জীবন ব্যবস্থার আল্লাহ প্রদত্ত দর্শন

যে দর্শন মানব প্রকৃতির সহিত সঙ্গতিপূর্ণ, কোন যুক্তি বা প্রমাণ দিয়েই যার প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় না, যে দর্শনে মানুষের ব্যক্তিসত্তার বিকাশ সম্ভাবনা নিহিত, কেবলমাত্র তা-ই হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত দর্শন। ইতিপূর্বেকার বিস্তারিত আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এরূপ একটি দর্শন মানুষের চিন্তা কল্পনা-গবেষণার ফল হতে পারে না কখনও। এ আল্লাহ প্রদত্ত দর্শন (প্রকৃতি বহির্ভূত ও অধিবিদ্যা সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধান) প্রকৃত ও স্থায়ী বলে অভিহিত হওয়ার যোগ্য। মানবতার কল্যাণ ও দর্শন দ্বারাই সম্ভবপর। একটি আদর্শ, নিখুঁত ও কল্যাণকর সমাজের ভিত্তি এ দর্শন থেকেই পাওয়া যেতে পারে।

আল্লাহ তা’আলার কালাম কুরআন মজীদ থেকে যেমন জানা যায়, মানুষের মগজ সমস্ত প্রাকৃতিক (natural and physical) জ্ঞানের ভান্ডার-এ পর্যন্ত কার, দীর্ঘ আলোচনায় তারই বিস্তারিত ব্যাখ্যাদান করা হয়েছে- সেই সঙ্গে কুরআনে একথাও স্পষ্ট ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর বিশেষভাবে প্রেরিত বান্দাদের মাধ্যমে প্রকৃতি-বহির্ভূত সমস্যাদির (metaphysical problems ) সমাধান প্রত্যেক যুগে ও কালে এবং প্রত্যেক জাতির নিকট পেশ করার সুষ্ঠু ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করেছেন। মানব সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই। বিশেষভাবে নিয়োজিত এ লোকগণ যেমন চরিত্রের দিক দিয়ে ছিলেন নিষ্কলুষ, তেমনি সর্বপ্রকার ব্যক্তিগত বৈষয়িক স্বার্থ ও মুনাফা লাভের সম্পূর্ণ উর্ধ্বে। এঁদের মাধ্যমে যে জ্ঞান পাঠানো হয়েছে, তা প্রাকৃতিক জগত সংক্রান্ত তত্ত্ব ও তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি-বহির্ভূত জগত সংক্রান্ত জ্ঞানেরও ভান্ডার ছিল এবং প্রকৃতি-বহির্ভূত জগত সংক্রান্ত সমস্যাদির সুষ্ঠু সমাধানও তাতেই রয়েছে। আল্লাহর কালামে এই পর্যায়ের জ্ঞানকে বলা হয়েছে ‘গায়েব’। ‘গায়েব’ সংক্রান্ত এসব কথা সম্পর্কে আমাদের অনুসন্ধান প্রবণতা ও আবেগকে চরিতার্থ না করা পর্যন্ত আমাদের দিলের পরিপূর্ণ আশ্বস্তি ও পরিতৃপ্তি সাধিত হবে না; দূর হবে না আমাদের মন-মগজের উদ্বেগ ও অস্থিরতা। ‘গায়েব’ সম্পর্কে মানুষের মন ও মগজের পূর্ণমাত্রায় আশ্বস্ত, প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত হওয়াকেই বলা হয় ঈমান গ্রহণ। ‘গায়েব’ সংক্রান্ত এই কথাবার্তার উপর আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়ই আমাদের মনস্তত্ত্বের আসল নিয়ামক —নিয়ন্ত্রক। গায়েবের প্রতি আমাদের ঈমান যেরূপ হবে, আমাদের সমগ্র মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা ও ভাবধারাও ঠিক সেই রকম-ই হবে। সেই অনুপাতে হবে বিশ্বলোক ও বিশ্বলোকের বিভিন্ন অংশের সহিত আমাদের বাস্তব আচরণ। যেমন, মৃত্যুর পর আমাদের অস্তিত্ব নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং অতঃপর আর কিছুই নেই—এই যদি আমাদের ঈমান হয়, তাহলে আমাদের বাস্তব আচরণ গড়ে উঠবে। এই অনুযায়ী তখন আমরা এই পার্থিব জীবনকে বেশী বেশী সুখী, শান্তিপূর্ণ ও