ইসলামী সভ্যতায় শিক্ষাপদ্ধতি ও পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড ধারা

 

আল্লাহর রাসূল(সা) সভ্যতা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ ধারার সৃষ্টি করে গিয়েছেন, কিন্তু তার সময়কাল হতে পরবর্তী কয়েকশো বছর খুব বেশী বই ছিলনা, কিন্তু ততদিনে পৃথিবীর অর্ধেকের চেয়ে বেশী অঞ্চল বিজিত হয়ে সত্য ও ন্যায়ের আলোকে নতুন একটি দুনিয়া গড়ে উঠে।

এখানে প্রশ্নের সৃষ্টি হয় যে, এই বিশাল সময়ে তাহলে জ্ঞানচর্চা কিভাবে হতো? এই সময়েই তো শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীরা মানবসভ্যতাকে আলোকিত করেছেন, তৈরি হয়েছেন, সেটাও তাহলে কিভাবে হয়েছে?

উত্তর যদি এটাই হয় যে, উস্তাদ থেকে সরাসরি শিক্ষাগ্রহণ করত। তাহলে প্রশ্ন হলো, মুসলমানরাই তো পরবর্তীতে এসে বই (বর্তমানের বাঁধাই করা বই পদ্ধতি যেটি) আবিষ্কার করেছে, উস্তাদ থাকতে এই বই পদ্ধতির প্রয়োজন কেন হল?

আবার বর্তমান সময়ে এত এত বই প্রকাশিত হয় কিন্তু সে যুগের ন্যায় বড় আলেম, দার্শনিক, কালামবিদ, ফকীহগণ কেন উঠে আসেনা?

আমরা যদি ইসলামী সভ্যতায় শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই, ইসলামী সভ্যতায় বই দুই প্রকার – জীবন্ত গ্রন্থ এবং স্থির গ্রন্থ।

জীবন্ত গ্রন্থঃ এ ব্যাপারে বলতে গেলে বলা যায়, যেমন- ফকিহ সাহাবাগণ, এরপরে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক। এই মহান ব্যক্তিগণের অধিকাংশই খুব বেশী গ্রন্থ রচনা করে যাননি। কিন্তু তারা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রচুর ছাত্র তৈরি করেছেন। এই ছাত্ররাই হলেন জীবন্ত বই।।

স্থির গ্রন্থঃ বর্তমান সময়ের বই বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটাই, এই পদ্ধতিটি পরবর্তীতে এসেছে মুসলমানদের হাত ধরেই।
তৎকালীন মুসলমানদের বড়বড় লাইব্রেরীতেই পাশ্চাত্যের চিন্তা, লেখাগুলোও সংরক্ষিত হত এবং মুসলিমরাই সেগুলিকে বই আকারে সামনে এনেছে।

যাইহোক, স্থির গ্রন্থ পদ্ধতি যখন আসলো, ইমাম গাজ্জালী, আল-ফারাবি, ইবনে সিনা প্রমুখ গ্রন্থ লিখেছেন। ইমাম গাজ্জালীর আল মুসতাসফা, আল-ফারাবীর মাদিনাতুল ফাদ্বিলাহ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, উনার স্থির গ্রন্থ লিখেছেন এটা ঠিক তবে এর পাশাপাশি উনারা নিজেরাও জীবন্ত গ্রন্থ।

• উপরোক্ত দুটি বিষয়কে একত্রিত করে ইসলামী সভ্যতায় যা হতো,

আখলাক, ইখলাস, তাসাউফ ইত্যাদি নিয়ে স্থির গ্রন্থ রয়েছে। তবে এসব জীবন্ত গ্রন্থ থেকেই বেশী অর্জন করতো।
দর্শন, অর্থনীতি, গণিত ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর স্থির গ্রন্থ রয়েছে। সেটাও যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই, এখানে আলাদাভাবে বড় কোন বাণিজ্য ছিলনা।
তবে গ্রন্থ লিখলেও তা ব্যাখ্যা করে পড়াতেন জীবন্ত গ্রন্থরাই। কেননা ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা, গাজ্জালীর আল মুসতাসফা, ফারাবীর কিতাবুল বুরহান নিজে নিজে পড়ে বুঝা সম্ভব? বুঝলেও তা কতটুকু? কিন্তু কেউ যদি বড় দার্শনিক শিক্ষকের কাছে সরাসরি শিক্ষা গ্রহণ করে, সে বুঝা আর নিজে নিজে পড়ে বুঝা কি সমান কথা?

