ভবিষ্যৎ গাজাঃ পথ চারটি, কিন্তু গন্তব্য একটি!

২০২৩ এর ৭ অক্টোবর পরবর্তী গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধটি ছিল ফিলিস্তিনিদের মনোবলকে পরিপূর্ণভাবে নিঃশেষ করে ফেলার উদ্দেশ্যে। এর লক্ষ্য ছিল গাজাকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা এবং পশ্চিম তীরকে ভয় দেখানো। আগুন, ভয় ও অনাহারে একটি জাতিকে মুছে ফেলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। তবে এটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা ভেঙে পড়েনি। তারা স্থির এবং অটলভাবে নিজেদের ভূমি ও সত্যের প্রতি এমন অবিচলতা প্রদর্শন করেছে যে, তাদের আন্দোলনকে কোনো অবরোধ বা অবিরত আক্রমণ দ্বারা মুছে ফেলা সম্ভব নয় এমনটিই প্রতীয়মান হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী এক নৃশংস গণহত্যার সাক্ষী হয়েছে, যা লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে প্রতিটি ফোনে পৌঁছেছে। এবং একইসাথে প্রকাশিত হয়েছে সমকালীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সুস্পষ্ট প্রবঞ্জনার চিত্র। যে ব্যবস্থা একদিক থেকে নিজেকে সভ্য দাবি করে, অপরদিকে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রকে সকল ধরণের অস্ত্র সরবরাহ করে, সেই অস্ত্রের ব্যবহারে ছোট ছোট মাসুম শিশুদের হত্যা করছে এবং তাদের অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এখন যায়নবাদী ইজরায়েলি শাসনের সামনে একটি বড় কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, যা তারা অনেকদিন ধরে এড়িয়ে চলে এসেছিলো। এখন আর তারা চাইলেও নিজেদের আধিপত্যকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হিসেবে , বর্ণবাদী আচরণকে নিজেদের নিরাপত্তার ঢাল হিসেবে, হাজার হাজার মানুষকে তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে বিতারণকে মানবিক সহয়তা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে না। তাদের সেই মুখোশ খুলে গিয়েছে। যায়নবাদীদের ফিলিস্তিনিদের উপর একক আধিপত্য ও বর্ণবাদী কর্তৃত্ব শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এমতাঅবস্থায় “ যায়নবাদী ব্যবস্থা নিজের গতিপথ পরিবর্তন করবে কিনা” এই প্রশ্নের পরিবর্তে  তারা যে পথই অবলম্বন করুক প্রতিটি পথ তাদের পতনকে কিভাবে ত্বরান্বিত করবে সেটিই মূল প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে প্রধানত চারটি ভিন্ন দৃশ্যপটকে লক্ষ্য করা যায়। সেগুলির প্রতিটি দৃশ্যপট বা সম্ভাব্য ঘটনা যায়নবাদী প্রকল্পের অন্তর্নিহিত বৈপরীত্য প্রকাশ করে। যায়নবাদীরা গণতন্ত্রের দাবি করে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ, অনেকটা এরকম যে জমি চায় কিন্তু সেই জমির অধিকারী মানুষদের অবহেলা করে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায় কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে। যায়নবাদী আইডোলজির ধারক বাহকদের সম্ভাব্য প্রতিটি পথ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায় সেটি হলো তাদের তৈরি করা আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণের কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা, যাতে ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পুরো অঞ্চলের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয় ।

 

প্রথম দৃশ্যপটঃ দ্বৈত রাষ্ট্র সমাধান

 

বিশ্বব্যাপী এখনও তথাকথিত টু-স্টেট সল্যুশন-কে একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ১৯৯৩ সাল থেকে চলে আসা ব্যর্থ অসলো প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফল হওয়ার কথা ছিল এই সমাধান। অসলো প্রক্রিয়া ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধানের একটি চেষ্টা, যা মূলত ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির ব্যর্থতার কারণে এই পথ আজও কার্যকর হয়নি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা পুরোপুরিভাবে দূরে সরে গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা এই টু-স্টেট সমাধানের পক্ষে বিবৃতি প্রদান করে থাকেন, তবে সেগুলি অধিকাংশ সময় শুধুমাত্র মুখের বুলি হিসেবে থেকে যায়। কূটনীতিবিদরা এখনও পুরনো মানচিত্রগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করেন। অথচ এর বাস্তবতা খুবই সংকীর্ণ। টু-স্টেট এর সমাধানের ধারণা হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিম তীর এবং গাজার মধ্যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। তবে,অনেক আগেই অবৈধভাবে স্থাপিত বসতিগুলোর অপসারণ এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা আগেও উঠে এসেছে। কিন্তু আজও এটি সম্ভব হয়নি, কারণ পশ্চিম তীর এবং গাজা পুরোপুরিভাবে বিভক্ত, এবং হাজারো চেকপোস্ট এবং সেনাদের দ্বারা বেষ্টিত। ফলশ্রুতিতে এর বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