উন্নতমানের করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হব। আমরা অন্যান্যের তুলনায় উত্তম খাদ্য, পোশাক ও বাসস্থান গ্রহণে উদ্যোগী হব, বেশী বেশী ধন-সম্পদ অর্জনে সর্বশক্তি নিয়োজিত করব, জীবনের সুখ-সম্ভোগের জন্যে বেশী বেশী দ্রব্য-সামগ্রী হস্তগত করতে সচেষ্ট হব, আমাদের বেশী বেশী প্রভাব-প্রতিপত্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করব এবং এই সবের কোন কিছু অন্য লোকেরা পেল কি পেল না, অন্য লোকদের কি চরম দুঃখ-দুর্দশা হলো, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ মাত্র করব না, সেজন্য একবিন্দু চিন্তা করারও প্রয়োজন অনুভব করব না। আমরা চাইব, আমাদের কথামতই গোটা জাতি চলুক, প্রত্যেকটি লোক আমাদের অঙ্গুলি হেলনে উঠুক আর বসুক। আমাদের মন্ত্রী-ই হোক আমাদের দেশের ও সমাজের একমাত্র নিয়ামক। এখানে ‘আমরা’ আর ‘আমাদের বলতে যাদের বোঝায়, তাদের ছাড়াও দেশে ও সমাজে অনুরূপ চিন্তা-বিশ্বাসের ও অনুরূপ ইচ্ছা কামনা-বাসনা পোষণকারী হাজার হাজার ও লক্ষ লক্ষ লোক থাকবে। তারাও আমাদের মত করতে চাইবে, করবে এবং তা করার অধিকার তাদেরও তেমনি রয়েছে, যেমন আমাদের। তখন প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ নিজ অধিকার আদায়ের জন্যে চেষ্টা-সাধনা ও সংগ্রামে লিপ্ত হবে, প্রত্যেকেই ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনে ( natural selection ) উর্ধ্বতন’ লাভের জন্যে উঠে পড়ে লেগে যাবে। তখন সারাটি পৃথিবীব্যাপী ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে, সমাজে সমাজে, জাতিতে জাতিতে ও রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যে চরম নির্বিচার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে এবং তার ফলে যে সর্বাত্মক ভাঙ্গন ও বিপর্যয় শুরু হয়ে যাবে, আর তার অনিবার্য পরিণতিতে গোটা মানবতাই যে ধ্বংস হয়ে যাবে, তাতে আর কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না। কেননা এরূপ অবস্থা মোটেই স্বাভাবিক নয়, নয় বিশ্ব ব্যবস্থার সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। তাই বিপর্যয় অনিবার্য, অবধারিত।

কিন্তু আমাদের বিশ্বাস যদি এই হয় যে, মৃত্যুর পর আমাদের দৈহিক বিনাশ হলেও জীবনের অবসান ঘটে না। আমরা তখন বেঁচে থাকি নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে এবং সে বাঁচা চিরন্তনের তরে বাঁচা। সে বাঁচার কোন লয় নেই, বিনাশ নেই। কিন্তু সে পরকালীন জীবনটা আমাদের ইহকালীন জীবনের ঈমান ও বাস্তব আচার-আচরণের ফল হিসাবে ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে। তাহলে আমরা ইহকালের ক্ষণিক ও সীমাবদ্ধ জীবনের তুলনায় পরকালীন জীবনকেই অধিক গুরুত্ব দেব, সর্বদিক দিয়ে জীবন ব্যবস্থার আল্লাহ প্রদত্ত দর্শন অগ্রাধিকার দেব। সে জীবনকে উত্তম, উন্নত ও সুখ-শান্তিময় বানাবার জন্যেই নিয়োজিত হবে আমাদের সব চিন্তা-ভাবনা, চেষ্টা-প্রচেষ্টা। এভাবে যত বেশী সংখ্যক লোক তাদের পরকালীন জীবনকে সুখময় বানাবার চিন্তায় ব্যাকুল হবে, আমাদের এখানকার সমাজ ও রাষ্ট্রও ততই গঠনমূলক চিন্তা ও আচরণের অনুসারী হবে। বিপর্যয় ও অশান্তির কারণ খুব কম-ই ঘটবে। ফলে বিশ্বমানবতার সঠিক উন্নতি লাভের পথ উম্মুক্ত হবে।