মোদ্দাকথা হল, ইসলামী সভ্যতায় এই দুই বিষয়কে সমন্বয় করে মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খানকা, মক্তব পরিচালিত হতো, বিভিন্ন ধারা গড়ে উঠতো।
_
এবার পাশ্চাত্যের জ্ঞান কিভাবে উন্নতি লাভ করলো? তাদের মধ্য থেকে কিভাবে জন লক, ইমানুয়েল কান্ট, হেগেলরা উঠে আসলো? এটার উত্তর অবশ্যই আমাদের খুঁজতে হবে, পর্যালোচনা করতে হবে।

তবে একটি তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- পাশ্চাত্যের উপনিবেশকালে ব্রিটিশ, ফরাসিসহ অধিকাংশই বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চল শোষন করত। তখন একটি শর্ত থাকত, বিভিন্ন দেশ থেকে লুণ্ঠন করে যে সম্পদ আনা হবে অবশ্যই সেই সকল জাহাজ ভর্তি লুণ্ঠিত মালের সাথে একটি করে লাইব্রেরীও আনতে হবে।”

এই ইতিহাসের সাথে এবার একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় পাশ্চাত্য সভ্যতা তিনশো বছরে কি পরিমাণ গ্রন্থ পাচার করেছে। সুতরাং তাদের কাছে গ্রন্থ ছিল, ভাষা তো জানতোই (যেমন, জন লকরা আরবি জানতো), এভাবে তারা মুসলিমদের মৌলিক গ্রন্থ নেওয়ার সাথেসাথে প্লেটো, এরিস্টটলদেরও নতুনভাবে খুঁজে পায়, যেমন এরিস্টটলের সব বই আরবিতে অনুবাদ এবং ব্যাখ্যাগ্রন্থ মুসলিমরাই লিখে। তন্মধ্যে অন্যতম হলেন ইবনে রুশদ, তাকে এরিস্টটলের ব্যাখ্যাকারী বলা হয়। আর এই ইবনে রুশদকে পড়তে পড়তেই ফ্রান্সিস বেকন এত বড় দার্শনিকে পরিণত হন। এরকম হাজারো উদাহরণ রয়েছে।

তাহলে তারা কি স্থির গ্রন্থ দিয়েই সব বড় বড় দার্শনিক উঠিয়ে আনলো?

এবার আসি গুরুত্বপূর্ণ একটি আলাপে। পাশ্চাত্যের পুরো শিক্ষার ধারা নিয়ে এইমুহুর্তে আলাপ সম্ভব না, কিন্তু শত শত জ্ঞানকেন্দ্রের একটি হচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা এটার মেথডোলজি সম্পর্কে কখনো চিন্তা করে দেখেছি কি? এসব নিয়ে কোন বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা মূলক লেখা?

যাইহোক, একটা তথ্য-ই আমাদের বুঝতে সহযোগিতা করবে, তা হলো- ১৯৭৫ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ছাত্র ছিল ৩৭০০ জন, এরমধ্যে ৩৫৫০ এরিস্ট্রকেটদের (aristocrat) সন্তান। এখনো কিছুটা আছে এই নীতি (এরিস্ট্রকেট মানে হচ্ছে বড়বড় সামরিক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রের যারা বড়বড় পদে আসীন রয়েছে), আর এদের সন্তারাই পড়তে পারতো।

যে নিয়মগুলি বিদ্যমান ছিল, যেমন- শিক্ষকরা আসতো, পড়াত এবং ছাত্রদের পারসন টু পারসন ব্যাপক গুরুত্ব দিত। ছাত্ররা শিক্ষকদের অধীনে বেড়ে উঠত, তৈরি হত। (ইসলামি সভ্যতায় মাদ্রাসা ব্যবস্থায় যেমন ছিলো)

