উপমহাদেশে মুসলিমদের সাড়ে সাতশ বছরের শাসনকালে রাজনৈতিক সফলতার থেকেও বড় অর্জন ছিল শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মাণ। যেমন- মুসলিমদের দিবসগুলি (সিরাত উৎসব, শব-ই মেরাজ, ঈদ, রমজান, মক্কা বিজয় দিবস ইত্যাদি) এক বিশ্বজনীন উৎসবে পরিণত হতো, সকলেই অংশগ্রহণ করতো নানা কর্মসূচিতে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ন্যায়ভিত্তিক শাসনের অধীনে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতো। উপমহাদেশের প্রতিটি প্রান্তেই সুস্থ সংস্কৃতির প্রশান্তির বীজ বপিত হয়েছিল। কিন্তু! দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন তথা দুইশ বছরের কলোনির সময়কালে ব্রিটিশরা সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে আগ্রাসন চালিয়েছে! ইসলামী সংস্কৃতির ভিত্তি নির্মূল করে পাশ্চাত্যের বীজ বপন করা! ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতিকে বিকল্প হিসেবে উঠিয়ে আনা এবং তাদের ভিত্তি তৈরি করাসহ বহু প্রচেষ্টাই তারা চালিয়েছে এবং এক্ষেত্রে দুইশ বছরের বিশাল সময়ে তারা বহুলাংশেই সফলও হয়েছে!!
তাই কলোনির শাসন উঠিয়ে নেয়ার শেষ মুহূর্তগুলি যদি আমরা পর্যালোচনা করি। দেখা যায়, আমাদের সামগ্রিক পতনের সাথে সাথে সাংস্কৃতিক ভিত্তি একেবারেই ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে! কিছু আলামত, বিনোদন অবশিষ্ট থাকলেও মূল ভিত্তি ও মূলনীতি নিয়ে কাজ, চিন্তা কিছুই অবশিষ্ট ছিলোনা, নেইও!! মাওলানা মওদুদী কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি ইসলামী সভ্যতার পতনকালের মূল সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বুনিয়াদ থেকে সরে যাওয়া । আর সে সময়টির মূল চাহিদা ছিলো রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির মুক্তির এক মহাআন্দোলন গড়ে উঠা।
ধর্মীয় কিছু আবেগ, নির্ধারিত কিছু আমল, নানাবিধ বয়ান অবশিষ্ট থাকলেও সামগ্রিক অবস্থান হচ্ছে- উম্মাহর ইতিহাসে সব থেকে নাজুক অবস্থায় নিপতিত হয় মুসলিমরা! তাই পতনশীল উপমহাদেশকে জাগিয়ে তোলার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে ইজতিহাদ, যুগের আলোকে নতুন ধারা সৃষ্টি করা, সংস্কারমূলক রূপরেখা তৈরি করা।মাওলানা মওদুদী সেই কাজটি শুরু করেছিলেন। কিন্তু ওই যে যা অবশিষ্ট ছিলো, হীনমন্য মুসলিমরা এটাকেই ইসলাম ধর্ম হিসেবে আঁকড়ে ধরে বসে ছিলো! আসমানী মান্নাসালুয়া আর গজবের আশায় দিনগুনতো!! সেই পরিস্থিতিতেই মাওলানা তার এক চিঠিতে বললেন,
প্রত্যেকেই একটুখানি চিন্তা ভাবনা করলে বুঝতে পারে যে, একটি পুরাতন সভ্যতা/আন্দোলনকে তার বিকৃতি ও পতনের পর পূণর্জাগরিত করে নতুন আন্দালন শুরু করা। অনেক বড় একটি যুদ্ধ, যা নিতান্তই কঠিন ও জটিল। নতুন আন্দোলনকারীর পথ তো পরিষ্কার থাকে। তাকে তো এমন সব লোকের সম্মুখীন হতে হয় যারা আন্দোলন সম্পর্কে অনবহিত। তাকে শুধু তার আন্দোলনের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য পেশ করতে হয়। তারপর লোক হয়তো তার দাওয়াত গ্রহণ করবে নয়তো প্রত্যাখ্যান করবে।কিন্ত যে ব্যক্তি কোন পুরাতন আন্দোলনকে তার বিকৃতি ও পতনের পর পূনর্জীবিত করতে চায় তার কাজ শুধু ততোটুকুই হয়না যে, সে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন সব লোকের কাছেই তার দাওয়াত পেশ করবে। বরঞ্চ তাকে ঐসব লোকের প্রতিও দৃষ্টি রাখতে হয় যারা সভ্যতার/আন্দোলনের সাথে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট। তাদেরকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায়না। তারা আগে থেকেই এ আন্দোলনের সাথে জড়িত এবং অন্যের তুলনায় নিকটতর।
সর্বপ্রথম তাই দেখতে হয় যে,
– তাদের অধঃপতন, অবনতি কতটুকু হয়েছে এবং মূল আন্দোলনের প্রভাব এদের মধ্যে কতটুকু বাকি আছে!