বন্দেগী কবুলের আবেগ ও প্রবণতা:

মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি ও মনস্তত্ত্ব অধ্যয়ন একথাও আমাদের জানিয়ে দেয় যে, কোন লোক যখন কোন জিনিস বা ব্যক্তিসত্তায় (তা নিজের জ্ঞান অনুপাতে) অসাধারণ ও অস্বাভাবিক শক্তির সৌন্দর্য দেখতে পায় কিংবা আছে বলে ধারণা করে, আর নিজের উপর তার এতটা প্রভাব গ্রহণ করে যে, নিজের জীবনের স্থিতি, জীবন-সামগ্রী লাভ ও সর্বপ্রকার লাভ-লোকসান সেই জিনিস বা সেই ব্যক্তির সহিত সম্পর্কিত করে দেয় তখন সবকিছুকে তার-ই অবদান বলে মনে করে নেয়। তখন তার মনে-হৃদয়ে গভীর কৃতজ্ঞতার ভাবধারা তীব্রভাবে জেগে উঠে সেই জিনিস বা ব্যক্তিসত্ত্বার প্রতি। তারই ফলে সে তার-ই সম্মুখে আনুগত্যের মস্তক অবনমিত করে দেয়। আর কারোর নিকট মাথা নত করে দেওয়া এমন একটা অকাট্য স্পষ্ট নিদর্শন যে, তা থেকেই বুঝতে পারা যায় সে তার দাসত্ব স্বীকার করছে অকুণ্ঠিতভাবে। সে তারই আনুগত্য ও অধীনতার রজ্জু নিয়ে নিজের গল্পদেশকে বেঁধে নিয়েছে বলেই এই কথায় আর কোনই সন্দেহ থাকে না। এরূপ অবস্থায় তারই মর্জী অনুযায়ী চলতে সে স্বতঃই প্রস্তুত হয়ে যায়। সে-ই হয় তখন তার পরিচালক নিয়ন্ত্রক। তখন তার চিন্তা-ভাবনার কেন্দুবিন্দুতে আসীন হয় সেই জিনিস বা ব্যক্তিসত্তা। সে তার অনুগ্রহ স্বীকার করার ও তাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই গ্রহণ করবে, সব আচার-অনুষ্ঠান স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পালন করবে। তার জন্যে স্বীয় শ্রমার্জিত ধন-মালও অকাতরে কুরবান করে দেবে, সেজন্যে সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করতেও কুণ্ঠিত হবে না। মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণে এ কথা অকাট্য ও সত্য। বস্তুত এই রূপ সত্তাকেই মানুষ ‘আল্লাহ্’ বলে। কুরআনের ভাষায় এই সত্তা-ই ‘ইলাহ’ এবং মা’বুদ মানুষ স্বীয় হৃদয় নিহিত বন্দেগী কবুলের আবেগ ও প্রবণতা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জিনিস বা সত্তাকে খোদা বানিয়েছে। উপরন্তু চতুর ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা মানুষের প্রকৃতি নিহিত হৃদয়াবেগকে হাতিয়ার বানিয়ে গোষ্ঠী-সমাজ ও জাতির উপর নিজের প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব স্থাপন করে নিয়েছে। রাজাদের রাজত্ব, বাদশাহদের বাদশাহী, সম্রাটদের সাম্রাজ্য, ডিকটেরটরদের ডিকটেটরী প্রভৃতি ব্যবস্থা মানুষের প্রকৃতি নিহিত এই বন্দেগী কবুলের ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানবেতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে।

