ফিকহুল মীযান —সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, আকীদা ইত্যাদি সমস্ত বিষয় পরিগ্রহ করে আছে। মুসলিম উম্মাহর একজন সদস্য হিসেবে এই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উম্মাহর একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে উম্মাহ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলমানদের নিয়ে চিন্তা করে না, সে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। ফিকহুল মীযান নিয়ে কলম ধরতে এ বিষয়টিই আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন পারস্পরিক বিরোধ দূর করে একে অপরের বন্ধন মজবুত করতে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল করেছেন। মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিলের অন্যতম মূল মাকসাদ এটি। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ সদস্য এই মাকসাদ থেকে যোজন-যোজন দূরে অবস্থান করছে।
খারেজী, মুতাযিলা, মুরজিয়া, জাবরিয়া, কাদরিয়া, বাতিনিয়্যাহ-সহ হাল আমলের আল-কায়েদা, আইএস, বোকো হারাম এবং এদের থেকে জন্ম নেওয়া নামসর্বস্ব তথাকথিত ইসলামী সংগঠন এবং অন্যান্য ইসলামী সংগঠন যেমন—সালাফী, ইখওয়ান, তাবলীগ—এরা প্রত্যেকেই মানদণ্ড হিসেবে কোরআনকে গ্রহণ করে এবং নিজেদের মত প্রতিষ্ঠা করতে কোরআন থেকে দলীল দেয়। এমনকি আমরা দেখেছি, উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠন আইএসও নিজেদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে কোরআন থেকে প্রচুর পরিমাণে উদ্ধৃতি দেয়।
আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে কোনো ধরনের অসঙ্গতি নেই, নেই কোনো ফাঁকফোকরের বালাই। কেননা, এ গ্রন্থ পরাক্রমশালী, হাকীম এবং প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ তায়া’লার পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। এ কিতাব মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত এবং সমগ্র মানবতার হেদায়েতের উৎস। এটা যেমন আমার বিশ্বাস, তেমনি প্রত্যেক মুসলমানেরও বিশ্বাস।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নসের (Text) অপব্যাখ্যার ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। নস কেন অপব্যাখ্যার স্বীকার হচ্ছে এর কারণটা আমি ঠিকঠাক ধরতে পারছিলাম না। আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এর কারণ খোঁজা শুরু করি। ফলাফল হিসেবে যা পাই, তা-ই আমাদের এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়। আমরা বুঝতে পারি, মীযানে অসঙ্গতির ফলে নস অপব্যাখ্যার স্বীকার হচ্ছে।
সূরা হাদীদের ২৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন—
لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِالۡبَیِّنٰتِ وَاَنۡزَلۡنَا مَعَهُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡمِیۡزَانَ لِیَقُوۡمَ النَّاسُ بِالۡقِسۡطِ
অর্থ : “আমি আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের সাথে কিতাব ও মীযান নাজিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।”
প্রত্যক্ষভাবে কিতাব এবং মীযান উভয়ই বোধ, চিন্তা, আকীদা, ইবাদত, আচার-অনুষ্ঠান, আখলাক, পারস্পরিক আচার-আচরণ এবং লেনদেন ইত্যাদিতে ইনসাফ, আদালত এবং মধ্যমপন্থা নিশ্চিত করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা কিতাবের সাথে মীযানও নাজিল করেছেন। কারণ মধ্যমপন্থা, আদালত, ফাহ্ম, তাসাউফ ইত্যাদি নিশ্চিত করতে এবং ইখতিলাফ দূর করতে কিতাবের সাথে মীযানও প্রয়োজন।
আমি প্রায় একশত পঞ্চাশটি তাফসীর গ্রন্থ সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই ‘মীযান’ শব্দের ব্যাখ্যা তালাশ করা শুরু করি। অধিকাংশ মুফাসসির মীযানের তাফসীর করেছেন বস্তুগত মীযান অর্থে। মীযান শব্দকে তারা শস্য অথবা সীমা-পরিসীমা ‘নির্ধারক’ হিসেবে তাফসীর করেছেন। তারা আকলের মীযানকে অন্তর্ভুক্ত করেননি। মীযান বা স্কেল দিয়ে বস্তুর পরিমাপ করা—এটা মানুষের কাছে স্বাভাবিক বিষয়। তবে মীযান সীরাতে মুস্তাকীমের সাথে সম্পৃক্ত। মানুষের হেদায়াতের সাথে সম্পৃক্ত মীযানই প্রকৃত মীযান। ব্যক্তি যেন সীরাতে মুস্তাকীমের পথে সহজে চলতে পারে, যেন ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল হতে পারে, মীযান তা নিশ্চিত করে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-সহ আরও কয়েকজন আলেম মীযানের অর্থ করেছেন আদল। এটিও মীযানের সামগ্রিক অর্থ বহন করে না। কারণ এটি পূর্বের অর্থের দিকেই ইঙ্গিত করে। وَاَنۡزَلۡنَا مَعَهُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡمِیۡزَانَ আমরা তাদের কাছে কিতাব ও মীযান নাজিল করেছি। لِیَقُوۡمَ النَّاسُ بِالۡقِسۡطِ -যাতে মানুষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে। এখানে قسط মানে ন্যায়বিচার। জুলুম অপসারণ করে ন্যায়বিচার—আদালত নিশ্চিত করা। এ বিষয়ে সামনে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।