– তারপর চিন্তা করতে হয় যে, পতনের দিকে যতদূর তারা অগ্রসর হয়েছে, তার থেকে যেন আর সামনে এগুতে না পারে এবং আন্দোলনের যতটুকু প্রভাব তাদের মধ্যে আছে তা যেন সংরক্ষিত থাকে।
– সংরক্ষণের এ প্রক্রিয়ায় কিছুটা সাফল্য লাভের পরেই তার জন্য এটা লক্ষ্য করা অনিবার্য হয়ে পড়ে যে, তারা যেন বর্তমান অবস্থার উপরেই স্থির হয়ে না থাকে!
– বরঞ্চ মূল আন্দোলনের দিকে তাদের টেনে আনতে হবে যাতে অন্য কিছু তাদের লক্ষ্য না হয়ে পড়ে এবং তাদের চেষ্টা চরিত্রের কেন্দ্রবিন্দু অন্য কিছু না হয়ে পড়ে তার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়..।
এসব স্তর অতিক্রম করার পর তার সাধারণ দাওয়াত পেশ করার সুযোগ তার আসে এবং সে তখন এমন এক পর্যায়ে পৌছে যায়, সেখান থেকে সে এক নতুন আন্দোলন পেশকারীর কাজ শুরু করতে পারে।”
[ মূলকথা, নতুন আন্দোলন নয় বরং নতুন করে জাগরিত করা]
যাইহোক, মাওলানা এই সবকিছু মিলিয়েই নতুন আন্দোলন শুরু করলেন।আর এরই সাথে আবশ্যকীয় হয়ে পড়লো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের। সেই সময়ে আল্লামা মোহাম্মদ আসাদও বলেছিলেন “পাশ্চাত্য সভ্যতার সামনে ইসলাম কখনই হুমকি নয়! যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত থাকবেনা,
- ইসলামী সাংস্কৃতির ভিত্তি নির্মাণ।
- ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠা।”
কারণ, ইসলামী সভ্যতার অন্যতম মৌলিক ভিত্তি এটি। সব মিলিয়েই মাওলানা চাইলেন সবকিছুর সমন্বয় করতে। তাই দারুল ইসলাম ট্রাস্ট গঠনের পূর্বে ১৯৩৭ সালের ৭ ই জুলাই চৌধুরী নিয়াজ সাহেবকে মাওলানা মওদুদী একটি চিঠিতে বলেন,
“আপনার জানা আছে,
‘প্রথমে আমার এটাই পরিকল্পনা ছিলো যে, নীরবে একস্থানে বসে কাজের লোক তৈরি করবো তারপর তাদের দ্বারা বিরাট কাজ নেওয়া যাবে। কিন্তু এ কাজ সময় সাপেক্ষ। এখানকার অবস্থা এই যে, বিপ্লব মাথার উপর এসে পড়েছে। এ সময়ে মুসলমানদের মধ্যে যদি কোন প্রাণ সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে গোটা জাতি তলিয়ে যাবে! আর, গোটা জাতি যদি তলিয়েই গেলো! তাহলে আপনাদের ও আমাদের কোন পাত্তাই থাকবেনা যে, কোন গঠনমূলক কাজ আমরা করতে পারবো।
আবার, নিছক ভাসা ভাসা আন্দোলন দিয়ে কোন সুফল পাওয়া যায় না। এবং সত্যিকার যোগ্য লোক তৈরি না হলে আন্দোলন স্তম্ভিত হয়ে পড়বে।সময় বলছে জাতিকে তলানো থেকে উঠিয়ে আনার কাজ করতে হবে, সেজন্য চেতনাদীপ্ত বাহিনী লাগবে। কিন্তু যার জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন, তবে সময় খুব অল্প।
