সুদ, বেকারত্ব ও ঋণের উপাখ্যান ; জনস্বার্থ বিবর্জিত বাজেট ২০২২-২৩

করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট যে ভয়াবহ আকারে বেড়েছে, তাতে সমাধানের সামগ্রিক চিন্তাকে উপেক্ষা করে দেশের সকল সংকট ও সমস্যার জন্য করোনা পরিস্থিতিকে দোষারোপ করলেই সমাধান আসবেনা, তাই হয়তো এবারের বাজেট ‘‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’’ শ্লোগানকে সামনে রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মধ্যে দিয়ে দিনপাত করেছে, সেটিই যখন সামলে উঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা; এমন পরিস্থিতিতেও প্রস্তাবিত নতুন বাজেটকে আমরা ‘জনগণের বাজেট’ হিসেবে আখ্যা দিতে পারছিনা, বরং ‘সুদ, বেকারত্ব, ঋণনির্ভর ও জনস্বার্থ বিবর্জিত’ বাজেট হিসেবে তুলে ধরতে হচ্ছে।

অবাক হয়ে বলতে হচ্ছে- যে বাজেটের উপর গোটা জাতির ভাগ্য নির্ধারিত হয়, সেটা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা নেই, যৌক্তিক প্রস্তাবনাও নেই! বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকেও নেই কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা! অনলাইনে যতটুকুই দেখা যায় বা কাজ আছে, তার সবই তথ্যনির্ভর পত্রিকালাপ! কেননা ৯০% মুসলিম জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ক্ষেত্র নিয়ে পর্যালোচনা ও সমালোচনা অসম্ভব; যদি না নিম্নোক্ত বিষয়ে পারদর্শী হয়-

• Philosophy of Politics.
• International Economics.
• Political Economy.
• Philosophy of Economics.
• General Economy.
• Economic System of Islam.
• মাকাসিদ আশ-শারিয়িয়্যাহ।

এসব বিষয়ে কোনো পারদর্শীতা কিংবা জ্ঞান আমার নেই। তবুও কিছু ব্যক্তিগত চিন্তা ও আলোচনা তুলে ধরছি-

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে ৫১ তম বছর অতিবাহিত করছে বাংলাদেশ। এরই মাঝে সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে দেশের ৫১ তম অর্থনৈতিক বাজেট। কিন্তু সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে, দেশের জনগণেরর আর্থ-সামজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এই বাজেট কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত, তা অবশ্যই পর্যালোচনার দাবি রাখে।

বিশেষজ্ঞদের দাবী অনুযায়ী, এবারের বাজেটে সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে। কিন্তু সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানমুখী একটি বাজেট প্রস্তাবনার প্রয়োজন ছিল। যে বাজেটে প্রাধান্য পাওয়া আবশ্যক ছিল-

• ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আনা।
• সুদের শোষণ থেকে মুক্তির চিন্তা।
• রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি।
• বেকারত্ব ও দারিদ্র্য।

কেননা এসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব না দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা বিভিন্ন খাতে শুধু অর্থ ব্যয় করে কখনোই সমাধান সম্ভব নয়।

এখন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সত্যিই বেড়েছে না-কি ঋণের কারণে মাথাপিছু আয় বেশি দেখাচ্ছে! সেটা নিয়েও পর্যালোচনা জরুরী। মূলত ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আমরা জানি যে, বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ঋণকেও আয় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে! হর্তাকর্তারা উচ্চ সুদে ঋণ এনে উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে আবার এই ঋণের সুদ দেওয়ার জন্য নতুন করে ঋণ নেয়।
অথচ প্রতি বছরই বাজেটের বিশাল অংশ জুড়েই থাকে সুদ এবং সুদ। এ বছরের বাজেটেও দ্বিতীয় সর্ব বৃহৎ খাত হলো সুদ!! টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১১.৯ শতাংশ।