ইমাম মাতুরিদীসহ অনেক আলেম মীযানের এর অর্থ করেছেন আকল। এ অর্থটিও মীযান পরিভাষাকে পরিপূর্ণরূপে ধারণ করে না। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন যখন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তখন তাকে আকলসমেত-ই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আকল একটি বিদ্যমান বিষয়। সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ এর অধিকারী হয়ে থাকে—নাজিল করার প্রয়োজন পড়ে না।
এই পৃথিবীর সবকিছুরই নিজস্ব মীযান রয়েছে। বিদ্যুত পরিমাপের যেমন মীযান বা পরিমাপক রয়েছে, তেমনি পানিরও মীযান বা পরিমাপক রয়েছে। আমি বা আপনি বিদ্যুৎ পরিমাপক অ্যামিটার দিয়ে পানি মাপতে পারবো না, আবার পানি মাপার পরিমাপক—হাইড্রোমিটার দিয়ে বিদ্যুৎ পরিমাপ করতে পারবো না। লোহা পরিমাপ করার যেমন স্কেল রয়েছে, তেমনি স্বর্ণ পরিমাপেরও নিক্তি রয়েছে। লোহা পরিমাপ করার স্কেল অথবা শস্য পরিমাপ করার মিটার দিয়ে কখনোই স্বর্ণ পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এই মহাবিশ্বের সবকিছুরই যেমন ওজন রয়েছে, তেমনি তা পরিমাপেরও ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপক রয়েছে। যার ওজন রয়েছে, অবশ্যই তার পরিমাপের যন্ত্রও রয়েছে। সূরা রহমানে একথাটিই বলা হয়েছে—
اَلرَّحۡمٰنُ. عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ. خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ. عَلَّمَه الۡبَیَانَ. اَلشَّمۡسُ وَالۡقَمَرُ بِحُسۡبَانٍ. وَّالنَّجۡمُ وَالشَّجَرُ یَسۡجُدٰنِ. وَالسَّمَآءَ رَفَعَها وَوَضَعَ الۡمِیۡزَانَ. اَلَّا تَطۡغَوۡا فِی الۡمِیۡزَانِ. وَاَقِیۡمُوا الۡوَزۡنَ بِالۡقِسۡطِ وَلَا تُخۡسِرُوا الۡمِیۡزَانَ
অর্থ : “পরম দয়ালু আল্লাহ এ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কথা শিখিয়েছেন। সূর্য এবং চন্দ্র একটি হিসাবের অনুসরণ করছে। এবং তারকারাজি ও গাছপালা সব সিজদাবনত। আসমানকে তিনিই সুউচ্চ করেছেন এবং মীযান কায়েম করেছেন। এর দাবি হলো তোমরা মীযানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। ইনসাফের সাথে সঠিকভাবে ওজন করো এবং ওজনে কম দিও না।” (সূরা রহমান : ১-৯)
ইসলামী শরীয়ত মীযানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। মীযান শব্দটি ইসমে জিনস। الميزان এর ال টি কেউ বলেছেন জিনসী, কেউ বলেছেন ইসতিগরাকী। কোরআনে নয় বার মীযান শব্দটি এসেছে।
এ মহাবিশ্বে যা কিছু রয়েছে, তার প্রত্যেকের মীযান রয়েছে। ইসলামী শরীয়তেরও মীযান রয়েছে। যখন পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন নির্দিষ্ট মীযান দিয়েই করা হয়েছে। দুনিয়া সম্পর্কিত আয়াতের যেমন মীযান রয়েছে, তেমনি আখেরাত সংক্রান্ত আয়াতেরও মীযান রয়েছে। তবে দুনিয়া এবং আখেরাতের মীযানে বেশকম আছে।
দুনিয়ার প্রজ্জ্বলিত আগুনে কোনো ব্যক্তিকে ফেলে দিলে পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যেই সে জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে। কিন্তু আখেরাতের চিরস্থায়ী আগুন এই নিয়মের ব্যতিক্রম। পরকালে যে মানুষগুলো চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে—
“যখনই তাদের চামড়া পুড়ে পাকা দগ্ধ হবে তৎক্ষণাৎ তার স্থলে নতুন চামড়া বদলে দেওয়া হবে, যাতে তারা শাস্তি উপভোগ করতে পারে।” (সূরা নিসা : ৫৬)
দুনিয়াতে খাওয়া-দাওয়ার পরে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের দরকার হয়। কিন্তু আখেরাতে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের ঝামেলা থাকবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মীযানের ধরনেও আল্লাহ সুনিপুণ একটা পার্থক্য তৈরি করে রেখেছেন।
একটি বিষয় বলে রাখা ভালো। মুতাযিলারা মীযানুশ শাহেদ এবং মীযানুল গায়েব এর মধ্যেকার পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আমরা আমাদের রব আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে দেখতে পাবো। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত এই বিশ্বাস রাখে, হাদীসেও এমনটা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু মু’তাজিলাদের মতে, আমরা দেখতে পাবো না। কারণ হিসেবে তারা বলে, কোনো কিছু দেখতে চাইলে তাতে আলোর প্রতিবিম্ব পড়তে হবে। আর আলোর প্রতিবিম্ব সেটাতেই পড়ে, যেটা জিসম বা জাওহার।
মুতাযিলারাদের এই যুক্তির জবাবে আমরা বলি, দুনিয়ার চোখ আর পরকালের চোখের বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতা রয়েছে। এই পৃথিবীর চোখের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ থাকে। হতে পারে সেটা পঞ্চাশ বা শত বছর। কিন্তু পরকালীন চোখের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই সে চোখ অমর।