আর বর্তমান যুগে প্রদেশ ও দেশমাতৃকাই হচ্ছে বড় খোদা। জাতিকে বানিয়েছে তার স্থলাভিসিক্ত-প্রতিনিধি। জাতির ইচ্ছাই হচ্ছে জাতির ব্যক্তিদের শাসক ও নিয়ামক। প্রত্যেকটি মাতৃভূমি নাগরিকদের প্রধান খোদা হয়ে বসেছে। প্রত্যেক নাগরিক তার নিজের স্বদেশ বা দেশমাতৃকার জন্যে নিজের যথাসর্বস্ব—জান-প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বীয় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নিজের দেশমাতৃকার প্রেমে বিলীন করে দিতে, স্বীয় আত্ম সম্ভ্রম—আত্মচেতনাকে পর্যন্ত জাতি ও জাতির নেতৃবৃন্দের মর্জির অধীন করে দিতে বাধ্য। এ ভাবে সারাটি পৃথিবী বিভিন্ন খোদার খোদায়ীতে বিভক্ত হয়ে আছে বর্তমানে। প্রত্যেক খোদা-ই অন্যদের উপর স্বীয় নিরংকুশ খোদায়ী প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট। নিজেদের চিন্তা-গবেষণার প্রভাব-প্রতিপত্তি সাধারণ জনমানুষের মনে-মগজে বসিয়ে স্বীয় প্রাধান্য ও বড়ত্বের বড়াই করতে করতে চাচ্ছে মাত্র।

 

আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার ভিত্তি:

কিন্তু মানুষ বন্দেগী কবুলের এই আবেগ ও প্রবণতার দরুন কেন এত লাঞ্ছনা গঞ্জনা ভোগ করল? কখনও আকাশমার্গীয় অবয়ব-চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারাকে নিজের মা’বূদ বানায়, কখনও নদী-সমুদ্র-পাহাড়-পর্বত, কখনও দেশ রাষ্ট্রকে, আবার কখনও কোন বস্তুকে? এ বিষয়ে চিন্তাবিদদের বিশেষ করে মানবীয় মনস্তত্ত্ব বিশারদদের—গভীর ভাবে ও গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-বিবেচনা করা আবশ্যক। স্পষ্ট মনে হয়, প্রকৃত মা’বুদের সন্ধানেই মানুষের এই সুদীর্ঘ পিচ্ছিল পথের পরিক্রমা। অজ্ঞানতার কারণে সে এক এক সময় এক-একটি জিনিস বা সত্তাকে খোদার আসনে আসীন করে নিয়েছে। খোদা রূপে বরণ করেছে কিংবা মনে করেছে আসল খোদার প্রতীক, প্রতিবিম্ব। মানব-প্রকৃতি নিহিত মা’বুদ সন্ধানের এ আবেগ ও প্রবণতা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, একজন সত্যিকার মা’বুদ অবশ্যই হওয়া উচিত। সে সন্ধান করে প্রকৃত মা’বূদকে। অজ্ঞানতার কারণে সে অনেক সময় অ-খোদাকে খোদা এবং অপ্রকৃত মা’বুদকে মা’বুদ বানিয়েছে অনেক সময় অনেকবার। কিন্তু প্রকৃত মা’বূদের সন্ধান তার শেষ হয়ে যায়নি। কেননা সে প্রকৃত মা’বুদকে এখনো পায়নি। যে মা’বুদকে পেলে মানুষের এ অনুসন্ধান প্রবণতা ও আবেগের পরিতৃপ্তি ঘটবে, হবে পূর্ণ মাত্রায় চরিতার্থ সার্থক ও কৃতার্থ বোধ করবে, বুঝতে হবে, সে-ই হচ্ছে তার প্রকৃত মা’বূদ। মানুষ কেবল একটি মাত্র সত্তাকেই মা’বুদ রূপে গ্রহণ করতে পারে। এ উপায়ে সে যখন একজনকে মা’বুদ রূপে গ্রহণ করবে, সেই গ্রহণের ফলে তার এই সন্ধান প্রবণতা পরিতৃপ্ত ও কৃতার্থ হবে।

অন্যথায় অ-প্রকৃত খোদাকে আল্লাহ্ রূপে গ্রহণ করলে এই প্রবণতা হৃদয়াবেগ পরিতৃপ্তও হবে না, স্তব্ধও হবে না। আল্লাহ্ তা’আলা মানব-প্রকৃতিতে বন্দেগী কবুলের এই প্রবণতা ও আবেগ রেখে দিয়েছেন এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ প্রকৃত আল্লাহর বন্দেগী করবে। আর অনুসন্ধান প্রবণতা রেখেছেন এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ বিশ্বপ্রকৃতির বাহ্য প্রকাশ সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করবে, যেন প্রকৃত মা’বুদের প্রতি এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য গায়বী জিনিসের প্রতি গভীর প্রত্যয় লাভ করে এবং প্রকৃত মা’বুদকে বাদ দিয়ে বাতিল মা’বূদের সন্ধানে উদ্ভ্রান্ত হয়ে না যায়।

পূর্বেই বলেছি, মানুষের মনস্তত্ত্বের নিয়ামক-নিয়ন্ত্রক অংশ হলো তার ঈমান ও আকীদা। তার বাস্তব আচরণ হয় তার-ই অধীন, তার-ই অনুগত। আর সে ঈমান ও গায়বী বিষয়াদির প্রতি, যার প্রত্যক্ষ অনুভূতি সে কখনও লাভ করতে পারে না। আল্লাহ্ তা’আলার নাযিল করা জীবন-দর্শন এবং তার ভিত্তিতে রচিত জীবন ব্যবস্থার অধীন থেকেই মানুষের ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ লাভ সম্ভবপর। মানুষের মনুষ্যত্বের প্রকৃত কল্যাণ এই জীবন ব্যবস্থার সহিতই জড়িত—এ জীবন-বিধানের উপরই একান্তভাবে নির্ভরশীল।

সূরা আল-বাকারা’র প্রাথমিক কয়েকটি আয়াত:

কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্যে কয়েকটি জরুরী শর্ত রয়েছে। এই শর্তসমূহ সূরা আল-বাকারার প্রাথমিক কয়েকটি আয়াতে উদ্ধৃত হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলার ঘোষণা হলো; যারাই এসব শর্ত পূর্ণ রূপে পালন ও পূরণ করবে, তারাই আল্লাহর দেয়া এ জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ ও বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। সূরা আল-বাকারার নিম্নোদ্ভুত প্রাথমিক আয়াত কয়টিতে এ শর্তসমূহ অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষা ও ভঙ্গীতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল-বাকারা’র সেই প্রাথমিক আয়াত কয়টিতে বলা হয়েছে :

১. ইহা আল্লাহর নাযিল করা কিতাব। এতে কোনরূপ সন্দেহ নেই।

২. ইহা হেদায়েত সেসব আল্লাহ-ভীরু লোকদের জন্যে।

৩. যারা গায়ব-এর প্রতি ঈমান আনে,

৪.নামায কায়েম করে,

৫. আমরা যে রিযিক তাদের দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় ও ব্যবহার করে।

৬. যে কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি এবং যে-সব কিতাব তোমার পূর্বে নাযিল করেছি সেই সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখে,

৭. এবং পরকালের প্রতি ‘ইয়াকীন’-দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করে।

৮. এই লোকেরাই তাদের আল্লাহ্র নিকট থেকে আসা হেদায়েতের অনুসারী এবং তারা-ই কল্যাণপ্রাপ্ত।