যেখানে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থার দরূন,

— দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে।

— যেখানে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবক বেকার, (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬-১৭ জরিপ মতে, বেকার সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৮০ হাজার। বর্তমানে এই সংখ্যা কোন অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু করোনার সময়েই বেকারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো কয়েক কোটি যুবক। এমনকি শিক্ষিতশ্রেণির প্রায় ৪০ শতাংশই বেকার। যার মাঝে স্নাতক পর্যায়ে উত্তীর্ণ রয়েছে প্রায় ৩৭% এবং স্নাতকোত্তর রয়েছে প্রায় ৩৪%)

— যেখানে খাদ্য সংকটে ভুগছে অর্ধেক জনগোষ্ঠী,
সেখানে মোট বাজেটের এত বিশাল একটা অংশ শুধু সুদের পেছনেই ব্যয় হচ্ছে!!

• অথচ শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের মাত্র ১২.০১%। জিডিপির হিসেবে যার পরিমাণ ১.৮৩%। জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ গতবারের তুলনায় কমেছে। বিশ্বে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম।

ইউনেস্কো ও আইএলও’র তথ্যমতে, যেকোনো দেশের শিক্ষাখাতে বরাদ্দের আন্তর্জাতিক মান মোট বাজেটের ২০ শতাংশ আর জিডিপির ৬ শতাংশ। এর তুলনায় যে নগণ্য বরাদ্দ আমাদের বাজেটে যে দেয়া হয়েছে, তা দিয়ে কীভাবে একটি শিক্ষিত প্রজন্ম আশা করা যায়? গবেষণার জন্য তো আলাদা বাজেট নেই-ই। আবার, শিক্ষাখাতে বাজেট দেয়া হলেও – বর্তমান সময়ে যেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা-কার্যক্রমের জন্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল, সেখানে অপটিক্যাল ফাইবারের

মতো আইটি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ এবং ল্যাপটপ আমদানিতে ভ্যাট বসানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ সকল ধরনের প্রযুক্তি-পণ্যের দাম বেড়েছে। এ জাতীয় সকল সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ দ্বৈতনীতিরই নামান্তর। ডিজিটালাইজেশনের এই সময়ে এসে এমন পদক্ষেপ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

• চিন্তা করুন এবারের বাজেট পেশ করা হয়েছে “কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন” শিরোনামে। এই কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যখাতে যে পরিমাণ ধ্বস নেমেছে তা কাটিয়ে ওঠা সহজসাধ্য কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য না রেখে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৫.৪%। এই খাতে বাজেট যেখানে বাড়ানোর কথা, সেখানে না বাড়িয়ে এর বিপরীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাথে সম্পৃক্ত দ্রব্যাদির মূল্য বাড়ানোতে প্রহসনেরই প্রমাণ মেলে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানীতে ৩.৮%, পরিবহন ও যোগাযোগে ১২% বরাদ্দ রেখে বাজেট করা হলেও তা কি আদৌও বাস্তবায়ন হয়!! এই খাত দুটির সাথে প্রক্রিয়াধীন ও প্রস্তাবিত বেশ কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট জড়িত। যেগুলোর প্রত্যেকটিতে প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন ব্যয় বাড়ছেই। কখনো কখনো তা একই ধরণের প্রকল্পে উন্নত রাষ্ট্রের ব্যয়কেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে কাঁচামালের যোগান সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। এক্ষেত্রে দেশীয় কাঁচামালের ব্যবস্থাপনা ও উপযোগী করে তোলার সদিচ্ছা মোটেও নেই। প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে বিদেশীদের। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বও কোনো দেশি কোম্পানির কাছে নেই। প্রকৌশলীদের বেশিরভাগই হচ্ছে বিদেশি। আর শ্রমিকদের মধ্যে দেশীয় যারা, তাদের মজুরি ও সুযোগ-সুবিধাও নিতান্তই সামান্য। তাহলে কার পেছনে ব্যয় হচ্ছে এত অর্থ?