তাহলে দেখা যাচ্ছে অবস্থার পরিবর্তনে মীযানেরও পরিবর্তন হয়। সুতরাং মীযানের সঠিক প্রয়োগ না হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। উদাহরণ হিসাবে আমরা বলতে পারি, কোনো ব্যক্তি লোহা পরিমাপ করার যন্ত্র দিয়ে সোনা পরিমাপ করার চেষ্টা করলে সঠিক পরিমাপ করতে তিনি ব্যর্থ হবেন। কারণ, ঐ যন্ত্র দিয়ে লোহা বিশ/পঞ্চাশ গ্রাম ওজন করা গেলেও এক গ্রামের কম ওজন করা যাবে না। কিন্তু সোনা এক গ্রামের চেয়েও কম পরিমাপ করার প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুৎ, পানি, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতির বেলায়ও একথা প্রযোজ্য।
আইএস, আল-কায়েদা বা এদের মতো নামসর্বস্ব কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো কিতালের আয়াতগুলোকে মীযানের আলোকে না বুঝার ফলে সারা পৃথিবীব্যাপী বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করছে। ইসলামের তারা ভিন্ন মতাদর্শের উপর কঠোরতা, একগুঁয়েমি এবং শরীয়ত অসমর্থিত জিহাদী কর্মক্রম চালাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি বড় এক ট্র্যাজেডি।
কালামে হাকীমে আমরা দশেরও অধিক আয়াত পাই, যেখানে অনমনীয়তা (غِلْظَة), শক্তি [(شِدَّةٌ) (তোমরা কাফেরদের উপর শক্তি প্রদর্শন করবে-اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ)] সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিতাল সম্পর্কেও অনেক আয়াত রয়েছে। বিশেষত সূরা তওবা এবং সূরা আনফালে।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো, এই সব আয়াত শত্রুদের সাথে যুদ্ধের মীযান বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়। যুদ্ধে শত্রুপক্ষের লক্ষ্য থাকে ভূমি দখল করা। এ লক্ষ্যে সে আপনাকে আক্রমণ করবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনমনীয় এবং শক্তিশালী হতে হবে। প্রয়োজনে কৌশলগত অবস্থানও নিতে হবে। তবে কৌশলের ছলে কখনোই প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না। কারণ, প্রতারণা সর্বদাই নিষিদ্ধ।
কোরআনের আয়াতগুলো কেবল একটি মীযানের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং একাধিক মীযানের উপর ভিত্তি করে বুঝতে হবে।
যুদ্ধ-জিহাদ-কঠোরতা সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো সমরনীতি সংক্রান্ত মীযানের আলোকে বুঝতে হবে। নম্রতা-শিথিলতা, অধিকার, ইহসান, এবং অমুসলিমদের সাথে আদালত প্রভৃতি আয়াতগুলো তৎসংশ্লিষ্ট মীযানের আলোকে বুঝতে হবে। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে এ সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন—
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا
“আপনারা তার সাথে কোমল স্বরে কথা বলবেন।”(সূরা ত্বহা – ৪৪)
لَا یَنۡهىکُمُ اللّٰه عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَلَمۡ یُخۡرِجُوۡکُمۡ مِّنۡ دِیَارِکُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡهمۡ وَتُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡهمۡ اِنَّ اللّٰه یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ. اِنَّمَا یَنۡهىکُمُ اللّٰه عَنِ الَّذِیۡنَ قٰتَلُوۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَاَخۡرَجُوۡکُمۡ مِّنۡ دِیَارِکُمۡ وَظٰهرُوۡا عَلٰۤی اِخۡرَاجِکُمۡ اَنۡ تَوَلَّوۡهمۡ
অর্থ : “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করছেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে এবং বের করে দেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছে। আর যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তারাই তো জালেম।” (সূরা মুমতাহিনাহ : ৮-৯)
উপরের আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াতে শান্তি ও সহাবস্থান এবং ইসলামী ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকলের অধিকারের মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয় দুই দিক থেকে। একদল কঠোরতা সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর উপর ভিত্তি করে ইসলামকে চরমপন্থী একটি দ্বীন হিসেবে উপস্থাপন করে। আরেক দল কল্যাণ, দয়া এবং ইহসান সংশ্লিষ্ট আয়াতের উপর ভিত্তি করে ইসলামকে শক্তিহীন একটি দ্বীনে পরিণত করে। রহমত এবং শক্তি প্রদর্শন, কঠোরতা এবং শিথিলতার মধ্যে ইসলাম সামঞ্জস্য বিধান করে। যেখানে কঠোরতা প্রয়োজন সেখানে কঠোরতা, যেখানে দয়া ও রহমত প্রয়োজন সেখানে দয়া ও রহমত প্রদর্শন করা। যে যতটুকুর হকদার তাকে ততটুকু প্রদান করাই মীযানের দাবি। অন্যান্য দ্বীনের সাথে ইসলামের পার্থক্যটা এখানেই।