আর হিকমাহ(সুষ্ঠ আকল, দুরদর্শী চিন্তা) বলছে অন্য কাজের অর্থাৎ ক্রমশ গঠন মূলক কাজ(যোগ্য হিকমাহ সম্পন্ন মানুষ তৈরি)।’
আমি কয়েক মাস যাবৎ এ চিন্তায় মগ্ন আছি যে কি করবো?
শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে পৌছি যে, একসাথে এই দুটি কাজই আমাকে করতে হবে। প্রথম কাজের জন্য আমি নিষ্ঠাবান, চরম উৎসাহী এবং সক্রিয় যুবকদের একটি দল তৈরি করতে চাই। তারা জনসাধারণের মধ্যে গিয়ে জাগরণ সৃষ্টি করবে।
এখন রইলো দ্বিতীয় কাজ। এর জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানকেই কেন্দ্র বানানো হবে। এখন দৃঢ় ও স্থায়ী বুনিয়াদের উপর গঠনমূলক কাজ করার জন্যে জ্ঞানবান দের একটি দল তৈরি করতে হবে। এদুটি কাজের সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে।”
[ মূলকথা, একইসাথে মাঠে জাগরণ তৈরির জনশক্তি ও যোগ্য প্রজ্ঞাবান মানুষ তৈরি করা।]
নতুন আন্দোলন নয় বরং নতুন করে জাগরিত করা। আবার, মাঠে জাগরণ তৈরির জনশক্তি ও যোগ্য প্রজ্ঞাবান মানুষ তৈরি। সবই একসাথে করতে শুরু করলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে রয়ে যায় নানাবিধ অভাব!! আবার সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও এইপদ্ধতি ব্যতীত জাগরণ ও ভিত্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তৎকালীন গোটা উপমহাদেশেই সাংস্কৃতিক মুক্তি যখন আবশ্যক। তখন বাংলা অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্যবাদ, কম্যুনিজম ও সেক্যুলারিজের ঢেঊ শুরু হয় কলকাতাকে কেন্দ্রকরে! গোটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল আজও সেই কলকাতা কেন্দ্রিক-ই রয়ে গেছে! পাশ্চাত্যের প্রতিটি ঢেঊ কলকাতা হয়ে আমাদের কাছে আসে, আসছে প্রতিটি ক্ষণেই!!
নতুন আন্দোলন নয় বরং নতুন করে জাগরিত করা। আবার, মাঠে জাগরণ তৈরির জনশক্তি ও যোগ্য প্রজ্ঞাবান মানুষ তৈরি করা।
উপরোক্ত দুটি মূলনীতি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ক্ষেত্রেও হুবুহু প্রযোজ্য। আর এই মূলনীতির আলোকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ শুরু হয়েছে, স্বপ্নের জাল বুনা হচ্ছে, পর্যালোচনা হচ্ছে, আজ আমরাও ভাবতে শিখছি। কিন্তু এই পর্যায়ে প্রশ্ন জাগে
– সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কে নতুন করে জাগরণের কাজ সূচনা করলো?
