বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। দুরূদ ও সালাম প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর পরিবার ও সাহাবাগণের উপর।
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا – فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِّنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا﴾
অর্থঃ হে লোকেরা, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে উজ্জল প্রমাণপত্র এসে গেছে এবং আমি তোমাদের কাছে এমন আলোক রশ্মি পাঠিয়েছি যা তোমাদের সুস্পষ্টভাবে পথ দেখিয়ে দেবে৷ এখন যারা আল্লাহর কথা মেনে নেবে এবং তার আশ্রয় খুঁজবে তাদেরকে আল্লাহ নিজের রহমত, করুণা ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে নেবেন এবং নিজের দিকে আসার সোজা পথ দেখিয়ে দেবেন৷ (নিসাঃ ১৭৪-১৭৫)
আসুন কাজের দিকেঃ
প্রিয় ভাইয়েরা, আমি যখনই আমার শ্রোতাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলি তখন প্রতিবারই আমি তাদেরকে কথার ময়দান থেকে কাজের ময়দানে, তাদের প্লান ও পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করার জন্য বাস্তবায়নের ময়দানের দিকে আহবান জানাই। আর আমি এই জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। ওয়ায়েজীনের পদবী নিয়ে আমরা দীর্ঘকাল ধরে কথা বলে আসছি। সময় আজ আমাদের কাছে ফলাফল চাচ্ছে এবং এই কেন্দ্রীক কাজ করতে বলছে। সমস্ত দুনিয়া যখন শক্তি ও সমস্ত উপাদান সমূহ তাদের হাতে কব্জা করে রেখেছে তখনও আমরা কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে এক স্বপ্নের জগতে বসবাস করছি।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾﴿كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾﴿إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ﴾
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না৷ আল্লাহ সেই সব লোকদের ভালবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসা গলিয়ে ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল৷ (সফঃ ২-৪)
প্রিয় ভাইয়েরাঃ
রাষ্ট্রের উন্নয়ন, এর স্থিতিশীলতা, প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির মত জাতির জীবনকে প্রভাবিত করার বিষয়াবলী সম্পর্কে ইসলামের আলোকে তাদের বক্তব্যকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। কিছু ভাইয়েরা, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান সম্পর্কে আপনাদেরকে অবহিত করেছেন এবং আপনাদের সাথে মূলত তারা এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলামী জাতীয়তাবাদের সীমানাই সবচেয়ে বিস্তৃত এবং প্রসারিত।
এই বিষয়টি আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করার কারণে আমি এই বিষয়ে আর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব না। কিন্তু, মানুষ যে বিষয় নিয়ে বেশী গোলমাল পাকিয়ে ফেলে এবং অনেক বেশী ভুল চিন্তায় নিপতিত হয়ে থাকে এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আর তা হল, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’।
দ্বীন ও রাজনীতিঃ
যদি কেউ তোমার সাথে ইসলাম ও রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলে তাহলে তুমি তাকে দেখতে পাবে যে, সে এই দুটি বিষয়ের একটির সাথে অপরটিকে আলাদা করে দেখে। তুমি বুঝতে পারবে যে, তারা এই দুইয়ের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে এই দুটি বিষয় বা ধারণা মানুষের নিকট সমন্বিতভাবে আসে না। আর এই কারণেই এই সকল দলসমূহকে রাজনৈতিক ভাবে নয়, ইসলামী হিসেবে নামকরণ করা হয়ে থাকে। একই ভাবে তাদের সমাবেশ বা বৈঠক সমূহকে রাজনৈতিক নয় দ্বীনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সবচেয়ে যে বিষয়টি আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয় তা হল, তাদের ইসলামী প্রতিষ্ঠান সমূহের মূলনীতি কিংবা পদ্ধতিতে (মেথড) এই কথাটি আলাদা ভাবে উল্লেখ থাকে যে, “আমাদের এই প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কোন বিষয় নিয়ে কাজ করে না বা রাজনীতির সাথে আমাদের সংগঠনের কোন সম্পর্ক নেই”।
আপনাদেরকে আমি এই বিষয়ে কোন প্রস্তাবনা কিংবা সতর্ক করার পূর্বে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
প্রথমতঃ
রাজনীতি এবং দলের মধ্যে পার্থক্য অনেক বিশাল ও ব্যাপক। কিছু কিছু ব্যাপারে এই দুটি বিষয় একত্রিত হতে পারে আবার কিছু কিছু ব্যাপারে একত্রিত নাও হতে পারে। একজন মানুষ তার কথা-বার্তায় আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ হলেও সে কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নাও হতে পারে এবং এর জন্য মৃত্যুবরণ নাও করতে পারে। একই ভাবে একজন মানুষ তার কথা বার্তা ও আচার আচরনে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও, হতে পারে যে সে আসলে রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক বিষয়াদী সম্পর্কে একদম অজ্ঞ। একই ভাবে এই দুটি বিষয় তাদের মধ্যে একত্রিত হতে পারে এবং তারা ‘রাজনীতিবিদ দলীয়’ (سياسيا حزيبا ) হতে পারেন আবার ‘দলীয় রাজনীতিবিদ’ (حزيبا سياسيا) হতে পারেন। আমি রাজনীতি বলতে যা বুঝাই তা হল এমন রাজনীতি যা কোন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে সীমাবদ্ধ নয়। তা এমন রাজনীতি যা জাতির আভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত সকল বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত এমন মুতলাক রাজনীতি (السياسة المطلقة )।
দ্বিতীয়তঃ
অমুসলিম যারা কিনা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, মুসলমানগণ তাদের চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের অনুসরণ করার কারণে অথবা জান মাল দিয়ে ইসলামের পথে জিহাদ করার যে আহবান এই পথে সাড়া না দিতে পারলে মুসলমানগণ ভিন্ন একটি পথ অবলম্বন করে। আর তা হল, বাস্তব জীবনে ইসলামের যত শক্তিশালী বিষয় ছিল সে সকল বিষয়াবলীকে মুছে ফেলে ইসলামকে একটি সংকীর্ণতার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছে। এর কারণ ছিল তারা তাদের ইসলামের নামকে এবং এর আচার অনুষ্ঠানকে পরিত্যাগ করতে পারছিল না। এই ভাবে তারা মুসলমানদের জন্য কেবলমাত্র কিছু ফায়দাবিহীন পদ-পদবি এবং আনুষ্ঠানিকতা রেখে দেয়।
তারা মুসলমানদেরকে বুঝায় যে, ইসলাম ও সমাজ এই দুটি ভিন্ন, ইসলাম ও আইন এই দুটি ভিন্ন বিষয়। ইসলাম ও অর্থনীতি ভিন্ন, ইসলাম ও সংস্কৃতি ভিন্ন এবং এইভাবে ভিন্ন করতে করতে অবশেষে ইসলাম এবং রাজনীতিকে আলাদা করে দেয়। রাজনীতির বিষয় ও ময়দান আলাদা এই কথা বলে তারা ইসলামকে রাজনীতি থেকে কেন দূরে রাখা প্রয়োজন এটা বুঝায়। যার ফলে ইসলাম তার সামগ্রিক অর্থ হারিয়ে ফেলেছে।
অনুবাদঃ বুরহান উদ্দিন