মীযানে তখনই ক্রটি দেখা দেয়, যখন একটি আয়াতকে তৎসংশ্লিষ্ট মীযানে ব্যাখ্যা না করে গড়ে সবগুলো আয়াত একটি মীযানে ব্যাখ্যা করা হয়। বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার শুরুটা এখান থেকেই হয়। এবং এখান থেকেই অতিমাত্রায় সহিংস ও চরমপন্থী গোষ্ঠী বা দলের উদ্ভব হয়; যারা ইসলামের সমস্ত গৌরব এবং শক্তিকে ম্লান করে দেয়।
ফিকহুল মীযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো প্রয়োজনের আলোকে শরীয়তের কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি আলেম ও শাসকদের অনুধাবন করানো এবং জনগণকে সে আলোকে পরিচালনা করা। এই সূত্র ধরেই আমরা ফিকহুল মীযান নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।
কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, পূর্বে কেন ফিকহুল মীযান নিয়ে আলোচনা ছিলো না। আসলে রাসূল (স.)-এর যুগ থেকেই দৃশ্যত এর প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন ছিলো। রাসূল (স.) যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত মীযানের আলোকেই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি তার সুবাসিত জীবনের স্বাভাবিক কিংবা যুদ্ধাবস্থায়, মুসলিম কিংবা অমুসলিমদের সাথে পারস্পরিক আচার-আচরণে যে মীযান প্রয়োগ করেছেন, তা আমরা সামনে আলোচনা করবো।
ফিকহুল মীযান উসূলের একটি ক্ষেত্র তথা শাখা। আমাদের কাছে থাকা উসূলে ফিকহের পরিপূরক হলো ফিকহুল মীযান। উসূলে ফিকহ শরীয়তের হুকুম-আহকামকে ব্যাখ্যা করে। আর ফিকহুল মীযান সাধারণভাবে কোরআন—বিশেষত সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করে। ফিকহুল মীযান দলীলের উপর নির্ভর করে না, বরং মীযান বা মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে। দলীল এবং মীযানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। দলীল বলতে আমরা বুঝি— কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস, ইসতিহসান , মাসালিহুল মুরসালা ইত্যাদি।
অপরদিকে মীযান হলো কীভাবে কোরআন থেকে ইজতিহাদ করবো—কোরআনকে কীভাবে বুঝবো? সুন্নত এবং কিয়াসকে কীভাবে বুঝবো? ইজমা কখন হবে? বিভিন্ন প্রকার দলীলের মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে—যা নিয়ে মুসলিম উম্মাহ মতানৈক্যে লিপ্ত হয়। ইত্যাকার বিষয়গুলো ফিকহুল মীযানের ভিত্তি এবং উদ্দেশ্য।
ফিকহুল মীযান এমন একটি বাস্তব জ্ঞান, যার মাধ্যমে উসূলে বৈপরীত্য থাকলে তা আমরা দূর করতে পারি। ফুরু’য়ী বা শাখাগত বিষয়ে মতভেদ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। স্থান-কাল-পাত্রভেদে ফুরু’য়ী বিষয়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে। তবে উসূল তথা মূলনীতিতে মতপার্থক্যের কোনো সুযোগ নেই।
ফিকহুল মীযান হলো শরীয়তের মানদণ্ড, শরীয়তের স্থিতিস্থাপক। ফকীহ, গবেষক কিংবা মুজতাহিদ ফিকহুল মীযানের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন যে, কৃত ইজতিহাদটি সঠিক অথবা ভুল।
ধরুন একজন বলল, এখানে দশ কেজি শস্যদানা আছে। অন্যজন বলল, না, এখানে পাঁচ কেজি আছে। এই মতানৈক্যে সমাধান দিবে মীযান। ওজন করার পর দশ/পাঁচ যাই পাওয়া যাবে, তাতে উভয় পক্ষের দ্বিমত নিরসন হয়ে এক মতে আসবে। পার্থিব বিষয়ে মীযান এতো গুরুত্বপূর্ণ হলে ঈমান, হেদায়াত, খেলাফত প্রভৃতি বিষয়গুলোতে এর গুরুত্ব কেমন হবে?
আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে কিতাবের সাথে মীযান নাজিল করার বুনিয়াদটা এখানেই। আমাদের বুঝার মানদণ্ড—মীযান। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা নসের (Text) সঠিক মর্মার্থে পৌঁছাতে পারি। মুসলিম উম্মাহ আকীদার প্রশ্নে যেখানে মতবিরোধ করছে—ক্ষেত্রবিশেষ একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের করণীয় কী? করণীয় সম্পর্কে কোরআন বলছে—
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ
অর্থ : “এদের কাছে যখনই কোনো সন্তোষজনক বা ভয়ের খবর পৌঁছে, তখনই তারা তা প্রচার করে বেড়ায়। যদি তারা তা রাসূল এবং তাদের দায়িত্বশীল লোকের নিকট পৌঁছাতো তাহলে তা এমন লোকেরা জানতে পারতো, যারা (এ জাতীয় খবর থেকে) সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।“ (সূরা নিসা: ৮৩)
এই দুই অবস্থা (খবরে আমান, খবরে খওফ) বিশ্লেষণ করে আলেমগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কোনো জাতিই এই দুই অবস্থার কোনো একটি থেকে মুক্ত নয়। খবরে আমান হোক অথবা খবরে খওফ —উভয় অবস্থার জন্যই মারযা (সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবে এমন ব্যক্তি) প্রয়োজন।
মারযা ব্যতীত আল্লাহ আমাদেরকে কীভাবে রাখতে পারেন? যারা ইসতিনবাত করতে সক্ষম তারাই হচ্ছেন মারযা। কৃত ইসতিনবাতটি যে সঠিক, মীযান ছাড়া এটি কীভাবে প্রমাণিত হবে?
