দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানে পণ্য ও সেবার দাম বাড়া-কমার খবর। তাই তাদের কাছে বাজেট বরাদ্দের চেয়ে বাজারে তার প্রভাবটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, করের হার বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কত বাড়বে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখবো, মোট রাজস্ব আয়ের ৫৪.৭% আসবে কর থেকে, অর্থাৎ ৩৩০০০ বিলিয়ন টাকা। এর মাঝে ভ্যাট ৩৮.৭%, আমদানি শুল্ক ১১.৫%, আয়কর ৩১.৮%, সম্পূরক শুল্ক ১৬.৫%, অন্যান্য ১.৫%।
অর্থাৎ বরাবরের মতো এ অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ের অধিকাংশ আসবে কর থেকে, যার মূল হাতিয়ার হলো মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট। তার উপর বেসরকারি বিনিয়োগে আরো বেশি গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আয়কর খাতে বড় বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে, ফলশ্রুতিতে ভ্যাট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। জনগনের দুর্দশা, বিশেষত করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে আনার পরিবর্তে বেশিরভাগ খাতেই তা আগের অংকে বহাল রাখা হয়েছে, উপরন্তু কিছু খাতে ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, গত বছর যা ছিলো ১ লক্ষ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। প্রায় প্রতি অর্থবছরেই এ হার বেড়েছে। ১৯৯১ সালে ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে আজ অবধি দেশের রাজস্ব আদায়ের মূল উৎস এটিই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয় কর বা ট্যাক্সকে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত হিসাবে পরিণত করার পরিকল্পনা নিলেও ভ্যাটের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে জনগনই বার বার ভুক্তভোগী হচ্ছে। দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে, ঋণখেলাপি বাড়ছে, বাড়ছে আয় কর ফাঁকি; বাড়ছে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা, রেমিটেন্সে ধ্বস, রপ্তানীতে নেতিবাচক প্রবণতা; বাড়ছে বড় বড় হোল্ডিংগুলো এক টাকাও কর না দিয়ে উল্টো ঋণ নিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার হার, বিনিয়োগের বেহাল অবস্থা ও দাতা সংস্থার নেতিবাচক অবস্থান। যার ফলে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, আর সৃষ্ট ঘাটতি পূরণের জন্য ভ্যাটের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ভ্যাট এর বড় একটি অংশ অন্যায়ভাবে দরিদ্র মানুষের মাধ্যমে পরিশোধ করানো হচ্ছে। রাষ্ট্র বড় বড় হোল্ডিং ও ধনীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে, বিনিময়ে তাদেরকে সুদ দেয়। দরিদ্র ও সাধারণ জনসাধারণের কাছ থেকে নেওয়া ভ্যাটের টাকা দিয়ে হোল্ডিং মালিক ও ধনীদেরকে সুদ দেয়।
ইবনে খালদুন বলেছিলেন,
“আয় কমে যাওয়ার কারণে রাজস্বও কমে যায়, যা রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট হয় না। রাষ্ট্র তখন আরো বেশি হারে করারোপ করতে থাকে এবং ক্ষমতা ও সম্পদের সকল উৎসের উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হয়। অধিকাংশ কর যারা দিয়ে থাকে, সেই ব্যবসায়ীদের কাজ-কর্ম ও আয় উপার্জনের আগ্রহে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সুতরাং যখন আয় কমে যায় তখন রাজস্ব আয়ও কমে। রাষ্ট্রও তখন উন্নয়ন ও জনকল্যাণে অর্থ ব্যয় করতে অপারগ হয়। উন্নয়ন কমে যায়, মন্দা আরো বেড়ে যায়, পতনের নিয়ামকসমূহ গতি পায় এবং শাসক গোষ্ঠীর পতন আসে।”
(আল মুকাদ্দিমাহ, পৃষ্ঠা ১৬৮, ২৭৯-৮২)
দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকার বেশি হলে তাকে ট্যাক্স দিতে হয়, এর কম আয় থাকলে ট্যাক্স দিতে হয় না। কিন্তু ফুটপাথে বসবাসকারী হত দরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে কোটিপতি পর্যন্ত সবাইকে একই হারে ভ্যাট দিতে হয়, আয় থাকুক বা না থাকুক। যেমন ধনী মানুষেরা চাল, ডাল থেকে শুরু করে সাবান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে সুপার শপ থেকে, আর নিম্ন আয়ের মানুষেরা কিনে গ্রাম-গঞ্জ, পাড়ার দোকান থেকে। কিন্তু এসব পন্য যেখান থেকেই কেনা হোক, ভ্যাটের পরিমাণ একই। নিত্যব্যবহার্য থেকে শুরু করে বিলাসী পণ্য– সবকিছুতেই ভ্যাটের হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই। এক্ষেত্রে কার আয় বেশি বা কার কম সেটা মূখ্য নয়। উল্টো রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য কর আদায়ে নতুন করনীতি ঘোষণা, কর হার ও করের আওতা বাড়ানো ও আয়কর কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে ভ্যাটের আওতা। করের ভিত্তি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। কিছু সেবা থেকে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য আংশিক তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে যেসব খাতে ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভ্যাট ছিলো, সেসব খাতে ভ্যাটের পরিমাণ হয়ে যাচ্ছে উপর ১০-১৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছোট ছোট প্লাস্টিক কারখানাগুলো এতদিন ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিলো। এবারের বাজেটে তাদের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বহাল আছে প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানির উপর আরোপিত শুল্ক, প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানির উপর আরোপিত ১.