– হ্যাঁ, কাজ অনেকেই করেছে কিন্তু ভিত্তি নির্মাণের কাজ, নতুন ধারা তৈরির উদ্যোগ কে গ্রহণ করলো?
– কোন সেই দার্শনিক যার কর্মচিন্তার ফলাফল হিসেবে আমরাও ‘সাংস্কৃতিক ভিত্তি’ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছি?
– শুধু ভিত্তি নির্মাণের বয়ান-ই নয়, সাংস্কৃতিক উপকরণ তথা গান, কবিতার মধ্যে দিয়ে ইসলামী সভ্যতাকে কে দৃশ্যপটে তুলে এনেছে?
– দ্বীনি পরিভাষা সমূহ, দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ কে সংস্কৃতির অংশ বানানোর ডায়লগ বাংলা ভাষায় কে দিলো সর্বপ্রথম? কে তার কবিতা, গানে এসবের পরিচয় দিতে শুরু করলো?
অর্থাৎ নতুন ধারা প্রবর্তনকারী এই উৎসটি কে? যেমন- প্রতিটি দেশের মানবতার মুক্তি আন্দোলনের কর্মীদের একটি আয়াতকে খুব ভালোভাবে উপলব্ধিতে দেওয়া হয়। তা হচ্ছে-
و جاء الحق وزهق الباطل
ইসলামী ভিত্তির সামনে এসব জাহেলি ভিত্তিগুলো কখনোই টিকবে না, যদি আমরা কাজ করতে পারি।
চিন্তা করে দেখুন এই লাইনটা কে ‘দ্বিতীয় ইকবাল তথা কবি মল্লিক’ গানের মাধ্যমে কত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে আমাদের উপলব্ধিতে নিয়ে এসেছেন_
“কুয়াশাতো কেটে যায় রোদ উঠলেই,
বালিয়াড়ি ভেংগে যায় স্রোত ছুটলেই..
এ আকাশ মেঘেঢাকা রবেনা।”
এভাবে করে শ্রদ্ধেয় মতিউর রহমান মল্লিকের প্রতিটি কবিতা, প্রতিটি গান নিয়ে বিস্তর চিন্তা করলে দেখা যায় কোন না কোনো আয়াত, হাদীস বা ইসলামের মূলনীতি সাথে মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ কোরআন-হাদিস ও ইসলামের মৌলিক নীতির ব্যাখ্যা করে তিনি তার গান, কবিতা দ্বারা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেক্ষাপটে তা সুর করে মঞ্চায়িত করেছেন, ক্যাসেট তৈরি করেছেন, প্রচার করেছেন, সাংস্কৃতিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। বাংলার প্রতিটি জনপদে নিজের পদচিহ্ন এঁকেছেন। তাঁর দরদী স্পর্শ আর দিকনির্দেশনায় গড়ে তুলেছেন তারই ধারার বহু দক্ষ লোকবল। আর বলেছেন
“এখনো অনেক ধৈর্য্য ধরতে হবে,
এখনো অনেক কষ্ট করতে হবে..
বিরাম বিরতিহীন অবিরত, আসহাবে রাসুলের ত্যাগের মতো..।”
প্রতিটি গান, প্রতিটি লাইন এভাবেই ইসলামী আন্দোলনের রুপরেখা হিসেবে সারাজীবন রয়েও যাবে। মল্লিক ভাইয়ের যত কবিতা পড়েছি অধিকাংশই মনে হয়েছে তিনি এই সময়ের ইসলাম, ইসলামী সভ্যতার ভিত্তি নিয়ে কথা বলছেন। যেভাবে আসরারে খুদি তে আল্লামা ইকবাল বলেছেন। তার যে কিছু গান প্রতিনিয়ত শোনা হয়, মনে হয় তিনি নতুন একটি দুনিয়ার, সুস্থ সংস্কৃতির নান্দনিক, মানবিক পৃথিবীর রুপরেখা দিচ্ছেন, আমাদের উজ্জীবিত করছেন। এভাবে আল্লামা ইকবাল ব্যতীত কয়জনই বা পেরেছে!