قَٰتِلُوهُمْ—তাদেরকে হত্যা করো—কোরআনের এই আয়াতটি হত্যার মতো কঠিন একটি বিষয়কে নির্দেশ করে। এই নির্দেশটি সাধারণভাবে প্রযোজ্য হবে—এটা মীযানের দাবি হতে পারে না। আমরা এখন যুদ্ধের ময়দানে নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় একই দেশে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিষ্টান—অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ একত্রে বসবাস করছি। সুতরাং আয়াতটি মীযানের আলোকে বুঝতে হবে। অন্যথায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
ফিকহুল মীযানের বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে আরেকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের নজর আকর্ষণ করতে চাই। আলোচনার শুরুটা করেছিলাম সূরা হাদীদের ২৫ নং আয়াত দিয়ে। কোরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সূরা হাদীদের অবস্থান ৫৭ তম। অর্থাৎ সূরা হাদীদ কোরআনের একেবারে মধ্যবর্তী একটি সূরা। মধ্যবর্তী এই সূরার ২৫ নং আয়াতটি লোহা সম্পর্কে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীগণ বিস্তারিত গবেষণা করেছেন।
সূরা হাদীদের ২৫ নং আয়াত থেকে ছয়টি মূলনীতি পাওয়া যায়। সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চায় এমন প্রত্যেক জাতির জন্য মূলনীতিগুলো অপরিহার্য। হোক তারা মুসলিম কিংবা অমুসলিম।
প্রথম মূলনীতি: মুতাকায়েদ (Convince) করানোর ক্ষমতা। মুতাকায়েদ করতে হলে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি হতে হবে। শতধা বিভক্ত কিংবা নানাভাবে বিচ্ছিন্ন জাতি কখনোই মুতাকায়েদ (Convince) করতে পারে না। আর মুতাকায়েদ ছাড়া সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
একটি জাতির পুনর্জাগরণের শুরুটা হবে তার জনগণকে নিজস্ব চিন্তার আলোকে মুতাকায়েদ করা। হোক সেটা ইসলাম, পুঁজিবাদ কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতার বয়ানে। এটা সর্বজনীন নিয়ম।
দ্বিতীয় মূলনীতি: সংবিধান। জাতির অধিকার সংরক্ষণ করবে এমন একটি সংবিধান থাকতে হবে। অধিকার সংরক্ষণকারী এ সংবিধান না থাকলে জনজীবনে ন্যায় এবং আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে না। কালামে হাকীমের ঘোষণা—
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ
অর্থ : “আমি আমার রাসূলদের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দিয়ে পাঠিয়েছি এবং তার সাথে দিয়েছি কিতাব।” কিতাব বা কোরআনের সাথে সুন্নতও রয়েছে। কোরআন এবং সুন্নত জাতির সংবিধানের প্রতিনিধিত্ব করে।
সংবিধান রচনা করতে হবে এমনভাবে যেন ভিন্নমতাবলম্বীদের অধিকারও সমভাবে নিশ্চিত হয়। যেমনটা নবী (স.) মদীনা সনদে নিশ্চিত করেছেন। মুসলিম, ইহুদি এবং পৌত্তলিক—সকলের অধিকার এ সংবিধান নিশ্চিত করে। পাশ্চাত্যের অনেক চিন্তাবিদ এমনকি জঁ-জ্যাঁক রুশোও মদীনার সনদ বা সংবিধানকে তৎকালীন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান বলে অবহিত করেছেন।
তৃতীয় মূলনীতি: আদালতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। রাষ্ট্রে প্রকৃত অর্থেই আদালত কায়েম থাকতে হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়াসহ বিজ্ঞ ইমামগণের বক্তব্য হচ্ছে অমুসলিম রাষ্ট্রেও যদি আদালত প্রতিষ্ঠিত থাকে, তবে সে রাষ্ট্র স্থায়ী হবে। অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্রে যদি জুলুম বহাল থাকলে তার পতন অনিবার্য। পাক কালামের এই আয়াতটি সে কথাই বলছে—
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا ۚ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ : “ফলে জালিম সম্প্রদায়কে সমূলে উৎখাত করা হলো। আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য।” (সূরা আনআম : ৪৫)
অন্য একটি আয়াত আরেকটু জোরের সাথে বলছে—
هَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الظَّالِمُونَ
অর্থ : “জালেম সম্প্রদায় ছাড়া আর কাউকে ধ্বংস করা হবে কি?” (সূরা আনআম : ৪৭)
চতুর্থ মূলনীতি: সামরিক এবং শিল্পায়নে শক্তিশালী হওয়া।
وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ
আয়াতে بَأْسٌ شَدِيدٌ দ্বারা সামরিক এবং শিল্পায়ন শক্তিকে বুঝানো হচ্ছে।