৫০% শুল্ক, যা গত অর্থবছরে ছিলো ০.৬০%। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সুরক্ষা খাতে। এখন ফল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। এবারের বাজেটে এটি বাড়িয়ে ২০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যাবে। বেড়েছে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস, ডেটা ব্যবহারের ভ্যাট। এভাবে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য, খাতেই ভ্যাটের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
ফলাফলস্বরূপ, পণ্যমূল্যে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সরু চালের দাম কেজিতে ১.৬৭ শতাংশ বেড়েছে, মাঝারি আকারের চালের দাম কেজিতে ১১.৫৮ শতাংশ ও মোটা চাল কেজিতে ৮.১৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি খোলা আটার দাম বেড়েছে ৩.৩৩ শতাংশ। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৩৮.৮৯ শতাংশ, প্রতি লিটার বোতালজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৩৪.৮৮ শতাংশ এবং লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে লিটারে ৭৫ শতাংশ। প্রতি কেজি মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩.৬৪ শতাংশ বেশি দরে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬.৬৭ শতাংশ বেশি দরে। দেশি হলুদ ২৫ শতাংশ, চিনি ১৬ শতাংশ, প্যাকেটজাত লবণ ৮.৩৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজিতে ২.১১ শতাংশ, প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিমের দাম ১৯.২৩ শতাংশ বেড়েছে। এক্ষেত্রে যেসব পণ্য দেশের বাহির থেকে আমদানী করতে হয়, সেসব পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক ও ভ্যাটের প্রভাবে দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমদানীকৃত প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ গুণ।
এ তো গেলো ছোট একটা সমীক্ষা। ভ্যাট থেকে গৃহীত অর্থ জনগনের পেছনে ব্যয়ের পরিমাণের অনুপাত যদি দেখি, রাষ্ট্র জনগন থেকে নেওয়া প্রতি ১০০০ টাকার ১১৪ টাকাই ব্যয় করবে সুদ পরিশোধে, আর জনগনের খাদ্যের পেছনে ব্যয় করবে মাত্র ৫৩ টাকা!
বর্তমান বাংলাদেশ যেন তার বাস্তব প্রতিফলন! শুধু বাংলাদেশ নয়, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার এ বিশ্বের সর্বত্র এ জুলুম সূক্ষ্ম জাল বিস্তার করেছে।
আপনি পৃথিবীর সে প্রান্তেই থাকেন না কেন, খাবার কেনার জন্য কোনো দোকানে গেলে খাবারের যে টাকা পরিশোধ করবেন, ভ্যাট গ্রহণের মাধ্যমে তার এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার হবে সুদ পরিশোধে, আর তা বিভিন্ন মাধ্যমে যায়নবাদীদের কাছেই যাবে। রুটির কথাই ধরুন। রুটি বাজারজাত করার আগে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও পর্যায় পার হয়ে আসে। ধান/গম চাষ করার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ট্র্যাক্টর কেনা হয়, আর এর বিনিময়ে ব্যাংককে সুদ দিতে হয়। এছাড়াও কীটনাশক, সার কৃষি কাজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়েও সুদ কার্যকরী। আর ট্রাক্টরসহ বাকি সব কিছুর সুদ সেটা পরিশোধের টাকা রুটি ক্রয়ের সময় আপনার থেকেই নেওয়া হয়।
এভাবেই প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে অর্থ বিভিন্নভাবে যায়নবাদীদের হাতে পৌঁছায়। প্রতি বছর পৃথিবীতে ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে, এর মধ্যে ৩৭.৫ ট্রিলিয়ন এই সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে যায়, অর্থাৎ মোট টাকার প্রায় অর্ধেক! এভাবেই তারা সূক্ষ্ম জাল বিস্তার করে গোটা দুনিয়াকে শুষে নিচ্ছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমেই তারা দুনিয়ার সম্পদের একটি বড় অংশ তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। পৃথিবীর যত বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, নামিদামি ব্র্যান্ড, সব কিছুতেই তারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বসেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান বলেন, “আমরা যদি অর্থনীতির ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, সংগ্রহের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে শিকার, এরপরে কৃষি, এরপরে বিনিময়, এরপরে মাধ্যম ব্যবহার করে বিনিময়, মুসলমান দেশসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব, এরপরে শ্রমিক বা শ্রম প্রথা। এরপর আমাদের এই বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে প্রচলিত হলো