ব্যাখ্যা:

১. আল্লাহর এই কিতাব বিশ্বমানবের জন্যে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে নাযিল হয়েছে। বিশ্বলোক-স্রষ্টা ও প্রকৃত মা’বূদ আল্লাহর-ই নাযিল করা এই কিতাব—এতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই এতে বলা কথা ও তত্ত্ব ও তথ্যের সত্যতা ও যথার্থতা সম্পর্কে। তার প্রতিটি অংশই সত্য ও যথার্থ এবং প্রকৃত অবস্থার সহিত পুরা মান্নার সঙ্গতিপূর্ণ।

২. ‘আল্লাহ-ভীরু লোক’ বলতে বোঝায় সেই লোকদের, যাদের মনে হৃদয়ে আল্লাহর অসন্তোষ ও পরকালীন আযাবের ভয় তীব্রভাবে বর্তমান এবং তার-ই কারণে প্রকৃতি ও স্বভাবগত আকর্ষণ ও আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে দূরে সরে থাকে এবং সচেতন প্রবণতা সহকারে আল্লাহ্র সন্তোষমূলক কাজকর্মে লিপ্ত থাকে। এই গুণ যাদের রয়েছে তারাই ‘মুত্তাকী’ বা ‘পরহেযগার’ বলে অভিহিত। তারা মনের অশুভ ও অবৈধ লালসা কামনা ও ইচ্ছা-বাসনার চরিতার্থতায় লেগে যায় না। বরং কুরআনের দেয়া নীতি আদর্শ অনুসরণ করে চলার সচেতন প্রচেষ্টা এবং উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে নফস বা নফসের কামনা-বাসনার দাসত্ব করতে তারা অস্বীকার করে। এ কারণে তাদের বলা যায় ‘আদর্শবাদী ও মহান উদ্দেশ্যে নিবেদিত লোক’। এর-ই বিপরীত লোক হচ্ছে তারা, যারা ‘নীতিহীন’ ‘আদর্শহীন’ ও ‘লালসার দাস’।

কুরআনের ঘোষণা—ইহা হেদায়েত সেই আল্লাহ-ভীরু লোকদের জন্যে, যারা গায়বের প্রতি ঈমানদার’—থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মানব প্রকৃতিতে আল্লাহ্র ভয় ও নির্ভয়তা—উভয় ভাবধারাই রয়েছে, থাকা স্বাভাবিক। তবে যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় প্রবল ও বিজয়ী কেবল সে সব লোক-ই ‘মুত্তাকী ‘আদর্শবাদী’ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী বলে গণ্য হয়। পক্ষান্তরে যাদের মনে আল্লাহর ভয়ের পরিবর্তে লালসা-কামনা পূজার ভাব প্রবল ও বিজয়ী, তারাই আদর্শ হীন ও চরিত্রহীন।

এ থেকে এ কথাও প্রকট হয় যে, লালসা-কামনার অনুসারী লোকেরা আল্লাহর হেদায়েত অনুসরণ করে চলতে পারে না। এই কারণে তাদের ছাটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র আদর্শ বাদী লোকেরাই আল্লাহর বিধান মেনে চলতে সক্ষম। এই কারণে এ আয়াতে সেই আদর্শবাদীদের সম্বোধন করেই কথা বলা হয়েছে এবং তাদের সামনে পরবর্তী শর্তসমূহ পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, কেবলমাত্র সেই আদর্শবাদী লোকেরাই