পঞ্চম মূলনীতি : সফট পাওয়ার, বৈজ্ঞানিক শক্তি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন। এই শক্তিগুলো আসে লৌহদ্রব্য থেকে। কম্পিউটার থেকে শুরু করে মানুষের উপকারী (مَنَافِعُ لِلنَّاسِ) সবকিছু আসে লৌহ থেকে। সামরিক শক্তি, বৈজ্ঞানিক শক্তি বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা—উৎসগত দিক থেকে এগুলো এক।
ষষ্ঠ মূলনীতি: রাষ্ট্রশক্তি। উপরের শক্তিগুলোর যথাযথ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রশক্তি।
মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কথা—
وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
অর্থ : “আল্লাহ রব্বুল আলামীন দেখতে চান, কে গায়েবের প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ রব্বুল আলামীন শক্তিমান এবং পরাক্রমশালী।” (সূরা হাদীদ : ২৫)
আয়াতের এ অংশটি এও ইঙ্গিত করে যে, মুমিনগণ সামরিক শক্তি এবং নৈতিক শক্তির উপর নির্ভর করার পাশাপাশি, সর্বশক্তিমান আল্লাহ কতৃক প্রেরিত আসমানী সাহায্যের উপরও ভরসা রাখে।
এই ছয়টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে একটি জাতি গঠিত হয়, ক্ষমতার ভিত তৈরি হয়, সর্বোপরি সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই আয়াতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই আয়াতের মধ্যে মীযানের সূক্ষ্ম এবং বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। আলেমগণ বিশেষ করে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী কিতাব, মীযান এবং হাদীদ (ধাতব পদার্থ)-কে একত্রে উল্লেখের কারণ হিসেবে উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকেই ইশারা করেছেন।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে রকমফের আছে। কতক আছেন যারা আল্লাহওয়ালা। তারা একমাত্র আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন বোধ করেন না। তাদের নিকট আল্লাহ এবং তার রাসূলই শেষ কথা। বলা যায় তারা কিতাবের সাথে (কোরআন এবং সুন্নাহ) সম্পর্কযুক্ত।
কতক মানুষ আছেন, যারা ভালো এবং নিষ্ঠাবান মুসলিম। এতদসত্ত্বেও কখনো কখনো তাদেরকে ঝগড়া বিবাদের মুখোমুখি হতে হয় কিংবা পার্থিব জীবন যাত্রায় এমন বিষয়াবলির সম্মুখীন হতে হয় যার ফলে তাদেরকে মীযানের শরণাপন্ন হতে হয়। এ কারণেই কিতাব এবং মীযান একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরের দুই অবস্থার বাইরে এমনও লোক আছে যারা কিতাব, মীযান অথবা আইন-আদালতের তোয়াক্কা করে না। ফলে তাদের উপর শক্তি প্রদর্শন করতে হয়। তাই হাদীদ—লোহার উল্লেখ।
এই আয়াতটিকে ক্ষমতা সংক্রান্ত আয়াতও বলা হয়। কেননা, ক্ষমতা সংক্রান্ত সকল উপদান এই আয়াতে বিদ্যমান। আলোচ্য ছয়টি মূলনীতি বাদ দিয়ে এই আয়াত নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা-পর্যালোচনা করলেও এর সঠিক মর্মার্থে আমরা পৌঁছাতে পারবো না।
দোজাহানের বাদশা নবী (স.) পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার কথা আমাদেরকে জানিয়েছেন। নাজিলকৃত কিতাব বুঝার ক্ষেত্রে মীযানের অভাবে তারাও ভারসাম্যহীন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে।
ইমাম আহমদ (র.) একটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, একদিন নবী (স.) দেখলেন সাহাবায়ে কেরামের একদল বলছে, আল্লাহ কি এমনটা বলেননি? অন্য দল বলছে, আল্লাহ কি এমনটা বলেননি? নবী (স.) দেখলেন তারা কদর বা ভাগ্য সম্পর্কে বাদানুবাদ করছে।
একপক্ষ কতগুলো আয়াত দিয়ে স্বপক্ষে যুক্তি দিচ্ছে, অপর পক্ষ ভিন্ন আয়াত দিয়ে তা রদ করে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে। এই অবস্থা দেখে নবী (স.) রাগ করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমনটা কখনো করতে বলেছি? এগুলো করে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত ধ্বংস হয়েছে।
তোমাদের পূর্বে যেসব জাতি ছিলো, তাদের ধ্বংস হওয়ার কারণ হলো তারা মীযান প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এরপর তিনি আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সুন্নত থেকে কিছু বুনিয়াদি নীতিমালা পেশ করলেন। একজন অপরজনকে সত্যায়ন করার জন্য মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন। অপরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য আল্লাহ কোরআন নাজিল করেননি। বর্তমানে আমরা যেমনটা দেখতে পাচ্ছি, আয়াত উদ্ধৃতির মাধ্যমে একপক্ষ অপর পক্ষকে বাতিল ঘোষণা করছে! এটা কখনোই কাম্য নয়।