অক্সফোর্ডে এখনো সায়েন্সের সাব্জেক্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং রিলেটেড অনেক সাবজেক্ট নেই! যা আছে সবই মৌলিক সাবজেক্ট। যথা- দর্শন, ইতিহাস, গণিত, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিল্প, থিউরি ইত্যাদি। আর ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারী পড়বে সাধারণদের সন্তানরা।

এসবের কারণ কি? কারণ হচ্ছে মৌলিক সাব্জেক্ট বা বিষয়গুলি হচ্ছে নেতৃত্ব দানের বিষয়, দুনিয়াকে পরিচালনা করার বিষয়‍, সুতরাং এসব পড়বে এরিস্ট্রকেটরা। বাকি কেরানী বা সেবাদানকারী সাব্জেক্ট পড়বে ভিন্ন জাতের তথা গরীবদের সন্তানরা।

এবার একটা তুলনা করা যায়। যেমন, আমাদের মত দেশগুলিতে সবচেয়ে ভালো ছাত্র যারা তারা নেতৃত্বদানের মৌলিক এই সাবজেক্ট গুলোতে পড়ে? নাকি সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হয়ে গর্ববোধ করে? এককথায় বলতে গেলে থিউলজি রিলেটেড সাব্জেক্টগুলোকে কেউ দাম-ই দেয়না।

অথচ অক্সফোর্ড বা এইজাতীয় বড় শ’খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে দামী সাবজেক্ট থিউলজি, ফিলোসোফি, ইতিহাস ইত্যাদি। আর এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তাদর্শন দিয়েই পৃথিবী পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন হল, মৌলিক সাব্জেক্ট বা বিষয় গুলির কোন মূল্য আমাদের দেশে নেই কেন? যারা আড়ালে থেকে দেশের মূল চালিকাশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সবাই কেন পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকে, সে চিন্তা পরিভাষা দিয়েই সব নিয়ন্ত্রণ করে?

কারণ পাশ্চাত্য শক্তিশালী ভিত্তি নির্মাণ করেছে, সেভাবেই ছাত্ররা গড়ে উঠেছে। আর দুনিয়াব্যাপী ইম-পার্সোনাল (impersonal) এডুকেশন সিস্টেম গড়ে তুলেছে, এটা হচ্ছে পুরো জ্ঞানকে বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসা। অর্থাৎ “ছাত্রের সাথে শিক্ষকের কোন সম্পর্ক থাকবেনা, বই কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা।”
আর এটাই মূলত আধুনিক ও শিল্পবিপ্লব পরবর্তী পাশ্চাত্য সভ্যতার নতুন পলিসি। অর্থাৎ অন্যান্য বিষয় যেমন পণ্য, তেমনিভাবে জ্ঞান, বই এসবও পণ্যের মত করেই চলবে।
যেমন, বর্তমান প্রকাশনীর দিকে তাকান, বইপোকাদের দিকে তাকান..।

আচ্ছা আল্লামা ইকবাল, আল ফারাবী, ইবনে খালদুনকে নিজে পড়ে বা শুধু বই রিডিং পড়ে বুঝা সম্ভব? জীবন্তগ্রন্থ ব্যাতীত এসকল চিন্তাকে ব্যাখ্যা করা, উপলব্ধিতে আনা সম্ভব..? 

এই বিশাল এবং এজেন্ডার বাস্তবায়নই হচ্ছে, ‘বইকে পণ্য বা পুঁজিতে রুপান্তর অর্থাৎ বস্তু কেন্দ্রিক জ্ঞান।’

কিন্তু ইসলামে ছিল ছাত্র টু শিক্ষক (জীবন্তগ্রন্থ থেকে শিক্ষা গ্রহন) আর বুঝার স্বার্থে বই/ শীট দেওয়া হত।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা হলো Reconstructive Approach (পূর্ণগঠন পদ্ধতি )।
যেমন আমরা ফিজিক্স পড়ি, এখানে কি পড়ায়? যেমন, নীল বলতে কিচ্ছু নাই, এটা মূলত ওখান থেকে আলোকরশ্মির আসে, এসে আমাদের চোখে লাগে, পরবর্তীতে আমাদের মস্তিষ্ক যেভাবে গ্রহন করে মূলত এটাই..