এছাড়া পূর্ব জেরুজালেম ইতোমধ্যে কার্যত এবং আইনীভাবে ইজরায়েলের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে, যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে আরেকটি বড় বাধা। বহু বছর ধরে ইজরায়েল তাদের বসতিগুলি এমনভাবে বিস্তৃত করেছে এবং ভূখণ্ডকে ছোট ছোট দখলকৃত অঞ্চলে বিভক্ত করেছে, যার ফলে একটি স্থিতিশীল এবং কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাদের সৃষ্টি করা এমন পরিস্থিতি থেকে ইজরায়েল দাবি করে যে, আলোচনার জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই। কারণ তারা পুরো অঞ্চলটির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই সব প্রেক্ষাপটের মধ্যে ফিলিস্তিনের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন শুধু একটি রাজনৈতিক ধারণা হয়ে রয়ে গেছে, যেটি আসলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কঠিন পথ বেয়ে চলেছে।

যদি ধরে নেওয়া হয় , ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাস্তবিক উদ্যোগ নেওয়া হবে, তবে সেক্ষেত্রে ইজরায়েলকে ১৯৬৭ সালের পূর্বের গ্রীন লাইন সীমানায় ফিরে যেতে হবে। এর মাধ্যমে তাদের গ্রেটার ইজরায়েলের স্বপ্ন ব্যাহত হবে এবং দখল করার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ ইজরায়েলি মনে করে, একটি পূর্ণ সার্বভৌমত্বের প্রকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইহুদি জাতীয়তাবাদের জন্য একটি অস্তিত্বগত হুমকি । কারণ এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে । তখন তারা  শুধু একটি নিয়ন্ত্রিত ও শোষিত জনগণ নয়, বরং একটি অধিকারপ্রাপ্ত জাতি। রিফিউজি সমস্যাও সমাধান হবে না, কারণ সাত মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছেন তারাও এখানে ফিরে আসার অধিকার দাবি করবে। অপর দিকে পূর্ব জেরুজালেমও তার জনগণের অধিকারেই থাকবে।

এজন্য টু-স্টেট সমাধান ইজরায়েলি দখলদারিত্বের পতনের সূচনা করবে। কারণ এটি সেই মৌলিক বিষয়টিকেই স্বীকার করবে, যা ইজরায়েল বিগত এক শতাব্দী ধরে অস্বীকার করে এসেছে যে, ফিলিস্তিনিরা সমান মানবিক অধিকারপ্রাপ্ত, এবং তাদের অধিকার চেকপোস্টে হারিয়ে যাবে না। এই চরম বাস্তবতা ইজরায়েল জানে, এবং এজন্যই তারা এই সমাধানটি প্রতিরোধ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। কখনোই তারা এটিকে মেনে নেবে না।

 

দ্বিতীয় দৃশ্যপটঃ অভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র

 

জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝে যে ভূমি রয়েছে, তা একক ভূখণ্ড হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ এই ভূমি একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। যায়নবাদী সরকার এই ফ্যাক্টটিকে ভালোভাবে বুঝে এজন্য তারা রাফাহ থেকে রাস আল নাকুরা এবং যাফা থেকে জেরিকো পর্যন্ত পুরো অঞ্চলটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।

যদি ইজরায়েল একক ভূখণ্ড হিসেবে এই ভূমির দাবি জোরালোভাবে চালিয়ে যায় এবং পরবরর্তীতে সম-অধিকার ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সরে আসে, তবে তারা আর নিজেদের “ইহুদি রাষ্ট্র” হিসেবে দাবি করতে পারবে না। কারণ যদি রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় , তবে তা ইহুদি জাতীয়তাবাদী ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েল হয় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারবে, যেখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। অথবা একটি জাতিগত-ধর্মীয় রাষ্ট্র হতে পারবে। যেকোনো একটি বিষয় সম্ভব, দুইটি ফ্যাক্ট কখনো একসাথে চলতে পারে না।

এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের বর্তমান জনসংখ্যার পরিসংখ্যানই এই বিতর্কের সমাপ্তির জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বাদে , এখনও ইজরায়েলি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা ফিলিস্তিনিদের মাঝে বিদ্যমান। অর্থাৎ, জনসংখ্যার দিক থেকে ফিলিস্তিনিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে যা যায়নবাদী ইজরায়েলের আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে কঠিন করে তোলে। যদি একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তখন যায়োনিস্ট আন্দোলন তার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের প্রকল্প হিসেবে আর টিকতে পারবে না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই সমাধানকে পৃথিবীর অনেক দেশ ও জনগণ সমর্থন করে এবং করবে । এটি এমন একটি রাষ্ট্রের ধারণা, যেখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে এবং ধর্ম বা জাতির ভিত্তিতে কোনো ধরণের বৈষম্য করা হবে না। এজন্য নিশ্চিতভাবে যায়নবাদী শক্তি এই পরিবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ এটি তাদের মতাদর্শের সুস্পষ্ট মৌলিক নীতির বিপরীত।

 

তৃতীয় দৃশ্যপটঃ একটি স্থায়ী বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা

 

তৃতীয় বিকল্প পথটি হলো সেই পথ, যা যায়নবাদী শক্তি দীর্ঘ সময় ধরে অনুসরণ করে আসছে। আর সেটা হলো আরও অধিক পরিমাণে ভূমি দখল করা এবং গ্রিন লাইনকে প্রকৃতপক্ষে মুছে ফেলে শুধুমাত্র কাগজে কলমে রেখে দেওয়া। যায়নবাদী শক্তি জর্ডান নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সার্বভৌমত্ব দাবি করে অথচ এর অধীনে থাকা জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নারাজ । গাজাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পশ্চিম তীরকে সামরিক নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। প্রতিনিয়ত অবৈধ বসতি স্থাপনের মাধ্যমে  ভূমি দখল এবং ফিলিস্তিনিদের সকল দিক থেকে শ্বাসরোধ করে রেখছে যায়নবাদী শক্তি। অপরদিকে শুধুমাত্র ইহুদি নাগরিকদের জন্য রাস্তা এবং পৃথক দেয়াল তৈরি করা, বসতি এবং আউটপোস্ট সম্প্রসারণ করা এবং পরে তা বৈধ করা। পুরনো সত্যকে মুছে ফেলার জন্য নতুন নতুন আইন উদ্ভাবন। নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে অন্যের উপর জুলুম, অস্থায়ী এর নামে স্থায়ী করে নেওয়া। ফিলিস্তিনিদের হয়রানি করা ,অবরুদ্ধ রাখা এবং তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো, যতক্ষণ না তারা হাল ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করে বা চলে যায়।

এটি ছিল গাজার জন্য এক চরম নিষ্ঠুর বাস্তবতা, যা তুফান আল আকসার আগে ছিল। ২০২৩ এর ৭ অক্টোবরের পর, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আইনগত ও মোরাল এলিগেশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং বি’টসেলেম এখন এই ব্যবস্থাকে অ্যাপার্থেইড হিসেবে আখ্যায়িত করছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ২০২৪ এর জানুয়ারি এবং মার্চ এ প্রাথমিক আদেশ জারি করেছে। আইসিসি প্রসিকিউটর ২০২৪ এর মে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছে। যায়নবাদী শক্তি এখনও সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে বা শক্তিশালী মিত্রদের সাহায্যের ডেকে আনতে পারে, তবে এটি আর নৈতিক কর্তৃত্ব দাবি করতে পারে না কিংবা রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। এটি তার নৈতিক ভিত্তিকে সম্পূর্ণরুপে হারিয়ে ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক সিভিল সোসাইটি এই পথটিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিভিন্ন চার্চ, ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন, পেশাদার সমিতি এবং সিভিল সোসাইটির নেতারা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। সরকারগুলো এখন আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক সম্মান নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্র ও বাণিজ্য শর্তাধীন করতে চাপের মধ্যে রয়েছে। ইজরায়েল যত বেশি এই বিশাল জনসংখ্যাকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিয়ন্ত্রণে রাখবে, ততই তারা সমগ্র পৃথিবী থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। উন্নত প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক বাজারের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি পরিত্যক্ত অবস্থায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না এবং যায়নবাদীদের মিলিটারাইজড সোসাইটিতে কখনো সংস্কৃতি ও জ্ঞান বিকশিত হতে পারবে না এমতাঅবস্থায়।