এরপর তিনি বলেন, আমি যখন তোমাদেরকে কোনো বিষয়ে আদেশ করি, সেটা সাধ্যমতো করার পালন করার চেষ্টা করো। আর যখন কোনো বিষয় থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করি, সেটা থেকে বিরত থাকো। ভারসাম্যহীতার দৃষ্টান্ত পেশ করতে এই হাদীসটি খুবই যুক্তিযুক্ত।
এই হাদীসটির মাধ্যমে দুটি দলকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। একটি জাবরিয়া। অপরটি কাদরিয়া।
জাবরিয়াগণ বলেন, মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত। ভাগ্যে মানুষের কোনো হাত নেই। বাতাসের মাধ্যমে গাছের পাতা যেমন দোলে, তেমনি মানুষও আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী চলাফেরা করে। এখানে তার ইচ্ছার কোনো স্বাধীনতা নাই।
জাবরিয়াগণ আয়াতের জাহেরী অর্থের মাধ্যমে দলীল দেয়। তাদের দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো কোরআনের এই আয়াত—
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ
অর্থ : “তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” (সূরা তাকবীর : ২৯)
অন্য একটি আয়াত বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে—
وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ رَمَىٰ
অর্থ : “আর আপনি যখন নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেননি বরং আল্লাহ্ই নিক্ষেপ করেছিলেন।” (সূরা আনফাল : ১৭)
এসকল আয়াতের মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে এটা বুঝা যায় যে, সবকিছু আল্লাহর প্রত্যক্ষ ইশারাতেই হয়। এমনকি রাসূল নিজ হাতে যেটা নিক্ষেপ করেছেন, আল্লাহ বলেছেন, সেটাও তিনিই নিক্ষেপ করেছেন।
অন্যদিকে কাদরিয়াগণ বলেন, মানুষ তার কর্মে স্বাধীন—যেখানে আল্লাহর কোনো হাত নেই। প্রমাণস্বরূপ তারা কোরআনের এই আয়াত উপস্থাপন করে—যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক, যার ইচ্ছা সে কাফের হোক। এগুলো তাদের কাজের পুরস্কার। এগুলো সেসব কাজের প্রতিফল—যা তারা করেছে।
এরকম আয়াতগুলো মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। মানুষকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে, তোমরা আকল খাটাও, তোমরা চিন্তাভাবনা করো।
আলোচ্য হাদীসটিতে প্রথম পক্ষের বলা—আল্লাহ কি এমনটা বলেননি? এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বান্দা যা কিছু করে, আল্লাহর ইচ্ছাতেই করে। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া বান্দা কিছুই করতে পারে না। দ্বিতীয় পক্ষের বলা, আল্লাহ কি এমনটা বলেননি? এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষ তার কর্মে স্বাধীন। এখানে আল্লাহর ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন নাই। এই বিতর্কটি তৎকালীন গ্রিক দর্শনের জটিল এবং অস্পষ্ট একটি বিষয় ছিলো।
মীযান আমাদেরকে এই সমস্যার সমাধান দেয়। মীযানের দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় মতই ভ্রান্ত। উভয় দলই মীযানে ভারসাম্য আনতে পারেনি। মীযানের দৃষ্টিকোণ থেকে জাবরিয়াগণ তাদের মতের পক্ষে যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে, সেগুলো আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আকীদা সংক্রান্ত আয়াত। ঈমান এবং আকীদার মীযান হলো এই আয়াতগুলো। আল্লাহ রব্বুল আলামীন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং পরাক্রমশালী। কোনো বিষয়ে তিনি অক্ষম নন। তিনি সকল বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এ বিষয়ে আমরা সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস রাখি। আল্লাহ যদি অক্ষম হন, তাহলে তিনি রব হতে পারেন না। এটাই আমাদের বিশ্বাস। এবং এই বিশ্বাসগত অবস্থানের কারণেই আমরা মুমিন।
কিছু আয়াত আছে যেগুলো আল্লাহ স্বয়ং তার নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন। সুন্নাতুল্লাহর আলোকে কিছু বিষয় নিজের জন্য আবশ্যক করে নিয়েছেন। রব্বুল আলামীন মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করবেন। এমতাবস্থায় তিনি কীভাবে এমন কিছুর জন্য জবাবদিহি করবেন যা করতে ব্যক্তি বাধ্য হয়!