আচ্ছা তার আগে Reconstructive Approach (পূর্ণগঠন পদ্ধতি) কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় সেটা বুঝে নেই।
1. সাইকোলজিক্যাল (Psychological reconstruction)।
2. সোশিওলজিক্যাল (Sociological reconstruction)।

1. সাইকোলজিক্যাল বা মানবিক দিক থেকে যেগুলো, যেমন:
ওহী বলতে কিছু নাই,
– কিতাব বলতে কিছু নাই,
– সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কিছু নাই,
– আদর্শিক বলতে কিছু নাই।
এসব হচ্ছে আমি যেভাবে অনুভব করি সেটাই। এগুলোকে বলা হয় কার্টেসিয়ান চিন্তাধারা। এসব দেকার্তের মধ্যদিয়ে শুরু হয়, তারপর ইউরোপের সব বড় বড় দার্শনিকরা সবাই গ্রহন করেছে।

2. সোশিওলজিক্যাল বা সামজিক দৃষ্টিকোণ থেকে,
সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোন আখলাক নেই। সবকিছু আমি যেভাবে গ্রহন করি সেভাবেই। এসবের মধ্য দিয়ে একটি ধারায় সৃষ্টি করে।

তখন একটি প্রশ্ন সামনে আসে এসবের সমন্বয় কে করবে?
কিন্তু এর কোন উত্তর তারা দেয় না!

তবে সর্বজনবিদিত বা তাদের মূলনীতির আলাদা উত্তর হচ্ছে “সমাধান করবে রাষ্ট্র”। তাই তারা সারাদিন স্বাধীনতার কথা বললেও রাষ্ট্র মূলত তাদের যতটুকু স্বাধীনতা দেয় ততটুকুই তারা স্বাধীন।

আবার এখানে কোন মানব কল্যাণের মূলনীতি নাই, এখানে কোন নবী নাই, যার ফলে তাদের নির্দিষ্ট কোন আদর্শও নাই। তাই বলে তারা অতীতও সৃষ্টি করতে পারে ভবিষ্যতও সৃষ্টি করতে পারে, আর এটাই তাদের ধারণা।

সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে Reconstructive education Approach এর মূলকথা হল হাকীকত বলতে কিছু নেই।

এরপর তারা উনবিংশ-বিংশ শতকে বলতে শুরু করলো, আসলে আমরা বিজ্ঞান দ্বারাই সব করবো।

– বিজ্ঞানই আমাদের পথ দেখাবে।
– বিজ্ঞান দ্বারাই ভালো কিছু করবো।
– বিজ্ঞান দ্বারাই ভালো একটা জায়গায় পৌছাবো।

এখন বলতে গেলে মুসলমান দেশগুলোও যতোটুকু আধুনিক হবার তারা তা হয়ে গেছে। ইউরোপ, পাশ্চাত্য সভ্যতা থেকে যা নেওয়ার তা নিয়ে নিয়েছে, কিছুই আর বাদ নেই। এখন বিশ্বব্যবস্থা এমন একটা জায়গায় এসে পৌছেছে,

পাশ্চাত্যও গর্তের কিনারায় অবস্থান করছে, আমরাও।
তারাও সামনে আলোকময় ভবিষ্যৎ দেখছেনা, আমরাও।
তারাও যে কাতারে, আমরাও একই কাতারে।

হয়তবা বৈশ্বয়িক বা মর্ডানিটির দিক থেকে পাশ্চাত্য আগানো, তবে শিউরিটির দিক থেকে সবাই এক কাতারে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নাই!!

