করবে না। কেননা একটি মুজাহিদ জাতি গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
৭. শ্রোতা যতটুকুন পছন্দ করে ততটুকুই ততটুকুই বলার চেষ্টা করো। কেননা এটা স্বার্থপরতা ও অন্যকে নিপীড়ন করার শামিল।
৮. কখনোই কাউকে ছোট করো না। কল্যাণকর বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে কথা বল না।
৯. তোমার প্রতিবেশী কোন ভাই তোমার সাথে পরিচিত না হতে চাইলেও তার সাথে পরিচিত হও।
১০. আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশী। অন্য জনের সময় বাঁচানোর জন্য সবসময় ব্রত হও। যদি তোমার উপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হয় সেটাকে সবচেয়ে সহজ পন্থায় ও সুন্দর করে করার চেষ্টা কর।
১১. সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিবে।তোমাদের ঘরবাড়ি; পোশাক পরিচ্ছদ; শরীর ও তোমাদের কাজের জায়গাকে পরিচ্ছন্ন রাখবে। কেননা এই দ্বীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপরেই নির্মিত হয়েছে।
১২. তোমাদের ওয়াদা; তোমাদের কথা ও কাজে সবসময় মিল রাখবে।শর্ত যাই হোক না কেন সর্বদায় এর উপর অটল অবিচল থাকবে।
১৩.পড়ালেখায় মনোযোগ দাও। মুসলিমদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিন নিয়ে পরস্পরের সাথে আলোচনা করো। ছোট করে হলেও নিজস্ব একটা লাইব্রেরি গড়ে তোলার চেষ্টা করবে।নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবে।
১৪. কখনো সরকারের মুখাপেক্ষী হবে না। কেননা রিজিক এর সবচেয়ে সংকীর্ণ দরজা হল তাদের দরজা। তবে তোমাদেরকে যদি সুযোগ সুবিধা দেয় সেটাকে প্রত্যাখ্যান করো না। তোমাদের দাওয়াতকে ও তোমাদের নিজস্ব গতিকে স্তব্ধ করে না দেওয়া পর্যন্ত এর থেকে পৃথক হবে না।
১৫. তোমাদের সম্পদের একটা অংশ কল্যাণকর কাজে দান করো। আর ফরজ যাকাত একসাথে করে দাও। সেটার পরিমাণ যত সল্পই হোক না কেন সেখান থেকে গরীব দুঃখীদের দান করো।
১৬. অপ্রত্যাশিত বিপদ আসার আগেই স্বল্প পরিমাণ হলেও সম্পদের একটা অংশকে সঞ্চয় করে রাখ এবং কখনোই জাঁকজমকপূর্ণ আসবাবপত্র ক্রয়ে অর্থ ব্যয় করো না।
১৭. সকল অবস্থায় তওবা ও ইস্তিগফার পাঠ করো। রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিট আত্ম-সমালোচনা করো। হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে ।
১৮. অসুস্থ বিনোদনমূলক জায়গা থেকে এই ভেবে দূরে থাক যে এর বিরুদ্ধেই আমার সংগ্রাম। সকল প্রকার প্রসন্নতা ও অতি আরামদায়ক বিষয় থেকে দূরে থাকো।
১৯. সকল জায়গায় তোমার দাওয়াত কে বুলন্দ করার চেষ্টা করবে। নিজের নফস এর সাথে এমন আচরণ করো যাতে সে তোমাকে মেনে চলতে বাধ্য হয়।তোমাদের চোখকে হারাম থেকে বিরত রাখ।নিজের আবেগ এর উপর প্রভাব বিস্তার করো।
২০. নিজেকে সর্বদায় কল্যাণকর কাজের সাথে সম্পর্কিত রাখবে এবং একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিকের মত নেতার মারুফ আদেশকে মানার চেষ্টা করবে।
২০০৩ বার পঠিত

শেয়ার করুন

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top