সেখানে কবি মল্লিক শুধু লিখেই শেষ নয়, বরং সুস্থ সাংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মাণের বিজয়গাঁথা শ্লোগান দিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছে। সর্বোপরি বিশাল এক ধারার সৃষ্টি করেছেন।
- ইসলাম।
- ইসলামী সভ্যতা।
- নতুন দুনিয়া গড়ার আহবান এবং
- দাওয়াত কে গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। যার প্রতিটি লাইন মৌলিক ও স্থায়ী।
এইজন্যই তিনি দ্বিতীয় ইকবাল, একজন দার্শনিক “কবি মল্লিক”।
কিন্তু সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দাওয়াতের নতুন ধারা সৃষ্টিকারী মানুষ “কবি মল্লিক তথা দ্বিতীয় ইকবাল”। আর হ্যাঁ ! মল্লিক একটি ধারার নাম, তবে এই একটি ধারা-ই সংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মাণ করতে পারবে না। তাই প্রয়োজন মল্লিকের মতো শক্তিশালী কয়েক ডজন ধারা (ভালভাবে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে উঠে- সাইমুম, কওমীসহ যতো ইসলামী সংগীতের জোয়ায় সবই তো একই ধারার শিল্প)। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, মল্লিক ধারার বাইরে আর কোন শিল্পী, গানের ধারা, সুরের ধারা, লেখনীর ধারা গড়ে উঠেনি লালনগীতি, পপসংগীত, বলিউডের ক্লাসিক্যাল মিউজিক যেমন আলাদা আলাদা ধারা। সামি ইউসুফ তেমনি ইসলামী সংস্কৃতির একটি ধারা। এভাবে রয়েছে বহু সাংস্কৃতিক ধারা। কিন্তু আমাদের বাংলায় ইসলামী সংগীতের ধারা, স্টাইল এই একটিই বিদ্যমান।এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে চর্চিত সামগ্রিক স্মৃতি ও ইতিহাসে ,গল্প, বক্তৃতা, ডকুমেন্টারি, বইয়ের পাতায়, শিল্পে-সাহিত্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মল্লিক ভাইয়ের চিন্তাকে ধারণ করা। তাঁর চিন্তা নিয়ে কাজ করা। সেই চিন্তাকে সর্বোচ্চ মান দিয়ে তুলে ধরা। তাঁকে নিয়ে যত কাজ হয়েছে এর সবই তাঁর ব্যক্তিত্ব, ক্রনোলজিক্যাল জীবনী, স্মৃতিকথা নির্ভর! অর্থাৎ তাঁর চিন্তা, তাঁর সাংস্কৃতিক দর্শন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাঁর দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কোনো কাজ হয়নি।
- তাঁকে নিয়ে উপন্যাস লিখা, সিনেমা বানানো । তিনি এসময়ের যুবকদের সামনে তুলে ধরার মতো মহান ব্যক্তিত্ব। তাই এভাবেই তার কর্ম ও চিন্তাদর্শন কে তুলে ধরতেই হবে। এভাবেই “দ্বিতীয় ইকবাল” স্থায়ী আলো ছড়াবে এই সভ্যতার আকাশে।
মনে রাখা দরকার, জ্ঞান সম্রাট আলিয়া ইজ্জেতবেগবিচ বলেছেন,
“সংস্কৃতি ধর্মের চেয়েও বেশী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, সংস্কৃতির ক্ষমতা একটি সভ্যতার চেয়েও বেশি ।তাই দ্বীনি পরিভাষা সমূহ, দ্বীনের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ কে সংস্কৃতির অংশ বানানো আবশ্যক।”