সময় যত গড়াবে যায়নবাদী শক্তির এই অন্যায়ের দেয়াল ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বে। যখন সেই দেয়াল ভেঙে যাবে, তখন যায়োনিস্ট শক্তির কর্তৃত্ব ও আধিপত্য চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।

 

চতুর্থ দৃশ্যপটঃ উচ্ছেদ

 

চতুর্থ বিকল্পটি হলো বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক এই ভূমি থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া। এটা ইজরায়েলের পুরনো কৌশল,যা এখন আধুনিক রূপে উপস্থিত। এই ধারণার মূল হলো শাসক যদি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে অনত্র্য পাঠিয়ে দিবে। এটাকে স্বেচ্ছানির্বাচিত পুনর্বাসন এবং মানবিক করিডোরের মতো শব্দ ব্যবহার করে বৈধ উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালালেও, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো জাতিগত নির্মূলকরণ। গাজাবাসী তাদের এই হীন বাস্তবতা প্রকাশ করেছে। জায়োনিস্ট শাসনের এই প্রয়াস এবং সেই প্রয়াসের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট হয়েছে। দুই বছরব্যাপী তীব্র বোমাবর্ষণের ও মানবইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার পরিচালনা করেছে যায়নবাদী শক্তি। এরপরও ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ত্যাগ করেনি। তারা তাদের সন্তানদের নিজ হাতে দাফন করেছে এবং সেখানেই রয়ে গেছে। তাদের এই অসীম সাহস ও অবিচলতা মহাকাব্যিক হয়ে থাকবে সমগ্র মানবতার ইতিহাসে  ।

পশ্চিম তীরও প্রতিরোধের এক অনন্য উদাহরণ । তারাও ক্রমাগত আক্রমণ এবং হয়রানির শিকার হয়েছে এবং পুনরায়  ফিরে এসে নিজেদের বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলো জানে স্থানান্তরের পরিণতি তাদের নিজেদের সমাজের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। এজন্য  তারা এই  এর অংশ হতে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। বিশ্ব এখন ক্যামেরা এবং ফোনের মাধ্যমে এক হয়ে গেছে। অপরাধ করে পূর্বের মতো গোপন করে রাখা সম্ভব নয়। লক্ষ লক্ষ মানুষকে জোরপূর্বক কোথাও ঠেলে দেওয়া আর সম্ভব নয়, কারণ তা আন্তর্জাতিক আইনকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলবে। বিগত দুই বছর ধরে গাজায় আমেরিকার সমর্থনে ইজরায়েলের যে ব্যাপক উচ্ছেদের প্রচেষ্টা ছিল, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

অতএব, গাজা বা পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে উচ্ছেদের আরেকটি প্রচেষ্টা যায়নবাদী শক্তির কর্তৃত্ব আর দ্রুত  ধ্বংস করবে এবং বিশ্বব্যাপী এমনকি অনিচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোকে সক্রিয় হতে বাধ্য করবে। এটি তাদের পতনকে ত্বরান্বিত করবে, বিলম্ব করবে না।

 

এই চারটি পথের গন্তব্য

 

যে কোন পরিস্থিতি সামনে আসুক না কেন, রাজনৈতিকভাবে  যায়োনিজমের পতনই একমাত্র পরিণতি। প্রতিটি দৃশ্যই দেখায় যে, যায়োনিস্ট শাসন তার নিজস্ব চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। একটি প্রকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ তা হলে তার গ্রেটার ইজরায়েলের স্বপ্ন পরিত্যাগ করতে হবে।

এটি একক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মেনে নিতে পারবে না, কারণ এতে তার স্বকীয় শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যবাদী পরিচয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অ্যাপার্থেইড বজায় রাখা সম্ভব নয়, কারণ তা হলে এটি বৈশ্বিকভাবে বিচ্ছিন্ন এক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। যার প্রতি বছর সমর্থন এবং ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাবে। ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করাও সম্ভব নয়। কারণ এতে একটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে যা দ্রুত এর বিচ্ছিন্নতা এবং পতন ত্বরান্বিত করবে।