১১০৪ বার পঠিত

শেয়ার করুন

Picture of মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বর্তমান শতকের এক অনন্যসাধারণ ইসলামী প্রতিভা ! এ শতকে যে ক'জন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা কায়েমের জিহাদে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন-দর্শন রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন, তিনি তাদের অন্যতম । এই ক্ষণজন্ম পুরুষ ১৩২৫ সনের ৬ মাঘ (১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারী) সোমবার, বর্তমান পিরোজপুর জিলার কাউখালী থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্রােন্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৩৮ সালে তিনি শীর্ষীনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ১৯৪০ ও ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ফাযিল ও কামিল ডিগ্ৰী লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার জ্ঞানগর্ভ রচনাবলি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণায় নিরত থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি এ ভূখণ্ডে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দােলন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ চার দশক ধরে নিরলসভাবে এর নেতৃত্ব দেন ।বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) শুধু পথিকৃতই ছিলেন না, ইসলামী জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পর্কে এ পর্যন্ত তীর প্রায় ৬০টিরও বেশি। অতুলনীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার কালেমা তাইয়েবা, ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা', 'মহাসত্যের সন্ধানে', 'বিজ্ঞান ও জীবন বিধান', 'বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব, "আজকের চিন্তাধারা', "পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি’, ‘সুন্নাত ও বিদয়াত", "ইসলামের অর্থনীতি’, ‘ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন', 'সূদমুক্ত। অর্থনীতি’, ‘ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বীমা’, ‘কমিউনিজম ও ইসলাম', 'নারী', 'পরিবার ও শিরক ও তাওহীদ”, “আল-কুরআনের আলোকে নবুয়্যাত ও রিসালাত', "আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকারী', ইসলাম ও মানবাধিকার’, ‘ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা’, ‘রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত’, ‘ইসলামী শরীয়াতের উৎস', 'অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’, ‘অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম’, ‘শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি’, ‘ইসলামে জিহাদ', 'হাদীস শরীফ (তিন খণ্ড) ইত্যাকার গ্রন্থ দেশের সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে। এছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে তার অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি। মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী মনীষীদের রচনাবলি বাংলায় অনুবাদ করার ব্যাপারেও তার কোনো জুড়ি নেই। এসব অনুবাদের মধ্যে রয়েছে মওলানা মওদূদী। (রহ:)-এর বিখ্যাত তফসীর তাফহীমুল কুরআন', আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী'-কৃত ‘ইসলামের যাকাত বিধান (দুই খণ্ড) ও ইসলামে হালাল হারামের বিধান', মুহাম্মদ কুতুবের বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত' এবং ইমাম আবু বকর আল-জাসসাসের ঐতিহাসিক তফসীর ‘আহকামুল কুরআন' । তার অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৬০টিরও উর্ধে। মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র অন্তর্গত। ফিকহ একাডেমীর একমাত্র সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সূচিত “আল-কুরআনে অর্থনীতি' এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রকল্পেরও সদস্য ছিলেন। প্রথমোক্ত প্রকল্পের অধীনে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ৷ তাঁরই রচিত। শেষোক্ত প্রকল্পের অধীনে তাঁর রচিত সৃষ্টিতত্ত্ব ও ইতিহাস দর্শন' নামক গ্রন্থটি এখনও প্রকাশের অপেক্ষায় । মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন, ১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ণ। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন, একই বছর করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশী। ইসলামী মহাসম্মেলন, ১৯৮০ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আন্তঃপার্লামেন্টারী সম্মেলন এবং ১৯৮২ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিক উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই যুগস্রষ্টা মনীষী ১৩৯৪ সনের ১৪ আশ্বিন (১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর) a দুনিয়া ছেড়ে মহান আল্লাহর সন্নিধ্যে চলে গেছেন। (ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)