পৃথিবীতে যা কিছু আছে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তারা আল্লাহর আনুগত্য করে। আল্লাহ তাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এর বাইরে তারা কিছু করতে পারে না। তবে মানুষ এর ব্যতিক্রম; তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেওয়া আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এটা সুন্নাতুল্লাহ। এটা আমাদের আকীদা।
দ্বিতীয় পক্ষের বলা, যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক, যার ইচ্ছা সে কুফরি করুক—এটা ইচ্ছার স্বাধীনতা। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদেরকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
আমি কাউকে বল প্রয়োগে হত্যা করতে চাইলেও আল্লাহ তা চান না। এবং এধরণের হত্যাকে তিনি নিষিদ্ধ করছেন। এখন কেউ যদি বল প্রয়োগে কাউকে হত্যা করতে চায়, আল্লাহ তাতে বাধা দিবেন না। এখান থেকেই আসে দায়িত্বের মীযান, সুন্নাতুল্লাহর মীযান, কর্মের মীযান।
এখানে খিয়ার বা ইচ্ছার স্বাধীনতা প্রয়োজন। ফিকহের একটি মৌলিক নীতিমালা হলো, অক্ষমের উপর শরীয়তের বিধান প্রয়োগ হবে না। আল্লাহ বলেন—
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
অর্থ : “আল্লাহ কারও উপর সাধ্যাতীত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা : ২৮৬)
আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে ফরজকৃত বিধান বান্দার জন্য পালন করা সহজ।
মীযানে ভারসাম্যহীনতার কথা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে—
আবূ দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে ছিলাম। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, এক সময় মানুষের কাছ থেকে ইলম ছিনিয়ে নেয়া হবে, এমনকি এ সম্পর্কে তাদের কোনো সামর্থ্যই থাকবে না। যিয়াদ ইবনে লাবীদ আল-আনসারী (রা.) নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের নিকট হতে কীভাবে ইলম ছিনিয়ে নেয়া হবে, আমরা কোরআন তিলাওয়াত করি? আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমরা তা তিলাওয়াত করবো এবং আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও তা শিখাবো।
নবীজী বললেন, হে যিয়াদ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। আমি তো তোমাকে মদীনার অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি বলেই গণ্য করতাম! এই তো ইয়াহুদী-নাসারাদের নিকট তাওরাত ও ইনজীল রয়েছে, তা তাদের কী কাজে লেগেছে? (তিরমীজি : ২৬৫৩)
এটি আমাদেরকে নির্দেশ করে, আমরা যদি মীযানকে গ্রহণ না করি, তাহলে কোরআন আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা সত্ত্বেও তা আমাদের কোনো কাজে আসবে না। কিতাবের সাথে মীযান যুক্ত না হলে, মীযানের প্রয়োগ না করা হলে গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাব আমাদের কোনো কল্যাণে আসবে না। উল্টো আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে।
কোরআন আমাদেরকে বলে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ঈমান আনো। ঈমানদারদের ঈমান আনতে বলার অর্থ হচ্ছে, তোমরা তোমাদের ঈমানকে মজবুত কর, সক্রিয় কর। জজবা সম্পন্ন ঈমানের অধিকারী হও। ঈমানকে তাকত সম্পন্ন কর। অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসকে বাহ্যিকভাবে প্রতিফলিত কর। নীতিনৈতিকতা এবং পারস্পরিক লেনদেন, ওঠা-বসায় ঈমানের প্রতিফলন ঘাটাও।
মীযানের গুরুত্ব বুঝার জন্য উপরের হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসটি সহীহ। এতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। উল্লিখিত হাদীস এবং আলোচ্য আয়াত “এবং তাদের সাথে দিয়েছি কিতাব এবং মীযান”—মীযানের গুরুত্ব তুলে ধরে।
“জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে” নবী (স.) এর এই কথা তখনই ফলবে, যখন দেখা যাবে জ্ঞান তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে—কল্যাণের বাহক হওয়ার পরিবর্তে অকল্যাণের বাহন হচ্ছে।
ইমাম গাযযালীর মতে, আল্লাহর ভয়, শরীয়তের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনা থেকে দূরে থাকার মধ্যেই ইলমের মূল কথা নিহিত।
প্রবৃত্তির কামনা বাসনার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেটের দায় এবং যৌন চাহিদার জন্য হয়ে থাকে। ক্ষমতার দাপট, প্রাধান্য বিস্তার, কর্তৃত্ব খাটানো ইত্যাদিও প্রবৃত্তির তাড়নায় হয়ে থাকে। প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে ব্যর্থ হলে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতে হয়।
উল্লিখিত হাদীসসহ অন্যান্য হাদীসে কোরআনের শিক্ষার দিকে ফিরে আসার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে কোরআন সম্পর্কে অবশ্যই উন্মুক্ত হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে।
“তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ?” কোরআন বারবার তাদাব্বুর এবং তাফাক্কুরের কথা বলছে। আজ আমরা উম্মতে মোহাম্মদী এই নাজেহাল অবস্থায় কেন বাধ্য হয়ে বসবাস করছি? কারণ আমরা কোরআনের শিক্ষা থেকে অনেক অনেক দূরে অবস্থান করছি।
এই কোরআন কিয়ামত পর্যন্ত আমাদের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি এবং শক্তির একমাত্র মাধ্যম। আমাদের সম্মান, মর্যাদা, গৌরব ইত্যাদির বাহক এই কোরআন। আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির একমাত্র সোপানও এই কোরআন। কোরআনের প্রথম আয়াত ইকরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মাঝে মধ্যে দেখা যায়, আমাদের ভাই-বোনেরা সহীহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে না। আর যারা পারে, তারাও অনেকটা বাধ্য হয়ে তেলাওয়াত করে। দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে করে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে না।
অতএব, আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে এই কোরানের কাছে মীযান-সহ প্রত্যাবর্তন করতে হবে। যাতে এই কোরআন ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের তাওরাত এবং ইঞ্জিলের মতো না হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত তারা তাদের কিতাব থেকে উপকৃত হতে পারেনি।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের অশেষ রহমত ও মেহেরবানিতে এই জাতি পূর্ববর্তী জাতির মতো লীন হয়ে যাবে না। এই জাতি অমর হবে, ইনশাআল্লাহ। তারা সংখ্যার বিচারে নয়, বরং যোগ্যতা, আখলাক এবং তাজদীদের মাধ্যমে অমর হবে।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এই জাতি তার ক্ষমতা, সততা এবং নতুনত্ব নিয়ে পুনর্জাগরিত হোক। এই জাতি তাদের অন্তর্ভুক্ত হোক, যারা কোরআনুল কারীমের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে।