মানব সভ্যতায় জ্ঞানের গুরুত্ব যে কত বেশী এটা সর্বজনবিদিত। ইসলাম জ্ঞানের প্রতি কত বেশী গুরুত্ত্বারোপ করেছে এবং মুসলিম ব্যক্তি ও সমাজের জ্ঞান ও হিকমতের মাধ্যমে সজ্জিত হওয়া কত বেশী প্রয়োজন এই বিষয়টিও সকলের নিকট স্পষ্ট। আমরা এমন একটি সভ্যতার সদস্য যে সভ্যতায় জ্ঞান হিকমতের সাথে মিলিত হয়েছে, ইরফানের মাধ্যমে সজ্জিত হয়েছে এবং আলেমগণ হয়েছেন আখলাকের মাধ্যমে অলঙ্কৃত। অনুরূপভাবে আমরা এমন এক ধারার সন্তান যে ধারায় জ্ঞান, শুধুমাত্র জ্ঞানই নয় একই সাথে জ্ঞানের মধ্যে আখলাক ও দায়িত্ত্বকে অনুসন্ধান করা হয়ে থাকে এবং জ্ঞানকে আখলাক ও হিকমতের সমানুপাতিক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির কারণে জ্ঞান শুধুমাত্র তথ্যে, এই তথ্য আবার শুধুমাত্র বিনোদনের সেক্টরে রূপান্তরিত হয়েছে এবং যত দিন যাচ্ছে তথ্যভিত্তিক এক মূর্খতা ও দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান দুনিয়ার অবস্থা যখন এই তখন জ্ঞানের চেয়ে ‘জ্ঞানের আখলাক’ এবং জ্ঞান ও মানুষের মধ্যকার যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের আখলাকী মাত্রাকেও নিয়ে চিন্তা করা আমাদের জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে। অনেক বেশী জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই ব্যক্তি অনেক বেশী আখলাক ও মর্যাদা সম্পন্ন। খুবই আশ্চর্যজনক যে, যে যুগে এত এত আবিষ্কার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সেই যুগেও মানুষ দেখতে পাচ্ছে যে আকলকে কত খারাপভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে! মানব সভ্যতার জন্য শান্তি আনয়ন করার পরিবর্তে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসকে নিয়ে আসা হয়েছে। বিগত শতাব্দী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে সেগুলো যেন শান্তি নয় বরং যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের সেবা করেছে। মানুষে ভোগ করার লোভ, স্বার্থপরতা এবং লোভ-লালসা সীমাহীন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আখলাক থেকে দূরে থেকে উৎপাদিত জ্ঞান, নৈতিকতা শূন্য একটি বিজ্ঞান মানুষকে কততুকুই বা শান্তি ও আশার ওয়াদা দিতে পারে?
এগুলো শুধুমাত্র পাশ্চাত্যের/সেক্যুলার জ্ঞানের জন্যই নয়, একই সাথে যে জ্ঞানের উদ্দেশ্যই হল আখলাক সেই দ্বীনী জ্ঞানের ক্ষেত্রেও বহুলাংশে প্রযোজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীনী জ্ঞানের ক্ষেত্রে যে উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হয়েছে অতীতের তুলনায় তা অনেক বেশী। দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ, প্রকাশনা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক বিকাশ সাধিত হলেও জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কি পরিমানে আখলাক ও দায়িত্ত্ববোধে রূপান্তরিত হয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্কের দাবী রাখে। 
আখলাকের ক্ষেত্র হিসেবে জ্ঞানের আখলাক
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
আধুনিক যুগে আখলাকের দর্শনসহ (Philosophy of Ethics) বৈজ্ঞানিক অর্থেও আখলাক সম্পর্কিত গবেষণা ও কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ একটি সাহিত্য সৃষ্টি করেছে। সমগ্র মানবতাকে সম্পৃক্তকারী আখলাকের বিশ্বজনীন মূলনীতি সমূহ নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি প্রতিটি পেশার জন্যও নির্দিষ্ট আখলাকের আলাদা আলাদা ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা করা হচ্ছে। আখলাকের সাথে ডাক্তার, বিচারক, কিংবা প্রশাসকদের কি সম্পর্ক এটা নিয়ে গবেষণা করার করার সময় ‘ জ্ঞানের আখলাক’ নিয়েও বিশেষভাবে গবেষণা করা হচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র ‘ জ্ঞানের আখলাক’ নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে না। মুসলমানগণ- জ্ঞান, আখলাক ও দায়িত্ত্বকে একটি ধারণা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার কারণে আমরা ‘ জ্ঞানের আখলাক’ নামক পরিভাষাটি ব্যবহার করে থাকি। কেননা উপাধি, পেশা ও কাজের ক্ষেত্র যাই হোকা না কেন আমাদের দৃষ্টিতে একজন জ্ঞানী মানুষ হলেন দায়িত্ত্ববান মানুষ এবং তাঁর এই জ্ঞানের মাধ্যমে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপই আখলাকী হওয়া অতীব জরুরী।
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও আখলাক
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
জ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করাটা শুধুমাত্র এই যুগের জন্যই নির্দিষ্ট কোন বিষয় নয়। তবে আধুনিক সময়ে এসে জ্ঞান আইডিওলজিক্যাল একটি চেহরা অর্জন করার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। আর এই অবস্থার সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হচ্ছে স্বয়ং প্রতিষ্ঠানকে ও তার দেওয়া পদমর্যাদা সমূহের ও ডিপ্লোম্যাসির। এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ সরাসরিভাবে শক্তি ও ক্ষমতার সাথে যে সম্পর্ক স্থাপন করে সেই সম্পর্ক সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জ্ঞানের সামনে বড় একটি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কোন একজন ব্যক্তির একটি একাডেমির ছায়াতলে কাজ করা এবং সেই একাডেমি বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কিছু পদবীকে বহন করলেই যে সে একজন আলেম এই কথা বুঝায় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ধরণের পদবীর অধিকারীরা, শক্তি ও ক্ষমতার দ্বারা জ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং তাঁদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। কেননা যদি আমরা জনগণের উপর প্রভাবের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাই যে সাধারণ একটি চিন্তা যদি পদপদবীহীন সাধারণ একজন মানুষ বলে থাকে তাহলে সেটার প্রভাব এবং সেই একই কথা বা চিন্তা যদি পদ-পদবীধারী কেউ বলে থাকে তাহলে সেটার প্রভাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে।
ফলশ্রুতিতে ‘জ্ঞানের আখলাক’ নিয়ে চিন্তা করার সময়, জ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক ধারা আখলাককে কতটুকু প্রভাবিত করেছে সেই বিষয়টি নিয়েও চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
সমালোচনামূলক জ্ঞান ও আখলাক
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
সমগ্র ইতিহাসকাল ধরে প্রায়োগিক দিক থেকে জ্ঞান সাধারণত দুইটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে-
ㅤ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ 
প্রথমটি হল, মওজুদ অবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবদান রাখা। 
দ্বিতীয়টি হল, যা আছে সেটাকে যথেষ্ট হিসেবে না দেখে সেটাকে আরও বেশী ভালো ও সঠিকতার দিকে ধাবিত করা।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
জ্ঞানের আখলাক অনুসারে প্রথমটি সঠিক নয়। কেননা যা মওজুদ আছে সেটা তাঁর অস্তিত্ব যেন বিলীন না হয়ে যায় এই উদ্বেগের কারণে তার মধ্যকার সকল ভুল-ভ্রান্তিকে ধরে রাখে, এবং সেই সকল ভুলের কারণে সৃষ্ট হওয়া জুলুম ও অবিচারকে জারি রাখে। হাকিকত ও সত্য উদ্ভাসিত হোক প্রতিষ্ঠিত শক্তি ও ব্যবস্থা সব সময় এটা নাও চাইতে পারে। কেননা হাকিকত ও সত্য উদ্ভাসিত ও প্রকাশিত হলে তাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। অবস্থা যখন এরূপ হয় জ্ঞান তখন তার সমালোচনার যোগ্যতাকে হারিয়ে ফেলে এবং যে জ্ঞানকে সমালোচনা করা যায় না সেই জ্ঞান আখলাক থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। অথচ যে বিষয়টি সবচেয়ে প্রয়োজন সেটা হল জ্ঞানকে তার মওজুদ সীমারেখার মধ্যে বন্দী করে না রেখে তাকে আরও বেশী বিকশিত করা ও তার সীমানাকে বৃদ্ধি করা। মানুষ এবং সমাজ জীবনকে আরও ভালো ও কল্যাণের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বাহন হল জ্ঞান। আর জ্ঞান তার এই দায়িত্ত্বকে তখনই পালন করতে সক্ষম হবে যখন সেটা সঠিক সমালোচনার ফিল্টার সমূহকে অতিক্রম করবে। তবে সেই সমালোচনা অবশ্যই গঠনমূলক হতে হবে। কেননা একজন আলেম (জ্ঞানী ব্যক্তি) যদি সমালোচনার ক্ষেত্রে আদালতের মূলনীতিকে উপেক্ষা করে তাহলে তার প্রতি যেমন আস্থা উঠে যায় একই সাথে সে জ্ঞানের আখলাককেও আহত করে।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
জ্ঞানের আখলাক ও নিরপেক্ষতা
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
আধুনিক সময়ে জ্ঞানের আখলাকের কথা আসলে যে বিষয়টি সবচেয়ে সামনে চলে আসে সেটি হল ‘নিরপেক্ষতার নীতি’। প্রথম দর্শনে এই মূলনীতিটি আখলাকের গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতির মত দেখা যেতে পারে। তবে এই ‘নিরপেক্ষতার নীতি’ দ্বারা আসলে কি বুঝানো হচ্ছে সেই বিষয়টিও অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কার মতে কেমন একটি নিরপেক্ষতা? প্রথমত, একজন আলেম/জ্ঞানী ব্যক্তি কি কখনো সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হতে পারে? একজন জ্ঞানী মানুষের কতটুকু নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব বা তাঁর নিরপেক্ষ হওয়াটা কতটুকু আখলাকী? হাকিকতের সন্ধানি একজন জ্ঞানী ব্যক্তি কি হাকিকতের পক্ষাবলম্বনকারী নয়? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে একজন জ্ঞানী ব্যক্তির নিরপেক্ষ হওয়াটা জ্ঞানের আখলাকের মূলনীতির আলোকে বিশ্লেষণ করা অতীব জরুরী।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
আমাদের সভ্যতায় জ্ঞানের আখলাক ও আদব
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
জ্ঞান ও আখলাকের সম্পর্কের দৃষ্টিকোন থেকে কেন্দ্রবিন্দু হল, জ্ঞানকে বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্যের সাথে সাযুজ্য রেখে তাঁর ব্যবহার। এই বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝার জন্য এই হাদীসটি আমাদেরকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে। রাসূলে আকরাম (সঃ) বলেছেন, “ আলেমদের উপর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য, অথবা নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা সাধারণ মানুষের মনোযোগ তোমাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করো না। যে তা করবে সে জাহান্নামী”।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
আমাদের হাদীস গ্রন্থ সমূহের ‘ কিতাবু’ল-ইলম’ নামক অধ্যায় সমূহে যে বিষয়ের প্রতি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ত্বারোপ করা হয়েছে সেটি হল জ্ঞান ও আমলের মধ্যকার সামগ্রিকতা। জ্ঞান স্বয়ং নিজেই ফায়দার দিকে ইশারাকারী একটি অর্থবহতাকে ধারণ করে থাকে। তবে আমল হিসেবে বাস্তব জীবনে যদি সেটা প্রতিফলিত না হয় তাহলে সেই জ্ঞানকে আমাদের দ্বীনে ফায়দাহীন জ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে এবং এই বিষয়টি হয়রত পয়গাম্বরের (সঃ) দোয়ার মধ্যে এই ভাবে স্থান পেয়েছেঃ “ হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট পানাহ চাই উপকারহীন জ্ঞান থেকে, সম্মান প্রদর্শন করে না এমন কালব থেকে, পূর্ণ হয় না এমন নফস থেকে, অশ্রুপাত করে না এমন চোখ থেকে এবং বিবেচনায় নেওয়া হয় না এমন দোয়া থেকে”।
একজন আলেমের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হল তাঁর নিয়ত এবং সর্বজ্ঞাত মহান প্রভুর সামনে তাঁর অবস্থা কেমন? এই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সব সময় চিন্তা করা প্রয়োজন। জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত হক্বকে ভালোভাবে বুঝে রবের নিকট নিকটবর্তী হওয়া। আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর ভাষায় “ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য কোন জ্ঞানকে যদি কেহ শুধুমাত্র দুনিয়াবী স্বার্থের জন্য অর্জন করে কিয়ামতের দিন তাহলে সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না”।
অপরদিকে আমাদের বিভিন্ন গ্রন্থ সমূহে ‘জ্ঞানের আদব’ শিরোনামে উল্লেখিত রেওয়ায়েত সমূহ বিনম্রতা, সাহসিকতা ও ভদ্রতার মত গুনাবলীকে জ্ঞানের সাথে একত্রিত করার প্রয়োজনের দিকে ইঙ্গিত করেছে। রাসূলে করীম (সঃ) আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে একজন শিক্ষার্থীকে বিনম্র, ভদ্র ও হিম্মত সম্পন্ন হতে হবে।
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
“ হে আল্লাহ তুমি আমার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দাও, আমার দৃঢ়তা সাহসিকতাকে বৃদ্ধি করে দাও”।
আল্লাহর রাসূল (সঃ) এইভাবে দোয়া করেছেন।
ㅤㅤㅤㅤㅤㅤㅤ
তাকওয়ার সাথে জ্ঞান ও আমলের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করা দরকার। এই বিষয়টিও অতীব জরুরী একটি বিষয়। ইলমের সাথে হিলম – এর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে অনেক গ্রন্থেই আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম গাজালী, বিনম্রতা, খুশু-খুজু, তাকওয়া, যুহুদ এবং হিলমকে একজন আলেমের গুনাবলী বলে উল্লেখ করেছেন। মূর্খতা ও বোকামীর বিপরীত হল; ‘হিলম’। আমাদের ভাষায় হিলকে নম্রতা ও সহিষ্ণুতা বলে অনুবাদ করা হয়ে থাকে এটা সঠিক নয়। একজন ব্যক্তি যদি জ্ঞান ও হিকমতের দ্বারা সজ্জিত হয়, তাঁর সেই জ্ঞান ও হিকমতকে যদি একটি দায়িত্ত্ব ও আখলাক হিসেবে তার জীবনে বাস্তবায়িত করতে পারে তাহলে সেই ব্যক্তির প্রতিটি আখলাকী আচরণের নামই হিলম হিসেবে অভিহিত হবে। যদি সে এরূপ করতে পারে তাহলে সে ইলম ও হিলমকে একত্রিতকারী বলে গণ্য হবে। বলা হয়েছে :
‎ ‎ ‎ ‎ ‎
“ হিলমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন কিছুই নেই যা ইলমকে এত বেশী শোভামন্ডিত করতে পারে” হিলমের অধিকারী একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যখন কথা বলে জ্ঞানের মাধ্যমে কথা বলে আর যখন চুপ থাকে তখন হিলমের মাধ্যমে চুপ থাকে।
অবশেষে আমরা এই কথা বলতে পারি যে, জ্ঞান এমন একটি বিষয় বহন করে যা, জ্ঞানের অধিকারীর প্রতি, সমাজের প্রতি , প্রকৃতির প্রতি এবং আল্লাহর প্রতি একটি দায়িত্ত্ব বোধ জাগ্রত করে দেয়। আজ জ্ঞানের ব্যাপারে দায়িত্ত্বহীনতা এবং জ্ঞানের অপব্যবহার সমগ্র দুনিয়া যে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে তা আমাদেরকে জ্ঞানের আখলাক নিয়ে সোচ্চার হওয়ার দিকে আহবান জানাচ্ছে। আজ আমাদেরকে জ্ঞানের আখলাক নিয়ে অনেক বেশী চিন্তা করা প্রয়োজন। মানুষের কল্যাণ ও উপকারের জন্য উৎপাদিত জ্ঞান যখন আখলাকের সাথে তাঁর সম্পর্ককে ছিন্ন করে ফেলে তখন দুনিয়াতে কি ভয়াবহতা সৃষ্টি হতে পারে আমরা সকলেই আজ সেটার স্বাক্ষী। আজ এই সঙ্কট নিয়ে চিন্তা করা দরকার। জ্ঞান ও আখলাকের মধ্যকার এই সম্পর্ককে আমাদের পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং জ্ঞান, দায়িত্ত্ববোধ ও আখলাককে একত্রে বাঁচিয়ে রাখার যে মহান দায়িত্ত্ব সেটা ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে।

অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন আজাদ

১৬৫২ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ

প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ

প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ তুরস্কের একজন প্রথিতযশা আলেম। জীবন্ত কিংবদন্তি এ আলেমে দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহকে মানুষের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৬২ সালে তুরস্কের গাজিআনতেপ শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা পিতার কাছেই সম্পন্ন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর উসমানী ধারার প্রখ্যাত আলেম, 'মেহমেদ আমীন আর' এর নিকট শিক্ষা লাভ করেন। ড. গরমেজ পূর্ব আনাতোলিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত উসমানী খিলাফতের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকে শিক্ষা লাভের সময় প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন উস্তাদ 'মেহমেদ আমীন আর' এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেসময় তিনি একইসাথে গাজিআনতেপ মাদরাসায়ও পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রী লাভ করার পর হাদীস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন এবং খাতীব আল বাগদাদীর বিখ্যাত গ্রন্থ شرف أصحاب الحديث-এর মুহাক্কিক প্রখ্যাত হাদীস শাস্ত্রবিদ প্রফেসর ড. সাঈদ হাতীবওলুর অধীনে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তাঁর মাস্টার্সের থিসিস ছিল, 'মুসা জারুল্লাহ বিগিয়েফের চিন্তা ও দর্শন'।
মাস্টার্স করার সময়ে তিনি মিশরে গমন করেন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন। কায়রোতে অবস্থান কালে মিশরের স্বনামধন্য ফকীহ মুহাম্মদ সেলিম আল-আরওয়াহ এবং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস রিফাত ফাওজীর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। এক বছর কায়রোতে অবস্থান করার পর পুনরায় তুরস্কে ফিরে আসেন এবং পুনরায় আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট (PhD) শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে কৃতিত্বের সাথে তিনি তাঁর PhD শেষ করেন। তার PhD-এর থিসিস ছিলো "সুন্নত ও হাদীস বুঝা এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সমস্যা।" PhD চলাকালীন সময়ে তিনি এক বছর লন্ডনে অবস্থান করেন এবং সেখানে 'স্কুল অফ অরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ' এ গবেষক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর এ থিসিস ১৯৯৬ সালে তুরস্কের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর গবেষণা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং সে বছর এ গবেষণার জন্য তুর্কী সরকার তাকে গবেষণা পুরস্কার প্রদান করে। তার এ থিসিসটি আরবী ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ থিসিসের কারণে তিনি তাঁর একাডেমিক জীবনের অধিকাংশ সময় 'উসূলে ফিকহ' অধ্যয়নে ব্যয় করেন এবং এ সময়ে তিনি একজন উসূলবিদ হয়ে উঠেন।
এযাবৎকাল পর্যন্ত তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় মুহাদ্দিস, উসূলবিদ, আলেমগণের সান্নিধ্য লাভ করেছেন ও বিভিন্ন গবেষণায় তাদের থেকে বহু জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়াও উসমানী ধারার বড় বড় দার্শনিকদের সান্নিধ্যে দীর্ঘসময় পড়াশোনা করেন।তিনি আহমেদ ইয়েসেভি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজেত্তেপে বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেমন-ইসলাম শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন এবং তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান-এর সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
২০০৩ সালে তিনি Presidency of the Republic of Turkey Presidency of Religious Affairs এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিক্ষকতাও জারি রাখেন এবং ২০০৬ সালে প্রফেসর হন। দীর্ঘ ৭ বছর এ Religious Affairs এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১০ সালে তিনি Religious Affairs- এর প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এ গুরু দায়িত্ব পালন কালেও তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান এবং এক মুহূর্তের জন্যও জ্ঞান গবেষণায় বিরতি দেননি। এ সময়ে তিনি মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ আলেমদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। গাজা, আরাকান, সোমালিয়া, সুদান, মধ্য এশিয়া এবং বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালান। Religious Affairs-এর প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় অবরুদ্ধ গাজা সফর করেন এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সংহতি ঘোষণা করেন। গাজাতে অবস্থানকালে তিনি অবরুদ্ধ গাজাবাসীর খোঁজ-খবর নেন। এরপর তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে যান এবং ঐতিহাসিক এক খুতবা প্রদান করেন।
২০১৭ সালে Religious Affairs-এর দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। একটি হলো International Islamic Though: Foundation অপরটি হলো Institute of Islamic Thought. বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠান দুটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Picture of প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ

প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ

প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ তুরস্কের একজন প্রথিতযশা আলেম। জীবন্ত কিংবদন্তি এ আলেমে দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহকে মানুষের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৬২ সালে তুরস্কের গাজিআনতেপ শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা পিতার কাছেই সম্পন্ন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর উসমানী ধারার প্রখ্যাত আলেম, 'মেহমেদ আমীন আর' এর নিকট শিক্ষা লাভ করেন। ড. গরমেজ পূর্ব আনাতোলিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত উসমানী খিলাফতের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকে শিক্ষা লাভের সময় প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন উস্তাদ 'মেহমেদ আমীন আর' এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেসময় তিনি একইসাথে গাজিআনতেপ মাদরাসায়ও পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রী লাভ করার পর হাদীস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন এবং খাতীব আল বাগদাদীর বিখ্যাত গ্রন্থ شرف أصحاب الحديث-এর মুহাক্কিক প্রখ্যাত হাদীস শাস্ত্রবিদ প্রফেসর ড. সাঈদ হাতীবওলুর অধীনে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তাঁর মাস্টার্সের থিসিস ছিল, 'মুসা জারুল্লাহ বিগিয়েফের চিন্তা ও দর্শন'।