Picture of মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বর্তমান শতকের এক অনন্যসাধারণ ইসলামী প্রতিভা ! এ শতকে যে ক'জন খ্যাতনামা মনীষী ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা কায়েমের জিহাদে নেতৃত্ব দানের পাশাপাশি লেখনীর সাহায্যে ইসলামকে একটি কালজয়ী জীবন-দর্শন রূপে তুলে ধরতে পেরেছেন, তিনি তাদের অন্যতম । এই ক্ষণজন্ম পুরুষ ১৩২৫ সনের ৬ মাঘ (১৯১৮ সালের ১৯ জানুয়ারী) সোমবার, বর্তমান পিরোজপুর জিলার কাউখালী থানার অন্তর্গত শিয়ালকাঠি গ্রামের এক সম্রােন্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৩৮ সালে তিনি শীর্ষীনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম এবং ১৯৪০ ও ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে ফাযিল ও কামিল ডিগ্ৰী লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার জ্ঞানগর্ভ রচনাবলি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণায় নিরত থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি এ ভূখণ্ডে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দােলন শুরু করেন এবং সুদীর্ঘ চার দশক ধরে নিরলসভাবে এর নেতৃত্ব দেন ।বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) শুধু পথিকৃতই ছিলেন না, ইসলামী জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পর্কে এ পর্যন্ত তীর প্রায় ৬০টিরও বেশি। অতুলনীয় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার কালেমা তাইয়েবা, ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা', 'মহাসত্যের সন্ধানে', 'বিজ্ঞান ও জীবন বিধান', 'বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব, "আজকের চিন্তাধারা', "পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি’, ‘সুন্নাত ও বিদয়াত", "ইসলামের অর্থনীতি’, ‘ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন', 'সূদমুক্ত। অর্থনীতি’, ‘ইসলামে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও বীমা’, ‘কমিউনিজম ও ইসলাম', 'নারী', 'পরিবার ও শিরক ও তাওহীদ”, “আল-কুরআনের আলোকে নবুয়্যাত ও রিসালাত', "আল-কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকারী', ইসলাম ও মানবাধিকার’, ‘ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা’, ‘রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত’, ‘ইসলামী শরীয়াতের উৎস', 'অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম’, ‘অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম’, ‘শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি’, ‘ইসলামে জিহাদ', 'হাদীস শরীফ (তিন খণ্ড) ইত্যাকার গ্রন্থ দেশের সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছে। এছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে তার অনেক মূল্যবান পাণ্ডুলিপি। মৌলিক ও গবেষণামূলক রচনার পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতনামা ইসলামী মনীষীদের রচনাবলি বাংলায় অনুবাদ করার ব্যাপারেও তার কোনো জুড়ি নেই। এসব অনুবাদের মধ্যে রয়েছে মওলানা মওদূদী। (রহ:)-এর বিখ্যাত তফসীর তাফহীমুল কুরআন', আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী'-কৃত ‘ইসলামের যাকাত বিধান (দুই খণ্ড) ও ইসলামে হালাল হারামের বিধান', মুহাম্মদ কুতুবের বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত' এবং ইমাম আবু বকর আল-জাসসাসের ঐতিহাসিক তফসীর ‘আহকামুল কুরআন' । তার অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৬০টিরও উর্ধে। মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-র অন্তর্গত। ফিকহ একাডেমীর একমাত্র সদস্য ছিলেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সূচিত “আল-কুরআনে অর্থনীতি' এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রকল্পেরও সদস্য ছিলেন। প্রথমোক্ত প্রকল্পের অধীনে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধ৷ তাঁরই রচিত। শেষোক্ত প্রকল্পের অধীনে তাঁর রচিত সৃষ্টিতত্ত্ব ও ইতিহাস দর্শন' নামক গ্রন্থটি এখনও প্রকাশের অপেক্ষায় । মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ) ১৯৭৭ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলন ও রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলন, ১৯৭৮ সালে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম দক্ষিণ-পূর্ণ। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইসলামী দাওয়াত সম্মেলন, একই বছর করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম এশী। ইসলামী মহাসম্মেলন, ১৯৮০ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আন্তঃপার্লামেন্টারী সম্মেলন এবং ১৯৮২ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের তৃতীয় বার্ষিক উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই যুগস্রষ্টা মনীষী ১৩৯৪ সনের ১৪ আশ্বিন (১৯৮৭ সালের ১ অক্টোবর) a দুনিয়া ছেড়ে মহান আল্লাহর সন্নিধ্যে চলে গেছেন। (ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)

মতামত প্রকাশ করুন

Scroll to Top