যায়নবাদ (zionism) কী? যায়নবাদ হলো একটি বর্ণবাদী চিন্তা চেতনার নাম। বনী ইসরাইল নামে পৃথিবীতে একটি জাতি আছে। এই জাতিটির বর্তমান বয়স ৫৭০৬ বছর। ফিরাউনের শাসনামলে ফিরাউন এদের উপর চরম জুলুম নির্যাতন পরিচালনা করে। এই জুলুমের প্রেক্ষাপটে তাদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য এবং তাদের ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য তাদের মধ্য থেকে কাবালা নামে একজন লোক একটি বই লিখেন। এই বইটি কাব্বালা নামে পরিচিত। কী লিখেছিলেন তিনি এই গ্রন্থে ? তিনি লিখেছিলেন,
“হে বনি ইসরাইল! ফিরাউনের এই জুলুমের প্রতি দৃষ্টি পাত করো না। এই সমস্ত জুলুম নির্যাতন হলো কালের একটি পরিক্রমা মাত্র। এসব আসবে, যাবে। এই সকল ঘটনা ক্ষণস্থায়ী। এই ফিরাউন নিজেকে খোদা দাবি করলেও তোমরা এমন এক জাতি যারা আল্লাহ তা’লাকেও পরাজিত করেছো (নাউজুবিল্লাহ)। সুতারাং, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো। দেখবে তোমরা ফেরাউনকেও পরাজিত করেছো। কেন? কারণ তোমরা হলে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমরা হলে আল্লাহ তালার আসল বান্দা যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সকল মানুষকে বানর হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তারা মানুষ হয়েছে। এই কথাগুলোকে পরবর্তীতে ইয়াহুদি হাকহামগণ তাওরাতে শামিল করে এবং তাদের ঈমানের স্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করে।”
এখন আমি আপনাদেরকে যায়নবাদের ঈমান কী তা বুঝাবো। তাদের ঈমানের স্তম্ভসমূহ হলঃ
১। আমরা হলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। আমরা দুনিয়ার শাসনকর্তা হবো।
২। দুনিয়ার অন্য মানুষদেরকে আমাদের গোলাম হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩। আমরা বৃহৎ ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করবো। আমাদের মাসীহ আসবে। তিনি দুনিয়ার শাসন কর্তা হিসাবে সারা দুনিয়াকে শাসন করবেন।
৪। দুনিয়ার সকল মানুষ আমাদের গোলামী করবে।
এটাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তারা যে পরিকল্পনাসমুহ হাতে নিয়েছে সেগুলো হলোঃ
১। পৃথিবীর ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে সমগ্র দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইয়াহুদিদেরকে পুনরায় ফিলিস্তিনে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) একত্রিত করতে হবে।
২। ওয়াদাকৃত ভূমিতে (promised land ) বৃহৎ ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা।
ওয়াদাকৃত ভূমিতে (promised land ) কি? (ফোরাত এবং নীল নদের মাঝখানের সমস্ত জায়গা যেটা আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন) আর কারো কোন অধিকার নেই। এটা মদিনা পর্যন্ত বিস্তৃত একটা বিশাল ভূমি। এই স্থানে শুধু মাত্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। এর আশে পাশের সমস্ত দেশ সমূহ মুসলিম দেশ, তারা ইসরাইলকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করবে। তাই প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত ২৮ টি দেশের কর্তৃত্ব আমাদের ইসরাইলের হাতে থাকতে হবে এবং আনাতলিয়াতে (বর্তমান তুরস্ক) ১৯ টি ক্রুসেডে বিজয় অর্জনকারী এবং সেলজুকীয় রাষ্ট্র ও উসমানী খিলাফাতের উত্তরাধিকারী কোন রাষ্ট্র থাকবে না। অর্থাৎ তুরস্ক নামে কোন দেশ থাকবে না।
এটা হল তাদের দ্বীনের অংশ বিশেষ। এটা তারা তাওরাতকে বিকৃত করে সেখানে প্রতিস্থাপন করেছে। সুতারাং এটা নিয়ে কোন প্রকার সংলাপ, সমঝোতা, দরকষাকষি চলবে না। ইসরাইলের প্রতিটি প্রেসিডেন্ট এই কথাটি বলে থাকে। আমাদের ২ টি মানচিত্র রয়েছে, একটি হল দেয়ালে টানানো মানচিত্র ছোট ইসরাইল, অপরটি হল আমাদের অন্তরের মণিকোঠায় অঙ্কিত মানচিত্র অর্থাৎ বৃহৎ ইসরাইল। এটা আল্লাহ তায়ালার ওয়াদাকৃত ভূমি। তিনি এই ভূমিকে আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন।
৩। বাইতুল মুকাদ্দাসে সুলায়মানের গম্বুজ (The Temple of sulayman) পুনরায় স্থাপন করবো।
এই তিনটি কাজ করতে পারলে আমাদের মাসীহর আগমনের জন্য এই পৃথিবী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে। এর পর দাউত আঃ আসবেন এবং তার সিংহাসনে বসার মধ্য দিয়ে সমগ্র দুনিয়ায় আমাদের শাসন কায়েম হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কেন যায়নবাদের এই সকল বিষয়ে আলোচনা করছি? কারণ এই সব বিষয় সম্পর্কে জানা ছাড়া আমরা বর্তমানের ঘটনা প্রবাহ বুঝতে পারবো না। আপনারা প্রায়ই বলেন, তায়্যিপ এটা করছে , সেটা করছে, সে কত না মহৎ কাজ করে ফেলছে! কিন্তু কথা হচ্ছে, কেন করছে? কারণ ইসরাইল তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এদেরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। সাইপ্রাসকে হস্তগত করার জন্য সকল পরিকল্পনা গ্রহন করেছে আর তাদের হাতে সাইপ্রাসকে তুলে দেওয়ার লক্ষে সকল বন্দোবস্তু করা হচ্ছে। কেন? কারণ তারা বৃহৎ ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য আমেরিকা সাইপ্রাসকে সেনা ঘাটিতে পরিণত করবে।
অনুবাদকঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