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছোট-বড় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলিয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ২৫,৫৬৬ মেগাওয়াট হলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তার উপর এই অংশ থেকেই বিতরণ লস হয়েছে ৮.৪৮%। যার ফলাফলস্বরুপ এখনো ২১ শতাংশ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হচ্ছে।

• পরিবহন ও যোগাযোগে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত নগরজীবনে মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। যানজটের ফলে দীর্ঘ একটা সময় অপচয় হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রের সময় নষ্ট হচ্ছে। নগরবাসীদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে। আর সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তো দিন দিন বাড়ছেই। কেবল ২০২১ সালেই সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৮৫১৬ জন। একটা প্রতিবেদনে এরকম দেখালেও মূলত বাস্তব পরিসংখ্যান এর চেয়ে অনেকবেশি।

বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে রেল ও নৌপথে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলো। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে দেশের নৌ-পথ অর্ধেকের বেশি কমেছে। রেলপথ গুরুত্ব পায়নি। বরং রেলযাত্রার উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হয়েছে। সড়কপথ বাড়লেও এসবের মান ও ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

• অন্যদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবারের বাজেটও সম্পূর্ণ ঘাটতি বাজেট। মোট বাজেটের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা হলেও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাকী ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা পুরোটাই ঘাটতি থাকছে। যা মোট বাজেটের ৩৬.১৪ শতাংশ। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়েই এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ঋণ নেয়ার ধারাবাহিকতা আজ নতুন নয়। প্রতিবছরই ঋণের বোঝা বাড়ছে। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩২ ডলারে। টাকার হিসেবে যার পরিমান ৪০ হাজারেরও বেশি। সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশুটির উপরও এই ঋণের ভার বর্তাবে।
বাজেটের ক্ষেত্রে সাধারণত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি নিরাপদ সীমার মাঝে পড়ে। অথচ ২২-২৩ অর্থবছরেরই ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫.৫ শতাংশের বেশি। এই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলা ঋণ ও প্রতিবছর যে ঘাটতি বাজেট করতে হচ্ছে, এ নিয়ে বাজেট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ তো লক্ষ্যণীয় নয়ই, বরং নামেমাত্র বাজেট পেশ করতে হবে, এজন্যই বাজেট পেশ করা হচ্ছে।

কার্ল মার্ক্সের ভাষায়, ‘আর্থিক বিবৃতি প্রদান একপ্রকার ধর্মীয় আচার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পালন করা হয় রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা ও সৌজন্য প্রকাশের মাধ্যমে এবং তার সম্ভাব্যতা প্রমাণের লক্ষ্যে ব্যবহৃত প্রভূত বাকচাতুরীর দ্বারা উচ্চকিত রূপে পাঠ করা হয় (যা কখনোই পাঁচ ঘণ্টার নিচে সম্পন্ন হওয়ার নয়) অর্থাৎ নানাবিধ নর্তন, কুর্দন, ভাব ও ভঙ্গিমার সঙ্গে চার ঘণ্টার একটি বক্তৃতা প্রদান করা হয়।’

• প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ-পাচার যে হচ্ছে, এতকাল পরে সরকারিভাবে এই প্রথম তা স্বীকার করেছে। কিন্তু বিদেশে পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে মূলত এই অর্থপাচারকে বৈধতাই দেয়া হয়েছে। অর্থ-পাচারকারীরা বরং আরো সুযোগ পেয়ে গেলো এই অবৈধ কাজের! ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে থেকেই ১০০০ থেকে ১৫০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইনন্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে সোয়া চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়।

এই বিপুল পরিমাণ দেশীয় অর্থ বিদেশে পাচার হওয়া ঠেকাতে উপযুক্ত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং এবারের বাজেটের আলোচনায় এই কাজের প্রতি উৎসাহিত করা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়ংকর অশানি সংকেত!

• একটু ভালোভাবেই লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাজেটটি সম্পূর্ণ বিত্তবান, ব্যবসায়ী, মুনাফাভোগী ও অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ মোতাবেকই হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কিছু রাখা হয়নি। পুঁজিবাদের নিয়ম অনুযায়ী এবারের বাজেটও হয়েছে অর্থবিত্তদের জন্য সুখকর এবং সাধারণ জনগণকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। রেমিট্যান্স এর উপর আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সুযোগে শুধু মানি লন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত ব্যাক্তিরাই উপকৃত হচ্ছে।

এ নিয়ে পরপর ৩ বছর কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে। শুধু এ বছরেই কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর উপর আরোপিত করের ২.৫ শতাংশ কমানো হয়। এতে করে বড় ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলোই লাভবান হবে বেশি। তাদের ব্যয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর খাবারের দাম কমানোতে বিলাসিতার প্রতি প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত বহন করে। অন্যদিকে সাধারণ জনতাদের উপর কর আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী বাজারে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার উত্তরণের চিন্তা না করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কাটিয়ে উঠার প্রতিও ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও বাড়বে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। ট্রেন-চলাচলের খরচ বেড়ে গেছে। অর্থাৎ এই বাজেটে ধনীদেরকে আরো ধনী হওয়ার সুযোগ এবং গরিবদেরকে আরও গরিব হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

• এদিকে সরকারের আয়ের চেয়ে ঋণ বেশি। সরকার দাবী করে ঋণ-জিডিপি অনুপাত কম। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে সরকার করের টাকার প্রায় ২০% আউট স্ট্যান্ডিং দেশি-বিদেশি ঋণের সুদের খাতেই খরচ করে। এটাই বটম লাইন। ঋণের সুদ পাঁচ বছর আগেও এক অংকে ছিল। অর্থাৎ ৮-৯% সুদ বাবত খরচ মাত্র কয়েক বছরেই ১৯% ছাড়িয়েছে। বুঝা যাচ্ছে পরবর্তি যে কোন সরকারের জন্য বাজেট খরচ কতটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে?
চলমান অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সরকারের আয় ছিল ২ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে সরকার শুধু অভ্যন্তরীণ ঋণ করেছে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণ হিসেব করলে পরিমাণটা আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বেশি। অর্থাৎ সরকারের আয়ের চেয়ে ঋণ ঢের বেশি।

এর পাশাপাশি লক্ষ্য করলে দেখবো যে,

• রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থনৈতিক নীতি-কৌশল ও দিক-নির্দেশনা নেই। সরকারি ব্যয় ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যেখানে বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচিৎ ছিল ১০ শতাংশ কমানো।

• দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি গুরুত্বহীন থেকে গেছে। বাজার-অর্থনীতিতে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কী করতে পারে? বেসরকারি খাতের সঙ্গে ব্যাক্তি খাতের উপর নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কীভাবে তা করবে সেই নির্দেশনা বাজেটে নেই। ভোক্তা অধিকার ও পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য চাহিদার পরিমাণ জানা জরুরি। এর উপর ভিত্তি করে যোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু দ্রব্যমূল্যকে একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখানো হলেও বাজেটে এ সমস্যা সমাধানের জন্য কোন উদ্যোগ নেই।

• বড় বড় প্রকল্প গুলোর টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও চাহিদা মাথায় রেখে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে না, আমরা দেখছি চীন, ভারতের তুলনায় – এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়ও আমাদের নির্মাণ খরচ বেশি।

• দেশের অন্যতম বড় সংকট হচ্ছে- সামাজিক নিরাপত্তা। কিন্তু এই খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের দেড় শতাংশ বরাদ্দ, যা খুবই নগণ্য। এর উপর সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অন্তর্ভূক্ত হিসেবে দেখানো হয়। অন্যান্য খাতের ভর্তুকিও এই খাতে দেখানো হয়।

• কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬.২%। এদিকে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে বর্তমানে ধান ছাড়া মোটামুটি সব ধরণের খাদ্যদ্রব্য বাহির থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আবার যেগুলো দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, কৃষকরা তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক ভয়াবহ সংকটে দিনাতিপাত করছে তারা। অথচ এ কৃষিই আমাদের সাড়ে সাতশো বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।

• নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি, জনগণের আয় বাড়েনি। গত কয়েকবছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি তো হয়নি বরং কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট করা হয়েছে। করোনার মধ্যে ২৫টি পাট কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, একের পর এক চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যায় করলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব পাটকল, চিনিকল চালু করা সম্ভব। এতে কয়েক লাখ মানুষ কর্মসংস্থান ফিরে পাবে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, হাসপাতালে নার্স, ডাক্তারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে

প্রায় লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব। এসব নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণে বাজেটে কোন বরাদ্দ বা নির্দেশনা নেই।

• আবার আবাসন খাত নিয়ে কোন কথা নেই। একইভাবে সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে মাত্র ০.৮% বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি কত বড় দৈন্যতা! এ দেশের যুব সমাজের নৈতিক চিন্তাগত অবস্থানের ভবিষ্যৎ তাহলে কী?

এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভয়াবহ অসামঞ্জস্য লক্ষণীয়। সুদের হার বাড়ছে, কিন্তু মৌলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোর বাজেট দিনকে দিন কমছে। ফলশ্রুতিতে একটি ফাঁদ তৈরি হচ্ছে!

এ বাজেট মূলত একটি মৌখিক বাজেট। মৌখিক কিছু আয় দেখানো হলেও তা মূলত মিথ্যা, কারণ তা ব্যাংক ঋণের সাথে মিলছে না। তবুও যদি এ মৌখিক বাজেট বাস্তবায়িত হতো, তাও একটি কথা ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরের বাজেট পর্যালোচনা দেখলে বোঝা যাবে বাস্তবায়নের হার ধীরে ধীরে কমছে তো কমেই যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের ৮১% বাস্তবায়ন হয়েছে, যেটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসে ৭৬% হয়ে গেছে আর গত অর্থবছরে নেমে এসেছে ৬০%-এর কমে। এভাবে অপচয়, অবৈধভাবে অর্থলুট, দুর্নীতির কারণে বাস্তবায়নের হার ক্রমেই কমছে, অর্থাৎ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো বাস্তবতা নেই। অপরদিকে যে বিশাল অঙ্কের সুদ, তা যদি দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো যেতো, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতো তা খুব সহজেই অনুমেয়। কিন্তু কিছুই হবে না!

কোনো রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা, বড় ব্যক্তি এসব মৌলিক বিষয় নিয়ে সঠিক পর্যালোচনা তুলে ধরছে না। ফলশ্রুতিতে বাজেট সঠিকভাবে পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনার যে গুরুত্ব ও আবশ্যকীয়তা রয়েছে, যুবসমাজ ও জনগণ তা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। বাজেটের বিষয়টি একটি একাডেমিক তত্ত্বীয় বিষয় হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আমরা কেউ ভ্রুক্ষেপ করছি না, আর দেশের অবস্থা যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

৯০% মুসলমানের দেশে ১১.৪% রাষ্ট্রীয় সুদ দেওয়া হচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই; অথচ এক ঢাকা শহরেই প্রতিরাতে লক্ষ লক্ষ শিশু না খেয়ে বস্তিতে ঘুমায়। শহরগুলোতে একজন শ্রমিক দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে মাত্র ৭-৮ হাজার টাকা বেতন পায়। দারিদ্র্যের কারণে অনেক মা-বাবা তাদের আদরের সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মা-বোন তাদের শরীর বিকিয়ে দিচ্ছে, পতিতাবৃত্তি করছে শুধুমাত্র দু’বেলা খাবারের জন্য। দারিদ্র্যতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়ছে ধনী-গরীবের অর্থনৈতিক ভারসাম্যের দূরত্ব। কর্মসংস্থান তো বাড়ছেই না, বরং কোটি কোটি শিক্ষিত ও কর্মক্ষম মানুষ প্রতিদিন বেকার হচ্ছে, চাকরি হারাচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যা চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার যে সকল জায়গাতে দুর্নীতি বেশি, যেমন– সামাজিক নিরাপত্তা খাত, সে সকল জায়গাতে ব্যয় বেড়েছে। এতে সত্যিকার্থে জনগণ কোনো ধরনের সুফল পাচ্ছে, নাকি অনিরাপত্তা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে? এ ক্রান্তিকালেও সেনা বাজেট বাড়ানো হচ্ছে কেন?

যে কৃষি আমাদের ঐতিহ্য, যে কৃষি আমাদের দিয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী রাষ্ট্রের মর্যাদা, সে কৃষিকে ধ্বংস করা হয়েছে, বরাদ্ধকৃত বাজেটই যার প্রমাণ। অথচ সুদের পেছনে চলে যাচ্ছে বড় অঙ্কের অর্থ। শুধু কি তাই? এ সুদের পরিমাণ আমাদের শিক্ষা বাজেটের কাছাকাছি! সুদ পরিশোধ করতে হবে, মূল ঋণ তো আছেই! কিন্তু আমাদের আয় কোথায়? আয় না থাকলে ঋণ পরিশোধ হবে কীভাবে? ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই তো বেহাল দশা, মূল ঋণ আমরা কখন পরিশোধ করব? অথচ আমাদের দেশের যে সম্ভাবনা, আমাদের খনিজ সম্পদ, আমাদের কৃষি, আমাদের বনাঞ্চল, আমাদের যুব-সম্পদ, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর– এসব নিয়ে ভালোভাবে কাজ করলে মাত্র কয়েক বছরে সব ঋণ পরিশোধ করে আমাদের দেশকে পৃথিবীর অন্যতম ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতির সমৃদ্ধশালী একটি দেশে পরিণত করা সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারছি না।

সুদভিত্তিক পুঁজিবাদীরা সমগ্র দুনিয়াকে শাসনকালে এমন এক পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটির কারণে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষভাবে হোক বা পরোক্ষভাবে, জেনে হোক বা না জেনে সুদের সাথে জড়িয়ে পড়ছি, জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছি। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক খাতে মানুষের মুক্তি তো দূরের কথা, গোটা দুনিয়ার ৭০-৭৫% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে, অনাহারে, অসুখী অবস্থায়, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সুদের কারণে পাশ্চাত্য তাদের বাজারকে ঠিক রাখার জন্য লক্ষ লক্ষ টন খাবার ধ্বংস করছে, আবার একই সময়ে আফ্রিকার দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে অনাহারে।

পুঁজিবাদীদের শাসনের ফলাফলের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এ জুলুম ও শোষণ এখনও সমানভাবে বিদ্যমান। অর্থাৎ আমাদের দুর্দশার অন্যতম মূল কারণ সুদ। অথচ এটি নিয়ে আমরা কেউ কথা বলি না, উল্টো সুদকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

সুদের ব্যাপারে ইসলাম কত সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী মূলনীতি দিয়েছিল, তা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। রাসূল (সাঃ) আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার পরেই যে সকল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোকপাত করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো সুদ। তিনি সবাইকে সুদ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।

ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখব, ইসলামের আলেমগণ, নেতাগণ সবসময়ই সুদের বিরোধিতা করে গিয়েছেন। তারা জনগনকে সুদবিহীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। কারণ এ সুদ ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য যেভাবে ডেকে নিয়ে আসে, সুদ বন্ধ করা ব্যতীত তা কখনোই মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় সুদ ছাড়া অর্থনীতি পঙ্গু। এ অর্থব্যবস্থায় সুদ হলো তেলের মতো। তেল ছাড়া যেমন গাড়ি চলে না, সুদ ছাড়াও এই অর্থনীতি চলবে না। আবার এটি থাকলেও মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সংকট হবেই। অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, শোষণ, সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য, বৈদেশিক রাজনীতিতে ভারসাম্যহীনতা, বৈদেশিক ঋণ, সামাজিক অবক্ষয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, পশ্চাৎপদতা, ঘুষ, দুর্নীতি, চারিত্রিক অবক্ষয়সহ সুদের ৭০টির বেশি অপকারিতার কথা বলেছেন রাসূল (সাঃ)।
এসব বর্তমানে আমাদের দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এভাবে যদি একটি দেশ, একটি জাতি চলতে থাকে, তাহলে সে জাতির মধ্য থেকে কীভাবে মুক্তিকামী ব্যক্তিত্ব উঠে আসবে? রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরিবর্তে অন্তঃসারশূন্যতার দিকে ধাবমান করা, সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্যের নীতি-নির্ধারকদের হাতের পুতুল বানানো, চিকিৎসা, কৃষি, খাদ্য, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র নীতি– সবই ভিন্ন দেশের লবিগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়াই তো স্বাভাবিক!

এজন্য আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণ অনুযায়ী, তাঁর দেখানো পথ অনুযায়ী আমাদের মুক্তির পর্যালোচনা, আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার পর্যালোচনা ও সুদমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতির ভিশন তুলে ধরা আবশ্যক। আমাদের সচেতনতা ও সংগ্রাম ছাড়া অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন অসম্ভব, সংকট থেকে মুক্তিও মিলবে না।

ঋণ ও সুদনির্ভর অর্থনীতির নিগড় থেকে বের হয়ে, কথিত উন্নয়নের ডায়ালগ বাদ দিয়ে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি, কৃষি, বন্দর, প্রতিরক্ষাকে উন্নত করতে হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ছোট শিল্প, ছোট উদ্যোগ, মৎসশিল্প, পোল্ট্রি, সবজি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বন্দর, আমাদের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক আয় সবকিছু নিয়েই সবাইকে কথা বলতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে। জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল কমিটি, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা কমিটি, প্রতিরক্ষা কমিটি, নগর ও স্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি এবং জাতীয় উন্নয়ন কমিটি করে আগাতে হবে।

আমাদের রয়েছে–

• ১৩ কোটি কর্মক্ষম মানুষ
• তারুণ্যদীপ্ত প্রতিরক্ষা খাত
• ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্রিক বিশাল সম্ভাবনা
• দুনিয়ার সেরা কৃষি (যার মাধ্যমে আমাদের পক্ষে দশ বছরে সেরা ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সম্ভব)
• গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর
• বিপুল পরিমাণে খনিজ সম্পদ
• বনাঞ্চল
• মৎসশিল্প ইত্যাদি

এসব নিয়ে মাত্র বিশ বছর ভালোভাবে কাজ করলে এ দেশের বেকারত্ব, দরিদ্র্যতা, খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকটসহ যাবতীয় সংকটের সমাধান তো হবেই, যাকাত নেওয়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না; ইসলামী সভ্যতা যার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

১০০২ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়।পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন।বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।
Picture of হাসান আল ফিরদাউস

হাসান আল ফিরদাউস

সংগঠক এবং সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক হাসান আল ফিরদাউস-এর জন্ম টাংগাইল জেলায়।পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ইসলামী সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি উসূল, ফিকহ এবং রাজনৈতিক দর্শনের উপর বড় শিক্ষকদের সাহচর্যে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক স্কলার ও চিন্তাবিদদের সমন্বয়ে নানাবিধ গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করছেন।বর্তমানে তিনি ‘ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।একইসাথে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার-এর সম্পাদকও।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top