মাস্টার্স করার সময়ে তিনি মিশরে গমন করেন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন। কায়রোতে অবস্থান কালে মিশরের স্বনামধন্য ফকীহ মুহাম্মদ সেলিম আল-আরওয়াহ এবং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস রিফাত ফাওজীর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। এক বছর কায়রোতে অবস্থান করার পর পুনরায় তুরস্কে ফিরে আসেন এবং পুনরায় আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট (PhD) শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে কৃতিত্বের সাথে তিনি তাঁর PhD শেষ করেন। তার PhD-এর থিসিস ছিলো "সুন্নত ও হাদীস বুঝা এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সমস্যা।" PhD চলাকালীন সময়ে তিনি এক বছর লন্ডনে অবস্থান করেন এবং সেখানে 'স্কুল অফ অরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ' এ গবেষক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর এ থিসিস ১৯৯৬ সালে তুরস্কের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর গবেষণা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং সে বছর এ গবেষণার জন্য তুর্কী সরকার তাকে গবেষণা পুরস্কার প্রদান করে। তার এ থিসিসটি আরবী ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ থিসিসের কারণে তিনি তাঁর একাডেমিক জীবনের অধিকাংশ সময় 'উসূলে ফিকহ' অধ্যয়নে ব্যয় করেন এবং এ সময়ে তিনি একজন উসূলবিদ হয়ে উঠেন।
এযাবৎকাল পর্যন্ত তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় মুহাদ্দিস, উসূলবিদ, আলেমগণের সান্নিধ্য লাভ করেছেন ও বিভিন্ন গবেষণায় তাদের থেকে বহু জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়াও উসমানী ধারার বড় বড় দার্শনিকদের সান্নিধ্যে দীর্ঘসময় পড়াশোনা করেন।তিনি আহমেদ ইয়েসেভি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজেত্তেপে বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যেমন-ইসলাম শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন এবং তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান-এর সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেন।
২০০৩ সালে তিনি Presidency of the Republic of Turkey Presidency of Religious Affairs এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিক্ষকতাও জারি রাখেন এবং ২০০৬ সালে প্রফেসর হন। দীর্ঘ ৭ বছর এ Religious Affairs এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১০ সালে তিনি Religious Affairs- এর প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এ গুরু দায়িত্ব পালন কালেও তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান এবং এক মুহূর্তের জন্যও জ্ঞান গবেষণায় বিরতি দেননি। এ সময়ে তিনি মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ আলেমদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। গাজা, আরাকান, সোমালিয়া, সুদান, মধ্য এশিয়া এবং বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালান। Religious Affairs-এর প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় অবরুদ্ধ গাজা সফর করেন এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সংহতি ঘোষণা করেন। গাজাতে অবস্থানকালে তিনি অবরুদ্ধ গাজাবাসীর খোঁজ-খবর নেন। এরপর তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে যান এবং ঐতিহাসিক এক খুতবা প্রদান করেন।
২০১৭ সালে Religious Affairs-এর দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। একটি হলো International Islamic Though: Foundation অপরটি হলো Institute of Islamic Thought. বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠান দুটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top