এখানে আসলে প্রশ্ন বিজয় বা পরাজয়ের নয়। এটি হলো কৌশলগত পিছু হটনের নানা রূপের মধ্যে একটি নির্বাচন। এখন এটা আর শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের সমস্যা নয়; এটি একটি ইজরায়েলি সমস্যা। যার মোকাবিলা করতে হবে পুরো পৃথিবীকে। যায়নবাদী শক্তি এমন একটি ব্যবস্থা, যা অন্যদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উপর দাঁড়িয়ে, তা ক্ষমতা ধরে রাখতে সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে। সমগ্র বিশ্বের করণীয় হলো এই যায়নবাদী কর্তৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার চক্রকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য তৈরি করা কাঠামো ও নীতিগুলো ভেঙে ফেলা।

 

কৌশলগতভাবে যায়নবাদী ব্যবস্থার পতন

 

কোনো কিছুকে ধ্বংসকরণ শুধু একটি স্লোগানের বিষয় নয় । এটি একটি বৃহৎ কৌশল। এর প্রথম ধাপ হলো জনগণকে তাদের ভূমিতে দৃঢ়ভাবে স্থির রাখা। গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম, ১৯৪৮ সালের সীমানার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যারা এবং বিভিন্ন অঞ্চলের শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন হলো ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমিতে অব্যাহত উপস্থিতি এবং তাদের প্রতিরোধ ও অবিচল সংগ্রামকে  সমর্থন করা। এর মানে হলো অবরোধ এবং দখল অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বন্দীদের মুক্তি, মানবিক সাহায্য ও পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থায়নকে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল থেকে রক্ষা করা এবং ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিয়ে পুনর্নির্মাণ পরিচালনা করা  । আন্তর্জাতিক সাহায্য, জাতিসংঘের সংস্থা এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সহায়তায় এটি সম্ভব । কিন্তু বিদেশি বা সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়। এই সংগ্রামে দৃঢ়তা হচ্ছে নৈতিক শক্তির মূল। ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমিতে স্থায়ী হওয়া ব্যতীত, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা একটি বিমূর্ত ধারণা হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় ধাপ হলো, একটি বৈশ্বিক আন্দোলন তৈরি করা যা যায়োনিস্ট প্রকল্পের প্রতিটি ভিত্তি চিহ্নিত করবে এবং দুর্বল করার জন্য কাজ করে যাবে । এই আন্দোলনকে যায়নবাদী ক্ষমতার উৎসগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সংসদগুলোতে লবি নেটওয়ার্ক যা দায়মুক্তি কেনে, পুঁজির প্রবাহ যা অবৈধ বসতি স্থাপন এবং অস্ত্র সরবরাহ করে, সার্ভিলেন্স টেকনোলজি যা শহরগুলোকে খোলা কারাগারে পরিণত করে, মিডিয়া যা অপরাধকে নিরাপত্তার জন্য প্রতিরোধের গল্পে রূপান্তরিত করে, একাডেমিক অংশীদারিত্ব যা অ্যাপার্থেইড উদ্ভাবন হিসেবে উপস্থাপন করে, এবং সামরিক কৌশল যা সম্মিলিত শাস্তিকে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে।

প্রতিটি কৌশলের প্রতিকৌশল আছে। বসতি ও অবরোধের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বাণিজ্য এবং গবেষণা শর্তাধীন করা, অস্ত্র আমদানি নিষিদ্ধ করা, পুলিশ ও স্পাইওয়্যার বিনিময়ের বন্ধ করা, একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করা, এবং অ্যাপার্থেইড সাদা করার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করা। সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও অভ্যন্তরীণ আদালতের মাধ্যমে গুরুতর অপরাধের বিচার করা। আর্থিক সহায়তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিচারের আওতায় আনা। যেকোনো ভবিষ্যৎ রিভিশনিজমের বিরুদ্ধে ইতিহাস সংরক্ষণ করা, প্রতক্ষ্যদর্শীদের সাক্ষ্য এবং ডকুমেন্টেশন সংগ্রহ করা।

এই আন্দোলনটি আন্তর্জাতিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। এটি অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের চারপাশে কেন্দ্রিক, তবে এটি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের কাজ নয়। এটি এমন ইউনিয়নগুলির প্রয়োজন হবে যারা বন্দরের মাধ্যমে অস্ত্র আমদানি বন্ধ করবে। এমন ডাক্তারদের প্রয়োজন হবে যারা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে চিকিৎসাকে ব্যবহার হতে দেবে না। এমন ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হবে যারা বোমা, কারাগার বা দেয়াল নির্মাণের জন্য চুক্তি করবে না। এমন শিল্পীদের প্রয়োজন হবে যারা মানুষের বিবেককে নাড়া দিতে পারে। এমন ছাত্র এবং অধ্যাপকদের প্রয়োজন হবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেন্সরশিপ বা প্রচারের হাতিয়ার হতে দেবে না। এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রয়োজন হবে যারা বলবে যে, ধর্মীয় গ্রন্থ বা নৈতিক শিক্ষাকে নৃশংসতা বা অমানবিকতা ঢাকার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এই আন্দোলনটি সকল বৈশ্বিক সংগ্রামগুলোর সম্মিলিত ভাষায় ন্যায়, অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এখানে এমন ইহুদিদের প্রয়োজন হবে যারা যায়োনিজমের বিরোধিতা করবে এবং যারা এই মিথ্যে ধারণাকে অস্বীকার করবে যে, ফিলিস্তিনিদের মুক্তি তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এটি এমন মুসলিম, খ্রিস্টান, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং যারা ধর্মবিশ্বাসী নন তাদেরও প্রয়োজন হবে, যারা বুঝে যে, এই লড়াই ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

এই লড়াইটি আধিপত্য এবং সমানাধিকারের, ঔপনিবেশিক নির্মমতা থেকে মুক্ত হয়ে এক স্বাধীন ভবিষ্যতের, মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং দাসত্বের বিপরীতে।

যায়োনিজমের নৈতিক কাঠামোটি স্পষ্ট। যায়োনিজম একটি বর্ণবাদী এবং আধিপত্যবাদী মতাদর্শ । একটি অবৈধ উপনিবেশ প্রকল্প যা বর্ণবাদী একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে। যায়োনিজম কোনো ধর্ম নয়, এটি একটি আদর্শ। আমাদের সংগ্রাম হচ্ছে একটি আদর্শ এবং এর দ্বারা তৈরি কাঠামো এবং নীতির বিরুদ্ধে, কোনো ধর্ম বা জনগণের বিরুদ্ধে নয়। অ্যান্টিসেমিটিজম একটি বিষ, যা ইসলামোফোবিয়া এবং সকল প্রকার বর্ণবিদ্বেষের মতো একযোগে অস্বীকার করতে হবে।

পাশাপাশি, খুব কাছাকাছি সময়েই, যায়নবাদী কর্তৃত্ব তার পুরানো আর্গুমেন্টকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। এটি নতুন অস্ত্রবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করবে যা অবরোধ বজায় রাখবে। পশ্চিম তীরে আরও ভূমি দখল করতে থাকবে। নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ বাড়াবে। প্রেক্ষাপট বিহীন আত্মরক্ষার বর্ণনা পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করবে। তারা এটি আশা করবে যে ক্লান্তি মানুষের মধ্যকার প্রতিরোধের উচ্ছ্বাসকে একসময় নিঃশেষ করে দিবে। আমাদের সকলে কাজটি হলো এই পতনকে ঠেকানো। আমাদের ক্যামেরাগুলোতে নজর রাখতে হবে , আদালতের আদেশগুলোকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করা।

এর মানে হলো, ছাত্রদের দাবীগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিতে পরিণত করা। শ্রমিক ইউনিয়ন যে প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত দেয়, সেটাকে শুধু কাগজে না রেখে সরাসরি কোম্পানির পণ্য কেনা-বেচা বা সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা। পৌরসভাগুলোর সিদ্ধান্তগুলোকে ক্রয়নীতি হিসেবে পরিণত করা যা জায়োনিস্ট সহযোগী কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি অস্বীকার করবে। সম্পাদকীয় মতামতগুলোকে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের জনসাধারণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে পরিণত করা। এর মানে হলো, নিশ্চিত করা যে যায়নবাদী ইজরায়েল যখনই মানবতার মৌলিক নীতির লঙ্ঘন করবে তখন তাকে সেটা মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য করা ।

নিকট ভবিষ্যতে চতুর্মুখী চাপ বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে নতুন করে গঠন করতে সহয়তা করবে । কিছু রাষ্ট্র শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কার্যকরী পদক্ষেপে চলে যাবে। জাতিসংঘ কর্তৃক সদস্যপদ স্থগিত করা একটি বৈশ্বিক দাবি হয়ে উঠবে। অস্ত্রবিরতি সম্ভব হতে যাবে। টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞাগুলো ছড়িয়ে পড়বে। বাণিজ্য পছন্দগুলো আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সম্মতির উপর নির্ভর করবে। কর্পোরেট বোর্ডগুলো উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাবে। সাংস্কৃতিক এবং একাডেমিক জীবন নৈতিক সীমানা তৈরি করবে যা অটুট থাকবে। যায়নবাদী শক্তি নতুন সিন্ধান্ত গুলোকে অত্যন্ত রাগের সহিত প্রতিহত করবে ।

তারা দাবি করবে আমরা এটি একমাত্র লক্ষ্যবস্তু ?  প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট। যখন একটি রাষ্ট্র গণহত্যা করে বা সহায়তা দেয়, যখন একটি বর্ণবাদী আইন তৈরি করে এবং সমাজে সেটার চর্চা করে, যখন এটি মানুষকে জঘন্য পশুর মতো আচরণ করে, তখন এটি স্বাভাবিক আচরণ পাওয়ার  অধিকার হারায়। দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র আলাদা করা নয়। এটি আমাদের সাধারণ মানবতার জন্য ন্যূনতম দাবী।

 

৭ অক্টোবরঃ যায়নবাদের পতনকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যম

 

গাজা সব ধরণের বিভ্রান্তি দূর করেছে। এটি ফিলিস্তিনিদের সাহস এবং দৃঢ়তা গভীরতা তুলে ধরেছে। এটি অন্যায়ের অংশীদারিত্ব এবং ষড়যন্ত্রের পরিণাম কি হতে পারে সেটিকে তুলে ধরেছে। যায়নবাদী শক্তি দুর্বলতাকে সমগ্র মানবতার সামনে উদ্ভাসিত করেছে।  যারা ক্ষমতা বজায় রাখতে এবং নিজদের নিরাপদ বোধ করতে হাসপাতাল বোমা হামলা করেছে এবং অসংখ্য অগণিত মানুষকে অনাহারে রাখতে বাধ্য করেছে। উপরে উল্লেখিত চারটি দৃশ্যপট যায়োনিস্ট প্রকল্পের বিজয়ের পথ নয়; বরং এগুলি তার পতনের দিকে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন স্তর।

এখন আমাদের কাজ হলো এই পতনকে দ্রুততর করা, এমন একটি বৈশ্বিক আন্দোলন গড়ে তোলা যা অপরাধের মাত্রা এবং আশা ও বিশ্বাসের বিস্তৃতি অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাজ হলো ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমিতে বাঁচিয়ে রাখা, ছন্ন-ছাড়া জীবনকে পুনর্নির্মাণ করা, অবরোধ বন্ধ করা, বন্দীদের মুক্তি দেওয়া, যারা নৃশংসতা চালানোর আদেশ দিয়েছে এবং যারা তা বাস্তবায়ন করেছে তাদের বিচার করা এবং আধিপত্যের কাঠামোগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা যতক্ষণ না সেগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।

ন্যায়বিচার কোনো উপহার নয়, এটি মানবতার সর্বোচ্চ মূল্যবোধ। স্বাধীনতা কোনো স্লোগান নয়, এটি মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতা কোনো বিকল্প নয়, এটি একটি বাধ্যবাধকতা। আত্মনির্ভরতা কোনো ইলুশন নয়, এটিই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। প্রত্যাবর্তন কোনো স্বপ্ন নয়, এটি একটি অধিকার। যখন আমরা এই সত্যগুলোকে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করি, তখন যে পথটি অসম্ভব মনে হয়েছিল, তা হয়ে ওঠে একমাত্র বাস্তব এবং যুক্তিসঙ্গত পথ। ফিলিস্তিনের জনগণ বারবার বিপর্যয় ও সংকটের মধ্য দিয়ে এই সত্য বহন করেছে, এবং এখন পৃথিবী কেবলমাত্র এটা শুনতে শুরু করেছে।

 

অনুবাদঃ মেহেদী হাসান 

৪১২ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক, ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অনলাইন মুখপাত্র। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সময়ের চিন্তাগত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাবে।
Picture of রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক ডেস্ক

রোয়াক, ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অনলাইন মুখপাত্র। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সময়ের চিন্তাগত সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাবে।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top