সেক্ষেত্রে একমাত্র দাবিদার মুসলিমরাই মূলত। মুসলমানরাই এই বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প একটা সভ্যতা, দুনিয়া দাড় করাতে পারে।

দেকার্তে, কান্টসহ গোটা পাশ্চাত্য বলে, হাকীকাত বলতে কিছু নাই, আমরা যা ভাবি সেটাই।
কিন্তু আমরা মুসলিমরা বলি, আমাদের হাকীকাত আছে, আল্লাহ প্রদত্ত ওহী আছে, সে অনুযায়ী আখলাক ও সামাজিক মূল্যবোধ আছে।

আবার এরইসাথে এটাও স্পষ্ট হয় যে, জীবন্তগ্রন্থের গুরুত্ব পাশ্চাত্য ঠিকই বুঝে, সে আলোকে যোগ্য ব্যক্তিত্বও গড়ে তুলেছে।

কিন্তু তারা তাদের পুঁজিবাদী গেইম চালায় গোটা বিশ্ববাসীর উপর, মুসলমানদের উপর। তা হলো- বইকে পণ্য বানানো, শুধু বই নির্ভর জ্ঞান। জ্ঞান বা বইও এখন পুঁজিবাদের পণ্য। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী ধাক্কা আমাদের সকল ধারা গুলোতেই প্রভাব সৃষ্টি করেছে, নতুন বহু ধারা তৈরি হয়েছে। যা দ্বারা আমরা এমন এক অবস্থায় নিপতিত হয়েছি যে-

• জীবন্ত গ্রন্থ আমরা বুঝিনা। হাকীকত কি জানিনা। মৌলিক বিষয়ের গুরুত্বও দেইনা।

• সেই মৌলিক সিলেবাস তো নেই-ই, বরং মৌলিক স্থিরগ্রন্থ, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে ইসলামী সভ্যতা দাড়িয়েছে, বিশ্ব মানবতাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলেছে, বহু উদ্ভাবন ও ধারার সৃষ্টি করেছে, সেই গ্রন্থগুলোর নামও আমরা ভুলতে বসেছি।

• তথ্যকেই জ্ঞান মনে করছি। ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি ঘেটে কিছু জানার চেষ্টা করি, সেটাকেই বড়কিছু ভাবি। সাথে সাথে বেস্টসেলার বা প্রচারে যেসব বই এগিয়ে সেগুলোই পড়ি।

• প্রচুর বইপোকা থাকলেও কোন বড় দার্শনিক আলেম উঠে আসেনা। তার কারণ মৌলিক বই নিজে নিজে পড়ে কেউই বুঝিনা অথবা যেসব বই পড়ি তা সবই চানাচুর মার্কা (খেতে মজা কিন্তু উপকারহীন)। চানাচুর খেতে খেতে এমন অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছি এখন তত্ত্ব, মৌলিক লেখা ভাল লাগেনা, মাথায়ও ঢুকে না।

• আখলাক, ইখলাস জীবন্ত গ্রন্থ হতে শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম গুরুত্ব দিল। অথচ উল্টো এসব নিয়েই এখন হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু, যেগুলো নিয়ে আলোচনা ও লেখালেখি বেশী প্রয়োজন অর্থাৎ দর্শন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি নিয়ে কোন গ্রন্থ নেই। গত ২০ বছরে প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা শূণ্য প্রায়!

বাস্তবতা হল, জ্ঞান বস্তু নির্ভর নয়, পুঁজিবাদের পণ্য নয়। কিন্তু সেটাই যখন হয়েছে, কিভাবে আরেকজন ইমাম আবু হানিফা আমরা পাব? কিভাবেই বা আরেকজন আল ফারাবী উঠে আসবে?

তাই সর্বশেষ যে বিষয়টি বলতে চাই, পাশ্চাত্য সভ্যতা, মুসলিম রাষ্ট্রসহ সবাই অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়ে গর্তের কিনারায় দাঁড়ানো। কিন্তু আমাদের সভ্যতায় সবই তো ছিল।
ওহী, আখলাক, ফিকহ, স্থিরগ্রন্থসহ বহুকিছু এখনো বিদ্যমান। সুতরাং চাইলে এখনও সেই জ্ঞান ও সভ্যতার বিজয় সম্ভব।
আমরা কি সেই হাকিকতের উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে সমন্বয়কারী শিক্ষা পদ্ধতিকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারিনা? সেজন্য আমরা সামর্থ্যের আলোকে আমৃত্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারিনা?

১০৬৩ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়। পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।
Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়। পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top