এই প্রথা। শ্রম প্রথা কী? অংশীদারিত্ব কী? শ্রম প্রথা বা শ্রমিক প্রথার মানে হলো, রাষ্ট্রীয় শক্তি আমার হাতে। আমি সব ব্যবস্থা চালু করবো। আমার ইচ্ছামত ট্যাক্স ও ভ্যাট বসাবো। এক কথায় বলতে গেলে আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। না! তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পারবে না, তুমি যাই হও না কেন! তুমি যদি দেশের পরাক্রমশালী সুলতানও হও, তবুও তুমি মানুষের অধিকারকে নষ্ট করতে পারবে না। এটি ভুল একটি চিন্তা যে, আমি রাষ্ট্র, আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। এ কথা বলার অধিকার তোমার নেই। তুমি তোমার ইচ্ছামতো শাসন করতে পারবে না। তোমার উপর জনগণের অধিকার রয়েছে। তুমি মানুষের অধিকার দিতে বাধ্য।”
তার মতে, সুদ ভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পাঁচটি মূল ভাইরাস রয়েছে। যথা–
১) সুদ
২) অন্যায়ভাবে আরোপিত ভ্যাট
৩) টাকশাল
৪) শেয়ার মার্কেট বা বিনিময় কেন্দ্র
৫) ঋণ
এখন প্রশ্ন হলো রাষ্ট্র কি জনগন থেকে ভ্যাট নিবে না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, “নিবে, তবে রাষ্ট্রের যতটুকু নেওয়ার অধিকার আছে রাষ্ট্র ততটুকুই নিতে পারবে তার বেশি নয়। রাষ্ট্র হয়েছে বলেই তার ইচ্ছামতো নিতে পারবে না। রাষ্ট্র কেবলমাত্র ততটুকুই ভ্যাট নিতে পারবে, যতটুকু জনগণের কল্যাণে ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তার বেশি নয়।”
এই জুলুম থেকে মুক্তির একমাত্র পন্থা হলো আদালত প্রতিষ্ঠা; সরকার এবং জনগনের মাঝে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করা। জনগন সরকারকে তার শত্রু ভাববে না, সরকার জনগনকে আয়ের উৎস হিসেবে দেখবে না। সরকার ভ্যাট আদায় করবে, তবে তা হতে হবে গ্রহণযোগ্য পন্থায়, শুধুমাত্র রাষ্ট্রের অধিকার পরিমাণ ভ্যাট আদায় করবে। এক্ষেত্রে জনগনের কাছে প্রতিটা টাকার পাই পাই হিসাব তাকে দিতে হবে। এজন্য বাজেট প্রণয়ন ও তুলে ধরা জরুরী। স্বল্প আয়ের মানুষদের ভ্যাট মওকুফ করতে হবে, কাদের উপর কত শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা যাবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এ নিয়ে চিন্তা করার মতো কোনো দল নেই, অর্থনীতিবিদ নেই, কেউ এ নিয়ে প্রশ্নও উত্থাপন করে না, ফলশ্রুতিতে মানবতা আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। এ অবস্থার পরিত্রাণে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এখনি সময় পুনরায় পরিবর্তন ও উন্নয়ন করার। যারা মানুষের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা সম্পর্কে জানে না, তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যাবে না। শ্রমিক প্রথার মাধ্যমে অংশীদারিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এভাবেই আদালতের উপর ভিত্তি করে ঘোষিত হবে নতুন দুনিয়ার ইশতিহার…
এসকল চিন্তানুযায়ী সবশেষে বলতে চাই, আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণের মূলশিক্ষা, তাঁর দেখানো পথ অনুযায়ী আমাদের মুক্তির পর্যালোচনা, আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার পর্যালোচনা ও সুদমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতির ভিশন তুলে ধরা আবশ্যক। আমাদের সচেতনতা ও সংগ্রাম ছাড়া অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন অসম্ভব, সংকট থেকে মুক্তিও মিলবে না।
ভ্যাট, ঋণ ও সুদনির্ভর অর্থনীতির নিগড় থেকে বের হয়ে, কথিত উন্নয়নের ডায়ালগ বাদ দিয়ে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি, কৃষি, বন্দর, প্রতিরক্ষাকে উন্নত করতে হবে। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ছোট শিল্প, ছোট উদ্যোগ, মৎস শিল্প, পোল্ট্রি, সবজি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের বন্দর, আমাদের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক আয় সবকিছু নিয়েই সবাইকে কথা বলতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে।
জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল কমিটি, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা কমিটি, প্রতিরক্ষা কমিটি, নগর ও স্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি এবং জাতীয় উন্নয়ন কমিটি করে আগাতে হবে।
আমাদের রয়েছে–
- ১৩ কোটি কর্মক্ষম মানুষ
- তারুণ্যদীপ্ত প্রতিরক্ষা খাত
- ইন্ডাস্ট্রি কেন্দ্রিক বিশাল সম্ভাবনা
- দুনিয়ার সেরা কৃষি (যার মাধ্যমে আমাদের পক্ষে দশ বছরে সেরা ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সম্ভব)
- গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর
- বিপুল পরিমাণে খনিজ সম্পদ
- বনাঞ্চল
- মৎসশিল্প ইত্যাদি
এসব নিয়ে মাত্র বিশ বছর ভালোভাবে কাজ করলে এ দেশের বেকারত্ব, দারিদ্র্য, খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকটসহ যাবতীয় সংকটের সমাধান তো হবেই, যাকাত নেওয়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না; ইসলামী সভ্যতা যার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ।